নদীর জলে কার রক্ত

নদীর জলে কার রক্ত

ন্যাড়া, ভালো নাম নাজিম। সে প্রায়ই নদীর পাড়ে একাকী দাড়িয়ে থাকে। আর আনমনে কী যেনো বলে, তবে কিছু বোঝা বা শুনা যায় না। আজো সে নদীর পাড়ে একা দাড়িয়ে কি যেনো বিড়বিড় করেই যাচ্ছে। আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। ন্যাড়া কতটা খেয়াল করলো তা জানিনা। শেষে আমি বললাম কিরে ন্যাড়া এখানে দাড়িয়ে কি বিড়বিড় করছিস? কিছুতো শুনতে পাচ্ছি না। আমি কি বিড়বিড় করছি এটা তুই বুঝবি না মানিক। বললে আবার বুঝবো না , তুই বল আমি ঠিক বুঝবো। আমি আমার মায়ের সাথে কথা বলছি। তোর মা কোথায়, এখানে তে কেউ নেই। আমার মাকে দেখা যায় না, শুধু মায়ের কথাগুলো আমি শুনতে পাই। মনে মনে ন্যাড়ার জন্য খুব দুঃখ হলো। গ্রামের মানুষের কাছ থেকে শুনেছিলাম ন্যাড়ার পাঁচ বছর বয়সে মা মারা গেছে এই নদীর বুকে ঝাপ দিয়ে। কার সাথে অভিমান করে কেউ জানে না। গত বছর তার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ন্যাড়া তার মাকে কখনো দেখেনি। তার এক খালা এসেছিলো ওর বাবা মারা যাওয়ার পর। ন্যাড়া এখন তার খালার সাথে থাকে। মানিক তুই এখানে কিভাবে এলি। তোকে খুজঁতো খুজঁতে চলে এলাম, তুই কি করে জানলি আমি এখানে। তোদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, তোর নাম ধরে ডাকতেই তোর খালা ঘর থেকে বেরোলো। বললো তুই অনেকক্ষণ আগে ঘর থেকে বেরিয়ে নদীর পাড়ের দিকে এসেছিস। হঠাৎ তোর কথা মনে পড়লো আর বাড়ীতে একা বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না। তোর সাথেও অনেকদিন দেখা হয় না। তাই ভাবলাম একটু দেখা করবো কিছুক্ষণ গল্প করবো। দু’ জনে নদীর পাড়ে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। বিকেলের শেষে দু’জনে বাড়ির পথে ফেরার সময় জামাল আর করিমের সাথে দেখা।
জামাল ছেলেটা বড় বদমাশ, বাপের অনেক ক্ষমতা আছে বলে সারা গ্রাম গুন্ডামি করে বেড়ায়। মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না। কিরে মানিক আজকাল তাহলে চোরের সাথে বন্ধুত্ব করছিস। অযথা জামাল ন্যাড়ার বুকে ধাক্কা দিয়ে বললো এই চোর ঐদিনের মারের কথা মনে আছে তো? না হয় আরেক বার মেরে তোকে ভর্তা বানিয়ে দেবো। ন্যাড়া সাথে সাথে জামিলের গায়ের জোরে ধাক্কা দিয়ে বললো, আমি চোর না, তুই চোর। হারুন চাচার দোকান থেকে তুই টাকা চুরি করে আমার নাম দিয়েছিলি। সবাই মিলে আমার মাথার চুল ফেলে ন্যাড়া বানিয়েছিস। আমার নাম নাজিম ন্যাড়া বলছিস কেন? জামিল চিন্তাও করতে পারেনি যে এই গ্রামের কোন ছেলে তার গাঁয়ে হাত দিবে। কয়েক মিনিট লাগলো বুঝতে। যখন বুঝতে পারলো তখন রেগে চোখ লাল করে আবার তেড়ে এলো, ন্যাড়ার সামনে আসতেই আমি তাকে ধরে ফেলি। আমার হাতকে ঝেড়ে ফেলে সে আবার ন্যাড়াকে গাড় চেপে ধরে বললো , আমার গায়ে হাত দেওয়া। শালা তোর গাড় থেকে মাথা আলাদা করে দেব। জামাল তার হাত উল্টে পিটে কয়েকটা ঘুষি মারলো। সাথে সাথে ন্যাড়া পায়ে কল মেরে জামালকে আছড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ায়। তারপর পা তুলে জোড়ে জামালের পেটে এক লাথি বসালো যে জামাল পেট চেপে ধরে শুয়ে পড়ে। এই রাজাকারের বাচ্চা মারপিট করতে হয়তো তোর মতন হাতি খুজেঁ তারপর মারপিট করবি, আমার মতো বাচ্চা ছেলেরে সাথে মারমারি করতে আসবি না। জামালের সাথে ন্যাড়ার মারপিটের কোন প্রশ্নই আসে না। মারপিটের সময় গায়ের জোরটাও ব্যাপার। কিন্তু ন্যাড়ার খুব সাহস , তার মনে ভয়ের চিহ্ন মাত্র নেই। জামাল ন্যাড়ার চাইতে বেশ কয়েক বছরের বড়। উঠার সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বললো আমার বাবাকে বলে তোর গ্রাম ছাড়ার ব্যাবস’া না করেছি তবে আমার নামও জামাল নয়। এই বলে জামাল আর করিম চলে গেল। আমি আর ন্যাড়া দুজনেই যে যার বাড়িতে চলে এলাম।

পরের দিন সকালবেলা খুব দেরিতে ঘুম ভাঙ্গলো। নাস্তা করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম কিছু দূর এসেই ন্যাড়ার কথা মনে পড়লো , আর একটু এগোতেই ন্যাড়ার সাথে দেখা হল। ন্যাড়াকে দেখে মনে হচ্ছে ওর মনটা খুব খারাপ। সামনে গিয়ে ন্যাড়াকে বললাম তোর মনটা কি খুব খারাপ। হ্যাঁ মানিক। জানতে চাইলাম কেন তুই কিছু শুনিসনি। না তো আমি তো কিছুই শুনিনি। কালরাতে পাকিস্তানি মিলিটার আমাদের গ্রামে ঢুকেছে।মিলিটারির গানবোট এসে থেমেছে নদীর ঘাটে। যেখানে আমি আর তুই বসে একসাথে গল্প করেছিলাম। কয়েকশ মিলিটারি নেমেছে গানবোট থেকে। তাহের চেহারা দেখতে দৈত্যের মতো। আচ্ছা ন্যাড়া তুই জামালকে রাজাকারের বাচ্চা কেন বলেছিস, ওর বাবা জাফর আলী পাকিস্তানের চামচা। দেখিস নি মাথায় সারাক্ষণ টুপি পড়ে আর পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে। হারুন চাচার দোকানে গিয়েছিলাম, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে। উনি কান্না করছিলেন। প্রথমে বুঝতে পারিনি, ওনার চোখের এক ফোটা পানি আমার হাতে পড়েছিলো।
আমি জানতে চাইলাম তুমি কাদঁছো কেন হারুন চাচা। ওই দিন তোকে সবাই মিথ্যে চোরের বদনাম দিয়েছে , আমি জানি তোর কোন দোষ ছিলোনা। জাফর আলীর ভয়ে আমি কিছু বলতে পারিনি। সেতো এক রাজাকার। এই দোকান দিয়ে কোনরকম আমার সংসার চলে। যদি সত্যি কথা বলতাম তাহলে জাফর আলী আমাকে মেরে ফেলতো। তুমি দুঃখ করোনা হারুন চাচা। আমার মা-বাবা নাই তো কি হয়েছে তোমাদের মতো ভালো মানুষ এই গ্রামে আছে বলে তো আমি এখনো আছি। আর জামালকে আমি শাস্তি দিয়ে দিয়েছি। বাদ দাও ওসব কথা। আর আমি আর হারুন চাচার দোকানে বসে রেডিওতে খবর শুনেছি। মিলিটারিরা নাকি ঢাকা শহরে অনেক মানুষকে মেরেছে , অনেক মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দিয়েছে এজন্য সারাদেশে মিছিল হচ্ছে, গোলাগুলি হচ্ছে। দলে দলে মানুষ মুক্তিযুদ্বে যোগ দিচ্ছে তোদের স্কুলে মুক্তিবাহিনীর একটা ট্রেনিং সেন্টার খোলা হয়েছে, ছেলের সেখানে ট্রেনিং নিছে। মিলিটারিরা এখন তোদের স্কুল দখল করেছে। চারিদিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বড় যুদ্ধ হবে এই দেশে। হারুন চাচা বলেছে গ্রামে অনেক ছেলে ভারতে ট্রেনিং নিতে চলে গেছে , তারা যে দিন ফেরা শুরু করবে তখন মিলিটারিদের খতম করে দেশকে রক্ষা করবে। আমরা স্বাধীন দেশ পাবো। ন্যাড়া পকেট থেকে একটা কাপড় বের করে আমাকে দিলো। কি এটা? আরে বেকুব পতকা এটার জন্যই যুদ্ব হচ্ছে।

বাইরে বের হয়ে রাস্তাঘাট দেখে বুঝতে পারলাম আজ সোমবার। আমাদের গ্রামের বাজার বসে প্রতি সোমবারে। আশেপাশের গ্রাম থেকে লোকজনরা বিক্রির জন্য নানারকম জিনিসপত্র নিয়ে আসত। সোমবারের বাজারে পাওয়া যেত না এমন কলন জিনিস নেই। গ্রামে মিলিটারি আসার পর থেকে বাজার সব উঠে গেছে। মুক্তিযোদ্বারা আড়ালে চলে গেছে। আমি কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে ঘুরে ফিরে এলাম। মা-বাবা দুজনের কড়া আদেশ আমি যেন ঘর থেকে বাইরে না বের হই। রাজাকার বাহিনী মিলিটারি নিয়ে মানুষজনদের ঘরবাড়ি লুটপাট করে। আবার যদি জানতে পারে কেউ মুক্তিবাহীনিতে গেছে তাদের ঘরবাড়ি তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সপ্তাহখানেক পর আমার সাথে ন্যাড়ার দেখা। সে জানালো হারুন চাচা মুক্তিবাহীনিতে যোগ দিয়েছে। এটা শুধু ন্যাড়াকে বলেছে। আর কাউকে বলতে নিষেধ করেছে। ন্যাড়া আবার সব কথা আমাকে বলে দেয়। আমি কাউকে কিছু বলবোনা সে কথা ন্যাড়া জানে। জানিস মানিক আমি হারুন চাচাকে বলেছি আমাকে মুক্তিবাহীনিতে নিয়ে যেতে। আমি যুদ্ধ করবো। তুই যুদ্ধ করবি , তুই এখনো ছোট। তোর তো কেউ নেই। কে বলেছে আমার কেউ নেই। আমার একটা সুন্দর দেশ আছে, দেশের অনেক মানুষ আছে, নদী আছে কতকিছুই না আছে। আমি এদেশের জন্য যুদ্ধ করবো। তোকে নেবে বলেছে। বলেছে যদি কোন ধরনের হয় তখন আমাকে বলবে।
আর এমনিতেই আজকে রাতে আমাকে মুক্তিবাহিনীর যোদ্বাদেও কাছে নিয়ে যাবে বলেছে। তুই তাহলে তাদের দেখতে যাবি। শুধু আমি দেখতে যেতে পারবো না। তোকে তে ঘর থেকে বেরোতে না করে দিয়েছে। নাহলে হারুন চাচাকে বলে তোকে সহ নিয়ে যেতে পারতাম। রাতে আমার আর ঘুম হয়নি। সকাল হতেই আমার মুক্তিবাহীনির সম্পর্কে জানার কৌতুহলটা বেড়ে গেল। তাড়াতাড়ি নাস্তা সেরে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম। ন্যাড়ার সাথে দেখা করার জন্য। আবার ভাবলাম ও কি চলে এলো। যাহোক। গিয়ে তো দেখি। ন্যাড়া স্কুল থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে আসছিলো। আমাকে দেখে থেমে গেল। ন্যাড়া তুই এভাবে দৌড়াচ্ছিলি কেন। তোর তো কালকে রাতে মুক্তিবাহীনিতে যাবার কথা ছিলো, তাহলে স্কুল মাঠের ওখানে কি করতে গিয়েছিলি।
বলছি বলছি তোকে সব বলছি মানিক। আগে আমি মুক্তিবাহীনিকে খবরটা দিয়ে আসি। তারপর তোকে সব বলবো। কি খবর এখন বল। এখন সময় নেই মানিক। তুই বিকেলে নদীর ধারে আমার সাথে দেখা করিস তখন সব বলবো। আমি আর ওকে কোন জোর করিনি। ও আবার দৌড়াতে থাকল। বিকেলে ওকে দেখে মনে হলো ও খুব স্বস্তিবোধ করছে। যেন মাথার ওপর থেকে চাপ সরাতে পেরেছে। আমি পাশে গিয়ে ওর কাধেঁ হাতটা রাখলাম। বুঝতে পারলাম ও আমাকে খেয়াল করেনি। মানিক তুই বস। এবার বল সকালে এভাবে দৌড়ালি কেন। তোকে বলেছিলাম না কাল রাতে আমি আর হারুন চাচা মুতিবাহীনির ক্যাম্পে যাবো। রাতে আমরা যাওয়ার সময় আফজাল আমাদের দেখে ফেলেছে। আফজাল একটা রাজাকার। সে আমাদের পেছন পেছন পোড়া বাড়ীর জঙ্গলে মুক্তিবাহীনির ক্যাম্প পর্যন্ত চলে গিয়েছিলো। আমি আর হারুন চাচা কেউ সেটা খেয়াল করিনি। ভোর হতেই আফজাল মেলিটারি নিয়ে হারুন চাচার বাড়ীতে আগুন দিয়েছে। সেখানে আফজাল রাজাকার আম গাছের নিচে দাড়িয়ে ওদের একটা চোরা রাস্তা বানিয়ে আক্রমণের কথা বলছে। যাতে কেউ তাদের কোনরকম সন্দেহ না করে। আমি আড়ালে দাড়িয়েছিলাম ওরা কি বলছে সেটা শুনার জন্য। আফজাল আমাদের ব্যাপারে সব কথা মিলিটারিদের বলে দিল। মুক্তিবাহিনীর ওপর নাকি আজ রাতে অপারেশন চালাবে। সেটা শুনে আমার গা কাপতেঁ শুরু হলো। এখন যাই হারুন চাচার সাথে দেখা করতে হবে রাতে কি ঘটে কেউ জানে না। ন্যাড়াকে বিদায় দিয়ে বাড়ী ফিরলাম। ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায় ছিলাম। তার মুখে শুনেছি মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে কেমন। গালভর্তি দাড়ি,লম্বা চুল, চেহারাটা শুকনো যেন অনেক দিন ধরে দানা পানি কিছু পেটে পড়েনি। তবে ওরা খুব ভালো। ওদের সবার মুখে এক কথা দরকার হলে দেশের জন্য নিজের জীবন দিয়ে দেব কিন’ নিজের দেশের এক মুটো মাটিও পাকিস্তানি মিলিটারিদের জন্য ছাড় দেবেনা। এরপর আরো অনেক কথা।
শুনতে খুব ভালো লাগলো। রাতে খুব ভালো ঘুম হলো। সকালে উঠে খুব ভালো খবর শুনলাম। মিলিটারিরা মুক্তিবাহিনীর কোন ক্ষতি করতে পারেনি। মুক্তিবাহিনীরা বুদ্ধি খাটিয়ে উল্টো তার আগেই মিলিটারিদের ক্যাম্প উড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় অনেক মিলিটারি মারা গেছে। কয়েকজন আহত মুক্তিযোদ্বাও হাসপাতালের বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে। সুস’ হয়ে উঠতে সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। আর তার জন্য মুক্তিযোদ্বারা ন্যাড়ার নাম বলছে তার সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ করা বেশ কষ্টকর হতো।

সপ্তাহখানেকের মধ্যে আফজাল রাজাকার ঘর থেকেই বের হয়নি। জাফর আলীকেও তেমন একটা দেখা য়ায়নি। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামে আবার মিলিটারি এলো। জাফর আলী কয়েকজন মিলিটারি নিয়ে ন্যাড়ার বাড়িতে গিয়েছিলো। পুরো ঘরটা হন্ন হয়ে খুজেঁও ন্যাড়াকে পাওয়া গেলো না। ন্যাড়াকে না পেয়ে তার খালাকে মিলিটারি ক্যাম্পে নিয়ে গেল। যাওয়ার সময় ঘরটাকে জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। সেদিন রাতে ন্যাড়া মুক্তিবাহিনীর সাথে ছিলো। তাই প্রাণে বেচেঁ গেছে। সকালে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প থেকে লুকিয়ে নিজের বাড়ীর করুণ দৃশ্য দেখতে এলে জাফর আলী ন্যাড়াকে ধরে ফেলে। তারপর তাকে নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে বট গাছের সাথে তাকে বেধেঁ ইচ্ছে মতো লাঠি পেটা করে। গ্রামের সাধারন মানুষের সামনে জাফর আলী বিকট শব্দে চেছিয়ে বলে- শালা সাপের বাচ্চা সাপ হয়েছিস না। আমাকে রাজাকারের বাচ্চা বলিস আমার ছেলের গায়ে হাত তুলিস। এবার দেখ রাজাকার তোকে কি শাস্তি দেয়। বলেছিলি না আমাকে আর আমার ছেলেকে দা দিয়ে গাড় থেকে মাথা আলাদা করে দিবি। আয় এবার কে কার মাথা গাড় থেকে আলাদা করে দেখি। শালা হারামির বাচ্চা। গায়ে দু পয়সার জোড় নেই উনি এসেছেন আবার যুদ্ধ করতে। দড়ি খুলে তাকে রাজাকার জাফর আলী তাকে নদীর পাড়ে নিয়ে যায় তারপর রামদা দিয়ে এক কোপে মন্ডুটা আলাদা করে ফেলে তারপর মুন্ডুটা নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে লাশটা নদীর পাড়ে ফেলে চলে যায়। ন্যাড়ার রক্তে সেদিন কর্ণফুলীর পানি লাল হয়েছিল। যেখানে আমি আর ন্যাড়া বসে গল্প করতাম সেখানে আমরা কয়েকজন মিলে ন্যাড়ার মুন্ডুহীন দেহ দাপন করি। এর কয়েকদিন পর দেশ স্বাধীন হয়। আমরা ঘরে বসে রেডিওতে স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার খবর শুনছিলাম। পাকিস্তানিরা পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। সবাই এখন বিজয়ের মিছিল করছে। জয় বাংলা – জয় বঙ্গবন্ধু। একে একে সবাই ফিরে আসে। সবাই নিজেদের ঘরবাড়ী মেরামত করার কাজে লেগে যায়। কিন’ ন্যাড়া তো ফিরবে না। শহীদ হয়েছে। তারপর পড়ালেখা করতে নগরে থাকি। একদিন ন্যাড়া কথা মনে পড়ছিলো খুব। ততদিনে মুজিবকে হারিয়েছে জাতি। ডিসেম্বরে বাড়ী গেলাম দেখলাম ন্যাড়ার ভিটের উপর পাকা দালান।
তাতে খোদানো লেখা শহীদ নাজিম স্মৃতি সংসদ। প্রতিষ্টাতা বিশিষ্ট সমাজসেবক জাফর আলী। গায়েঁর নতুন প্রজন্ম জাফর আলীর নামে শ্লোগান দিচ্ছে। আমি সেই নদীর পাড়ে গিয়ে দাড়ালাম। মনে হলো ন্যাড়ার মুন্ডুটা নদীর জলে ভাসছে। আর আমাদের ধিক্কার দিচ্ছে। ভুলে গেছি আমরা এ নদী কাদের রক্ত লাল হয়েছিল।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত