লেজের খোঁজে গেল দু’কান

লেজের খোঁজে গেল দু’কান

লেজের খোঁজে গেল দু’কান

বিচা’রে খার আ’রেযুয়ে দোম কার্দ্, নইয়ফতে দোম, দো গুশ গোম কার্দ্

দুষ্ট গাধা করলো তার

কাটা লেজের সন্ধান

পেলো না তো লেজ সে

উল্টো হারালো দুই কান

কোনো এক গ্রামে বিচিত্র প্রাণীর মাঝে গাধারাও ছিল। এদের মধ্যে একটা গাধা ছিল ভীষণ দুষ্ট। কোথাও সি স্থির থাকতে পারতো না, ঘুরে বেড়াতেই তার ভালো লাগতো। প্রতিবেশিদের বাগ বাগিচায় ক্ষেত খামারে মুখ দিতো। ফসল নষ্ট করতো দেদারসে। দিনের পর দিন এভাবে ফসল নষ্ট করার ফলে গ্রামের বাসিন্দারা একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে গেল। অবশেষে একদিন তারা ঐ গাধার অত্যাচারের কথা মালিককে জানিয়ে সতর্ক করে দিলো। বলল: তোমার গাধাকে যদি না সামলাও তাহলে এমন কাণ্ড ঘটনো হবে যে সারাজীবন পস্তাতে হবে। মানুষ সেই কাণ্ড নিয়ে গল্প লিখবে, মুখে মুখে প্রবাদের মতো বলে বেড়াবে।

গাধার মালিক ভড়কে গিয়ে বলল: ঠিকাছে, সামলাব। কিন্তু পারলো না। পরদিনই গাধা গ্রামের এক প্রতিবেশির গম ক্ষেতে গিয়ে তছনছ করে দিল সব। গম খেতে দেখে প্রতিবেশিদের কয়েকজন এসে গাধাটাকে ধরে ফেললো এবং রেগেমেগে গাধার শাস্তি হিসেবে লেজ কেটে দিয়ে বলল: তোর লেজ কাটলাম কেন জানিস? যাতে আর কারো বাগানে বা ক্ষেত খামারে না যাস। ঘটনাটা গাধার মালিকের কানে যেতেই তাড়াতাড়ি চলে এলো ঠিকই কিন্তু লাভ হলো না, ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

কী আর করা। অগত্যা লেজহীন গাধাকে নিয়ে মালিক ফিরে গেল বাড়ি। বিরক্ত হয়ে গাধাকে নিয়ে খোঁয়াড়ে ঢুকালো। খোঁয়াড়ের অন্যান্য পশুরা গাধার লেজ নেই দেখে বিষয়টা নিয়ে কথাবার্তায় মতে উঠলো এবং ব্যাপক হাঁসাহাসি করলো। তবে একটা গাধা ছিল একটু চালাক। সে লেজকাটা গাধার জন্যে সহমর্মিতা দেখাল, হাঁসল না। বলল: যা হবার হয়ে গেছে। আমি এতো বললাম যে দুষ্টামি করিস না, বদনাম হবে, বিপদে পড়বি, শুনলি না। এখন হলো তো..ভবিষ্যতে সতর্ক থাকিস। লেজহীন গাধা বলল: গাঢ়া আবার লেজহীন হয় নাকি!

চালাক গাধা বলল: তোর তো এখন লেজ নাই, কী করবি?

দুষ্ট গাধা বলল: কী আর করবো, লেজ লাগাবো। এভাবে তো চলে না, সবাই আমাকে চিনে ফেলবে..

চালাক গাধা বলল: তা কি হয়? তুই নিজে একেবারে হাতে ধরে এই বিপদ ডেকে এনেছিস..

দুষ্টু গাধা তার কান দুটো সশব্দে ঝাড়া দিয়ে বলল: হ্যাঁ, হয়। আমি যাবো, যেখানে আমার লেজ কাটা গেছে, সেখানে। কাটা লেজ খুঁজে নিয়ে আসব। খোঁয়াড়ের ভেতরের অন্যান্য গাধা হেঁসে উঠল।

চালাক গাধাটি বলল: এসব ছাড়! আবারো বিপদে পড়তে চাস? শুনছ নাই, খারাপ অবস্থাকে আরো খারাপ হতে দেয়া ঠিক না?

লেজহীন গাধা বলল: একাজ করলে ‘খারাপ’ ভালো হয়ে যাবে, দেখে নিও!

এই চিন্তা করে গাধা পরদিন ঠিকই আবারো গেল সেই ক্ষেতে যেখানে তার লেজ কাটা হয়েছিল। একটু গম খেয়ে লেজ খুঁজতে শুরু করলো। অন্যদিকে খেয়াল করার মতো অবস্থাই ছিল না তার। হঠাৎ সমস্বরে চীৎকার শুনতে পেল সে: এই কে কোথায়! সবাই এসো! দুষ্টু গাধাটা আবারো এসেছে, চলো সবাই, ধরবো তাকে ইত্যাদি…। চিৎকারের সাথে সাথে একেবারে চোখের পলকে সবাই এসে গাধাকে ঘিরে ধরে ফেলল।

একজন বলল: মার, ভালো করে মার..যাতে আর গাধামি না করে।

আরেকজন বলল: না, মেরে লাভ নেই, চলো মালিকের কাছে পৌঁছে দেই।

অপরজন বলল: না, তাতে কোনো কাজ হবে না। এই গাধার যদি শিক্ষা হতো তাহলে এতোদিনে হয়ে যেত.. তারচেয়ে বরং চল, সেদিন তো ওর লেজ কেটেছি, আজ তার কা ন দুটো কেটে দিই….।

গাধা এবার টের পেলো কী বোকামিটাই না করেছে সে..। কিন্তু এখন আর অনুতপ্ত হয়ে কী লাভ…! গ্রামের লোকজন ততক্ষণে তার দুটো কানই কেটে দিলো। এরপর ছেড়ে দিলো তাকে…

দুষ্টু গাধা ধীরে ধীরে নিজের খোঁয়াড়ে গিয়ে পৌঁছল। মালিক তাকে দেখেই বলল: দেখছিস…কী বিপদটাই না ডেকে এনেছিস হাতে ধরে..? তুই আবারো গেছিস দুষ্টামি করতে! তুই এখন অন্যান্য গাধাকে কী বলবি?

লেজ-কানকাটা গাধা খোঁয়াড়ে ঢুকতেই অন্য পশুরা তাকে দেখে হাঁসতে হাঁসতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো। চালাক গাধাটা এতোক্ষণ চুপচাপ ছিলো। একজন তাকে বলল: তুমি চুপ করে আছো কেন? হাঁসছো না কেন?

এবার সে বলল: কেন হাঁসবো! আমাদের সবার উচিত কান্নাকাটি করা। পুনরায় এ কাজ করে আর চাইনা নিজেদের আরো বেশি বদনামী হোক। সবাই আমাদের কথা মুখে মুখে বলে বেড়াক, দুর্নামের গল্প লিখুক!

একটি গাধা জিজ্ঞেস করল: কী বলবে ওরা!

চালাক গাধা বলল: বলবে,

বিচা’রে খার আ’রেযুয়ে দোম কার্দ্ ,

নইয়ফতে দোম, দো গুশ গোম কার্দ্…..

এরচেয়ে আর লজ্জার কী হতে পারে? ওই ঘটনার পর থেকে যখনই কেউ কোনো ভুলের কারণে কোনো কিছু হারায় এবং তার সন্ধানে ছুটতে গিয়ে বাকি জিনিসও হারায় তখনই লোকজন এই প্রবাদটিকে আনমনে উচ্চারণ করে। আর যখনি এই প্রবাদটি কারো মুখে উচ্চারিত হয় তখনি এই প্রবাদের পেছনে গাধার গাধামির গল্প মনে পড়ে যায় সবার।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত