তিন টুকরো সাপের গল্প

তিন টুকরো সাপের গল্প

মরেওযেবেঁচেছিল শপথের জোরে

জীবনদাতাকে সে মারে কেমন করে তিন টুকরো মরা সাপ বাঁচালো যে পাতা

এমন ঘটনা নিয়েই গল্প কথকতা

অনেকদিন আগেকার কথা। সে ছিল এক গরীব মানুষ। এত গরীব যে নিজের একমাত্র ছেলেকেও খেতে দিতে পারত না।

কতদিন আর না থেয়ে অনাহারে কাটানো যায়। তাই ছেলে একদিন বাবাকে বলল – বাবা, কিছু মনে না করলে তোমাকে কয়েকটা কথা বলব। আমাদের সময় এখন খুবই খারাপ যাচ্ছে। আমি তোমার বোঝা হয়ে যাচ্ছি। তার চেয়ে তুমি আমাকে অনুমতি দাও, আমি ভিনদেশে থেকে নিজের ভাতের জোগাড় করতে পারি কিনা দেখি। সেটা পারলেই তোমারও সুরাহা হয়।

মনে কষ্ট পেলেও ছেলের জেদের কাছে হার মেনে দীর্ঘশ্বাস চেপে বাবা ছেলেকে আশীর্বাদ করে বিদায় দিলেন।

সে সময় এক বিশাল সাম্রাজ্যের সম্রাট এক যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। যুবক ছেলেটি সেই সম্রাটের  সৈন্য দলে নাম লেখাল। তারপর যুদ্ধ বিদ্যায় কিছুদিন তালিম নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে চলল। যুদ্ধ শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। তুমুল লড়াই চলেছে দু’পক্ষের মধ্যে। তারপর চারপাশে সব যোদ্ধারা অনেকেই তীরের আঘাতে মাটিতে শয্যা নিয়েছে। একসময় তাদের সেনাপতি মারা যেতেই যুবকটি দেখল বাকি সৈন্যরাও যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালাতে আরম্ভ করেছে। অর্থাৎ নিশ্চত পরাজয়। যুবকটি কিন্তু ভয় পেল না বা পালাল না। সে আরও দু-কদম এগিয়ে গিয়ে জোরে চিৎকার করে বলল, আমার আমাদের মাতৃভূমিকে শত্রুর হাতে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। ভীরুস কাপুরুষের মত না পালিয়ে ফিরে এস সবাই। জীবন পণ করে যুদ্ধ কর। আমরা জিতবই। তার কথায় সৈন্য দের মধ্যে সাহস সঞ্চার হল। সবাই ফিরে এসে একযোগে ভীমবেগে শত্রু সৈন্যদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। শত্রুরা খড়-কুটোর মত ভেসে গলে। জয় হল সম্রাটের।

সম্রাট যখন শুনলেন যে অখ্যাত যুবক সৈন্য কিভাবে হারা যুদ্ধ জিতিয়েছে তখন তিনি তাকে ডেকে ধন্যবাদ দিলেন। তারপর তাপে প্রচুর ধনসম্পদ দিয়ে সাম্রাজ্যের সেনাপতি করলেন।

এই সম্রাটের এক সুন্দরী মেয়ে ছিল। সে ছিল ভীষণ খামখেয়ালি। সে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে কখনও রাজা বা জমিদারকে বিয়ে করবে না। আবার তাকে যে বিয়ে করবে তাকে বিয়ের আগে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে রাজকন্যা যদি আগে মারা যায়, তবে সেও তার বিবাহিতা স্ত্রীর সাথেজীবন্ত কবরে যাবে। রাজকন্যাও সেই একই প্রতিজ্ঞা করবে যে, তার স্বামী আগে মারা গেলে সে স্বামীর সাথে জীবন্ত কবরে যাবে। এই শপথের কথা শুনে আর কেউই রাজকন্যাকে বিয়ে করতে এগিয়ে আসে না। গ্রাম্য সেই যুবক এখন সেনাপতি। কিন্তু তার মনের জোর ও সাহস খুব বেশি সে রাজকন্যার রূপে মুগ্ধ হয়ে কোনও কিছুরই তোয়াক্কা না করে সরাসরি সম্রাটকে বলল যে রাজকন্যাকে সে বিয়ে করবে।

–তুমি জান কি? রাজা বিস্মিত হয়ে বললেন তার মেয়ের কঠিন প্রতিজ্ঞার কথা।

–হ্যাঁ, সে মারা গেলেই আমাকে কবরে যেতে হবে। যুবকটি বলল, কিন্তু আমার ভালবাসা এত গভীর যে সেটাকে আমি বেশি বিপদ বলে মনে করি না। তাকে ছেড়ে বেঁচে থাকাই আমার কাছে দুঃসহ। তখন রাজা সম্মতি দিলেন। ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল।

কয়েকটা বছর বেশ সুখেই কাটল। তারপর কি যে হল, রানি ক্রমশ শুকিয়ে যেতে লাগল। ওঝা, বৈদ্য, কবিরাজ, চিকিৎসক কেউই সে অসুখ সারাতে পারল না। আমাদের যুবক তো সম্রাটের জামাই হওয়ার পর এখন যুবরাজ। সব সময় বৌ-এর সেবা করেও তাকে বাঁচাতে পারল না।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত