ফেরিওয়ালা বাহরাম

ফেরিওয়ালা বাহরাম

ইরানের মৌখিক সাহিত্য বেশ সমৃদ্ধ। সমৃদ্ধ এই কিসসাগুলোর মূল উপাদান অনেক সময় দৈত্য দানব, ভালো মানুষ মন্দ মানুষের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং সেই দ্বন্দ্বে ভালো মানুষের বিজয় ইত্যাদি। আমরা এ রকমই একটি গল্প শুনব আজকের আসরে।

অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক ফেরিওয়ালা ছিল। তার স্ত্রীর সবেমাত্র এক সন্তান হলো, পুত্রসন্তান। ফেরিওয়ালা তার পুত্র সন্তানের নাম রাখলেন বাহরাম। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপারটি হলো ছেলেটি শৈশবেই তার ফেরিওয়ালা বাবাকে হারালো। সে কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হলো বাহরামের মাকে। এতো কষ্টের পরও বাহরামের মা চেয়েছিল সন্তানকে উপযুক্ত মানুষ বানাতে। কী করে ছেলেটাকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায়, কী করে তাকে দায়িত্ব সচেতন করে তোলা যায়-সে ব্যাপারেই ছিল মায়ের সকল চিন্তা ভাবনা।

এভাবে কেটে গেল বহু বছর। বাহরামের বয়স গিয়ে দাঁড়ালো ষোলো বছরে। বাহরামের বাবার রেখে যাওয়া সম্পদের মধ্যে তেমন কিছুই ছিল না। মায়ের সম্পদ বলতে ছিল শুধুমাত্র চা বানানোর রূপালী রঙের একটি সামোভার।

সামোভার হলো চায়ের এমন এক পাত্র যার একদম ওপরে থাকে ছোট্ট একটি পাত্র, তাতে অল্প পানিতে চা পাতা সিদ্ধ হয়ে কড়া রঙ ধারণ করে। আর মূল পাত্রে থাকে পানি। বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাস যার সাহায্যেই হোক না কেন পাত্রের পানি ফুটে গরম হয়। ঐ পাত্রে একটি ছোট্ট ট্যাপ থাকে। চা খেতে হলে গ্লাসে বা কাপে ঐ ট্যাপ থেকে পানি ঢেলে সামোভারের ওপরে রাখা ছোট্ট পাত্রের গাঢ় রঙের লিকার থেকে খানিকটা মিশিয়ে নিতে হয়। যে যেমন রঙের চা খেতে অভ্যস্ত সেই পরিমাণ লিকার পানিতে মিশিয়ে খেতে হয়। এই হলো সামোভার।

তো এই সামোভার ছাড়া বাহরামের মায়ের সম্পদ বলতে আর ছিল ছোট্ট একটি ঘর। মা তাঁর সম্পদের একাংশ অর্থাৎ রূপালী সামোভারটি বাজারে নিয়ে গেল। কয়েকটি দোকানে মুলামুলি করে শেষ পর্যন্ত তিনি সামোভারটি তিন শ দেরহামে বিক্রি করে দিলেন। ঐ তিন শ দেরহাম থেকে এক শ দেরহাম বাহরামের হাতে দিলেন। হাতে দিয়ে সুন্দর করে বললেন তোমার বাবা ছিলেন ফেরিওয়ালা। ফেরিওয়ালা মানে হলো বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র বিক্রি করার কাজ। তো তুমি এই টাকাটা দিয়ে কিছু রেশমগুটি কিনবে এবং সেগুলো তোমার বাবার মতো বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি করবে।

বাহরামের মা আসলে চেয়েছিল তার ছেলেও যেন বাবার পেশা গ্রহণ করে এবং এ কাজে দক্ষ হয়ে ওঠে। বাহরাম মায়ের কথা অনুযায়ী টাকাটা নিয়ে বাজারে গেল। রেশম গুটি কেনার জন্যে যখন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরাঘুরি করছিল তখন তার নজরে পড়েছিল তিনটি যুবককে।

তারা গাধার পিঠে যে রকম ঝাঁপি রাখা হয় সে রকম একটি ঝাঁপিতে একটি বেড়ালকে ঢুকিয়ে লাঠি দিয়ে ঐ প্রাণীটাকে পেটাচ্ছিল। যুবকদের এ কাণ্ড দেখে বাহরাম সামনে এগিয়ে গেল। সে তাদেরকে বললোঃ তোমরা এই নিরীহ প্রাণীটাকে কেন শুধুশুধু মারছো? যুবকরা বাহরামের কথা শুনে খিলখিল করে একরকম উপহাসের হাসি হাসলো। হাসতে হাসতে বাহরামকে বললোঃ তোমার কি খুব খারাপ লাগছে? যদি একটা বেড়ালের জন্যে তোমার এতোটাই খারাপ লেগে থাকে, যদি ওর জন্যে তোমার হৃদয় পুড়ে থাকে তাহলে এক কাজ করো! আমাদের এক শ দেরহাম দাও! আমরা বেড়ালটাকে আর মারবো না, ছেড়ে দেব।

বাহরাম মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। একদিকে নিরীহ একটি প্রাণীর মুক্তি। অপরদিকে তার জীবন জীবিকার যোগান, মায়ের দেওয়া আমানত। বাহরাম চিন্তা করতে করতে যুবকেরা বেড়ালটাকে আরো বেশি পেটাচ্ছিল। বেড়ালটা মিউ মিউ করে চীৎকার করছিল। বাহরামের আর সহ্য হচ্ছিল না। সে মায়ের দেওয়া এক শ দেরহাম যুবকদের হাতে দিয়ে বেড়ালটাকে মুক্ত করে দিলো। বেড়ালটা বিচ্ছুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে বাহরামের দিকে তাকিয়ে ছিল। সে বাহরামকে বললো- ‘দয়া এবং ভালোবাসার কথা কখনো ভোলা যায় না।’ এই বলেই বেড়ালটা দুষ্ট ছেলেগুলোর কাছ থেকে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচলো।

বাহরাম শেষ পর্যন্ত খালি হাতেই ঘরে ফিরে গেল। মা যখন কারণ জানতে চাইলো, বাহরাম সব কথা মাকে খুলে বললো। পরদিন সকালবেলা মা আরো এক শ দেরহাম দিলো বাহরামকে। বললো রেশম গুটি কিনে নিয়ে আসবে। বাহরাম যথারীতি আজো বাজারে গেল। কিন্তু আজো সে দেখলো কটা ছেলে একটা কুকুরকে জ্বালাতন করছে। কুকুরটা কষ্টে কাতরাচ্ছে। বাহরাম রেগেমেগে চীৎকার করে বললো-কেন কুকুরটাকে পেটাচ্ছো তোমরা। ছেড়ে দাও! দুষ্ট ছেলেরা বললোঃ কেন, তোমার খারাপ লাগছে বুঝি! বেশি খারাপ লাগলে এক শ টা দেরহাম দাও, আমরা কুকুরটাকে ছেড়ে দেবো।’ বাহরাম নিরূপায় হয়ে তাই করলো। কুকুরটা মুক্তি পেয়ে বাহরামের দিকে তাকিয়ে বললো-“যে হাতে দেবে, সে হাতেই নেবে”। এই বলে কুকুরটা দ্রুত চলে গেল।

বাহরাম আজো খালি হাতে বাসায় ফিরে মাকে ঘটনা খুলে বললো। পরদিন সকালবেলা মা বাহরামের হাতে আরো এক শ দেরহাম দিয়ে বললোঃ বাবা! এটাই আমাদের শেষ সম্বল। এই টাকাটা নিজেদের মুক্তির জন্যে খরচ করো’। বাহরাম টাকাটা নিয়ে আজো বাজারে গেল। বাজারে গিয়ে রেশম গুটি খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে গেল। রাত হয়ে গেল, তবু রেশম গুটি মিললো না। এই দোকান সেই দোকান খুঁজে খুঁজে একেবারে বাজারের শেষ প্রান্তে গিয়ে পৌঁছলো। ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে এক কোণে খানিক বিশ্রাম নিতে বসলো। হঠাৎ তার নজরে পড়লো কয়েকজন লোক একটা বস্তা নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।

কেউ কেউ আগুন জ্বালালো। তাদের একজন চেয়েছিলো বস্তাটাকে আগুনে ফেলে দিতে। বাহরাম তখন বললোঃ বস্তার ভেতরে কী? তারা বললোঃ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, নরম শরম এবং বিভিন্ন রঙের একটি সুদর্শন প্রাণী।’ বাহরাম বললোঃ এটা গুনাহের কাজ। বস্তাটা খুলে প্রাণীটাকে ছেড়ে দাও, ও চলে যাক। এভাবে তাকে আগুনে পুড়িয়ে মেরো না। যারা আগুন জ্বালিয়েছিল, তাদের একজন বললোঃ এক শ দেরহাম দাও, মারবো না, ছেড়ে দেবো।

বাহরাম অগত্যা নিজের শেষ সম্বল এক শ দেরহাম দিয়ে প্রাণীটাকে বাঁচালো। বস্তাটা নিয়ে সে মরুভূমির দিকে চলে গেল। বস্তার মুখ খুলতেই বাহরামের অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেল।

বস্তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো প্রকাণ্ড একটা সাপ। বাহরাম ভয়ে জবুথবু হয়ে পেছনের দিকে যেতে চাইলো। কিন্তু সাপ বলে উঠলোঃ পালাচ্ছো কেন? তুমি না আমাকে বাঁচিয়েছো! এসো আমরা বন্ধু হই।

বাহরাম বিচিত্র শঙ্কা আর চিন্তিত মনে বসে পড়লো। যেহেতু সে সাপের মুক্তির জন্যে সব টাকা খরচ করে ফেলেছিল,সেহেতু সে ভেবে কূল পাচ্ছিলো না মাকে গিয়ে কী বলবে। সাপ জিজ্ঞেস করলোঃ কীসের জন্যে দুশ্চিন্তা করছো? বাহরাম সবকথা খুলে বললো। সাপ বললোঃ আমার সাথে এসো! আমার বাবা সাপের রাজা। আর আমি একমাত্র শাহজাদা। তুমি আমার বাবাকে আমার মুক্তির কথা খুলে বলবে। বাবা যদি তোমাকে পুরস্কার দিতে চায়, বলবে-আমি হযরত সোলায়মানের আংটিটা চাই।

এই বলে শাহজাদা বাহরামকে একটা গুহায় নিয়ে গেল। বাহরাম সাপের রাজাকে সব ঘটনা খুলে বললো এবং রাজা কী পুরস্কার চাও, জানতে চাইলে বাহরাম সোলায়মানের আংটি চাইলো। সাপের রাজা বললোঃ এই আংটি যদি কোনো খারাপ লোকের হাতে যায় তাহলে পৃথিবীটাকে নরক বানিয়ে ছাড়বে। শাহজাদা বললো বাহরাম খুবই ভালো মানুষ, সমস্যা নেই। সাপের রাজা আংটিটা বাহরামকে উপহার দিলো। বাহরাম আংটিটা নিয়ে রাজাকে ধন্যবাদ জানালো। শাহজাদা বাহরামকে শহর পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বললোঃ এই আংটিটা ডান হাতের মাঝের আঙুলে পরিয়ে বাম হাতটা যখনই আংটির পাথরের ওপর রাখবে, আংটির গোলাম তোমার সামনে হাজির হয়ে যাবে। তুমি তখন যা চাইবে তাই সে তোমার জন্যে নিয়ে আসবে।

পাঠক! আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে গেল আসরে আমরা ফেরিওয়ালার ছেলে বাহরামকে দেওয়া সাপের রাজার আংটির গল্প শুনিয়েছিলাম। যাদুকরি ঐ আংটি দিয়ে বাহরাম কী করেছিল সেই গল্প শোনাবার সময় ছিল না। এ পর্বে গল্পের বাকী অংশ উপস্থাপন করা হলো:

বলেছিলাম, সাপের রাজা হযরত সোলায়মানের আংটিটা বাহরামকে উপহার দিয়েছিলো। বাহরাম আংটিটা নিয়ে রাজাকে ধন্যবাদ জানালো। আর শাহজাদা বাহরামকে শহর পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বলেছিলোঃ এই আংটিটা ডান হাতের মাঝের আঙুলে পরিয়ে বাম হাতটা যখনই আংটির পাথরের ওপর রাখবে, আংটির গোলাম তোমার সামনে হাজির হয়ে যাবে। তুমি তখন যা চাইবে তাই সে তোমার জন্যে নিয়ে আসবে।

এই বলে শাহজাদা গূহায় ফিরে গেল। বাহরাম ভীষণ ক্ষুধার্ত ছিল। সে সোলায়মানি আংটিটার মূল্যবান পাথরের ওপর হাত বুলালো।অমনি আংটির গোলাম এসে হাজির হয়ে গেল। বাহরাম তাকে বললোঃ ‘আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে, আমার জন্যে কিছু পোলাও মিষ্টি আনো।’ নিমিষেই সেসব খাবার এসে গেল এবং বাহরাম মজা করে খেলো। খেয়ে দেয়ে বাসায় ফিরে মাকে সব ঘটনা খুলে বললো। মাকে সে আরো বললোঃ মাটির এই পুরোণো ছোট্ট ঘরটা ভেঙ্গে একটা প্রাসাদ বানালে কেমন হয়।

মা বললোঃ না, আমার ঘরটা রেখে পাশে তুই তোর জন্যে প্রাসাদ বানা।

মায়ের অনুমতি পেয়ে বাহরাম অমনি দিলো আংটির পাথরে ঘঁষা। আংটির গোলাম এসে হাজির হয়ে গেল। বাহরাম বললোঃ একটা চমৎকার প্রাসাদ বানাবে। প্রাসাদে চাকর বাকর, সাজসজ্জার সব যেন সুন্দর হয়। চোখের পলকেই সেসব হয়ে গেল। তারপর থেকে বাহরাম রাজকীয় জীবন যাপন করতে লাগলো। তবে একটাই কম ছিল, সেটা হল সুন্দরী একটা বৌ। তারও ব্যবস্থা হলো। কীভাবে হলো জানেন?

বাহরাম একদিন উন্নত এক ঘোড়ায় চড়ে রাজপ্রাসাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ তার নজরে পড়লো রাজকুমারীকে। রাজকুমারী প্রাসাদের ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে ছিল। তাকে দেখেই বাহরামের ভালো লেগে গেল। দ্রুত বাসায় ফিরে গিয়ে মাকে বললো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে। মা রাজপ্রাসাদে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতেই উজিরের পরামর্শে কঠিন শর্ত দিয়ে বসলো। বললোঃ আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হলে সাতটি উটের পিঠ বোঝাই করা রূপা, মেয়ের মাথার মুকুটের জন্যে সাতটি ডায়মন্ড, সাতটি জার ভর্তি খাঁটি স্বর্ণ, মুক্তা দিয়ে বোণা সাতটি গালিচা নিয়ে আসতে হবে।

মা রাজার শর্ত বাহরামকে বললো। বাহরাম আংটির গোলামকে দিয়ে সহজেই সেসব শর্ত পূরণ করে সাতদিন সাতরাত ধরে উৎসব করে রাজকন্যাকে বিয়ে করে নিজ প্রাসাদে নিয়ে এলো। কিন্তু পাহাড়ের পেছনেই ছিল তাতারিদের এলাকা। তাতারি শাহজাদা কয়েক বছর আগে থেকেই রাজকন্যাকে ভীষণ ভালবাসতো। তাই এক ফেরিওয়ালার ছেলে রাজকন্যাকে বিয়ে করে নিয়ে যাওয়ায় ভীষণ কষ্ট পেলো। সে এক ধূর্ত বুড়িকে পাঠালো ফেরিওয়ালার ছেলের ধনী হবার রহস্য আবিষ্কার করার জন্যে। বুড়ি বাহরামের স্ত্রীর কাছে গিয়ে বললো সে অসহায় এক নিঃসঙ্গ মানুষ। বুড়ির কথা শুনে বাহরামের স্ত্রীর মন গলে গেল। সে বুড়িকে বললোঃ তুমি যতোদিন খুশি এখানে থাকতে পারো, অসুবিধা নেই। এভাবেই বুড়ি থেকে গেল আর সুযোগ খুঁজতে লাগলো রহস্য উদঘাটনের।

বুড়ি একদিন বাহরামের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলোঃ তুমি কি জানো তোমার স্বামী এতো সম্পদের মালিক হলো কীভাবে? সে বললোঃ না তো।

বুড়ি বললোঃ কেন জানো না, তুমি তো তার স্ত্রী, তোমার অবশ্যই জানা উচিত।

বাহরামের স্ত্রী ভাবলোঃ সত্যিই তো। সে কারণেই সে বাহরামকে একদিন জিজ্ঞেস করলো। বাহরামও সত্যি ঘটনা বৌকে সুন্দরভাবে খুলে বললো, এমনকি আংটিটা কোথায় রাখে, তাও দেখিয়ে দিলো। পরদিন বুড়ি কৌশলে সব জেনে নিলো এবং তার ক’দিন পরই বুড়ি আংটিটা নিয়ে পালিয়ে গিয়ে তাতারি শাহজাদার হাতে সঁপে দিলো।

তাতারি শাহজাদা আংটির পাথরে ঘঁষা দিতেই গোলাম এসে হাজির। শাহজাদা গোলামকে বললো-আমি চাই রাজকন্যা হবে আমার স্ত্রী আর ফেরিওয়ালার ছেলের সম্পদ হবে ফেরিওয়ালার মতোই, তার বেশি না। শাহজাদার হুকুম সাথে সাথেই তামিল হয়ে গেল। বাহরামের প্রাসাদ হাওয়া হয়ে গেল। তার স্ত্রীকে দেখা গেল তাতারি শাহজাদার পাশে। বাহরাম এ সময় মরুভূমিতে তার চাকর বাকরসহ ঘোড়া দৌড়াচ্ছিল। হঠাৎ করেই তার সবকিছু উবে গেল। কোনো কিছুই থাকলো না কেবল তার গায়ে জরাজীর্ণ একটা পোশাক ছাড়া। বাহরাম প্রাসাদের দিকে ফিরে গিয়ে দেখলো-প্রাসাদ বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্বই নাই। সবকিছু আগের মতো হয়ে গেল। সেই পুরোণো ছোট্ট মাটির ঘর, সেই গরিবি অবস্থা। বাহরাম বুঝতে পারলো-তার আংটিটি চুরি হয়ে গেছে। সেজন্যে তার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।

