লিনা ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্রী। বন্ধুদের মোবাইল দেখে তারও মোবাইলের শখ হয়। তাই বাবার কাছে বায়না করে একটা মোবাইল কিনে নিলো। লিনা এর অাগে কখনোও কোনো ছেলেকে ভালোবাসে নি।
কিন্তু লিনা মনে করে যখন কাউকে ভালোবাসবে মন প্রাণ সবটা দিয়ে ভালোবাসবে। লিনা একদিন ফেসবুকে একটা অাইডি খুললো। লিনা রহমান। প্রোফাইলে খুব সুন্দর একটা পুতুল এর ছবি। ২/৩ দিন ফেসবুকে কোনো বন্ধুই হলো না লিনার। সেদিন রাতে লিনা ফেসবুকে ব্যস্ত অাবির থেকে একটা রিকুয়েস্ট পেলো। লিনা ব্যস্ত অাবিরের প্রোফাইলে গেলো। একটা নায়কের ছবি। কোনোখানেই রিয়াল ছবি নাই। লিনা অ্যাকসেপ্ট করে দিলো। কিছুক্ষণ পরেই এসএমএস এলো।
–হাই লিনা।
— হুম হাই
— রিয়াল নাম?
–কি মনে হয়?
— না মানে কিছু না। প্রোফাইল পিক নাই কেন?
–অাছে তো। পুতুল।
–অামি বলছি তোমার পিকের কথা
–কেনো পিক না দিলে কি কেস খাবো?
— তোমার সাথে কথায় পারবো না। কোন ক্লাসে পরো?
–ইন্টার ২য় বর্ষ। অাপনে?
— পরি না। এমবিএ করে এখন চাকুরি করি।
— ওহ,, কোথায়?
— এয়ারলাইন্স।
— অাচ্ছা অাজ বায়। অাবার কথা হবে। লিনা ফেসবুকে নেই। অাবির এখন লিনাকেই ভাবছে। ভদ্র মেয়ে বলেই ছবি দেয় নাই। এভাবে ৩/৪ মাস কেটে গেলো। লিনা অাবির দুইজনই দুইজনকে নিয়ে ভাবে।
এখনো কেউ কাউকে দেখেনি। অাবির ভাবে সে লিনাকে ভালোবাসার কথা জানাবে। লিনাও তাই ভাবে। লিনা এখন অাপনে থেকে তুমি বলে। একদিন অাবির লিনাকে বললো তোমাকে একটা কথা বলবো। কিন্তু ভয় পাই।
–বলে ফেলো।
–যদি রেগে যাও।
–না রাগবো না বলো।
–তুমি খুব ভদ্র, অামার খুব ভালো লাগছে। অামার জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে তোমাকে অামার দরকার। তুমি অামার জীবনসঙ্গী হবে??? — এইভাবে কেউ প্রপোজ করে??
–অামি তো পারি না। কখনো করি নাই তো। তুমি শিখায় দাও।
–জীবনসঙ্গী হতে পারি, অামার কিছু প্রশ্নের উওর দাও।
–ওকে বলো।
–অামার রাগ ভাঙাতে পারবা?
–অামি তোমাক কখনোই রাগাবো না।
–অামি অসুস্থ হলে খাইয়ে দিবা?
–অামি অামার রাজকন্যাকে সব সময়ই খাইয়ে দিবো। খুশিতো?
–হুম, কিন্তু তুমি তো অামাক দেখো নাই, দেখে পছন্দ না হলে?
–অামাদের মনের মিল হয়ে গেছে, মনটাই জরুরি। চেহারা না।
–ঠিকাছে কিন্তু কোন কথা দিয়ে যেনো সম্পর্ক শুরু হয়, ওটা বলো।
— I Love U পাগলি।
— Love U to পাগল।
–তোমার নাম্বার দাও। এটা অামার ০১৭……….. –০১৭……….. শুরু হয়ে গেলো ওদের সুখী জীবন। কেয়ারিং শেয়ারিং সব। ওরা সারাদিন অনেক কথা বলতো। ফেসবুকে ফোনে। লিনা অাবিরকে বলেছে দেখা করার অাগে কেউ কারো পিক দেখবে না।
অাবিরও তাতে রাজি। লিনার ছোটছোট পাগলামি থেকে অাবির বুঝতো যে লিনা অাবিরকে খুব ভালোবাসে। তারা ঠিক করলো ১৪ ফেব্রুয়ারিতে দেখা করবে। সময়ও ঠিক হলো বিকাল বেলা।
–এই রাজকন্যা তোমাকে চিনবো কিভাবে?
–অামি নীল রংঙের একটা কামিজ পরবো। পচ্শিমের বরো গাছের নিচে থাকবো। তুমি?
–অামি কালো টি-শার্ট, ঐ গাছের নিচেই চলে যাবো।
–ওকে। ১৪ই ফেব্রুয়ারি চলেও এলো। দুজনেই খুব খুশি। বিকেলে লিনা জায়গা মতোই চলে গেছে। ১ ঘন্টা ২ ঘন্টা যায় কালো টি-শার্ট পরে কেউ অাসে না। লিনা অাবিরকে ফোন দেয়, ফোন বেজে যায় রিসিভ হয় না। কিছুক্ষণ পর অাবার ফোন বন্ধ। ৩ ঘন্টা দেখে লিনা চলে অাসে। ২ দিন, ৩ দিন যায় অাবির অার ফেসবুকেও অাসে না। লিনা অাবিরকে ভুল বোঝে। অার কাদতে থাকে। ৫ দিনের মাথায় অাবিরের ফোন।
–লিনা কেমন অাছো? অামি সেদিন যেতে পারি নি সরি। একটু ঝামেলায় ছিলাম। অাজ দেখা করো, ঐ টাইম, ঐ জায়গা, ঐ পোশাকেই,, কথা গুলা লিনার কেমন যেন লাগলো। কারন এই কন্ঠটা এতোদিনের সেই কন্ঠ না। অার তাছারাও অাবির কখনো লিনা বলে না। রাজকন্যা বলেই ডাকে। –কি হইছে তোমার? কন্ঠ এমন কেনো?
–অামার কিছু হয়নি, অাজ অামরা দেখা করছি তো?
–হুম করছি। বিকাল বেলা.. লিনা দেখলো একটা ছেলে কালো টি শার্টে,,
–তুমি অাবির?
–হুম অামি জানি তুমি অামায় চিনবা।
–কিন্তু অামায় দেখেও তোমার মুখে হাসি নেই?
–থাকবে না কেনো এই তো হাসছি। চলো কোথাও বসি গিয়ে।
–হুম চলো লিনা অনেক চেষ্টা করেও ছেলেটার কাছে যেতে পারলো না। এতো দিনের এতো পরিচিত মানুষকে লিনার কেমন যেন অচেনা মনে হচ্ছে। লিনা বাসায় চলে গেলো। সে অনেক ভাবলো এটা তার অাবির না। অাবিরের কন্ঠ এটা না। অাবির লিনাকে দেখে অনেক খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু…. লিনা অনেক ভেবে ছেলেটাক অাবার দেখা করতে বলে। অবশেষে দেখা
–লিনা ডাকছো কেন
–তোমাক অাজ একটা পরীক্ষা দিতে হবে।
–কি পরীক্ষা? লিনা ব্যাগ থেকে কোরঅান শরীফ বের করে বলতে লাগলো তুমি কোরঅানে হাত রেখে বলো কে তুমি? ছেলেটি মাটিতে হাটু গেরে বসে পরলো
–লিনা তোমার কোরঅান লাগবে না, অামি সত্যিটাই বলছি শোনো ছেলেটির কথা…
অামি রাজন। অাবিরের ব্ন্ধু। সেদিন অাবির তোমার সাথে দেখা করতেই বের হয়েছে। পিছন থেকে একটা ট্রাক এসে অাবিরকে মেরে দেয়, অামরা সবাই হসপিটাল নিয়ে যাই। ও ওখানেই শেষ হয়ে যায়। মরে যাওয়ার অাগে চোখ খুলে অামাকে বলে গেছে।
–( রাজন অামার চলে যাওয়ার খবরটা লিনাকে দিস না। ও অামাকে অনেক ভালোবাসে, ও এই শোক নিতে পারবে না। খুব কষ্ট পাবে। তুই সারাজীবন অাবির হয়ে লিনার পাশে থাকিস।–) কথাটা গুলো বলেই অাবির চোখ বন্ধ করলো। লিনা তোমাকে এই খবর কোনোদিনও দিতাম না। ভাবছি অামিই অাবির হয়ে তোমার পাশে থাকবো। কিন্তু তোমার ভালোবাসার শক্তি অনেক। তাই তুমি বুঝে গেছো অামি অাবির না। রাজনের কথা শেষ হতেই লিনা হাউমাউ করে কেদে উঠলো। চিৎকার করে অাবিরের নাম নিলো। ১ মাস পর রাজনের ফোন…
–লিনা তোমাকে বলার কিছু কথা অাছে, অামি অাবিরকে কথা দিয়েছি সারা জীবন তোমার পাশে থাকবো। তোমার জন্য না, অামার জন্যও না। অামার মরে যাওয়া বন্ধুর জন্য হলেও প্লীজ রাজি হয়ে যাও। তুমি শুধু অাবিরের না, অামারও রাজকন্যা হয়ে থাকবা। লিনা ভাবলো অাবিরের সাথে এমন কিছু হয়নি যে সেটা অাকরে সে বেচে থাকবে। অার অাবির যেহেতু রাজনকে বলেছে অবশ্যই রাজন ভালো হবে।
–অামি রাজি। একটা শর্ত, বিয়ের পর অামাকে অাবিরের কবরে নিয়ে যাবা।
–ওকে অাজ রাজন লিনার বিয়ে। বিয়ের পরদিন ওরা অাবিরের কাছে গেলো। লিনা কবরের মাটি ছুয়ে কাদছে। রাজনের খারাপ লাগলো কারন লিনা তার সামনেই অন্য একটা ছেলের জন্য কাদছে। কিছু করার নাই কারন রাজন সব জেনেই লিনাকে বিয়ে করেছে। ওরা কিছুক্ষণ পর চলে গেলো। সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে লিনা রাজনকে বলছে।
–এই অাবির উঠ অাবির দেখ কয়টা বাজে অফিস যাবা তো। রাজন ঘুম থেকে উঠে লিনার দিক চেয়ে বলে…লিনা এখনও ভুলবে না??? লিনার ঘোর কেটে গেলো,,
–সরি রাজন,, লিনা অন্য ঘরে গেলো। বিয়ের দুই বছরের মাঝে ওদের একটা মেয়ে হলো।
–রাজন একটা কথা।
–হুম বরো রাজকন্যা বলো।
–অামি তোমার জন্য মেয়েটাক পাইছি। অার অাবিরের জন্য তোমাক পাইছি। অাবির না থাকলে তোমায় পেতাম না। তাই অামি অামাদের মেয়ের নাম অাবির অার লিনা থেকেই রাখবো। ওর নাম অালিনা।
–নামটা সুন্দর। ওকে বরো রাজকন্যা। অার অালিনা অামার ছোট রাজকন্যা। দুজনের মুখেই হাসি ফুটে ওঠে।।।