পাহাড়ের মাঝে মোটাসোটা একটি গাছের ডালে কাকেরা বাসা বেঁধেছিল। দূর থেকে ওই গাছটির দিকে তাকালে গাছের পাতাগুলোকে কালো মনে হতো। কারণটা হলো এতো বেশি কাক ওই গাছে গিয়ে বসতো যে দূর থেকে শুধু কাকই দেখা যেত, গাছের পাতা আর নজরে পড়ত না। গাছের সামান্য নীচে কালো অন্ধকারময় একটা কোটর ছিল। সেখানে বাস করত এক ঝাঁক পেঁচা। পেঁচারা দিনের বেলা ওই কোটরে থাকত আর রাত হলে বেরিয়ে পড়ত শিকারের খোঁজে। এভাবে দল বেঁধে পেঁচাদের শিকারে বের হওয়াটা কাকদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলল। কাকেরা ভয়ে ভয়ে থাকক কখন জানি পেঁচারা তাদের ওপর হামলা করে বসে। অবশেষে একরাতে তা-ই ঘটল।
রাতটা ছিল একেবারে জোছনাময়। পুরো আকাশ ফর্সা। এতো ফর্সা যে চাঁদের উত্থান পতন পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। কাকেরা ঘুমাচ্ছিল। তাদের যুবক পাহারাদার স্বপ্ন আর কল্পনার রাজ্যে বিভোর ছিল। গাছের একটা শাখায় সে বসে ছিল। হঠাৎ ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দের মতো একরকম শব্দ তার কানে ভেসে এলো। আকাশের দিকে তাকাল সে। দেখলো এক টুকরো কালো মেঘ ভেসে যাচ্ছে। আশ্চর্য হয়ে গেল সে। অ্যাতো ফর্সা এবং নিষ্কলুষ জোছনাময় আকাশে কোত্থেকে এই মেঘের টুকরোটা এল! অ্যাতো কালো এবং অ্যাতো বড়! মেঘের কালো টুকরোটি এদিক ওদিক নড়াচড়া করছিল এবং তার দিকে ধেয়ে আসছিল বলে মনে হচ্ছিল। কাকের সমস্ত শরীর ভয়ে যেন নিস্তেজ হয়ে আসছিল, জড়োসড়ো হয়ে পড়ল সে। তার বিশ্বাস হচ্ছিল না।
আসলে সে যা দেখছিল সেটা কোনো মেঘখণ্ড ছিল না। ওটা ছিল পেঁচার দল। পেঁচারা একত্রিত হয়ে তার দিকে উড়ে আসছিল। যুবক পাহারাদার কাক বিস্ময়ে, ভয়ে, আতঙ্কে কী করবে না করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। শুধু কাঁপছিল সে। গলাটাও আটকে আসছিল। শব্দ বের হচ্ছিল না তার মুখ থেকে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে কোনোরকমে চীৎকার করে বলার চেষ্টা করল: এসেছে… পেঁচার দল এসেছে…! ওই শব্দেই ঘুমন্ত কাকদের ঘুম ভেঙে গেল। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। তন্দ্রালু অবস্থাতেই বহু কাক তৎক্ষণাৎ গাছের ডাল থেকে নীচে পড়ে গেল। কাকদের বাচ্চরাও ভয়ে আতঙ্কে কর্কর্ করে তাদের যার যার মাকে ডাকছিল।
কাকদের একটা অংশ-যারা একটু আগেভাগেই ঘুম থেকে জেগে উঠেছিল এবং অন্যদের তুলনায় একটু হুঁশিয়ার ও সচেতন ছিল তারা পেঁচাদের সাথে লড়ছিল। যুদ্ধ আর সংঘাতের পরিণতি দাঁড়াল এই: পেঁচাদের আক্রমণে বহু কাক হতাহত হলো আর আক্রমণ শেষে পেঁচারা সেখান থেকে চলে গেল। বিরান রণাঙ্গনের মতো স্তব্ধতা আর লাশের নীরবতায় পরিবেশটা ভারি হয়ে পড়ে রইলো। আকাশে পূর্ণিমার ভরা জোছনা আর কাকদের গাছে লাশের মিছিল। এভাবে কাকদের কেটে গেল জোছনাভরা এক কালোরাত।
দুর্বিসহ সেই রাতের পর এলো শুভ্র ভোর। কাকদের প্রধান বেশ অভিজ্ঞ এবং বয়োবৃদ্ধ ছিল। সে তার পাঁচজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাকে ডেকে পাঠাল। গতরাতে পেঁচাদের হামলা বৃদ্ধ কাককে আরো বেশি দুর্বল করে তুলেছিল। সে গাছের ভাঙা ডাল আর খালি বাসাগুলোর দিকে তাকাতে তাকাতে বলল: শেষ পর্যন্ত নির্দয়, নিষ্ঠুর পেঁচার দল আমাদের ওপর হামলা করেই বসলো। আমাদের অধিকাংশই আক্রান্ত হয়েছে। এমন কোনো বাসা নেই যে বাসার কেউ না কেউ আক্রান্ত হয় নি, আহত কিংবা নিহত হয় নি। আমাদের এই পরাজয় খুবই কষ্টকর এবং বেদনাদায়ক।
তারচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো পেঁচারা গতরাতে হামলা করে যেহেতু সফল হয়েছে সেহেতু ভবিষ্যতেও তারা হামলা করতে পারে। আমাদেরকে এখান থেকে সরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তারা হামলা চালাতেই থাকবে। সেজন্যে তোমাদের ডেকেছি এ সমস্যাটা কীভাবে সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে বুদ্ধি-পরামর্শ চাইতে। একজন উপদেষ্টা রাতের হামলায় তার পাখায় আঘাত লেগেছিল, সে বলল: আমি মুরব্বিদের কাছ থেকে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি তাহলো শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। পালানোটাই যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া আমাদের বেশিরভাগই তো মারা গেছে না হয় আহত হয়েছে, সুতরাং পালানোর বিকল্প দেখি না। পেঁচাদের নাগালের বাইরে কোথাও গিয়ে বসবাস করতে হবে।
আরেক উপদেষ্টা ক্ষিপ্ত হয়ে বলল: না, পালানোটা সমাধান নয় বরং লড়তে হবে। পালিয়ে বাঁচার চেয়ে যুদ্ধ করে মরা ভালো। নেতা অনুমতি দিলে আমি একটা বাহিনী তৈরি করবো আজই। পেঁচাদের এমন শিক্ষা দেবো যে জীবনেও ভুলবে না। অন্যান্য কাকেরাও কা-কা শব্দ করে তাকে সমর্থন জানালো। কিন্তু বৃদ্ধ কাক চুপ করে রইল। সে অন্যদের মতামতও জানতে চাইলো। তৃতীয় উপদেষ্টা বলল: আমাদের আসলে পেঁচাদের টার্গেটটা জানা দরকার। তারা যদি শান্তিস্থাপন করতে চায়, ভালো। আর যদি আবারো হামলা চালাতে চায় তাহলে প্রতিহত করার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। বৃদ্ধ কাক এবার চতুর্থ উপদেষ্টার দিকে তাকাল। সে বলল: এসব কোনোটার সাথেই আমি একমত নই। তবে আমি এখনো আমার মত দিতে পারছি না, আরো ভাবতে হবে। এমন সময় একজন বলে উঠলো: জনাব! অনুমতি দিলে আমি আমার মত দিতে চাই। সবাই তার দিকে তাকালো। পঞ্চম উপদেষ্টা সে-যুবক এবং শক্তিশালী কাক এক।
নেতা অনুমতি দিল।
যুবক কাক বলল: আমি কারো মতের সাথেই একমত নই। আমার একটা পরিকল্পনা আছে।
নেতা বলল: ঠিকাছে, বল।
যুবক কাক: না, এখানে বলব না।
নেতা: কোথায় তাহলে?
যুবক কাক: আমি নিরিবিলি কোনো জায়গায় একা কথা বলতে চাই।
বৃদ্ধ কাক রাজি হলো। যুবক কাককে নিয়ে অন্য একটা শাখায় গিয়ে বসলো। যুবক কাক বলল: আমার পরিকল্পনার কথা বলার আগে জানা উচিত আমাদের সাথে পেঁচাদের শত্রুতার কারণটা কী?
বৃদ্ধ কাক বলল: সে এক বিরাট কাহিনী। একেবারে প্রাচীনকালের কথা। তখন আমাদের জন্মও হয় নি। পৃথিবীর সকল পাখি মিলে চেয়েছিল এক পেঁচাকে রাজা বানাতে। পাখিদের সমাবেশে একটা কাকও ছিল।
ওই কাক তখন বলেছিল: এতো সুন্দর সুন্দর পাখি থাকতে পেঁচার মতো কুৎসিৎতম, নিষ্ঠুর এবং নির্দয় একটা পাখিকে কেন রাজা বানাতে হবে। পেঁচা পাখির রাজা হবার কোনো যোগ্যতাই রাখে না। সে আমাদের জন্যে কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না। কাকের কথা শুনে পাখিদের ভুল ভাঙলো। পাখিরা পেঁচাকে আর রাজা বানালো না। রাজার আসন না পেয়ে পেঁচা কাকের ওপর ক্ষেপে গিয়ে বলেছিল: যেই প্রতিহিংসার আগুন আমার অন্তরে জ্বালিয়ে দিয়েছিস মরার পরেও সেই আগুন নিভবে না। তার পর থেকেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে হিংসার সেই আগুন ছড়িয়েই যাচ্ছে। বুঝতে পেরেছো শত্রুতার কারণ? এবার বলো তোমার পরিকল্পনাটা কী?
যুবক কাক বলল: তোমাকে দিয়েই আমার পরিকল্পনার কাজ শুরু হবে।
বহু আগে কোনো এক কাকের কারণে পেঁচা রাজা হতে না পারায় কাক এবং পেঁচার মধ্যকার দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এ কথা শোনার পর যুবক কাক তার পরিকল্পনার কথা তার বৃদ্ধ নেতাকে বলল এভাবে: তুমি সকল কাককে বলবে আমাকে মারার জন্যে। মারতে মারতে আমি যখন অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়বো তখন সবাইকে বলবে এখান থেকে অন্য কোথাও চলে যেতে। কাছাকাছি অন্য কোনো স্থানে গেলেই চলবে। বৃদ্ধ কাক মানছিল না কিন্তু যুবক কাকের পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত রাজি হলো। সুতরাং যুবক কাককে সবাই মিলে ভালো রকম মেরে আহত অবস্থায় গাছের নীচে মাটিতে ফেলে রেখে চলে গেল।
রাতের বেলা পেঁচারা গেল রাতের মতো আবারো হামলা করল। কিন্তু কাকদের দেখা মিললো না। একটি পেঁচার চোখে পড়লো আহত কাকটিকে। প্রাণ যায় যায় অবস্থা। কোনোরকমে পাখা দুটো নাড়িয়ে সম্ভবত বোঝাচ্ছিলো যে সে এখনো মরে নি, বেঁচে আছে। পেঁচাদের সর্দার বলল: কয়েকজন নীচে যাও, দেখো ওর অবস্থা কী! দুটি পেঁচা সেনা নীচে গেল কাকের অবস্থা দেখার জন্য। আহত কাকটি তখনো শ্বাস নিচ্ছিলো দেখে একটি পেঁচা চীৎকার করে বলে উঠলো: ও বেঁচে আছে, বেঁচে আছে, শ্বাস নিচ্ছে। পেঁচাদের সর্দার কাকটির কাছে গেল এবং ভালো করে তাকে দেখলো। তারপর কাককে বলল: আহত হলি কীভাবে? বাকি কাকেরা কোথায়?
কাক চোখ খুলে তাকাল এবং খুব কষ্টে কথা বলার চেষ্টা করল। প্রতিটি শব্দ কান্না জড়িত কণ্ঠে উচ্চারণ করে বলল: গতরাতের হামলার পর কাকেরা চেয়েছিলো তোমাদের হামলার প্রতিশোধ নেবে। আমি আমাদের বৃদ্ধ নেতাকে বললাম: পেঁচাদের সাথে যুদ্ধ করার কিংবা তাদের প্রতিশোধ নেওয়ার শক্তি এবং সামর্থ কোনোটাই আমাদের নেই। এমনিতেই আমাদের অনেকেই হতাহত হয়েছে। সুতরাং সমাধানের একমাত্র উপায় হলো শান্তি ও সংহতি ঘোষণা করে পেঁচাদেরকে ভালো হাদিয়া বা উপঢৌকন দেওয়া। তারা যদি আমাদের দেওয়া উপহার গ্রহণ করে তাহলে এখানেই থাকব। তা নাহলে এই জায়গা ছেড়ে অজানা কোথাও চলে যাব।
খানিক বিরতি দিয়ে কাক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বলল: বৃদ্ধ কাক-আমাদের নেতা-আমার কথা শুনে ভীষণ রেগে গেল। সে ভেবেছিল আমি হয়তো তোমাদের পক্ষের গুপ্তচর। তাই সবাইকে আদেশ দিলো যেন আমাকে আচ্ছামতো মারে। ওরা তাই করল। আমাকে ভালো করে মেরে আধমরা অবস্থায় এখানে ফেলে রেখে চলে গেল।
পেঁচাদের প্রধান বলল: তুই জানিস কোথায় গেছে ওরা?
কাক তো বহু কষ্টে কথা বলছিল, চোখটাও ভালোমতো খুলতে পারছিল না। বলল: আমি তো অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। কোথায় গেছে দেখতেও পাই নি।
পেঁচারাজ তার মন্ত্রীকে বলল: এ সম্পর্কে কী ভাবছো!
মন্ত্রীটা দেখতে যেমন ছিল মোটাসোটা তেমনি মনটাও ছিল তার একদম বাজে। সে বলল: ওর একটা কথাও কানে তুলবেন না। ও যেভাবে আছে সেভাবেই পড়ে থাক এখানে, মরে যাক, ওকে চিনি আমি, কাকদের সর্দার এবং প্রথম সারির নেতাদের একজন।
মন্ত্রীর উপদেষ্টা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। কাকটির আহত অবস্থা তাকে বেশ আহত করল। সে তাই তার মনিবকে বলল: না জনাব! ওকে মারবেন না! ওকে মেরে কীই বা লাভ হবে আমাদের। বরং এক কাজ করি, ওকে ভালোভাবে খাইয়ে দাইয়ে সুস্থ করে তুলি। তাহলে অবশ্যই একদিন সে আমাদের কাজে আসবে।
অপর একটি পেঁচা বলল: হুজুর! ওকে আমাদের আশ্রয় দেওয়া উচিত। তার সাথে ভালো আচরণ করা উচিত। তাহলে সে ধীরে ধীরে আমাদের প্রতি আস্থাবান হবে এবং তার সহযোগিতায় আমরা কাকদের বাসস্থান খুঁজে পাবো। তারপর আবার তাদের ওপর হামলা করতে পারব।
আহত কাক অর্ধচেতন অবস্থায় পেঁচাদের কথাবার্তাগুলো ঠিকই শুনতে পেয়েছিল। সে তাই মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করল পেঁচাদের নেতা যেন এই প্রস্তাবটি মেনে নেয় এবং তাকে পেঁচাদের সাথে নিয়ে যায়।
মন্ত্রী এতোক্ষণ চুপ করে সবার কথা শুনছিল। এবার চিৎকার করে বলে উঠলো: কাকের প্রতারণাপূর্ণ কথায় তোমরা প্রভাবিত হবে না, ও মিথ্যা বলছে। শত্রু সর্বদাই শত্রু। এটা কী করে সম্ভব যে ও তার সঙ্গী সাথীদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে আমাদের সাথে মিলে যাবে! হে পেঁচাদের নেতা! ওকে মেরে ফেলো, যাতে তার ষড়যন্ত্র থেকে আমরা নিরাপদ থাকতে পারি।
কিন্তু বড় পেঁচা তার কথায় কান দিলো না। উল্টো বরং আদেশ দিলো আহত কাকটিকে যেন গূহায় নিয়ে যায়। গূহায় নিয়ে যাবার পর পেঁচাদের সেবা যত্নে কাকের অবস্থার উন্নতি হলো। সে এখন তার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, পাখা দুটোকে নাড়াতে পারে। কাক চেষ্টা করেছে তার ওপর পেঁচাদের আস্থা অর্জন করতে বিশেষ করে পেঁচাদের নেতার মনে একটা জায়গা করে নিতে। একদিন দুপুর বেলা পেঁচারা যখন গূহায় অবস্থান করছিলো কাক তখন সিদ্ধান্ত নিলো তার পরিকল্পনার বাকি অংশ বাস্তবায়ন করবে। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো বেশিরভাগ পেঁচাই ঘুমোচ্ছে কিংবা হাসি উল্লাসে মেতে আছে। কাক আস্তে করে পা ফেলে গূহার বাইরে এসে উড়াল দিলো আকাশে।
উড়তে উড়তে পেছনে তাকিয়ে দেখছিল কেউ তার পিছু নিলো কিনা; শেষ পর্যন্ত কাকেরা যেখানে থাকে, সেখানে গিয়ে সে নামল। বিশেষ করে চিন্তা করছিল ‘সে যে নেই’ তা কেউ জেনে গেল কিনা। কিন্তু দেরি করলে তো জেনে যাবেই। তাই দ্রুত কাজ সেরে ফেলা উচিত। এদিকে বৃদ্ধ কাকরাজ আহত যুবক কাককে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়ে ভীষণ খুশি হলো। এই কয়দিন কোথায় কীভাবে ছিল জানতে চাইল। কাক সব খুলে বলল এবং দ্রুত তার বাকি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল জানিয়ে দিয়ে বলল: পেঁচারা এখন ঘুমিয়ে আছে, এখুনি উপযুক্ত সময়, চলো সবাই। কাকেরা উড়ে যাবার সময় যুবক সবাইকে বলল: আমি পেঁচাদের গূহামুখের কাছে একটা জায়গা ঠিক করে রেখেছি। গোপনে প্রতিদিন কিছু লাকড়িও জমিয়ে রেখেছি। তোমরা সবাই মিলে আরো জ্বালানি এনে গূহার মুখে স্তুপ করবে।
এই সুযোগে আমি রাখালের কাছ থেকে আগুন নিয়ে আসব। তার কাছে সবসময় আগুন থাকে। গূহামুখের জ্বালানিতে আগুন জ্বালিয়ে দিলে যে পেঁচাই বেরুতে চাইবে পুড়ে মরবে। আর যারা গূহার ভেতরে থাকবে তারাও ধোঁয়ায় দম আটকে মরবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কাজ সমাধা হলো। আগুন জ্বালানো হলো গূহামুখে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। পেঁচারা আগুন দেখে বিস্মিত হয়ে গেল। পালাবার কোনো পথ তাদের ছিল না। তারপরও যারা বেরিয়ে আসতে চাইলো পুড়ে মরে গেল। আর যারা ভেতরে রয়ে গেল তারাও মারা গেল। ধীরে ধীরে আগুন কমে এল। এক সময় নিভে গেল। তারপর থেকে আর কোনো পেঁচা ওই গূহা থেকে বের হলো না। কাকেরা খুশিতে কা-কা করে পুরো পার্বত্য জঙ্গলকে মুখরিত করে তুললো। কাকের বাচ্চাটাও গূহার ভেতর তাকিয়ে বলল: মা! মা! আর কোনো পেঁচা নেই। আমি আর ভয় পাবো না। কী মজা! কী মজা! কাকেরা খুশিতে ফিরে গেল তাদের আবাসে।