মা বললো-উড়ে আসা জিনিস এভাবেই হাওয়ায় মিলে যায়। আমার কাছে কিছু টাকা আছে। এগুলো নিয়ে বাজারে যা। তোর বাবা যে কাজ করতো, সে কাজে আবার লেগে যা। রেশম গুটি কিনে আন। বাহরাম ভারাক্রান্ত মনে বাজারে গেল ঠিকই, কিন্তু কোনো রেশম গুটির দোকানই খুঁজে পেলো না। রাত হয়ে এলে অগত্যা মন খারাপ করে সে শহরের পাশেই একটি বিশ্রামাগারের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়লো। সেখানে কোত্থেকে যেন বেড়াল, কুকুর আর সাপ এসে জড়ো হলো। এদের সবাইকে একদিন বাহরাম বাঁচিয়েছিল। তারা সবাই এখন জানতে চাইলো মন খারাপের কারণ কী? বাহরাম সব ঘটনা খুলে বললো। সাথে সাথে কুকুর এবং বেড়াল গেল পশু পাখিদের কাছে। গিয়ে জানতে চাইলো বাহরামের শত্রুর ব্যাপারে। একটা পাখি বললোঃ তাতারি শাহজাদার এক বুড়ি চাকরানী ঐ আংটিটা চুরি করে নিয়ে গেছে।

পরদিনই বেড়াল এবং কুকুর তাতার শহরের দিকে রওনা হলো। বিড়াল বললোঃ কী করবো এখন?

কুকুর বললোঃ তুই প্রাসাদের ভেতরে যাবি। রাজকন্যাকে খুঁজে বের করে জিজ্ঞেস করবি আংটিটা কোথায় আছে। এটুকু জেনেই ফিরে আসবি,যা।

রাজকন্যা যখন বুঝতে পারলো বেড়ালটা তার স্বামীর পক্ষ থেকে এসেছে, দেরি না করে তাকে বললোঃ শাহজাদা সবসময় আংটিটা তার হাতে রাখে আর ঘুমানোর সময় মুখে পুরে রাখে।

বেড়াল এটুকু জেনেই ফিরে গেল কুকুরের কাছে। তাকে সব বললো। কুকুর একটা ফন্দি আঁটলো।

পরবর্তী রাতে শাহজাদা যখন ঘুমিয়ে পড়লো, বেড়াল রান্নাঘরে গিয়ে একটা ইঁদুরকে ধরে বললোঃ বাঁচতে চাইলে যা বলি তাই করবি। যা, তোর লেজটাকে মরিচের গুঁড়ার পাত্রে ঢুকিয়ে ভালো করে মরিচ মাখিয়ে নে। ইঁদুর তাই করলো। এবার বেড়াল শাহজাদার রুমে গেল, ইঁদুরও। বেড়ালের আদেশ অনুযায়ী ইঁদুর শাহজাদার বুকে উঠে লেজটা শাহাজাদার নাকে ঢুকিয়ে দিলো। শাহজাদা তখন ভীষণ জোরে হাঁচি দিলো, অমনি তার মুখ থেকে আংটিটা বেরিয়ে এসে পড়লো ফ্লোরে। বেড়াল আংটিটা মুখে নিয়ে সাথে সাথে জানালা দিয়ে বাইরে অপেক্ষমান কুকুরের কাছে দিয়ে দিলো। কুকুর আংটিটা নিয়ে দ্রুত দৌড়ে গেল জঙ্গলের দিকে। পরে বেড়াল এবং কুকুর আংটিটা নিয়ে বাহরামের হাতে তুলে দিলো।

বাহরাম দেরি না করে আংটির পাথরের ওপর হাত বুলালো। অমনি আংটির গোলাম এসে হাজির হয়ে গেল। এভাবে বাহরাম ফিরে পেল তার স্ত্রীকে, ফিরে পেলো তার হারানো প্রাসাদ আর সকল সম্পদ। সবকিছু ফিরে পাবার পর বাহরাম হযরত সোলায়মানের আংটিটা যাতে আর কোনো খারাপ লোকের হাতে না পড়ে, সেজন্যে ছুঁড়ে ফেলে দিলো সমুদ্রের গভীর অতলে। কে জানে, সমুদ্রের তলদেশে এতো যে সম্পদ সেগুলো ঐ আংটির কারণে কি না। পাঠক! আপনাদের কী ধারণা।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত