এক ব্যবসায়ী এবং তার তিন ছেলে পুরানো দিনের কথা। এক ব্যবসায়ীর ছিল তিন ছেলে। ব্যবসায়ী যখন বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছলো স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে পড়লো। আগের মতো পরিশ্রম করার কিংবা শারীরিক সক্ষমতা এখন তো আর নেই। তাই ভাবলো ব্যবসার দায়-দায়িত্ব ছেলেদের কারও হাতে ছেড়ে দিয়ে তসবিহ তাহলিলে মন দেবে। তবে তার আগে ব্যবসায়ী চেয়েছিল ছেলেদেরকে একটু পরীক্ষা করে দেখতে-আসলেই তারা উপযুক্ত হয়েছে কিনা; তাদের ওপর ব্যবসার এতো বড়ো দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া যায় কিনা। বড়ো ছেলেকেই সবার আগে ডাকলো। তাকে বললো: দেখো বাবা! আমার তো বয়স হয়ে গেছে। এখন আর কাজ করার মতো সামর্থ্যও নেই। তাই ভাবছি ব্যবসার দায়িত্বটা তোমার হাতে ছেড়ে দেবো। তবে তার আগে তুমি কতোটা পারবে কাজটা আঞ্জাম দিতে সেটা একটু নিশ্চিত হওয়া দরকার। তুমি এক কাজ করো! এই এক শ’ তুমান নাও! এ দিয়ে স্বর্ণ গয়না হোক কিংবা যা-ই হোক তুমি কিনে সেটা দিয়ে ব্যবসা করো!’
ছেলে তো খুশি। এক শ’ তুমান নিয়ে সে রওনা হলো বাজারের দিকে। বাজারে না পৌঁছতেই দেখা হয়ে গেল একদল বখাটের সাথে। সেও ওই দলের সাথে মিশে গেল। এরপর তো যা হবার তাই হলো। ওই এক শ’ তুমান খরচ করে খুব মজা করলো রাতভর। সকাল যখন হলো খালি হাত পা নিয়ে ফিরে গেল বাড়িতে। বাবা তো ছেলের অবস্থা দেখেই বুঝতে পেরেছে যে টাকা-পয়সাগুলো সবই উড়িয়ে এসেছে। তারপরও বাবা জিজ্ঞেস করেছে: কী করেছো?
ছেলে বললো: টাকা-পয়সা সব খরচ হয়ে গেছে।
এরপর যা যা ঘটেছিল ছেলে তার বাবাকে সত্য সত্য খুলে বললো। বাবা মাথা নাড়িয়ে বললো: ঠিক আছে, তুমি তোমার কাজে যাও! বুঝতে পেরেছি তুমি ব্যবসার উপযুক্ত নও!
বড় ছেলেকে একথা বলে ব্যবসায়ী তার গোলামকে পাঠালো মেজো ছেলেকে ডেকে আনতে। দ্বিতীয় ছেলে আসার পর বাবা তাকে বললো: গতকাল তোমার বড় ভাইকে ডেকে বলেছিলাম যে দেখো বাবা! আমার তো বয়স হয়ে গেছে। এখন আর কাজ করার মতো সামর্থ্যও নেই। তাই ভাবছি ব্যবসার দায়িত্বটা তোমার হাতে ছেড়ে দেবো। তাকে পরীক্ষা করার জন্য আমি তার হাতে এক শ’ তুমান দিয়েছিলাম যাতে ঐ টাকা সে কাজে লাগিয়ে কিছু একটা করে। কিন্তু সে টাকাটা নষ্ট করে বাসায় ফিরে এসেছে। তাকে দিয়ে আসলে ব্যবসা হবে না। ও কাজের না। আমি ভাবছি তোমার হাতেই ব্যবসার দায়িত্ব ছেড়ে দেবো। আমি তোমাকেও এক শ’ তুমান দিচ্ছি দেখি তুমিও তোমার ভাইয়ের মতো নাকি তার বিপরীতে কাজ কর্ম করার যোগ্য। যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারলে ব্যবসার দায়িত্ব তোমার হাতে ছেড়ে দেবো। এই বলে বাবা ছেলের হাতে এক শ’ তুমান দিলেন।
দ্বিতীয় ছেলে বাবার কথা মনোযোগের সাথে শুনলো এবং এক শ’ তুমান গ্রহণ করলো। টাকাটা নিয়ে রওনা হলো বাজারের দিকে। কিন্তু এই ছেলেও তার বড়ো ভাইয়ের মতোই একদল বখাটের পাল্লায় পড়ে মদ জুয়ার আড্ডায় জড়িয়ে টাকাটা ধ্বংস করে ফেললো। সকালবেলা সেও বড়ো ভাইয়ের মতোই খালি হাতে গিয়ে পৌঁছলো বাড়িতে। বাবা জিজ্ঞেস করলো: টাকাটা কী করেছিস?
ছেলের জবাবটা বড়ো ভাইয়ের মতোই ছিল। বাবা তাই দ্বিতীয় ছেলেকেও বললো: ঠিক আছে, তুমি তোমার কাজে যাও! বুঝতে পেরেছি তুমি তোমার বাবার ব্যবসা চালানোর উপযুক্ত নও। তোমাদের কাজের পরিণতি তোমরাই ভোগ করবে।
ব্যবসায়ী বাবা এবার তার ছোটো ছেলেকেই টার্গেট করলো। তাকে ডেকে এনে তার বড়ো দু ভাইয়ের কথা জানালো। বললো: তারা তো আমার ব্যবসার দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার উপযুক্ত নয়। তাদের কপালে অনেক দুঃখ আছে। এখন তোমার পালা। তুমি এই এক শ’ তুমান পুঁজি নিয়ে যাও, দেখো কী করতে পারো। তোমার যা খুশি কিনে অন্য বাজারে বিক্রি করো কিংবা অন্য শহরেও নিয়ে যেতে পারো। মোটকথা ব্যবসা করো’!
ছোটো ছেলে টাকাটা নিলো এবং বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। পথিমধ্যে দেখলো ক’জন লোক একটা মৃত মানুষকে গাছের সাথে বেঁধে মারছে। ছেলেটা সামনে এগিয়ে গেল। জিজ্ঞেস করলো: কী হয়েছে? মরা মানুষকে চাবুক মারছো কেন?
একজন বললো: নিজের চরকায় তেল দাও! আমার কাজে নাক গলাতে এসো না।
ছেলে বললো: না, নাক গলাতে চাই না। শুধু জানতে চাই ব্যাপারটা কী? হয়তো উপকারেও আসতে পারি।
তাদের একজন বললো: আমরা এই লোকের কাছ থেকে এক শ’ তুমান পেতাম। আমাদের টাকা না দিয়ে সে মরে গেছে। এখন তাই মারছি টাকাটা উশুল করতে।
ছেলে বললো: মরা মানুষ মেরে কী হবে। ওকে ছেড়ে দাও! গোসল দিয়ে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করো। তার দেনা এক শ’ তুমান আমিই দেবো।
লোকেরা তাই করলো। দাফন কাফনের কাজ শেষ হবার পর ছেলেটা এক শ’ তুমান তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে গেল।
বাড়ি যাবার পর যথারীতি বাবা জিজ্ঞেস করলো: কী করলে টাকা দিয়ে!
ছেলে বললো: একটা লাশকে মুক্ত করেছি।
এরপর পুরো ঘটনাটা বাবাকে খুলে বললো। বাবা সব শুনে বললো: ভালো কাজই করেছো। এই নাও তোমাকে আরও এক শ’ তুমান দিচ্ছি। এই টাকা দিয়ে এবার ব্যবসা বাণিজ্য কিছু একটা করো।
ছেলে এবার টাকাটা দিয়ে বিচিত্র ব্যবসায়িক পণ্য কিনে বাড়ি ফিরে এলো। বাবা যখন দেখলো ছেলে বেশ সক্রিয় এবং পরিশ্রমী, আরও এক শ’ তুমান দিয়ে বললো: দু’ তিনটা গোলাম কিনে নাও।
ছেলে বাজারে গিয়ে বেশ ঘুরলো কিন্তু কোনো গোলাম খুঁজে পেলো না। অবশেষে শহরের দরোজায় দেখতে পেলো এক উলঙ্গ লোক প্রবেশ করছে আর বলছে: চাকর হতে চাই। গোলাম হতে চাই।
ছেলে ওই লোকটাকেই নিয়ে গেল বাড়িতে। বাবা উলঙ্গ লোকটাকে দেখেই বললো: এ কী করেছো! একটা উলঙ্গকে ধরে নিয়ে এসেছো কেন?
ছেলে বললো: বাবা! সারাটা দিন তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোনো গোলাম কিনতে পাই নি। এই লোকটা নিজ থেকেই ‘গোলাম হতে চাই’ বলে বেড়াচ্ছিল। আমিও ভাবলাম কাউকে যেহেতু পেলামই না, একেই নিয়ে যাই। ব্যস, নিয়ে এলাম’।
ব্যবসায়ী উলঙ্গ লোকটাকে জামা কাপড় দিলো পরার জন্য। তার নাম-ঠিকানা জানতে চাইলো। লোকটা বললো তার নাম ‘ফারামার্য’। ব্যবসায়ী তাকে বললো পরদিন সকালে বাণিজ্য যাত্রার জন্য মালামাল গোছগাছ করে রাখতে, নাস্তা প্রস্তুত করতে এবং সূর্য ওফার সাথে সাথে রওনা হয়ে দিতে।
বৃদ্ধ ব্যবসায়ী তার ব্যবসার দায়িত্ব ছেলেদের হাতে ছেড়ে দিয়ে দ্বীনী কাজে মনোনিবেশ করার চিন্তা করেছেন। দায়িত্ব দেওয়ার আগে তিনি ছেলেদের যোগ্যতা যাচাই করার চেষ্টা করলেন। বড়ো দুই ছেলে যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারে নি। ছোটো ছেলে পরীক্ষা দিতে শুরু করেছে। গত আসরে শেষ হয় নি গল্পটি।
ছোটো ছেলে বাজারে কোনো গোলাম কিনতে না পেরে অবশেষে ‘ফারামার্য’ নামের এক উলঙ্গ লোককে নিয়ে বাসায় ফিরলো। ব্যবসায়ী উলঙ্গ লোকটাকে জামা কাপড় দিলো পরার জন্য। পরদিন সকালে বাণিজ্য যাত্রার জন্য মালামাল গোছগাছ করে রাখতে এবং নাস্তা প্রস্তুত করতে বললো। আরও বললো সূর্য ওঠার সাথে সাথে বেরিয়ে পড়তে হবে। ফারামারয তাই করলো। ভোরে ভোরে ঘুম থেকে জেগে উঠে পঞ্চাশটা খচ্চর নিয়ে এলো। বোঝাগুলো তুলে দিয়ে মনিবের জন্য নাশতার আয়োজন করলো এবং মনিবকে জাগিয়ে তুললো।
মনিবের ঘুম ভাঙতেই দেখলো সবকিছু প্রস্তুত। ফারামারয্কে বললো: ‘চমৎকার! বোঝাই যাচ্ছে তুমি কাজের মানুষ। সবকিছুই ঠিকঠাকমতো করতে পারবে তুমি’। তাড়াতাড়ি নাশতা সেরে বাবার কাছ থেকে বিদায় নিলো। বাবা তাকে উপদেশ দিয়ে বললো: তুমি যে পথে যাচ্ছো, ওপথে সরাইখানা পড়বে। ওর পাশেই পানির আধারও আছে একটা। মনে রাখবে ওই সরাইখানা কিংবা পানির আধারের কাছে বাসা নেবে না। ওখান থেকে আরও উপরে কোনো একটা জায়গায় যাত্রাবিরতি করো।
ছেলে বাবাকে কথা দিয়ে বিদায় নিয়ে ফারামারযের সাথে রওনা হলো বাণিজ্য যাত্রায়।
যেতে যেতে যেতে সেই সরাইখানায় গিয়ে পৌঁছলো তারা। ফারামারয মালামাল নামালো নীচে। কিন্তু ব্যবসায়ীর ছেলে বললো: ‘কী ব্যাপার, ভুলে গেছো, বাবা বলেছিল সরাইখানায় না থামতে’? ফারামারয বললো: কিচ্ছু হবে না, এতো ভেবো না তো! ছেলেটাও কিছু আর বললো না। ফারামারয রাতের খাবার প্রস্তুত করলো। খচ্চরগুলোকে বেঁধে রেখে খাবার খেলো। খেয়েদেয়ে দিলো ক্লান্তির ঘুম। ফারামারয্ও মালামালের বস্তার ওপর শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল দূর থেকে একটা আলো তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ফারামারয উঠে দাঁড়িয়ে দেখলো খচ্চরগুলোর মাঝে একটা দুষ্ট এবং হিংস্র খচ্চর ঘুমিয়ে আছে। সে তাড়াতাড়ি তার দড়ি খুলে দিলো এবং আলোর দিকে পাঠিয়ে দিলো।
ঘণ্টাখানেক পর দেখা গেল যে আলোটা ঘনিয়ে আসছিল সেটা নিভে গেল এবং দুষ্টু খচ্চরটা মাথায় মুখে রক্তমাখা অবস্থায় ফিরে এলো। ফারামারয উঠে খচ্চরটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলো, তাকে একটু মিষ্টিও খাওয়ালো। মোটকথা অনেক আদর যত্ন করলো এবং সবশেষে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালবেলা ঘুম থেকে জেগে উঠে সরাইখানার বাইরে গিয়ে দেখে চল্লিশটা লাশ পড়ে আছে। ভয়ে আঁতকে উঠে সে তার মনিবকে জাগিয়ে তুললো। নাশতার আয়োজন করলো। মনিব যখন খচ্চরকে রক্তমাখা অবস্থায় দেখলো ফারামারযকে জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে ওর, রক্ত এলো কোত্থেকে? ফারামারয মনিবের হাতটা ধরে বাইরে নিয়ে গেল এবং লাশগুলো দেখালো। মনিবের চোখ তো চড়কগাছ। হতবিহবল হয়ে গেল সে।
ফারামারয তার মনিবকে বললো: জানেন এসব লাশ কাদের? মনিব বললো: না, এরা কারা? কী হয়েছে? কে মেরেছে ওদের?
ফারামারয বললো: এরাই সেই চোরের দল যাদের ভয় পাচ্ছিলেন আপনার বাবা। একথা শুনে ব্যবসায়ীর ছেলে স্বস্তি পেল। খুশি হলো সে। ফারামারযকে বললো: মাল সামান ঠিকঠাকমতো বেঁধে রওনা হতে। তাই করলো ফারামারয। কাফেলা যেতে যেতে একসময় সেই পানির হাউজের কাছে গিয়ে পৌঁছলো। মালের বোঝাগুলো নীচে নামিয়ে ফারামারয যাত্রাবিরতির চিন্তা করলো। কিন্তু ব্যবসায়ীপুত্র এবারও ফারামারযকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললো: মনে নেই, বাবা বলেছিলেন এখানে রাত কাটানো যাবে না?
ফারামারয বললো: মনে আছে। কিচ্ছু হবে না। চিন্তা করবেন না।
এবারও সেই সরাইখানার মতোই মালের বোঝা বিছিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা করলো। রাতের খাবারের আয়োজন করলো। মনিব খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। ফারামারযও বস্তার ওপর ঘুমালো। ঘণ্টাখানেক পর ফারামারয দেখতে পেলো একটা নেকড়ে এবং একটা শেয়াল এসে হাজির ওই চৌবাচ্চার কাছে। নেকড়ে শেয়ালকে জিজ্ঞেস করলো: হে শেয়াল, এখানে কী করছো? শেয়াল জবাবে পাল্টা জিজ্ঞেস করলো: তুমি কী করছো এখানে?
নেকড়ে বললো: আমি প্রতিরাতেই এখানে শিকারের সন্ধানে আসি। ঘটনা হলো এখানে খুব কাছেই দুম্বার পাল আছে। কিন্তু রাখাল একটা বিরাট কুকুর পালে। ওই কুকুরের কারণে কাছে ঘেঁষতে পারি না।
আজ রাতেও আমি ভীষণ ক্ষুধার্ত। আজও আমি শহরের আশেপাশে গেছি। দেখলাম বেশ কিছু লাশের কাটা মাথা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম কী করেছিল এই হতভাগারা। জবাবে শুনলাম: ওই শহরের বাদশার মেয়ে নাকি পাগল হয়ে গেছে। যত ডাক্তার কবিরাজ ছিল সবাইকে ডেকে আনা হয়েছে। কিন্তু যে-ই তার রোগ সারাতে ব্যর্থ হলো তাকেই জীবন দিতে হলো। তারই মাথা কেটে মিনারের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হলো।
ফারামারয শেয়াল ও নেকড়ের সব কথা শুনলো এবং অপেক্ষা করতে লাগলো ভোরের আশায়।
সকাল হবার পর ফারামারয মনিবের জন্য নাশতা পানির ব্যবস্থা করলো। নাশতা দিয়ে ফারামারয কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে গেল। বলে গেল দ্রুত ফিরে আসবো। ফারামারয গেল সেই রাখালের কাছে। গিয়ে বললো: তোমার কুকুরটা বিক্রি করবে? রাখাল বললো: এই কুকুর না থাকলে দুম্বাগুলো হারাতে হবে। ফারামারয বললো: দুম্বাগুলোর দাম কতো? রাখাল বললো: এক শ’ তুমান। ফারামারয রাখালকে এক শ’ তুমান দিয়ে বললো: এই হলো তোমার দুম্বার দাম। নেকড়ে যদি দুম্বা শিকারও করে এখন আর তো অসুবিধা নেই। টাকা তো পেয়েছো। আর যদি নেকড়ে হামলা না চালায় তাহলে দুম্বাগুলো তোমার লাভ। রাখাল এবার কুকুরটা দিতে বাধ্য হলো। ফারামারয কুকুরটাকে সামান্য দূরে নিয়ে তাকে খাবার দিলো এবং হাত বুলিয়ে দিলো তার পিঠে।
ফারামারয একটা পাথর নিলো। কুকুর যখন ঘুমিয়ে পড়লো পাথরটা জোরে মারলো তার মাথায়। কুকুরের মাথা ফেটে মগজ বেরিয়ে এলো। সেই মগজ রুমালে পেঁচিয়ে পকেটে নিয়ে ফারামারয রওনা হলো সেই শহরের দিকে যে শহরের শাহজাদি পাগল হয়ে গিয়েছিল। শহরে ঢুকে বাদশার প্রাসাদে ঢোকার দরোজায় গিয়ে পরিচয় দিলো: আমি একজন ডাক্তার, এসেছি শাহজাদির চিকিৎসা করতে।#
বৃদ্ধ ব্যবসায়ী তার ব্যবসার দায়িত্ব ছেলেদের হাতে ছেড়ে দিয়ে দ্বীনী কাজে মনোনিবেশ করার চিন্তা করেছেন। দায়িত্ব দেওয়ার আগে তিনি ছেলেদের যোগ্যতা যাচাই করার চেষ্টা করলেন। বড়ো দুই ছেলে যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারে নি। ছোটো ছেলে পরীক্ষা দিতে গিয়ে এখন বাণিজ্য যাত্রায় রয়েছে। এদিকে তার গোলাম ফারামারয শাহজাদির চিকিৎসা করার জন্য বাদশার প্রাসাদে গেছে।
ফারামারয শেয়াল আর নেকড়ের কথাবার্তা শুনেই শিাহজাদির চিকিৎসা করতে এগিয়ে গিয়েছিল। যাবার আগে একটা কুকুর কিনে তাকে মেরে মগজটা রুমালে পেঁচিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। শেয়াল নেকড়ে বলাবলি করেছিল বাদশার পাগল মেয়ের চিকিৎসা একমাত্র কুকুরের মগজের মধ্যেই রয়েছে। ফারামারয প্রাসাদে গিয়ে নিজেকে চিকিৎসক বলে পরিচয় দিলো। দারোয়ান তাই তাকে নিয়ে গেল বাদশার কাছে। ফারামারয বাদশাকে সালাম দিয়ে বললো: আমি এসেছি আপনার মেয়ের চিকিৎসা করতে। বাদশা বললো: যদি সফল না হতে পারো তাহলে অন্যদের মতোই গর্দান যাবে। ফারামারয মেনে নিলো।
বাদশা বললো: এখন তোমার কী প্রয়োজন বলো!
ফারামারয বললো: একটা আগুন রাখার পাত্র আর এক বাটি সিরকা দরকার।
বাদশা দ্রুত এগুলো প্রস্তুত করতে আদেশ দিলো। এরপর বাদশার মেয়েকে আনা হলো ফারামারযের সামনে। পাগল মেয়ে তো, অস্বাভাবিক আচরণ করতে লাগলো। এমনকি ফারামারযের মাথার চুল ধরে টেনে মুখে খামচি বসিয়ে দিলো। ফারামারয সামান্য মগজ আগেই পিষে পানির মতো করে রেখেছিল, সেখান থেকে একটুখানি হাতে নিয়ে মেয়ের চোখের ওপর মালিশ করে দিলো। এরপর আধা বাটি সিরকা তার মাথায় ঢেলে দিলো। মেয়ের হঠাৎ টনক নড়ে উঠলো। সে বললো: এই বেগানা লোকটা এখানে কী করছে?
ফারামারয বললো: ওকে শান্ত থাকতে দাও।
শাহজাদিকে বলা হলো: উনি হলেন ডাক্তার। তোমার চিকিৎসার জন্য এসেছে। এরপর বাদশাকে খবর দেওয়া হলো যে শাহজাদি সুস্থ হয়ে গেছে। বাদশাহ রাণীকে নিয়ে এসে দেখলো তাদের কন্যা সত্যিই সুস্থ হয়ে গেছে। রুমের এক কোণে শান্ত হয়ে বসে রয়েছে। বাদশা খুশি হয়ে গেল। সারা শহরকে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করার আদেশ দিয়ে দিলো। আর ফারামারযকে রাজকীয় সম্মান দেখিয়ে প্রাসাদে নিয়ে গেল এবং তাকে উচ্চ পদমর্যাদা দিতে চাইলো। কিন্তু ফারামারয বললো: তার দরকার নেই। বাদশা বললো: ঠিক আছে, তুমি যেহেতু আমার মেয়েকে সুস্থ করে তুলেছো, তাহলে তুমি তাকে বিয়ে করো।
ফারামারয বললো: আমার কোনো স্ত্রীর প্রয়োজন নেই। তবে আমার এক মনিব আছে সে যদি বিয়ে করতে চায় তাহলে আপনি তার কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারেন।
ফারামারযের কথা অনুযায়ী তার মনিবের কাছে গেল রাজার বাহিনী। ফারামারয সবকিছু খুলে বলার পর মনিব রাজি হলো এবং সবাই মিলে ফিরে গেলো বাদশার প্রাসাদে। বাদশা আদেশ দিলো স্বর্ণালি আসন দেওয়ার জন্য। সাথে সাথে আনা হলো এবং ব্যবসায়ী-পুত্র ওই আসনে আসীন হলো। তারপর বাদশা তাকে তার মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলো। ব্যবসায়ী-পুত্র প্রথমে একটু আমতা আমতা করছিল পরে ঠিকই রাজি হলো। এভাবে বিয়ে হয়ে গেল ব্যবসায়ী-পুত্রের সাথে শাহজাদির। বিয়ে উপলক্ষে সাত রাত সাত দিন জাঁকজমকপূর্ণ উৎসবের আয়োজন করা হলো। বিয়ের উৎসব শেষে পঞ্চাশ বোঝা স্বর্ণগয়না এবং দশটি চাকরানি আর গোলাম পাঠিয়ে দেওয়া হলো মেয়ের সাথে।
ফারামারয গোলাম আর চাকরানিদের দেখে বললো: ভালোই হলো। আমার ওপর থেকে চাপ কমবে এবার, কাজ করার লোকের তো আর অভাব নেই এখন। ব্যবসায়ীপুত্র অন্য এক এলাকায় চমৎকার জায়গা দেখে বসবাসের আয়োজন করলো। কিন্তু ফারামারয আগের মতোই মালামালের বস্তার ওপরই কাত হলো। হঠাৎ দেখতে পেলো এক লোক একটা কাটা মাথা হাতে নিয়ে তার দিকে আসছে। লোকটা এসে কাটা মাথাটা ফারামারযের বস্তার বিছানার এক পাশে রাখলো। ফারামারয তলোয়ার দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করতে চাইলো কিন্তু তলোয়ার ঘাড়ে না লেগে নাকের আগায় লাগলো। নাকের ওই কাটা অংশটুকু মাটিতে পড়ে গেল। ফারামারয সেই কাটা নাক মাটি থেকে তুলে রেখে দিলো তার পকেটে। সকালে নাশতা সেরে মালামালের বিছানা গুছিয়ে নিলো এবং রওনা হলো নতুন ওই শহরের দিকে।
শহরে গিয়েই ফারামারয সোজা চলে গেল প্রাসাদে। প্রাসাদের দারোয়ান দরোজা খুলতেই দেখলো বাদশার ছেলের কাটা মাথা ফারামারযের হাতে। সাথে সাথেই দারোয়ান তার হাত বেঁধে ফেললো এবং প্রাসাদের ভেতর নিয়ে গেল। বাদশাকে বললো: এই লোক আপনার ছেলেকে হত্যা করেছে। বাদশা তাকে হত্যা করার আদেশ দিলো।
ফারামারয তখন বললো: আমি কাউকে হত্যা করি নি। তবে যে হত্যা করেছে বাদশার ছেলেকে তাকে দেখিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু এ কাজ করতে হলে বাদশাকে আদেশ দিতে হবে সবাই যেন তাঁর সামনে দিয়ে অতিক্রম করে যায়। তাহলেই আমি বাদশাকে দেখিয়ে দিতে পারবে কে হত্যা করেছে।
বাদশার আদেশে সবাই এলো এবং এক এক করে তাঁর সামনে দিয়ে চলে গেল। ফারামারয বললো: এখনও একজন বাকি আছে, সে আসে নি।
বাদশাহ আদেশ দিলো তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখতে কে আসে নি। মুহূর্তেই খবর হয়ে গেল এক মন্ত্রীর ছেলে আসে নি কারণ সে অসুস্থ, খাটে শুয়ে আছে। ফারামারয বললো: অবশ্যই আসতে হবে।
বাদশাহও তাই বললো। অবশেষে মন্ত্রীর ছেলে এলো চেহারা রুমালে ঢেকে। ফারামারয তাকে দেখেই তার পকেট থেকে কাটা নাকের টুকরাটা বের করলো এবং বললো: এই হলো বাদশার ছেলের হত্যাকারী।
এরপর ফারামারয পুরো ঘটনাটা বাদশাকে খুলে বললো। সবকিছু শুনে বাদশা উজিরের ছেলেকে ফাঁসি দিতে আদেশ দিলো। ফারামারযের দিকে ফিরে বললো: তুমি যেহেতু আমার সন্তানের হত্যাকারীকে চিহ্নিত করেছো এখন আমার মেয়েকে তুমি বিয়ে করতে পারো।
ফারামারয বললো: আমার কোনো স্ত্রীর প্রয়োজন নেই। তবে আমার এক মনিব আছে সে যদি বিয়ে করতে চায় তাহলে তার কাছে বিয়ে দিতে পারেন।
পথিমধ্যে কাফেলার সামনে যে ঘটনাটি ঘটলো, তাহলো এক মন্ত্রীর ছেলে শাহজাদাকে হত্যা করে ফারামারযকে ফাঁসানোর জন্য তার বস্তার বিছনায় এনে রেখে দেয়। ফারামারয তলোয়ার দিয়ে আঘাত করলে তার নাক কাটা যায়। ওই নাকের কাটা অংশ দিয়ে ফারামারয প্রমাণ করে যে সে হত্যাকারী নয়, আসল হত্যাকারী হলো মন্ত্রীর ছেলে। প্রমাণিত হবার পর রাজা ফারামারযকে বললো: তুমি যেহেতু আমার ছেলের হত্যাকারীকে শনাক্ত করেছো সুতরাং আমার কন্যাকে তুমি বিয়ে করতে পারো।
ফারামারয বললো: আমার স্ত্রীর প্রয়োজন নেই। তবে আমার এক মনিব আছে, তুমি তার সাথে তোমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারো।
ফারামারয তার মনিবের কাছে সব ঘটনা খুলে বললো। এরপর দুজনেই চললো বাদশার দরবারে। এবারও ব্যবসায়ীপুত্র আরেক রাজকন্যাকে বিয়ে করলো। সাত রাত সাত দিন উৎসব হলো ব্যাপক জাঁকজমকের সাথে। বিয়ের পর ওই শহরে বেশ কিছুদিন কাটালো ফারামারয এবং তার মনিব। তারপর আবারও মালামালের বোঝা বাঁধলো। সোনা-গয়নার নতুন পঞ্চাশটি বোঝা আর দশজন চাকর বাকর মিলে মোট বোঝার সংখ্যা দাঁড়ালো দেড় শ’ আর চাকর গোলামের সংখ্যা দাঁড়ালো বিশ। মনিব আর দুই স্ত্রীসহ বিশাল এক কাফেলা নিয়ে যাত্রা শুরু করলো ফারামারয। ব্যবসায়ীপুত্র যখন দেখলো মালামালের পরিমাণ তো প্রচুর হয়ে গেছে, ফারামারযকে বললো: আমাদের এবার বাবার কাছে ফিরে যাওয়া উচিত।
ফারামারয মনিবের কথায় ফেরার পথে পাড়ি জমালো। যে পথ দিয়ে এসেছিল সে পথেই ফিরতে লাগলো। পথের মাঝে সুন্দর একটা জায়গায় যাত্রাবিরতি করলো। চমৎকার তাঁবু গাড়া হলো। বিশ্রাম নিলো। রাতের খাবার দাবার খেতে শুরু করলো এমন সময় এক বৃদ্ধা মহিলা এসে একটু খাবার ভিক্ষা চাইলো। বুড়িকে তারা একটু রুটি দিলো এবং বুড়ি চলে গেল। ফারামারয কিন্তু বুড়ির পেছনে পেছনে গেল। অনেকদূর যাবার পর ফারামারয দেখলো ওই বুড়ি একটা কূপের মুখ থেকে পাথর সরালো এবং পাথরের নীচে গিয়ে বেশ কিছু লোককে বললো: এখানে একটা কাফেলা এসেছে, অনেক মাল সামান আছে তাদের সাথে। এরা বেশি সময় থাকবে বলে মনে হয় না। ওদের মালামাল লুট করতে হলে দেরি করা যাবে না,তাড়াতাড়ি করো।
ফারামারয বুড়ির সব কথাই শুনলো। সে এক কোণে দাঁড়ালো। গর্তের ভেতর থেকে যে-ই বেরিয়ে এলো তাকেই মেরে ফেললো ফারামারয। কেউ যখন আর বের হলো না ফারামারয গেল গর্তের ভেতর। বুড়িকে দেখে বললো: এই তোমাকে রুটি দেওয়ার প্রতিদান? স্বর্ণ গয়না কোথায় আছে তাড়াতাড়ি দেখাও! বুড়ি সব দেখালো। ফারামারয বুড়িকে আগে মারলো। তারপর ভেতরে ঘুরে দেখলো অসংখ্য মানুষ ছাদের সাথে ঝুলে আছে। এখনো কারো কারো প্রাণ আছে। ফারামারয সবাইকে মুক্ত করে দিলো। যারা বেঁচেছিলো তারা ফারামারযের পায়ে লুটিয়ে পড়ে বললো: আপনি আমাদের প্রাণে বাঁচিয়েছেন আমরা সারাজীবন আপনার গোলামি করবো।
ফারামারয গয়নাগাটি বস্তা বেঁধে মনিবের কাছে ফিরে গেল। মনিবকে সে পুরো ঘটনা খুলে বললো। আগের দেড় শ’ বোঝা গয়নাগাটির সাথে এই নতুন স্বর্ণগয়নাও রাখলো ফারামারয। এরপর রওনা হলো শহরের উদ্দেশ্যে। শহরের কাছাকাছি গিয়ে ফারামারয বললো: এখানে তাঁবু গাড়তে হবে। মাল-সামান নামিয়ে রেখে তাঁবু গাড়া হলো। ফারামারয শহরের লোকজনকে খবর দিতে গেল। মনিবকে বললো: আমি যাচ্ছি আপনার বাবার কাছে। তাঁকে খবর দেবো যে আপনি এসেছেন। ফারামারয এই বলে চলে গেল মনিবের বাবার কাছে। গিয়ে দেখলো তাঁর বাবা অন্ধ হয়ে গেছেন, চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। জিজ্ঞেস করে জানলেন ছেলের জন্য কান্নাকাটি করতে করতে তিনি অন্ধ হয়ে গেছেন। ফারামারয বৃদ্ধের চোখে কী যেন একটা ওষুধ মালিশ করে দিলো আর অমনিই বৃদ্ধের চোখ ভালো হয়ে গেল।
বৃদ্ধ দেখলো তাঁর সামনা সামনি দাঁড়িয়ে ফারামারয। তাকে দেখে ভীষণ খুশি হয়ে গেল বৃদ্ধ। ফারামারয তাড়াতাড়ি বৃদ্ধকে নিয়ে রওনা হলো শহরের দিকে যেখানে তাঁবু গাড়া হয়েছে। যেতে যেতে তাঁবুর কাছে পৌঁছে গেল তারা। বৃদ্ধ ফারামারযকে বললো: এখানে আবার কারা তাঁবু গেড়েছে।
ফারামারয বললো: এরা সবাই আপনার ছেলের দাস দাসী। বৃদ্ধ আশ্চর্য হয়ে গেল। এগিয়ে গেল ভেতরের দিকে। তাকিয়ে দেখলো তার ছেলের দুই পাশে চতুর্দশী চাঁদের মতো দুই সুন্দরী কন্যা বসে আছে। ছেলে বাবাকে দেখেই উঠে এলো এবং আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে দীর্ঘ কোলাকুলি করে কান্নাকাটি করলো।
কোলাকুলিরত অবস্থাতেই বৃদ্ধ বাবা এবং ছেলে অজ্ঞান হয়ে গেল। ফারামারযের সেবায় তারা চেতনা বা জ্ঞান ফিরে পেল। এরপর তাদের নিয়ে রওনা হলো শহরের দিকে। বৃদ্ধের ছেলে আদেশ দিলো একটা সুন্দর বাগানবাড়ি তৈরি করতে। ওখানেই ছেলে তার বাসভবন গড়ে তুললো। সুন্দরভাবে বসবাস করার জন্য যা যা দরকার সবই ফারামারয জোগাড় করলো। আরামে, সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো তারা। ছেলে একদিন বাবার কাছে জানতে চাইলো তার অন্যান্য ভাইদের সম্পর্কে। বাবা তাদের কথা বলার পর ছেলে আদেশ দিলো তাদেরকে প্রাসাদে নিয়ে আসতে। তাই হলো। পরে তাদেরকে তার সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দিলো।
সবশেষে ফারামারয বললো: এখন তো সবকিছুই হলো। এবার যে লাশকে আপনি টাকা দিয়ে মুক্ত করে দাফন করেছিলেন তার জন্য কিছু দান-খয়রাত আর দোয়া দরুদের ব্যবস্থা করেন। মনিব কবুল করলো এবং সেদিনই মহা আয়োজন করলো। খানা-পানি আর মিষ্টি তবররুক যা যা দরকার সব প্রস্তুত করে পঞ্চাশটি বোঝা বানালো। সেগুলো নিয়ে কবরস্থানের দিকে রওনা হলো ব্যবসায়ীপুত্র আর ফারামারয। এতিম অনাথসহ সবাইকে খাওয়া দাওয়া দিয়ে ফারামারয গেল একটি কবরের পাশে। কবরের মাথার দিকটা ফাঁকা করে বললো: মনিব! আমি সেই লাশ যাকে আপনি এক শ’ তুমান দিয়ে মুক্ত করেছিলেন। আমি এসেছি সেই এক শ’ তুমানের ক্ষতিপূরণ দিতে। এখন তো আপনার চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হলো। এবার আমি আসি। খোদা হাফেজ। ফারামারয ঢুকে গেল কবরের ভেতর। কবর মাটিতে পুরে গেল। ব্যবসায়ী আর তার ছেলে যতোই ডাকাডাকি করলো কোনো জবাব দিলো না ফারামারয।