সিন্থেটিক বডি

সিন্থেটিক বডি

টায়ারার ফোলা ফোলা গাঢ় গোলাপী ঠোঁটে শেষ বারের মত চুমু খেয়ে বিছানা থেকে নামে রিহান, কোমর থেকে আলগোছে একটুকরো নিউ পলিমার জড়ানো কেবল। তার সুগঠিত পেশীবহুল পিঠের দিকে তাকিয়ে থাকে টায়ারা, আনমনে হাসে। রিহান ওয়াশ রুমে ঢুকে দরজা লক করেই দ্রুত হাতে তার কাজ শুরু করে দেয়।

প্রায় ছয় মাস ধরে রিহান ফেডারেশন সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর আন্ডার কভার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, এটা তার প্রথম এসাইনমেন্ট। শুরুটা বেশ কষ্টকর ছিল, রেসিস্টেন্স বাহিনীর কমান্ডারদের আস্থা অর্জন করে সৈনিক হিসেবে নাম লিখানো মোটেও সহজ কোনো কাজ নয়। ইচ্ছা করেই কিছু ভূল করতে হয়েছে, প্রচুর আঘাত সহ্য করতে হয়েছে…নয়তো তার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে সন্দেহ গ্রস্ত হয়ে পড়তো তারা।

যাই হোক, রুকি হিসেবে কাজ শুরু করার পরই টায়ারার সাথে পরিচয়, নানা দিক যাচাই বাছাই করে রিহান তার মেধার পুরোটুকু কাজে লাগিয়ে টায়ারার মন জয় করে ফেলে,সপ্তাহ তিনেক ধরে চুটিয়ে প্রেম করছে দুজন। টায়ারা এখন বলা যায় পাগলের মত ভালবাসে তাকে, তার ইচ্ছা ছিল আরেকটু টাইম নেয়ার, কিন্তু হাই কমান্ড থেকে খুব চাপ আসছে। আজকে রাতেই কাজটা কমপ্লিট করতে হবে।

টায়ারাকে বেছে নেবার পিছনে কারণ ছিল, সে খুব কম সংখ্যক মানুষদের একজন যার কিনা রেসিস্টেন্স বাহিনীর মূল তথ্যকেন্দ্রে যাবার পাস আছে। এটা অফিসিয়াল পাস নয়। তৃতীয় চিফ কমান্ডার রিজারিক টায়ারাকে হঠাৎ হঠাৎ ডেকে নেন। এরকম বহু রুকিরা কমান্ডারদের আনফিসিয়াল ডাকে সারা দিয়ে বিলাশ বহুল জীবন কাটায়।

যাই হোক, রিহান এখন টায়ারার মাথায় মাঝারি মানের একটা অস্ত্রপোচার করবে। তার মস্তিষ্কের ডান টেম্পোরালে সাত ইউনিট-পাঁচ টেরাবাইটের একটা সার্কিট বসিয়ে দেবে, তারপর সময় মত এটাকে জাগিয়ে তুলে টায়ারার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাকে সাইবর্গ বানিয়ে ফেলা যাবে। তাদের মূলটার্গেট রেসিস্টেন্স বাহিনীর সার্ভার থেকে অন্যান্য স্থাপনা গুলোর অবস্থান ও ফেডারেশনের মধ্যে তাদের লুকিয়ে থাকা চরদের পরিচয় জেনে নেয়া। তারপর টায়ারাকে একটা জীবন্ত বিস্ফোরক হিসেবে ব্যাবহার করা, যখন সে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের আশে পাশে থাকে।

সব যন্ত্র গুছিয়ে একটা ছোট ব্যাগে ভরে রিহান ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসে। টায়ারা শুয়ে ভিডি টিউবে উদ্দাম নাচ-গান দেখছে। রিহানের দিকে তার খেয়াল নেই। রিহান আস্তে করে তার পিছনে এসে কোমর বরাবর হাত রেখে একটা ছোট ক্যান থেকে স্প্রে করল। সাথে সাথে টায়ারা চেতনা হারিয়ে ঢলে পড়ে। রিহান তাকে আস্তে করে শুইয়ে দেয়।

তারপর কানের পিছন দিকটায় স্পিরিট ঘষে ,স্কেপল নিয়ে আলতো করে পোচ দেয়। রিহান তাকিয়ে থাকে,কিন্তু কোনো রক্ত বের হয় না। সে কিছুটা অবাক হয়। দুইটা স্কেপল দিয়ে আলতো চামড়াটা একটু ফাঁক করে হতভম্ব হয়ে যায়। চামড়ার নিচে কোনো রক্ত বা পেশি নেই, কোন ধরণের সিন্থেটিক ফাইবার। তার মাথা হ্যাং হয়ে যায়। কি হচ্ছে, কি করবে বুঝতে পারার আগেই হঠাৎ টায়ারার চোখ খুলে যায়,স্বচ্ছ নীল মণির বদলে সেখানে কৃত্রিম লাল আলো।

রিহান চমকে উঠে সরে যাবার চেষ্টা করে,তার আগেই লোহার মত শক্ত হাতে টায়ারা তাকে ধরে ফেলে। খনখনে স্বরে বলে উঠে,” আমি ওমেগা ৯৯৬, টায়ারা রাটায়নার জৈবিক মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় হবার পর আমি তার দায়িত্ব নিলাম। তোমার পরিচয় দাও।” রিহান কোনো রকমে তোতলাতে তোতলাতে বলে,” আমি রুকি ক্বান, ব্যাজ নং R7880….” হঠাৎ টায়ারার রূপে থাকা রোবটটা থাবা দিয়ে লুকিয়ে রাখা ছোট ব্যাগটা নিয়ে নেয়, একবার চোখ বুলিয়ে একঘেয়ে আবেগহীন কন্ঠে বলে উঠে,”তুমি ফেডারেশন চর, টায়ারার মাথায় নিশ্চয়ই এটা বসাতে চেয়েছিলে?” ছোট্ট সার্কিটটা টায়ারার হাতে…মরিয়া হয়ে রিহান পায়ের কাছে বেঁধে রাখা রে গানটা বের করতে যায়, ভয়ংকর শক্তিশালী হাতের এক আঘাতে সে উড়ে গিয়ে ভিডি টিউব ভেঙ্গে নিয়ে পড়ে…অজ্ঞান হয়ে যায় সাথে সাথে।

জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে টর্চার সেলে দেখে খুব একটা অবাক হয় না রিহান। অবাক হয় দুঃখী চোখে টায়ারকে তার সামনে বসে থাকতে দেখে। কি বলবে খুঁজে না পেয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে রিহান।

“আমি আরো তিনবছর আগেই মারা গিয়েছিলাম,জানো…” যেন বহুদুর থেকে টায়রার গলার স্বর ভেসে আসে, বিস্ময় নিয়ে রিহান তাকায় তার দিকে “ফেডারেশনের সাথে মাল্টার যুদ্ধে আমার শরীরে নিচের অংশ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু আমি ছিলাম ততকালীন সেকেন্ড হাইকমান্ড রেমারিক রাটায়নার মেয়ে,তাই আমাকে আবার বাঁচানো হলো, সম্পূর্ণ সিন্থটিক শরীরে আমার মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপন করা হয়।

প্রথম দিকে প্রায়ই লোড নিতে পারতো না তাই ওমেগাকেও ঢোকানো হয় আমার সাথে।” রিহান হতাশায় মাথা নাড়ে, আসলেই তার ভাগ্যটা খারাপ। “তুমি হয়তো জানো, বেশ কয়েকবার ক্ষমতা হাত বদল হয়েছে,এখন বেঁচে থাকার জন্য কমান্ডারদের মনরঞ্জন করতে হয় আমাকে। আমার এই বিষাক্ত জীবনে একটু ভাল লাগা হয়ে এসেছিলে তুমি…আর সেই তুমিও কিনা…”দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে যেন বুক চিড়ে তার।

রিহান কিছুই বলে না। টায়ারা একসময় উঠে দাঁড়ায়। দরজার কাছে এসে ঘুরে হঠাৎ বলে উঠে, “সার্কিটটায় কি C-9 ছিল,ক্বান?…ও এটা তো তোমার আসল নাম নয়। কি হল,জবাব দেও” রিহান মুখ গুঁজে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর দরজা বন্ধ হবার আওয়াজ পায় সে। রুমটা কবরের মত নিঃস্তব্ধ হয়ে যায়।

রিহানের মাথায় অদ্ভূত কারণে তার নিকট ভয়ংকর ভবিষ্যতের চিন্তা নেই,কেবল একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে, “সিরিয়াসলি? সিন্থেটিক বডি?!”

গল্পের বিষয়:
সাইন্স-ফিকশন
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত