গাধা, শিয়াল আর সিংহের শিকার ভাগ

গাধা, শিয়াল আর সিংহের শিকার ভাগ

বনের সব প্রাণী দিন দিন যেন চালাক হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত শিয়াল মহাশয়। কারণ অনেক দিন ধরেই শিয়াল অভুক্ত রয়েছে। তাই ভাবল একজন শক্তিশালী কারও সঙ্গে শিকারে বের হবে। পথে যেতে যেতে দেখা হলো এক গাধার সঙ্গে। তাকে শিয়াল প্রস্তাব দিল এক সঙ্গে কাজ করার। তবে এখন দরকার শক্তিশালী কাউকে। দু’জন মিলে ভাবল আমাদের সঙ্গে সিংহকে নিলে আর কেউ কিছুই বলতে পারবে না। আর তাদের শিকারে ভাগও বসাতে পারবে না। যে কথা সেই কাজ। শিয়াল আর গাধার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল সিংহ। এবার শিকারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ল তিনজন। সিংহের সঙ্গে শিকারে বেরোতে গাধা ও শিয়ালের একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। কিন্তু শিকারে যথেষ্ট খাদ্য মিলবে ভেবে সব অস্বস্তি ঝেরে ফেলল। যেহেতু চুক্তি হয়ে গেছে, তাই সিংহকে বিষয়টি জানতে দেয় না তারা। শিকারে গিয়ে গাফিলতি করে না কেউ। তারপর দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায় শিকারি দলটি। সিদ্ধান্ত হয় যে, গাধা শিকারযোগ্য প্রাণীর ওপর তীক্ষষ্ট দৃষ্টি রাখবে। কাউকে দেখতে পেলে সে তার দিকে এগিয়ে যাবে এবং নিজের পরিচয় দেবে। অন্য দু’জন আড়াল থেকে গাধার দিকে নজর রাখবে। গাধা পরিচয় পর্ব সারার পর শিয়াল আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে গর্জন করে উঠবে। প্রাণীটি স্বাভাবিকভাবেই তখন ভয় পেয়ে যাবে। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করবে সে। তখন শিয়াল তাকে ধাওয়া করবে। প্রাণীটি তখন শিয়ালকে এড়াতে সোজা দৌড় দেবে, আর গিয়ে পড়বে সিংহের কবলে। সিংহ তখন এক আঘাতে তার দফারফা করবে। সারাদিন ধরে শিকারের পর সন্ধ্যা বেলায় তিনজন সিংহের আস্তানায় পেঁৗছে। ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, কিন্তু ভীষণ খুশি। কারণ বিপুল পরিমাণ শিকার পাওয়া গেছে। সব শিকার ভাগ এবং তার অংশ তাকে দেওয়ার জন্য সিংহ গাধাকে অনুরোধ করে। গাধা খুব খুশি হয়। ভাবে, শিকার ভাগ করার দায়িত্ব দিয়ে সিংহ তাকে বিরাট সম্মান প্রদর্শন করেছে। খুব সাবধানতার সঙ্গে সে সব শিকারকে সমান তিন ভাগে ভাগ করে। তারপর দুই সঙ্গীর উদ্দেশে বলেন, ভাগের কাজ শেষ। এখন আপনারা দু’জনে দয়া করে নিজ নিজ ভাগ গ্রহণ করুন। সিংহ ভাগগুলো একবার চেয়ে দেখে বলে, তাহলে তোমার মতে আমাদের তিনজনের ভাগই সমান হওয়া উচিত, তাই না? তুমি বোধহয় মনে কর যে, শিকারের সঙ্গে তোমার ইনিয়ে বিনিয়ে গল্প করা আর তাকে আমার হত্যার কাজটা একই সমান! এ কথা বলেই সে গাধার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ও তাকে হত্যা করে। তারপর শিয়ালকে শিকার ভাগ করতে বলে। গাধার পরিণতি দেখে শিয়াল ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। অনেক কষ্টে সে নিজেকে সামলে নিয়ে ভাগ করতে বসে। যা কিছু তারা এক সঙ্গে শিকার করেছিল, তার প্রায় সবই সে একভাগে রাখে। আরেক ভাগে রাখে সামান্য একটু অংশ, যা কি-না চোখে প্রায় পড়েই না। তারপর বড় ভাগটা নেওয়ার জন্য সে সিংহকে অনুরোধ করে। শিয়ালের ভাগ করা দেখে সিংহ বেজায় খুশি হয়ে বলে- আচ্ছা, এত চমৎকার আর ন্যায্য ভাগের কৌশল তোমাকে কে শিখিয়েছে? শিয়াল বিনয়ের সঙ্গে বলে- একটু আগে গাধার পরিণতি দেখে শিখেছি। শিয়াল তখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়- ভবিষ্যতে আর কোনো কাজে সে কখনোই সিংহকে সঙ্গে নেবে না। আমরা বলি : কখনও বেশি লোভ কর না। লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু, যা গাধার বেলায় হয়েছে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত