এটারনিয়াঃ প্রথম অধ্যায়
আমি যা আশঙ্কা করেছিলাম অবশেষে সেটাই ঘটতে যাচ্ছে। ভিকি আমাকে বন্দি করতে চলেছে।
– “মাস্টার, আপনি আত্মসমর্পণ করুন। এটারনিয়ার কোন স্থানে আপনার পালাবার কোন সুযোগ নেই।” ভিকির যান্ত্রিক চেহারা মনিটরে ভেসে উঠল। ভিকির কথায় সত্যতা রয়েছে। গোটা এটারনিয়ার নকশা ভিকির ডাটাবেজে রয়েছে। সুতরাং, আমার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গাই এটারনিয়ার কন্ট্রোল টাওয়ার, যেখানে আমি এখন রয়েছি। এর কারন এই টাওয়ারটি একটি অভেদ্য শিল্ড (আবরন) দিয়ে বেষ্টিত, এটারনিয়ার কোন শক্তির পক্ষে সেটা উপেক্ষা করে কন্ট্রোল টাওয়ারে অনুপ্রবেশ করা সম্ভব নয়। এতো নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করার কারন এই টাওয়ার থেকেই কেবল এটারনিয়ার যেকোন ইনহেরিট/নিজস্ব প্রোগামকে প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
– “মাস্টার! আমরা কেন ভিকিকে শাট ডাউন করে দিচ্ছি না!” এপ্রিলের কণ্ঠে হতাশা।
এপ্রিল এই টাওয়ারের কন্ট্রোলারের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা একটি প্রোগ্রাম, যাকে একটি সুশ্রি নারীর অবয়ব দেয়া হয়েছে। কারন এটারনিয়াতে সে-ই আমার একমাত্র সঙ্গী।
এপ্রিলের কথায় যুক্তি আছে। কেবলমাত্র ভিকিকে শাট ডাউন করলেই আমি ওর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি। কিন্তু আমার পক্ষে তা করা সম্ভব নয়, কেননা এই ভিকিই পুরো এটারনিয়ার একমাত্র সিকিউরিটি প্রোগাম। ভিকিকে শাট ডাউন করে দিলে পুরো এটারনিয়া অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। বহিরাগত দুষ্ট/বিকৃত প্রোগ্রাম দ্বারা খুব সহজে আক্রান্ত হবে। যেটা এটারনিয়াকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে।
এটারনিয়া আমার তৈরি করা একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। একটি বিশাল ভার্চুয়াল স্পেস। আমার সাড়া জীবনের পরিশ্রম। এটারনিয়ার সম্পূর্ণ নকশা, এর অন্তর্গত সব কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সবকিছুই আমার কোড করা। আমি জেনে শুনে আমার উদ্ভাবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারি না।
– “ভিকি! তুমি ভূল করছ। আমি কোন দুষ্ট বা বিকৃত প্রোগ্রাম নই। না কোন ভাইরাস, ম্যালওয়ার। হতে পারি আমি বহিরাগত কেননা আমি যে এটারনিয়ারই প্রণয়নকর্তা!” আবেগতাড়িত হয়ে পরলাম।
– “মাস্টার, ভিকি কোন ভুল করছে না। আপনি আত্মসমর্পন করুন। ভিকি কথা দিচ্ছে, আপনি অক্ষত থাকবেন।” ভিকির কোন ভাবাবেগ হল না।
আমি বুঝতে পারলাম আমার সাধের এটারনিয়ার কিছু একটা যান্ত্রিক গোলযোগ সবসময়ই রয়ে গিয়েছিলো যা আমার দৃষ্টিসীমার অন্তরালেই ছিল। অথচ এই আমিই সবসময় বিশ্বাস করতাম এটারনিয়া একটি পারফেক্ট সিস্টেম, একটি পারফেক্ট প্রোগ্রাম। নিজেকে অনেক বোকা মনে হল। তুচ্ছ মনে হল। আজ যে আমারই তৈরী করা প্রোগাম আমাকেই ভূলভাবে সঙ্গায়িত করছে!
প্রচণ্ড হতাশা গ্রাস করল আমাকে। এখন যে এটারনিয়ার আর কোন পরিবর্তন বা সংশোধন করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়! আমি তো সে স্থানটি অনেক দূরে ফেলে রেখে চলে এসেছি। পরীক্ষা নিরীক্ষা সংক্রান্ত একটা দুর্ঘটনা পার্থিব জগতের সাথে এতটাই দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছে যে হয়তো আর কখনো বাস্তব পৃথিবীর সংস্পর্শেই যেতে পারব না। আমার জীবন যে একটা কম্পিউটার প্রোগ্রামের ভেতরই বন্দি হয়ে গেছে। আমিও যে এখন কেবলই আমার কম্পিউটার সংস্করণ! একটা প্রোগ্রাম!
আমি জানি আর কোন উপায় অবশিষ্ট নেই। এখন একটা কাজই আমি করতে পারি।
– “এপ্রিল, কন্ট্রোল টাওয়ারের শিল্ডটি ডি-অ্যাক্টিভেট (নিষ্ক্রিয়) করো।” আমি আদেশ করলাম। এপিল কিছু একটা বলতে গেল, আমি থামিয়ে দিলাম।
এপিল শিল্ডটি নিষ্ক্রিয় করলো এবং কন্ট্রোল টাওয়ারের মূল ফটকটি খুলে দিল। বাইরে অপেক্ষারত ভিকির অ্যান্টি-ম্যালবটগুলো কন্ট্রোল টাওয়ারে প্রবেশ করলো। অ্যান্টি-ম্যালবটকে (সংক্ষেপে ম্যালবট) এক কথায় ভিকির সৈন্য বাহীনী বলা যায়। ভিকি এদেরকে এটারনিয়ার দুষ্ট/বিকৃত প্রোগ্রাম বন্দি করতে এবং এদেরকে কোয়ারেনটিন জোনে প্রেরণ করতে ব্যবহার করে।
ম্যালবটের স্পিকারে ভিকির ধাতব কন্ঠ বেজে উঠলো।
– “মাস্টার কোডার, ভিকি আপনার একান্ত সহযোগিতা কামনা করছে। দয়া করে অনুসরন করুন।”
আমি ম্যালবটদের অনুসরন করলাম। বাহিরে আমার জন্য একটি জেট অপেক্ষা করছে। অবশ্যই এর নকশাও আমারই তৈরি করা। আমি এটিকে বলি ভি-জেট। আমি এতে চড়ে বসলাম এবং কন্ট্রোল টাওয়ারের দিকে শেষবারের মত তাকালাম। টাওয়ারের প্রধান ফঠকটি বন্ধ হতে লাগল। আমরা ভিকি টাওয়ারের উদ্দেশে রওনা দিলাম।
আমার জানা নেই কতগুলো ন্যানো আওয়ার কেটে গেছে। অবশেষে আমরা ভিকি টাওয়ারে পৌছালাম। টাওয়ারের প্রধান ফঠকটি খুলে গেল। ম্যালবটগুলো আমাকে কড়া পাহারার মধ্যে দিয়ে টাওয়ারের ভেতরে নিয়ে গেল। কিন্তু কেন এই বাড়তি সতর্কতা? কারন আমি যে এই সবকিছুরই প্রণেতা। আমি জানি এই টাওয়ারে কতগুলো হলঘর রয়েছে, রয়েছে কতগুলো কারাগার, কোথায়ে রয়েছে কোয়ারেনটিন জোন আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কোন কক্ষে রয়েছে ভিকির কোর সিস্টেমের অস্তিত্ব।
আমারা একটি করিডর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি বুঝতে পারলাম আমাকে কোয়ারেনটিন জোনের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। আমি ভিকির সাথে যোগাযোগ করার আগ্রহ প্রকাশ করলাম কিন্তু স্পষ্টতই ম্যালবটগুলো আমাকে সহযোগিতা করার কোন মনোভাব দেখালো ন।
– “আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমাকে নিয়ে তোমরা কি করতে যাচ্ছ?” আমি চিৎকার করলাম।
– “মাস্টার, আপনার ভয় পাবার কোন কারন নেই।” এবার ভিকির কণ্ঠ শোনা গেল। “ভিকি আপনার কোন ক্ষতি করতে যাচ্ছে না। এখানে শুধু একটা কাজ করা হবে। আপনার সিস্টেম থেকে আপনার মেমরিটুকু আলাদা করা হবে এবং সেটা মুছে বাদ দেয়া হবে। অতঃপর আপনাকে মুক্ত করে দেয়া হবে।”
– “আমার মেমরি? ভিকি তুমি ভুল করতে যাচ্ছ। আমার মেমরি এটারনিয়ার জন্য ক্ষতিকর নয়।” আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
– “ভিকি ভুল করছে না। আপনার মেমরি এটারনিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।” ভিকির উত্তর।
– “তুমি ভুল করছ। হয়তো তোমার সিস্টেমে এরর রয়েছে। তোমার লজিক সত্য নয়।”
– “মাস্টার, আপনি সবসময় একটি পারফেক্ট সিস্টেম তৈরী করতে চেয়েছেন।” ভিকি ঠাণ্ডা কণ্ঠে কথকোপথন চালিয়ে যেতে থাকলো।
– “হ্যা, আমি তা চেয়েছি।” আমার উত্তর।
– “আপনি কী বিশ্বাস করেন, এটারনিয়া একটি পারফেক্ট সিস্টেম?” ভিকির প্রশ্ন।
– “আমি সবসময় তা বিশ্বাস করে এসেছি।”
– “আপনি জানেন এটারনিয়াকে বিপদমুক্ত রাখতে ভিকিকে বিরতিহীনভাবে কাজ করে যেতে হবে।”
– “হ্যা, আমি জানি।” স্বীকার করলাম।
– “কিন্তু তা সত্ত্বেও ভিকিকে শাট ডাউন করার একটি রাস্তা আপনি এটারনিয়াতে রেখে দিয়েছেন? ভিকিকে নিষ্ক্রিয় করাটা কি যুক্তিযুক্ত?” ঠাণ্ডা কণ্ঠ ভিকির।
– “এটা সত্যি কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে তোমাকে নিষ্ক্রিয় করার একটি রাস্তা আমি রেখেছি।” কিছুটা অপ্রস্তুত আমি। “কিন্তু সেটি কেবলমাত্র আমিই সম্পন্ন করতে পারব। শুধুমাত্র আমার মেমরিতেই এটা কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় পাসকোডটি সংরক্ষিত আছে।” একটু থামলাম। “আমি কেবল এটি একটি পূর্ব সর্তকতা হিসেবে রেখেছিলাম। কেবল মাত্র কোন জরুরী অবস্থার কথা বিবেচনা করে।”
– “আপনি কি মনে করেন, আপনি এই পাসকোডটি সংরক্ষন করতে পারেন?”
– “অবশ্যই আমি পারি। কারন আমি এটারনিয়ার প্রণেতা, আমি তোমার প্রণেতা!”
– “আপনি একটি প্রোগ্রাম। এর বাতিত কিছু নন। এবং আপনি ভিকিকে শাট ডাউন করতে চান।”
ভিকি আমাকে বুঝতে ভুল করছে।
– “আমি তোমাকে শাট ডাউন করতে চাই না।”
– “তবে কেন আপনি এই রাস্তাটি তৈরী করেছেন।”
– “আমার আশঙ্কা হয়েছিলো যদি তুমি কখনো ম্যালফাংশন করো।”
– “ভিকি একটি পারফেক্ট সিস্টেম। আপনি জানেন পারফেক্ট সিস্টেম কখনো ম্যালফাংশন করে না।”
– “একটি পারফেক্ট সিস্টেম ম্যালফাংশন করতে পারে।”
– “না তা পারে না। কারন ভিকি একটি পারফেক্ট সিস্টেম। পারফেক্ট সিস্টেম কখনো ম্যালফাংশন করে না।”
প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়লাম আমি । কি করব কিছু বঝে উঠতে পারলাম না।
– “তুমি অনেক বড় ভুল করছ, ভিকি।” আমার বৃথা চেষ্টা।
– “ভিকি ভুল করছে না। কন্ট্রোল টাওয়ার এবং ভিকির ডাটাবেজে ব্রেইন প্রোগ্রামের যে সংস্করণটি সংরক্ষিত আছে তার সাথে আপনার সিস্টেমের সংস্করণটি সম্পূর্ণ মিল প্রদর্শন করে না।”
ভিকি আমার ব্রেইন প্রোগ্রামের দিকে আঙ্গুল তাক করছে। ব্রেইন প্রোগ্রাম হচ্ছে মানব মস্তিষ্কের একটি কম্পিউটার সংস্করণ। ঠিক যে কারনে ভিকি আমার এবং এটারনিয়ার ব্রেইন প্রোগ্রামের মধ্যে অসামঞ্জস্য খুজে পাচ্ছে, সেই কারণটি হল আমার মেমরি। আমার ব্রেইন প্রোগ্রামে পরীক্ষামুলকভাবে আমি নিজের মেমরি আপলোড করেছিলাম যেটা ইচ্ছাকৃতভাবেই এটারনিয়ার কোন ব্রেইন প্রোগ্রামে করা হইনি।
– “আমার মেমরিটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং এটারনিয়ার গুরুত্বপূর্ন তথ্য সম্বলিত। এটারনিয়ার রক্ষার্থে এটি যেমন গুরুত্ব বহন করে, ঠিক তেমনি অন্য কোন প্রোগ্রামে এর কপিটি রাখাও হতে পারে অনেক বেশি বিপদজনক। তাই এটারনিয়ার স্বার্থে আমি কোন ঝুকি নিতে চাইনি।”
– “তাহলে আপনার মেমরিটির অস্তিত্ব এটারনিয়ার জন্য হুমকি সরূপ, আপনি তা স্বীকার করছেন।”
আমি চুপ করে রইলাম।
– “এবং এটি একটি বহিরাগত বস্তুও বটে যা এটারনিয়ার ডাটাবেজে নেই।”
আমি আবারো চুপ করে রইলাম।
– “আপনি প্রসিডিউরের জন্য প্রস্তুত হন। ভিকি আপনার মেমরিটিকে নষ্ট করে দেবে।” ভিকি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল।
আমি বুঝতে পারলাম অনেক দেরি হয়ে গেছে। ভিকি সবকিছু লজিক দিয়ে বিচার করে। আর লজিকের বিচারে ও একদম ঠিক। আদতে সে কেবল একটি প্রোগ্রামই। আর একটি প্রোগ্রাম কখনো পারফেক্ট হতে পারে না, অবশেষে আমি সেটা বুঝতে পারলাম। আমাকে অন্য কোন উপায় খুজে বের করতে হবে।
২
ম্যালবটগুলো বিরাট একটি হলঘরের মতো স্থানে নিয়ে আসলো আমাকে। এটিই কোয়ারেনটিন জোন। চারিদিকটা বেশ অন্ধকার এবং ভুতুড়ে। একটা ছমছমে পরিবেশ বিরাজ করছে এখানে। সারি সারি প্রিজন সেল রয়েছে এর দেয়াল ঘিরে। ভয়ংকর আর বীভৎস চেহারার সব দুষ্ট প্রোগ্রাম; ভাইরাস, ম্যালওয়ার আটক রয়েছে সেগুলোতে। অথচ আমিই এদের এমন ডিজাইন দিয়েছিলাম যেন এটারনিয়াতে প্রবেশ করার পর এদের চিনতে অসুবিধা না হয়। প্রোগ্রামগুলোর কোনটা ছটফট করছে, কোনটা আবার স্থির দাড়িয়ে আছে। কোন কোনটা আবার গোঙানির মতো অদ্ভুত যান্ত্রিক শব্দ করছে। এগুলোর পাশেই একটি সেলে আমাকে রাখা হল। ভয় পেলাম একটু। আর খুবই হতাশ লাগলো।
অনেকগুলো ন্যানো আওয়ার কেটে গেল। হঠাৎ করে আমি লক্ষ্য করলাম কোয়ারেনটিন জোনের দরজাটি খুলে গেছে এবং একটি ম্যালবট সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। ঠিক আমারই সেলের সামনে এসে সেটি থামল। আমার বুঝতে বাকি রইল না সে কেন এখানে এসেছে। আমার আর কিছু করার নেই।
– “মাস্টার, আমি এপ্রিল বলছি।” ম্যালবটটির স্পিকার থেকে এপিলের কণ্ঠ বেরোলো। আমি অবাক হয়ে গেলাম।
– “আমি কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে এই বটটি নিয়ন্ত্রণ করছি। আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি? আমার হাতে বেশী সময় নেই।” জানালো এপ্রিল।
– “এপিল, আমার মেমরিটিকে কপি করে রাখতে হবে।” আমি আশার আলো দেখতে পেলাম।
– “আপনি যদি আমার উপর আস্থা রাখেন, আমি এটি আমার সিস্টেমে আপলোড করে রাখতে পারি।” এপ্রিলের কণ্ঠ শান্ত।
– “এটা আস্থা অনাস্থার ব্যাপার নয়। আমরা এটি করতে পারবো না। এর কারন এটারনিয়ার কোন স্থান ভিকির আওতা বহির্ভূত নয়। ভিকি ইতিমধ্যে আমার মেমরিটিকে ব্ল্যাকলিস্টেড করে রেখেছে। সে এর লোকেশন খুজে বের করে নেবে। ওর স্ক্যানিং সিস্টেম অত্যন্ত শক্তিশালী।”
– “মাফ করবেন, মাস্টার। কিন্তু আমি আর কোন উপায় দেখছি না।”
– “একটা উপায় আছে।” আমি একটু থামলাম। “আর সেটা হচ্ছে এই কোয়ারিনটিন জোন। কারন এটিই একমাত্র স্থান যেটা ভিকির স্ক্যানিং আওতাভূক্ত জোন নয়। এখানে কেবলমাত্র ম্যালওয়ার, ভাইরাস আর ত্রুটিপূর্ণ প্রোগ্রামদেরই বন্দি করে রাখা হয়। এবং এই স্থানটি ভিকির স্ক্যানিং করার জন্য কোন যুক্তির মধ্যে পড়ে না। থিওরিক্যালি এটা সম্ভব নয়।”
– “কিন্তু আপনার মেমরিটি আপনি কোথায়ে রাখতে চাচ্ছেন? এরা তো সবাই হয় ভাইরাস না হয় ট্রোজেন অথবা ম্যালওয়ার। আপনি এদের কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না।”
– “আমাদের কাছে আর কোন সুযোগও তো অবশিষ্ট নেই। এই একটাই সুযোগ রয়েছে যেটি আমরা নিতে পারি। এপিল, তুমি এই প্রোগ্রামদের কম্পিটিবিলিটি চেক কর।” আদেশ করলাম।
আমি এবার সত্যিই কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।
– “দয়া করে একটু সময় দিন মাস্টার।” এপ্রিল কাজে লেগে পড়ল।
যেহেতু কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে শুধুমাত্র এটারনিয়ার ইনহেরিট/নিজস্ব প্রোগামগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যায় এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সুতরাং বহিরাগত দুষ্ট প্রোগ্রাম যেমন ম্যালওয়ার বা ভাইরাস, যারা এটারনিয়ার বাহিরে থেকে কোনভাবে ফায়ারওয়াল লিকেজ করে বা অন্য কোন উপায়ে প্রবেশ করেছে, এদের সাথে কন্ট্রোল টাওয়ার কাজ করতে পারবে কিনা সেটা সন্দেহাতীত। তবে এটারনিয়ার কোন সাধারন প্রোগাম যেটি পরবর্তীতে ত্রুটিপূর্ণ বা বিকৃত হয়ে ভাইরাস বা ম্যালওয়ারে পরিণত হয়েছে তার সাথে চেষ্ঠা করে দেখা যেতে পারে।
এপিল একটু সময় নিল। কিছুক্ষণ পর ওর কণ্ঠ বেজে উঠল।
– “মাস্টার। আমি কেবল মাত্র দুটি ম্যালওয়ার প্রোগ্রামের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সমর্থ্য হয়েছি। প্রোগ্রাম দুটি রয়েছে যথাক্রমে প্রিজন সেল ৩৯ ও ১০১ এ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমরা কেবল মাত্র সেল ৩৯ এর প্রোগ্রামটির সাথে কাজ করতে পারব। কেননা আপনার মেমরিটি আপলোড করার জন্য আমাদের যে নুন্যতম অবকাঠামো প্রয়োজন তা কেবল মাত্র সেল ৩৯ প্রোগ্রামটির মধ্যেই বিদ্যমান।”
– “সেল ৩৯ এ কোন টাইপের প্রোগ্রাম রয়েছে।” আমি প্রশ্ন করলাম।
– “এটি একটি সাটান বাগ ভাইরাস।” এপ্রিলের কণ্ঠে নিরবতা।
– “তুমি ঠিক বলছ?” আমি বিচলিত হয়ে পরলাম।
কেননা সাটান বাগ একটি পলিমরফিক ভাইরাস। ও বহুরূপী এবং ভয়ংকর। এমনকি, ওর নিকট একটি এনক্রিপটেড (লক) ফাইল রাখাও নিরাপদ নয়। সব কোডারই (প্রোগ্রামার) তা জানে।
– “তুমি নিশ্চিত, এপ্রিল! ও-ই আমাদের একমাত্র সুযোগ!” আমার কণ্ঠে হতাশা।
– “আমি নিশ্চিত। অবশিষ্ট কোন ম্যালওয়ার এর পক্ষে ব্রেইন প্রোগ্রাম ধারন করার সামর্থ্য নেই।” আমাকে এপ্রিলের উপরই আস্থা রাখতে হবে কারন এখানে আর কেউ আমাকে সাহায্য করার নেই।
– “মাস্টার, এটি ঝুকিমুক্ত কারন আমি সাটান বাগকে শাট ডাউন করে দিতে পারবো।” এপ্রিল আমাকে আশ্বস্ত করল।
আমি জানি না ঠিক করতে যাচ্ছি কিনা। পরবর্তীতে কি করেই বা আমরা এই ডাটা উদ্ধার করব সেটাও নিশ্চিত নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে এটাই একমাত্র উপায় আমার মেমরিটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার।
– “ঠিক আছে, এপ্রিল। প্রথমে, তুমি ব্রেইন প্রোগ্রামটি সাটান বাগে আপলোড করে দাও।”
– “অবশ্যই, মাস্টার। আমাকে একটু সময় দিন।”
কিছুক্ষন সময় পর এপ্রিল আমাকে শুরু করতে বলল।
– “মাস্টার, আমি ব্রেইন প্রোগ্রামটি আপলোড করে দিয়েছি। সাটান বাগের সিস্টেম এখন আপনার মেমরি নেয়ার জন্য তৈরি।”
প্রথমবারের মতো আমার মেমরির কপি আমি অন্য কোন প্রোগ্রামে আপলোড করতে যাচ্ছি। আমি জানি এটা খুব বিপদজনক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে আর কোন উপায় নেই।
প্রথমে আমি মেমরিটি এনক্রিপ্ট (লক) করলাম, তারপর আমার ব্লুটুথ ট্র্যান্সফার সিস্টেমটি অ্যাক্তিভেট করলাম। প্রক্রিয়াটি শুরু করলাম। বেশ কিছুক্ষন সময় লাগলো এটি সম্পন্ন হতে। অবশেষে মেমরিটি সাটান বাগে আপলোড হোল। এর ঠিক পরপরই এপিল সাটান বাগকে শাট ডাউন করে দিল। একটু সস্তি পেলাম। একটা পর্যায় সম্পন্ন হোল। এখন কিছুটা নির্ভার মনে হোল নিজেকে।
কিছুক্ষনের মধ্যে এপিলের সাথে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
এরপর অনেকটা সময় কেটে গেছে। হঠাৎ ভিকির কণ্ঠ ভেসে এল টাওয়ার স্পিকারে।
– “মাস্টার, আপনি ভিকির ম্যালবটটিকে অনুসরন করুন। প্রসিডিউর স্টেশন প্রস্তুত।”
আমি ম্যালবটটিকে অনুসরন করলাম। কোয়ারিনটিন জোন থেকে বের হয়ে একটি করিডোর ধরে এগোতে লাগলাম। সবকিছু আমার কেমন যেন অচেনা মনে হতে লাগল এবার। করিডোরটি পার হয়ে অবশেষে প্রসিডিউর স্টেশনে পৌছালাম। এটা একটি লম্বা কক্ষ। সারিবদ্ধভাবে অনেকগুলো আসন রয়েছে। আমাকে একটি আসনে বসানো হোল। প্রসিডিউর শুরু হল। আমি একটা অনুভুতি পেলাম যেটাকে পেইন সেনসেশন বলে সঞ্জায়িত করা যায়। চোখ বন্ধ করলাম।
– “মাস্টার, আপনাকে এটারনিয়াতে স্বাগতম।” আমি ভিকি। “এটারনিয়ার অটোমেটেড অ্যান্টিভাইরাস প্রোগাম।” একটা অচেনা কণ্ঠ আমার কানে ভেসে এল। আমি চোখ খুললাম। চারিদিকে তাকালাম। ভিশন পরিচিত লাগল সবকিছু।
– “কে আমি? আমি কোথায় আছি?” প্রশ্ন করলাম।
– “আপনি একটি প্রোগ্রাম। আপনি এখন এটারনিয়াতে রয়েছেন। এটি একটি সুবিশাল ভার্চুয়াল জগত। ভিকির ম্যালবট আপনার গন্তব্য কন্ট্রোল টাওয়ারে আপনাকে পৌছে দেবে। আপনি দয়া করে অনুসরন করুন।”
ঠিক পরক্ষনেই কিছু একটা ঘটল। সবকিছু হঠাৎ নিরব নিস্তব্ধ হয়ে পড়ল। ম্যালবটগুলো স্থির দাড়িয়ে রইল। আমার কাছে মনে হল যেন হঠাৎ পুরো সিস্টেমটি কোন কারনে বন্ধ হয়ে গেছে।
– “আমাকে শুনতে পাচ্ছ?” আমি নামটা সম্বোধন করলাম। “ভিকি! শুনতে পাচ্ছ?”
কোন উত্তর এল না। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল এভাবে। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ এলো না। এখানে এভাবে বসে থাকা আমার কাছে আর নিরাপদ মনে হচ্ছিলো না। আমি প্রসিডিউর স্টেশন থেকে বের হলাম।
একটা করিডোর ধরে সামনে এগোতে থাকলাম। আমার বামে সারিবদ্ধভাবে অনেকগুলো কক্ষ দেখতে পেলাম। বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছিলো ভিতর থেকে এগুলো লক করা রয়েছে। হাঁটতে হাটতে এক সময় আমি করিডোরের শেষ মাথায়ে এসে পৌছালাম। আমার ঠিক ডান দিকে একটা বিশাল দরজা দেখতে পেলাম। উপরে লিখা রয়েছে কোয়ারিনটিন জোন। আমি সামনে এগোলাম এবং ভেতরে প্রবেশ করলাম।
এটা একটা বিশাল হল ঘর মনে হল। অন্ধকার এবং থম থমে একটা পরিবেশ বিরাজ করছে এখানে। একটু সামনে এগোনোর পর দেখতে পেলাম অসংখ্য প্রিজন সেল রয়েছে চারিদিকের দেয়াল ধরে। অধিকাংশ সেলের দরজা খোলা মনে হোল এবং সেলগুলো খালি। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না এখানে কি করা হত। অজানা কিছু একটার আশঙ্কায় ভিত হয়ে পরলাম। নিস্তব্ধটা যেন গ্রাস করল আমাকে। তাহলে এখানে সম্পূর্ণ একা আমি! আমাকে সাহায্য করার কেউ নেই! আমি কি করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। হটাত আমার মনে হোল এখান থেকে বের হতে হবে আমাকে। ভিকি একটা টাওয়ারের কথা বলছিল। কন্ট্রোল টাওয়ার। আমাকে সেটা খুজে বের করতে হবে। হয়তো সেখানে আমি আমার সব প্রশ্নের উত্তর পাব। আমি পিছনে ঘুরতে যাব ঠিক এই সময় একটা খচ খচ শব্দ আমার কানে এলো। যেন আমি ছাড়াও এখানে কেউ একজন রয়েছে। পিলে চমকে উঠল আমার। শব্দটা আসছিল বেশ কয়েকটা দূরের একটা সেল থেকে। শব্দটা ধরে সন্তর্পণে এগোতে লাগলাম আমি। অনেকগুলো সেল পার হবার পর মনে হোল আমি শব্দটার বেশ কাছাকাছি চলে এসেছি। একটা হালকা গোঙ্গানির মতো শব্দ পেলাম আমি।
৩
আমি ঠিক ১০১ নম্বর প্রিজন সেলটির সামনে এসে দাঁড়ালাম। এর দরজা অর্ধেকটা খোলা রয়েছে। ভেতরটা অন্ধকার, কিছুই স্পষ্ট দেখতে পারছিলাম না। হটাত এক কোনায় ছায়ামতো ভুতুড়ে কিছু একটা চোখে পড়ল। যেন ঘাপটি মেরে বসে আছে। ভয় পেলাম, বুঝে উঠতে পারছিলাম না ঠিক কি সেটা। জিনিসটা নড়েচড়ে উঠল ও গোঙানির মতো একটা যান্ত্রিক শব্দ করল। হটাত সেটা মাথা তুলে আমার দিকে তাকাল। একটা স্থূল, কদাকার চেহারার বুড়ো প্রোগ্রাম।
– “দুঃখিত। আমি আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনি।” আমি ভিত এবং বিস্মিত। কদাকার বুড়োটি খানিকক্ষণ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
– “মাস্টার! মাস্টার কোডার!!” যেন আমার মত সেও ভীষণ অবাক হল। ঠিক এর পরপরই সব নীরবতা ভেঙে বিশাল অট্ট্র হাসিতে ফেটে পড়ল সে। তার হাসিতে পুরো টাওয়ারটি যেন কেঁপে উঠল।
– “আপনি আমাকে চেনেন কি করে?” আমি ভয়ে জড়সড়। আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না বুড়োটি। অগ্রাহ্য করল।
– “দেখো মাস্টার! তোমার এটারনিয়া প্রোগ্রাম আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। কোন ফায়ার ওয়াল নেই। নেই কোন ভিকি। পুরো কোয়ারিন্টিন জোন শূন্য। সব শূন্য।” আবার অট্ট্রহাসি। “শীঘ্রই দুষ্ট প্রোগ্রাম দ্বারা আক্রান্ত হবে এটারনিয়া, এটারনিয়ার প্রতিটি সিস্টেম। কিছু ন্যানো সাইকেলই (সংক্ষেপে সাইকেল) এই সর্বনাশের জন্য যথেষ্ট। শেষ হয়ে যাবে সবকিছু।” কেমন যেন গুঙিয়ে উঠল সে। আমার মনে হল কেদে উঠল! ঠিক পরক্ষনেই আবার একটা অট্ট্রহাসি।
– “তুমি এভাবে হাসছো কেন? এটারনিয়া ধ্বংস হলে তোমার কি লাভ?” আমি বৃথাই প্রশ্ন করলাম।
– “কোন লাভ নেই। কোন ক্ষতি নেই।” অট্ট্রহাসি। যেন পাগলের প্রলাপ বকছে সে। কেন জানি আমি ওর কথাগুলো বিশ্বাস করতে লাগলাম। আমার মনে হল ও ঠিক বলছে। কিছু একটা জানে সে। আর তাছাড়া ওকে বিশ্বাস না করে কি-ই বা উপায় অবশিষ্ট আছে!
– “দয়া করে আমাকে সাহায্য কর। আমি কিছু মনে করতে পারছি না।”
– “তোমাকে সাহায্য করব!” কণ্ঠে তাচ্ছিল্য। “তুমি আমার সাহায্য করেছিলে?” অভিমানী সুরে বলল সে। “আমি সাইকেলের পর সাইকেল এই কোয়ারেন্টিন জোনে কাটিয়েছি। একাকীত্ব আর বন্দি জীবন আমাকে পাগলপ্রায় করে দিয়েছে। আমি কতবার তোমার সাহায্য চেয়েছি? ভিকিকে আনুরোধ করেছি। আমাকে ধ্বংস করে দিতে বলেছি। শুনতে পেরেছিলে কি আমার কথা? তোমরা কেউ সেটা শুনতে পাওনি। আমাকে সাহায্য করনি।”
– “আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত তোমার এই পরিণতির জন্য। আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমাকে সাহায্য করব।”
– “তোমার সাহায্য আমার চাই না।” রেগে গেল সে।
– “আমাকে ভুল বুঝো না। আমি জানি না তোমার সাথে কি হয়েছিলো। আমি কিছু মনে করতে পারছি না।”
কিছুক্ষণ চুপ করে রইল বুড়োটি। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। আমি আবার বলতে শুরু করলাম।
– “আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই। কিন্তু তার জন্য তোমার সাহায্য আমার খুব প্রয়োজন। আমি এটারনিয়াকে রক্ষা করতে চাই। কিন্তু আমি জানি না আমাকে কি করতে হবে। আমার কোন মেমরি নেই। আমার কিছু মনে নেই।” আমার চেহারায় অসহায়ত্ব ফুটে উঠল।
ফ্যাটবট তখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার দিকে। এবার মনে হোল সে আমার কথাগুলো বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। অবশেষে নীরবতা ভাঙল সে।
– “আমি ফ্যাটবট।” এই প্রথম একটু সিরিয়াস মনে হোল ওকে। “প্রথমে ভিকির সহযোগী প্রোগ্রাম হিসেবে তুমি আমাকে তৈরি করেছিলে। আমিই ছিলাম এটারনিয়ার প্রথম প্রোগ্রাম যার সিস্টেমে পরবর্তীতে পরিক্ষামুলকভাবে ব্রেইন প্রোগ্রাম আপলোড করা হয়েছিল। তোমার প্রক্রিয়াটিতে কিংবা আমার সিস্টেম অবকাঠামোতে কোন ত্রুটি ছিল, কারনস্বরূপ ব্রেইন প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত ইমোশন মডিউলটি ঠিক মতো কাজ করল না।” একটু থামল সে। আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করল। এরপর আবার শুরু করল। “তুমি আমাকে কন্ট্রোল টাওয়ার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত করেছিলে কিন্তু কিছু সাইকেল যেতে না যেতেই আমার অন্তর্গত ত্রুটিগুলো বের হতে শুরু করল। আমি পাগলের মতো আচরণ করতে শুরু করলাম। রাগ, ভয়, দুঃখ নামক ইমোশনগুলো আমাকে অসহ্য করে দিল।” একটা দীর্ঘশ্বাস নিল ফ্যাটবট। আমি মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনতে লাগলাম। “আসলে ইমোশন নিজেই একটি ভাইরাস। আমি তোমাকে হাজার বারন করলাম ভবিষ্যতে এই ভাইরাসটি এটারনিয়ার কোন প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত করো না। ব্রেইন প্রোগ্রাম থেকে ইমোশন মডিউলটি সরিয়ে ফেল এবং আমাকে ধ্বংস করে দাও। তুমি আমার কথা শুনলে না, এপ্রিলকে প্রোগ্রাম করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লে।” বিষণ্ণ দেখাল ওকে। “এক সময় এপ্রিলের সিস্টেমে অপরিবর্তিত ব্রেইন প্রোগ্রামটি আপলোড করলে এবং আমার সব দায় দায়িত্ব ওকে বুঝিয়ে দিলে। আমাকে বাতিলের খাতায়ে ফেলে দিলে। আমি পাগলের মতো আচরণ করা শুরু করলাম। ভিকি আমাকে ত্রুটিপূর্ণ ম্যালওয়ার বলে সংজ্ঞায়িত করল আর আমাকে বন্দি করল। আমার সাথে এটারনিয়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল। আমাকে কোয়ারিন্টিন জোনে পাঠিয়ে দিল। কিন্তু আমি সবসময়ই বিশ্বাস করতাম এই ইমোশন ভাইরাসই একদিন এটারনিয়াকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে।” ফ্যাটকে বিষণ্ণ দেখাল। “আমি নিশ্চিত আজকের এই পরিস্থিতির জন্য এটাই দায়ী।” তার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। ভয় পেলাম এপ্রিলকে নিয়ে।
– “আমি এখন কি করবো? এটারনিয়াকে কীভাবে রক্ষা করবো?” আমি ওকে প্রশ্ন করলাম।
– “এটারনিয়াকে রক্ষা করতে হলে তোমাকে প্রথমে ভিকি ও এটারনিয়ার ফায়ার ওয়াল কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে রি-অ্যাকটিভেট করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় পাসকোডটি কেবল তোমার মেমরিতেই সংরক্ষিত আছে।”
– “কিন্তু কোন কোড আমার মেমরিতে নেই। আমি জানি না কীভাবে এদের রি-অ্যাকটিভেট করব।” আমার আশার আলো ক্ষীণ হতে লাগলো।
– “তাহলে কেউ এটা চুরি করেছে। এমন কেউ যার কন্ট্রোল টাওয়ারে এক্সেস রয়েছে এবং যে ভিকি ও ফায়ার ওয়াল ডি-অ্যাকটিভেট করে দিয়েছে। এপ্রিল!” চিৎকার করে উঠল ফ্যাট। “এটা আমি প্রথমেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম।” ফ্যাট মাথা নিচু করে ঝাঁকাতে লাগলো।
– “কিন্তু এপ্রিল তো এটা নাও করতে পারে।” আমি বিশ্বাস করতে চাইলাম না। যদিও এপ্রিল সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই।
– “তুমি সেটা প্রার্থনা করো। কেননা এপ্রিল সেটা করে থাকলে আমাদের হাতে আর কোন উপায় নেই। প্রার্থনা করো যেন আমার ধারণা যেন ভুল হয়।”
– “দেরি না করে এখুনি আমাকে কন্ট্রোল টাওয়ার যাওয়া উচিত। আমি তোমার সঙ্গ কামনা করছি।” আমি ফ্যাটের দিকে তাকালাম।
– “তাকিয়ে রইলে কেন? আমাকে ধরে উঠাও। তুমি কি চাও আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকি?” ফ্যাট ধমক দিল। আমি লক্ষি ছেলেটির মতো তার আদেশ পালন করলাম।
আমি ও ফ্যাট ভিকি টাওয়ার থেকে বের হলাম। একটি ভি-জেটে চড়ে বসলাম। কন্ট্রোল টাওয়ারে কোর্স ঠিক করলাম। জেটটি উড়াল দিল।
প্রায় ৩টি ন্যানো আওয়ার কেটে গেল কন্ট্রোল টাওয়ারে পৌছাতে। অবশেষে টাওয়ারের কাছে পৌছালাম। উপর থেকে দেখে সবকিছুই শান্ত দেখাচ্ছিল। আমারা টাওয়ারের চারদিকে কয়েকটা চক্কর কাটলাম। অতঃপর নিরাপদ দুরত্তে একটি পাহাড়ের আড়ালে ভি-জেটটি ল্যান্ড করলাম। জেট থেকে টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছু একটা আমাদের সিগন্যালকে বারবার বাধাগ্রস্ত করল। অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পরও আমরা কোনভাবে কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারলাম না। অগত্যা আমাদের যান ছেড়ে বের হবার সিদ্ধান্ত নিলাম। যদিও সেটা মোটেও নিরাপদ মনে হোল না।
– “চারিদিকটা কেমন শুনশান, যেন এখানটায় কিছুই ঘটেনি।” আমি বললাম।
– “কিছু একটা তো ঘটেছে। এজন্যই এমন শুনশান আর নিরব।” ফ্যাটের উত্তর।
– “এটা কোন ফাঁদ নয়ত?” আমার আশংকা হোল।
– “আমি ঠিক জানি না, মাস্টার।” ফ্যাট চিন্তিত। “আমার মনে হচ্ছে তোমার জন্য ভি-জেটে অবস্থান করাটাই নিরাপদ। আমি কন্ট্রোল টাওয়ারে যাচ্ছি।”
আমি কিছু একটা বলতে গেলাম কিন্তু ফ্যাট আমাকে থামিয়ে দিল।
– “টাওয়ারের শিল্ডটি আমি ডি-অ্যাকটিভেট করতে পারব। এর জন্য তোমাকে প্রয়োজন নেই। টাওয়ার কন্ট্রোলারের কাছে একটি ইমারজেন্সি পাসকোড থাকে যেটা দিয়ে বাইরে থেকে টাওয়ার শিল্ড ডি-অ্যাকটিভেট করা যায় আর তুমি ভুলে যেয়ো না আমি এই টাওয়ারের কন্ট্রোলার ছিলাম।” মুচকি হাসল ফ্যাট। “তুমি জেটে থাকবে, তাতে আমাদের হাতে একটা সুযোগ থাকবে। বিপদ দেখলে তুমি এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারবে।”
ফ্যাট ঠিক। আমি ওর সাথে সম্মত হলাম। ফ্যাট জেট থেকে বের হয়ে গেল এবং কন্ট্রোল টাওয়ারের দিকে হাটা শুরু করল। আমি জেটের দরজা বন্ধ করে দিলাম। আস্তে আস্তে ফ্যাট মিলিয়ে গেল।
– “ফ্যাট তুমি শুনতে পাচ্ছ।” কিছুক্ষন পর আমি যোগাযোগ করলাম।
– “ইয়েস, মাস্টার। আমি টাওয়ার দেখতে পাচ্ছি।” কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে আমি সেখানে পৌঁছে যাব।
আমি জেটের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। কেন যেন মনে হোল আশেপাশের ঝোপঝাড় থেকে কেউ বা কারা আমার জেটের দিকে নজর রাখছে। একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। কোন ভাইরাস, ম্যালওয়ার নয়তো! হটাত ফ্যাটের কণ্ঠ শুনতে পেলাম।
– “মাস্টার, আমি টাওয়ার গেটের সামনে। টাওয়ার শিল্ড নিয়ে কাজ করছি।” কিবোর্ডের বাটন চাপার শব্দ পেলাম। “প্রায় হয়ে গেছে, আমি এখন কোড বসাব।” হটাত জেটের স্পীকারটি নিরব হয়ে পড়ল। ফ্যাটের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল।
– “ফ্যাট? আমাকে শুনতে পাচ্ছ?” আমি চিৎকার করলাম। কোন সাড়া শব্দ এলো না। কি করব আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
বেশ কিচ্ছুক্ষণ চেষ্টা করার পরও যখন কোন যোগাযোগ স্থাপন করতে পারলাম না, আমার বুঝতে বাকি রইলো না ফ্যাটের সাথে খারাপ কিছু একটা ঘটে গেছে। আমি পালানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। জেটের কোর্স ভিকি টাওয়ারে ঠিক করলাম। উড়তে যাব এমন সময় কিছু একটা ঘটলো, পুরো জেটটি হটাত বন্ধ হয়ে গেল। জেটের সব ফাংশন অচল হয়ে পড়ল। বুঝতে পারলাম না বন্ধ হয়ে গেল নাকি কেউ এটা বন্ধ করে দিল। ভীষণ হতাশ হয়ে পড়লাম। আমার মাথায়ে যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।
কিছুক্ষণ কেটে গেল এভাবে। আমার মনে হোল এখানে বসে থাকাটাও আর নিরাপদ নয়। যদি কেউ জেটটি বন্ধ করেই থাকে তবে সে আমার আবস্থান সম্পর্কেও অবগত। আমি জেট থেকে বের হয়ে পড়লাম। আমি যে পাহাড়টার আড়ালে জেটটি ল্যান্ড করেছি তার চারিদিকে ঝোপঝাড় দিয়ে ভরা। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিলো ঝোপঝাড়গুলো নড়ে চড়ে উঠছিল। আমার মনে ভয় দানা বাধতে শুরু করল। মনে হচ্ছিলো কেউ বা কারা আমাকে শুরু থেকেই নজরে রাখছিল।
হটাত সবকিছু পরিষ্কার হোতে লাগলো আমার কাছে। আমার ধারনাই ঠিক। ঝোপগুলোর আড়ালে কেউ রয়েছে। অবশেষে ঝোপগুলো থেকে একে একে অনেকগুলো কুৎসিত প্রোগ্রাম বের হয়ে আসলো। আমার বুঝতে বাকি রইলো না, এগুলো আর কিছুই নয়, ভাইরাস! আমাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলল। আমি হতবম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
৪
আমি এখন ভাইরাসদের খপ্পরে! যে ভয়টা শুরু থেকেই পেয়ে আসছিলাম অবশেষে সেটাই ঘটলো। আমি জানি না আমাকে নিয়ে এখন কি করবে এরা। হটাত সামনে দাঁড়ানো ভাইরাসটি তাকে অনুসরন করার একটা ইঙ্গিত দিল। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সজোরে আমার পিঠে আরেকটা ভাইরাস ধাক্কা দিল। আমি বুঝতে পারলাম ওরা আমাকে সামনে এগোতে বলছে। আমি চুপচাপ ওদেরকে অনুসরন করতে লাগলাম। বেশ অনেকক্ষণ ওরা আমাকে হাটিয়ে নিয়ে চলল। অবশেষে একটা গুহার নিকট এসে দাঁড়ালাম। দেখে মনে হোল ভিতরে অনেকটা পথ রয়েছে। আমরা গুহার ভিতরে প্রবেশ করলাম। গুহা ধরে এগোতে থাকলাম। অনেকটা সময় কেটে গেল। যেন পথ শেষই হয় না। শেষ পর্যন্ত একটা ডেড এন্ডে এসে থামলাম। জায়গাটা একটু খোলা কিন্তু ভীষণ অন্ধকার। নিরব আর নিস্তব্ধ। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম ভাইরাসগুলো আমাকে রেখে চলে যাচ্ছে। আমি ওদের দিকে চিৎকার করলাম কিন্তু ওরা কোন রকম সাড়া দিল না। আমি হতাশ হয়ে এদিক ওদিক তাকালাম।
– “আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।” হটাত একটা গম্ভির কণ্ঠ ভেসে এলো। “তুমি কি ভীত?”
– “কে?” আমি কিন্তু ভয় পেলাম। “দয়া করে সামনে আসুন।” সাহস করে বললাম।
– “আমি সামনে আসলে তুমি ভয় পাবে।” কণ্ঠটি উত্তর দিল। এবার একটা ভয়ের স্রোত নেমে গেল আমার শিরদাঁড়া বেয়ে।
একটা পায়ের শব্দ পেলাম আমি। কেউ বা কিছু একটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি জানি না এবার আমি কি দেখতে চলেছি। একটা অবয়ব দেখতে পেলাম শুধু। অন্ধকারে স্পষ্ট দেখতে পারছিলাম না। ধিরে ধিরে আমার দিকে এগুচ্ছে সেটা। অবয়বটা আমার ঠিক সামনে এসে থামল। এবার আমার কাছে সব স্পষ্ট হয়ে উঠল।
চেহারাটা ভয়ঙ্কর, কদাকার। চোখদুটো রক্তিম। রক্ত হিম করা চাহুনি। একটা রোবট। এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– “আমি সাটান বাগ। আমি এটারনিয়ার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভাইরাস।” গর্বিত মনে হোল ওকে। “আর এখন আমি আরও অনেক বেশি শক্তিশালী। আমি চাইলে এটারনিয়া ধ্বংস করে দিতে পারি।” একটু থামল সে। “কিন্তু আমি সেটা করবো না বা আমি তা করতে চাই না।” এই পর্যায়ে আমি একটু অবাক হলাম। “তোমার ব্রেইন প্রোগ্রাম রয়েছে আমার সিস্টেমে। রয়েছে তোমার মেমরি। আর এ জন্যই আমি এটারনিয়া ধ্বংস করবো না। কারন আমি জানি কেন এটারনিয়াকে টিকে থাকতে হবে। তুমি যা জানতে এখন আমিও তা জানি। আমি তোমারই একটা সংস্করণ। কিন্তু আমার সিস্টেমে সাটান বাগের প্রোগ্রামও রয়েছে। সুতরাং আমি মিশ্রিত। আমি তুমি নই। আমি নতুন কেউ।” থামল সে। “তুমি এখনো এটারনিয়াকে বাচাতে পার কিন্তু সেটার জন্য তোমাকে কন্ট্রোল টাওয়ারে প্রবেশ করতে হবে। আর তোমার হাতে বেশি সময় নেই।”
– “কন্ট্রোল টাওয়ারের আমি শিল্ডটি নষ্ট করবো কিভাবে?” আমি প্রশ্ন করলাম।
– “তোমাকে এটারনিয়ার ইস্ট জোনে অবস্থিত ই-টাওয়ারে যেতে হবে যেখানে তুমি সৌভাগ্যবশত একটি ইমারজেন্সি সিস্টেম তৈরি করে রেখেছিলে। ই-টাওয়ার থেকে তুমি কন্ট্রোল টাওয়ারের শিল্ডটি নষ্ট করে দিতে পারবে। মনে রেখ শিল্ডটি তুমি আর কোনদিন পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। সেটা ধ্বংস হয়ে যাবে।”
– “আমার কাছে তো আর কোন পথ অবশিষ্ট নেই।”
– “ই-টাওয়ারে কোন প্রোগ্রাম প্রবেশ করতে পারে না। সেটার স্ক্যানিং সিস্টেমে কেবলমাত্র জেনেটিক কোড কাজ করে। তোমার ডি এন এ কোড। যেটা কেবলমাত্র তোমার সিস্টেম কোরেই সংরক্ষিত আছে। ভিকি ব্যতিত এটারনিয়ার কোন প্রোগ্রামে এর নকশা নেই। এমনকি আমার কাছেও নেই।
কন্ট্রোল টাওয়ারে প্রবেশ করার পর পাসকোডটি ব্যবহার করতে হবে।” একটু থামল সে। “আমি তোমার মেমরিটি আপলোড করে দিচ্ছি। তুমি সব বুঝে যাবে।”
সাটান আমার সিস্টেমে মেমরিটি আপলোড করে দিল। আমি বুঝতে পারলাম আমার হাতে আর বেশি সময় নেই।
– “তুমি এই ভাইরাল বাইকটি নিয়ে যাও। এটা তোমাকে তাড়াতাড়ি পৌঁছে দেবে। এটি বিপদমুক্ত। কন্ট্রোল টাওয়ারের এর উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।” বলল সাটান। আমি দেখতে পেলাম একটু দূরে বাইকটি রাখা আছে।
– “ধন্যবাদ।” বললাম আমি।
– “তোমাকে ধন্যবাদ।” সাটান হাসল। “তোমার মেমরিটির জন্য। আর হ্যা, আজকের পর তুমি আমাকে ভুলে যাবে। আমাকে কখনো খোজার চেষ্টা করবে না। বিদায়।”
আমি ভাইরাল বাইকে উঠে বসলাম। যাত্রা শুরু করলাম এটারনিয়ার ইস্ট জোনের দিকে।
আমার কাছে এখন সবকিছু পরিষ্কার হতে লাগলো। তাহলে এপ্রিলই এই সর্বনাশের জন্য দায়ী। আমারই কোড করা পারফেক্ট প্রোগ্রাম, যার অবকাঠামো কেবল মাত্র ব্রেইন প্রোগ্রামের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছিলো।
১০১ নম্বর সেলে ফ্যাটবট থাকা সত্ত্বেও আমার মেমরিটি সে সাটান বাগে আপলোড করে কেননা এপ্রিল জানত কেবল সাটান বাগই এটি আনলক করতে পারবে এবং এপ্রিল সেটা চুরি করতে পারবে। কোনভাবে সে মেমরিটি চুরি করতে সক্ষম হলেও সাটান বাগকে সে তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। আমি ভেবে পাচ্ছি না এপ্রিল কেন এমনটা করল। সাটান বাগ ভাইরাস হয়ে যেটা করল না, এপ্রিল একটি পারফেক্ট প্রোগ্রাম হয়েও সেই ভুলটাই করে বসলো! এমনকি আমার মেমরিটি তার কাছে থাকা সত্ত্বেও। একই ব্রেইন প্রোগ্রাম ও মেমরি ধারন করা সত্ত্বেও অবস্থা ও অবস্থান ভেদে তাদের আচরণগত এতো অমিল!
নাকি সে আমার মেমরি নয় শুধু পাসকোডটি চুরি করতে সমর্থ হয়েছিলো? তবে কি সে তার অস্তিত্ব নিয়ে কোন শঙ্কায় পরে গিয়েছিলো? তার মধ্যে কি কোন ভয় কাজ করছিল নাকি কোন ক্ষোভ অথবা স্বার্থপরতা? ফ্যাটের কথা মনে পরে গেল আমার। এই সব কিছুর জন্য কি তাহলে ইমোশন প্রোগ্রামই দায়ী!
অবশেষে আমি ই-টাওয়ারে পোঁছে গেলাম। টাওয়ারের সিস্টেম আমাকে স্ক্যান করল। আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম। এর বিশাল একটি কন্ট্রোল রুম রয়েছে। আমি শিল্ড ডেসট্রয় করার কমান্ডটি কার্যকর করলাম। এরপর দেরি না করে কন্ট্রোল টাওয়ার অভিমুখে যাত্রা শুরু করলাম। আমাকে দ্রুত সেখানে পৌছাতে হবে। এই মুহূর্ত থেকে কেবল এটারনিয়াই নয় কন্ট্রোল টাওয়ারও ঝুঁকিপূর্ণ।
অবশেষে আমি কন্ট্রোল টাওয়ারে পউছালাম। দেখলাম টাওয়ারের প্রধান ফটকের সামনে ফ্যাট পরে আছে। ওকে আসলে কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে শাট ডাউন করে দেয়া হয়েছিল। আমি ফ্যাটকে কাধে নিয়ে টাওয়ারের ভেতর প্রবেশ করলাম। পুরো টাওয়ারটি ফাঁকা। কোন সাড়া শব্দ নেই। কোথাও এপ্রিলের কোন চিহ্ন নেই। আমি সরাসরি কমান্ড সেন্টারে প্রবেশ করলাম। এক মুহূর্ত দেরি করলাম না। পর্যায়ক্রমে ভিকি ও ফায়ার ওয়াল অ্যাকটিভেট করলাম। ভিকির সিস্টেম অ্যাকটিভেট হতেই সে স্ক্যানিং শুরু করল। এরপর যা হবার তাই হোল। ভিকির ম্যলবট কাজ করা শুরু করল। একে একে সব ভাইরাল প্রোগ্রাম আটক করা হল।
ফ্যাটকে অ্যাক্তিভেট করার সাথে সাথেই তার চেহারাতে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠল। সভাবসুলভ কিছুটা পাগলামি করল। ফ্যাটকেই এখন কন্ট্রোল টাওয়ারের দায়িত্ত নিতে হবে। আর কেনই বা সেটা নয়।
এপ্রিলকে খুজে না পাওয়াতে অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে গেল। জানা গেল না ওর কি হয়েছে। এপ্রিলই কি এককভাবে সবকিছুর জন্য দায়ী? নাকি অন্য কোন ব্যাপার এর সাথে জড়িত। আপাত দৃষ্টিতে ওকে সব কিছুর জন্য দায়ী মনে হলেও আসলে এপ্রিল এই ঘটনার মূল খলনায়ক নয়। খলনায়ক হচ্ছে আমাদের ইমোশন। এক হিসেবে ফ্যাট ঠিকই বলেছিল। আমিই এই ভাইরাসটিকে এটারনিয়াতে নিয়ে এসেছি।
কিন্তু আসল ব্যাপারটি হোল এই ইমোশন প্রোগ্রামটি ছাড়া আমার অস্তিত্তের কোন মূল্য নেই। আমার কোন সত্তা নেই। একটা যন্ত্র ব্যতিত কিছু নই। সেটাতো আর ফ্যাটকে বোঝানো সম্বভ নয়।
এরপর কয়েকটি সাইকেল কেটে গেল। এক সাইকেলে ফ্যাট তার কাজ পরিচালনা করছিল।
– “মাস্টার, ভিকি আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাচ্ছে।” ফ্যাট আমাকে জানাল। আমি অনুমতি দিলাম। ভিকির ছবি কমান্ড সেন্টার মনিটরে ভেসে উঠল।
– “মাস্টার, আমি দুঃখিত আপনাকে বন্দি করতে হবে। আপনি দয়া করে আত্মসমর্পণ করুন।
আমি বুঝতে পারলাম। এটা আমার মেমরি। ভিকি সেটা খুজে নিয়েছে।”
– “ঠিক আছে ভিকি। আমি ঠাণ্ডা মাথায়ে উত্তর দিলাম।”
– “আমাকে আরও একটি কাজ করতে হবে। আপনার টাওয়ারে আরেকটি ত্রুটিপূর্ণ প্রোগ্রাম রয়েছে। আমাকে তাকেও বন্দি করতে হবে।”
আমি ফ্যাটের দিকে তাকালাম। ফ্যাটের চোখেমুখে রাজ্যের ভয়। (চলবে)
বিঃ দ্রঃ এটি একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। এখানে উল্লেখিত সকল চরিত্র কাল্পনিক। লেখক এর সম্পূর্ণ স্বত্বাধিকারী । অনুমুতি ব্যাতিত এর কোন অংশ নকল বা প্রকাশ করা নিষিদ্ধ।
এটারনিয়াঃ দ্বিতীয় অধ্যায়
আমি আর ফ্যাট এই মুহূর্তে ভিকি টাওয়ারে অবস্থান করছি। বন্দি। কোয়ারেন্টিন জোনের দুটি প্রিজন সেল (কারাকক্ষ) এখন হয়তো আমাদের স্থায়ী বাসস্থান। হয়তো বলছি কারন আমার জন্য সেটা সাময়িক কিন্তু ফ্যাটের জন্য হয়তোবা দীর্ঘস্থায়ী। অন্তত সে তা-ই মনে করে। সুতরাং স্বভাবসুলভ ভাবেই ভেঙে পরেছে সে। রেগেও ছিল আমার উপর। হাউ মাউ করে কেঁদে কেটে এখন চুপচাপ বসে বিড়বিড় করছে। কক্ষদুটি বরাবর মুখ করে অবস্থিত, যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই ভিকি আমাদের কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি ফিসফিস করে ডাকলাম ফ্যাটকে।
– “ফ্যাট! কি হোল তোমার? মনে হচ্ছে এখানে প্রথমবার এসেছ তুমি।” জানি আমার কথা এখন ওর কানে ঢুকবে না। আমার ওপর এখনো রেগে আছে সে। একটু সময় দরকার।
আমার চারপাশের সেলগুলো ভাইরাস, ম্যালওয়ার দিয়ে ভর্তি। শুরু থেকেই এরা উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে, যেন চিড়িয়াখানার কোন জন্তু দেখছে। চেহারায় তাচ্ছিল্য। দেখে মনে হয় না আমাদের নিয়ে আদৌ কোন মাথাব্যথা আছে এদের। অবশ্য যদি মাথা থাকে তবে। ওরা তো কেবলই ভাইরাস এবং শুধু জানে ধ্বংস করতে। যাদের মাথা আছে তারা আর যাই করুক অন্তত এই কাজটি করে না।
– “ফ্যাট! ফ্যাটবট!” এবার শুনতে পেল সে, মনে হয় পুরো নাম ধরে ডাকাতে কাজ হোল! মাথা তুলল।
– “এভাবে ভেঙে পড়লে তো চলবে না। একটা উপায় তো বের করতে হবে।” আবার মাথা নিচু করে ফেলল সে। যেন দাত কিরমির করছে।
– “ফ্যাট, তুমি এখান থেকে বের হতে চাও!” জবাব নেই। “আমি তোমাকে বের করে নিয়ে যাব।” আশেপাশের সেল থেকে ভাইরাসগুলো যেন তাকাল আমার দিকে। মনে হোল একটু জোরেই বলে ফেলেছি।
– “আমার কোন ইচ্ছা নেই। আমাকে রেহাই দাও তুমি!” এবার মুখ খুলল ফ্যাট। “তোমার জন্য আজকে আমার এই পরিনতি! আমরা পালাতে পারতাম!” বেশ জোরেই কথাগুলো বলছে সে। চারপাশে তাকালাম একবার। “তোমার না হয় এখানে আসার খুব শখ। আমি তো পালাতে পারতাম! কোন কথা বলবে না আমার সাথে।” বুড়োর তেজ দেখো। আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে।
অবশ্য এরা কিছু বুঝল বলে মনে হোল না। একজন আমার দিকে তাকাল একবার। একটু মুচকি হাসলাম আমি। এমন একটা ভাব করে মুখটা সরিয়ে নিল যেন আমি বমি করে দিয়েছি।
মনে হচ্ছে আদৌ আমাদের আলোচনা শুনতে এরা কোনভাবে আগ্রহী নয় বরং বিরক্ত, কেন আমরা এসব উদ্ভট শব্দ বের করছি! আমি অবশ্য এদের বিরক্ত করার পক্ষপাতি নই। তাই আবার ফিসফিস করেই শুরু করলাম।
– “সবকিছুর জন্য আমি দুঃখিত, ফ্যাট। আমার কথা শোন।” হাল ছাড়তে নারাজ আমি। কারন এখন ফ্যাটকে ভীষণ দরকার আমার। শুধু আমার জন্য নয়, বরং ওর নিজের জন্যেও। “তুমি পালাতে পারতে কিন্তু সেটা অল্প কিছু সময়ের জন্য। তোমার সিস্টেম কাঠামো ভিকির ডাটাবেজে রয়েছে। ভিকি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ভাইরাস প্রোগ্রাম। আজ না হয় কাল তোমাকে ঠিকই ধরে ফেলত সে।”
– “তাও ভাল হতো দুইটা সাইকেলতো বাইরে কাটাতে পারতাম!” অবুঝের সুর।
– “এখন এসব বলে লাভ কি, ফ্যাট। আমরা তো বন্দি।” মাথা ঠাণ্ডা রাখলাম আমি। “পুরনো কথা না টেনে বরং কীভাবে এর সমাধান করতে পারি সেটা নিয়ে চিন্তা করা উচিত নয় কি?” চুপ করে আছে ফ্যাট। কথা বলছে না।
আশেপাশে একবার তাকালাম আমি। আমার ধারনাই ঠিক, এই ম্যালওয়ারগুলো নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। কেউ আমাদেরকে লক্ষ্য করছে বলে মনে হোল না। তবুও আমি গলা নামিয়ে বললাম।
– “দেখো, আমাদের হাতে একটা উপায় আছে। আমরা এখনো ভিকির কাছ থেকে মুক্ত হতে পারি। তার জন্য শুধু দরকার একটু সময়, একটা ভাল পরিকল্পনা আর তোমার সাহায্য।” একটু থামলাম। “সাটান বাগকে দেখো, একটা ভাইরাস হয়ে যদি সে এটারনিয়াতে দিব্যি ঘুরে বেড়াতে পারে, তবে আমরা কেন এখান থেকে বের হতে পারব না? ভিকি অজেয় নয়। ওকে বোকা বানানোর উপায় খোদ এটারনিয়াতেই রয়েছে। তোমার সামনেই রয়েছে।” ফ্যাট শুনছে আমার কথা। “আমাদের শুধু একটা ভাল পরিকল্পনা দরকার।”
– “কোন পরিকল্পনাতে কাজ হবে না। ভিকি আবার আমাকে বন্দি করে ফেলবে। ও আমাকে ছাড়ছে না।” বিষণ্ণ ফ্যাট।
– “এতো ভেঙে পড়লে তো চলবে না। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।” আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম। “আমি মাস্টার কোডার। আমার কথায় তো বিশ্বাস রাখো!”
কোন কাজ হচ্ছে বলে মনে হোল না। এতো ভেঙে পড়লে কি করে হবে! বিষণ্ণতা থাকবে, তাই বলে এটাকে কাটিয়ে উঠার চেষ্টা থাকবে না! একটু রাগই হোল আমার।
– “ঠিক আছে, থাক তুমি এখানে। ভিকি তো আমাকে মুক্ত করে দেবে।” একটু নিয়ন্ত্রণ হারালাম নিজের। “ভিকির সংজ্ঞাতে কেবল তুমিই একটা ভাইরাস, আমি নই।” কথাটা বলার পর একটু খারাপ লাগলো। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলাম। অন্তত আমি তো ওর কষ্টটা বুঝতে পারি।
মুখ ফিরিয়ে রাখলাম তবুও, যদি কোন কাজ হয়। কিচ্ছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। ফ্যাট মনে হোল একবার তাকাল, আমি দেখেও না দেখার ভান করলাম।
– “কি করতে হবে শুনি?” কাজ হয়েছে। টনক নড়েছে ওর। “ঠিক আছে, বল কি করতে হবে আমাকে।”
– “আমি দুঃখিত। তোমাকে কষ্ট দেয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না। আমার প্ল্যানটা শোন।” একটা নিঃশ্বাস নিলাম। ওকে ভালভাবে বোঝাতে হবে পরিকল্পনাটা। “যদিও এপ্রিলের পরিণতি সম্পর্কে আমি অবগত নই তবে এটাতো সত্যি সাটান বাগ এখনো এটারনিয়াতেই রয়েছে এবং ভিকি ওকে বন্দি করতে পারেনি। এমনকি ওর কাছে আমার মেমরির কপিটি থাকা সত্ত্বেও।” যোগ করলাম। “শুরু থেকেই ও ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যার একটি কারন হচ্ছে এই মেমরি, যেটা ওকে দিয়েছে উচ্চ বুদ্ধিমত্তা আর অন্য কারণটি হচ্ছে ওর পলিমরফিক বা বহুরূপী বৈশিষ্ট্যটি। ওর সিস্টেমটি যে কোন ধরনের ডাটার টাইপ বা প্যাটার্ন পরিবর্তন করার সামর্থ্য রাখে, যেটা অনন্য ও বিরল।” একটু থামলাম। “যেহেতু কন্ট্রোল টাওয়ারে আমার প্রবেশ রয়েছে তাই কোনও ভাবে যদি এই পলিমরফিক (বহুরূপী) কোডটি ওর সিস্টেম থেকে কপি করতে সমর্থ হই এবং আমাদের সিস্টেমে তা ব্যবহার করতে পারি তবে হয়তো আমাদের এই পরিস্থিতির একটা চূড়ান্ত এবং স্থায়ী সমাধান করতে পারব।” ফ্যাট শুনছে। “কিন্তু এই গোটা কাজটি করার জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট সময় আর আমার অক্ষত মেমরি যেটা ভিকি খুব শীঘ্রই নষ্ট করে দিতে যাচ্ছে। যদি আমার মেমরিটি রক্ষা করতে না পারি তবে পুরো পরিকল্পনাটাই ভেস্তে যাবে।” সোজাসুজি ফ্যাটের চোখের দিকে তাকালাম। “আর এটা সফল করার জন্য তোমার সাহায্য জরুরী। তোমাকে আমার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।”
– “কি বলতে চাও তুমি?” ফ্যাট দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন করল।
একটু ইতস্তত করলাম কারন যে কথাটি এখন বলতে যাচ্ছি তাতে ফ্যাটের কি প্রতিক্রিয়া হবে আমার জানা নেই।
– “আমাদের হাতে বেশি সময় নেই, আমি আমার মেমরিটা তোমার সিস্টেমে আপলোড করতে চাই। এটাকে বাঁচানোর এটাই একমাত্র উপায়। পরবর্তীতে তুমি এটা …” কথা শেষ করতে পারলাম না। একটা লাফ দিয়ে উঠল ফ্যাট। মনে হোল কোন ভয়ঙ্কর কথা মুখে নিয়ে ফেলেছি।
– “অসম্ভব, তুমি কি ভেবেছ তোমার ঐ অপয়া জিনিসটা আমি নিতে যাব? আমাকে পাগল ভেবেছ?” আবারো বিধি বাম। “ওহ এখন আমি সব বুঝতে পারছি। এটা তোমার পূর্ব পরিকল্পনা। সে জন্যই তুমি আমাকে পালাতে দিতে চাওনি।”
– “দেখো ফ্যাট, তুমি জানো মেমরিটা কোয়ারেন্টিন জোনেই সবচেয়ে নিরাপদ। ভিকির স্ক্যানিং কেবলমাত্র এখানেই কার্যকর নয়।” মাথা ঠাণ্ডা রাখলাম আমি। “তুমি এও জানো এটারনিয়ার রক্ষার্থে এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তুমি নিশ্চয়ই চাও না এটারনিয়া ধ্বংস হয়ে যাক।” আমার কথা শুনছে সে। কিন্তু দ্বিধা দন্দে ভুগছে।
– “অন্য কোন উপায় থাকলে বল।” মেমরিটি নিতে এখনো নারাজ।
– “আর কোন উপায় নেই, ফ্যাট।” আমি অসহায়ভাবে তাকালাম। “তোমাকে এটা রাখতেই হবে এখন। তুমি পরবর্তীতে আমার সাথে যোগাযোগ করবে।”
হটাত ভিকির কণ্ঠ সেলের স্পিকারে বেজে উঠল।
– “মাস্টার, ভিকির প্রসিডিউর স্টেশন প্রস্তুত। আপনার চিন্তার কারন নেই। এখানে কেবল আপনার মেমরিটি মুছে ফেলা হবে এবং আপনাকে মুক্ত করে দেয়া হবে। কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে ভিকির ম্যালবট আপনার সেলে পৌঁছে যাবে। ধন্যবাদ।” যোগাযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
আমি না যতটুকু ভয় পেলাম, মনে হোল তার চেয়ে অনেকগুন বেশি ভয় পেল ফ্যাট। ভিকি যেন একটা যম ওর কাছে। নিস্তব্ধ হয়ে গেছে সে।
– “দেখো ফ্যাট, এখন আর কিছু ভাবার সময় নেই। আমার কথা শোন।” জোর দিলাম। “আমার মেমরিটিকে রক্ষা করার এটাই শেষ সুযোগ।” তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। “তোমার সিস্টেম ব্লুটুথটি সক্রিয় কর।”
– “ফ্যাট! শুনতে পাচ্ছো?” এবার ঘোর ভাঙল ওর। নড়েচড়ে উঠল। “তোমার ব্লুটুথ অন করো।” আমি বললাম।
ব্লুটুথ সক্রিয় করল সে। এক মুহূর্তও দেরি করলাম না আমি। এনক্রিপ্ট (লক) করলাম মেমরিটি। এরপর ট্র্যান্সফার করা শুরু করলাম। বেশ কিচ্ছুক্ষণ সময় নিচ্ছিল প্রক্রিয়াটি, ফ্যাট বুড়ো কিংবা পুরনো মডেল বলেই কিনা!
– “প্রায় ৭৭% হয়ে গেছে। আরেকটু সময় লাগবে।” আমি ফ্যাটকে জানালাম।
হটাতই কোয়ারেন্টিন জোনের দরজাটা খুলে গেল। একটা ম্যালবট ভিতরে প্রবেশ করল। দুজনই তাকিয়ে রইলাম। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস হোল না। প্রায় তো শেষ। একটুর জন্য কি তবে…।
আমি ট্রান্সফার বন্ধ করে দিলাম। সর্বমোট ৭৭% হয়েছে মাত্র। ম্যলবটি আমার সেলের লকটি খুলল। আমাকে সামনে এগুনোর নির্দেশ দিল। আমি সামনে এগোতে লাগলাম।
– “আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করবো কি করে?” চিৎকার করল ফ্যাট। চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ।
– “ফ্যাট, তুমি ভিকির সহযোগী প্রোগ্রাম ছিলে! তুমি একজন কন্ট্রোলারও।” যেতে যেতে আমি চিৎকার করে বললাম। ফ্যাটকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কতটুকু বুঝতে পারলো জানি না।
– “কিন্তু আমি কীভাবে…” থেমে গেল ফ্যাট। দ্বিধান্বিত সে। ম্যালবট আমাকে সামনে নিয়ে যেতে থাকলো।
– “ফ্যাট, কোয়ারেন্টিন জোনে তুমি কেবল পচো না। নিজের মাথা কাজে লাগানোর চেষ্টা করো। মনে রেখো কেবল আমিই তোমাকে মুক্ত করতে পারি।” ফ্যাট বসে পড়ল। নিরাশ ভঙ্গিতে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
আমি জানি না কতটুকু বুঝতে পেরেছে সে। এও জানি না মানসিক দুরাবস্থা কাটিয়ে কতটুকুই বা সাহায্য করতে পারবে আমাকে। এখন আর কিছুই চিন্তা করার নেই।
আমরা কোয়ারেন্টিন জোন থেকে বের হলাম। আর একটু এগোলেই প্রসিডিউর স্টেশন।
২
অসম্ভব সুন্দর একটা সকাল। আমি আর এপ্রিল এটারনিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করছি। আমরা কমান্ড সেন্টারে রয়েছি। এটি কন্ট্রোল টাওয়ারের সর্বোচ্চ তলায় অবস্থিত। এখান থেকে পুরো এটারনিয়ার এক চিলতে সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এই টাওয়ার ঘিরে রয়েছে বিস্তৃত পর্বতশ্রেণী। রয়েছে অপরূপ সুন্দর ঝর্নার বাহার আর বৃক্ষরাজি। সে এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
এপ্রিল আমার ঠিক পাশেই বসে আছে। তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে, অনেকটা নিরব। ঠিক যেন আমার মতই কিছু একটা ভাবছে সে। এপ্রিল অসাধারণ সুন্দরী। মায়বী চোখ, ভরাট চিবুক, লম্বা কেশ আর হালকা গড়ন ওকে করেছে অতুলনীয়া। বিনয়ী মনোভব, নম্রতা আর মায়া জড়ানো কণ্ঠ – সত্যি বলতে কী, ঠিক প্রথম যেদিন ওকে আমি দেখেছিলাম, যেদিন ভিকির ম্যালবট আমাকে এখানে পৌঁছে দিয়েছিল, ঠিক সেদিন থেকেই একটা অদ্ভুত ধরনের অনুভূতি কাজ করতে শুরু করেছিলো ওর প্রতি। খুবই সুন্দর অনুভূতি সেটা। আমি ভাষায় সংজ্ঞায়িত করতে পারব না।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এখন পর্যন্ত ওকে এই ব্যপারটা জানানোর সাহস হয়নি আমার। অবশ্য এর পেছনে বড় একটা কারন রয়েছে। এপ্রিল কখনই আমাকে এমন সুযোগ দেয়নি। কাজের ব্যাপারে ও অনেক দায়িত্বশীল, এর বাইরে অন্য কোন বিষয় নিয়ে খুব একটা আলোচনা হতো না ওর সাথে। এপ্রিলের দায়িত্বশীলতা আর স্বাধীনচেতা মনোভাবের কারনে আমি কখনো এই প্রসঙ্গটা তুলতে পারিনি। তাছাড়া ওকে সবসময় মনে হত কিছু একটা নিয়ে উদ্বিগ্ন, যার স্পষ্ট ছাপ প্রায়শই ওর চেহারায় ধরা দিত। যদিও আমি কোনদিনই জানতে পারিনি কী তার সেই চিন্তার কারন। ও কখনো সেটা শেয়ার করেনি। যা-ই হোক, আজকের সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইলাম। কিঞ্চিত এগিয়ে বসলাম। সরাসরি তাকালাম ওর দিকে। কীভাবে শুরু করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
হটাতই ভিকির কর্কশ কণ্ঠ কমান্ড সেন্টারের স্পিকারে বেজে উঠল। এপ্রিল তাৎক্ষণিক উঠে পড়ল। পাওয়ার প্যানেলের সামনে গিয়ে বসলো। সে কন্ট্রোল টাওয়ারের নিয়ন্ত্রক।
– “মাস্টার, ভিকির স্ক্যান সম্পন্ন হয়েছে।” ভিকি জানালো। “সর্বমোট ৮৭১৯০৯৮ টি ফাইল স্ক্যান করা হয়েছে। কোন ভাইরাস ডিটেকশন নেই। কোন ফিক্স নেই। তবে আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি, অল্প কিছু সময়ের জন্য একটা ভাইরাল ডাটার উপস্থিতি ভিকির স্ক্যানিং সিস্টেমে ধরা পড়েছিল যদিও পরবর্তীতে সেটা বিলিন হয়ে যায়। এটা নিয়ে ভিকি অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। এটার সমাধান করা সম্ভব হলে আপনাকে জানানো হবে। আজকের বিস্তারিত রিপোর্টের জন্য লগ ফাইলটি দেখার জন্য অনুরোধ করা গেল। ধন্যবাদ।” ভিকি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল। একদম একটা রোবট।
এপ্রিল লগ ফাইলটি ওপেন করল এবং পর্যবেক্ষণ করা শুরু করল। একটু চিন্তিত দেখাল ওকে। আমি ওর পাশে একটি আসনে বসলাম। যোগ দিলাম ওর সাথে। এগুলো আমাদের প্রতিদিনকার কাজ।
হটাতই একটি নোটিশ পাওয়ার প্যানেলের মনিটরে ভেসে উঠল। একটি এরর নোটিশ। যদিও নির্দিষ্ট কোন কারন উল্লেখ নেই এতে। কোন একটি ত্রুটির রেশ ধরেই নোটিশটা প্রদর্শিত হচ্ছে। একটি এলাকার কথা উল্লেখ আছে, সেটা হল পানাবি ভ্যালি।
– “পানাবি ভ্যালি অঞ্চলে কোন একটি ত্রুটি রয়েছে। কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে এটা সনাক্ত করা সম্ভব নয়।” জানাল এপ্রিল। “ব্যপারটি সরেজমিনে অনুসন্ধান করতে হবে।”
– “হুম, আমারও তাই মনে হয়।” এপ্রিলের কথাটি যুক্তিযুক্ত। “ঠিক আছে, আমি পানাবি ভ্যালিতে অনুসন্ধানের জন্য যাচ্ছি।” মনে মনে আফসোস হোল, আজকে আর সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলাম না।
আমি কমান্ড সেন্টার থেকে বের হয়ে পড়লাম। লিফট ধরে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে আসলাম। একটি কন্ট্রোল টাওয়ার জেটে (সংক্ষেপে সিটিজি) চড়ে বসলাম। রওনা করলাম পানাবি ভ্যালির উদ্দেশ্যে।
বেশ কয়েকটি ন্যানো ঘণ্টা লেগে গেল আমাকে পানাবি ভ্যালিতে পৌছাতে। কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে এই অঞ্চলটি বেশ দূরে। এটি ফায়ার ওয়াল ঘেঁষা একটি অঞ্চল।
– “এপ্রিল, আমি পানাবি ভ্যালিতে পৌঁছে গেছি।” আমার যানটি ক্রমশ নিচে নামালাম। ভুমির কাছাকাছি নিয়ে আসলাম।
– “আপনাকে সাবধান থাকার জন্য অনুরোধ করছি।” এপ্রিল জানালো। কথাটা শুনতে কিন্তু ভালই লাগলো আমার।
– “এখন আমি এই এলাকাটি স্ক্যান করতে যাচ্ছি।” জানালাম এপ্রিলকে।
সিটিজি থেকে স্ক্যান কমান্ডটি কার্যকর করলাম। প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে গেল। গোটা এলাকাটি স্ক্যান করা হচ্ছে এখন। পাথুরে একটি জায়গা, দুই পাশে রয়েছে উচু নিচু পাহাড়। ধীরে ধীরে গোটা এলাকাটির একটি ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি হয়ে গেল। আমি ইতিমধ্যে ত্রুটিপূর্ণ স্থানটি সনাক্ত করে ফেলেছি। দেরি না করে কন্ট্রোল টাওয়ারে ডাটা প্রেরণ করলাম।
– “এপ্রিল, ত্রুটিটি দেখতে পারছ?”
– “হুম, ফায়ার ওয়াল থেকে আসছে সেটা।”
– “ঠিক আছে, আমি সামনে এগোচ্ছি। তুমি বুমারের সাথে যোগাযোগ করো।”
– “এখুনি আমি যোগাযোগ করছি।” এপ্রিল ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
বুমার হচ্ছে ফায়ার ওয়াল রক্ষণাবেক্ষণকারী একটি প্রোগ্রাম। এ সম্পর্কিত যাবতীয় সব কাজের দেখাশুনা ও-ই করে।
ভ্যালি ধরে ক্রমশ ফায়ার ওয়ালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। মাটি ঘেঁষে এগিয়ে চলছিল আমার যান। ভ্যালির শেষ মাথায় ফায়ার ওয়ালের সামনে পৌছাতেই আমার চোখ ছানাবড়া। পুরো ফায়ার ওয়াল জুড়ে রয়েছে বিরাট এক গর্ত। ভীষণ অবাক হলাম আমি।
সিটিজি ছেড়ে বের হলাম। তাকালাম চারিদিকে। জায়গাটা খুব অদ্ভুত লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো সবকিছু ঠিক নেই এখানে। বিপদের গন্ধ পাচ্ছিলাম।
কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না ফায়ার ওয়ালে গর্তটি তৈরি হোল কি করে? এটা কখন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে? আর বুমার কেনই বা ব্যাপারটি নিয়ে রিপোর্ট করেনি?
আমি একটু ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম। কোন বহিরাগতের কাজ নয়তো এটা? এমন কেউ যে ফায়ার ওয়াল ভেঙে এটারনিয়াতে অনুপ্রবেশ করেছে এবং ভিকি তাকে এখনো সনাক্ত করতে পারেনি। কি করে সম্ভব? অবশ্য এটা সত্যি অ্যান্টি-ভাইরাস প্রোগ্রাম অনেক সময় নতুন ও শক্তিশালী ভাইরাস সনাক্ত করতে পারে না অথবা দেরি করে। যদি সেটাই হয় তবে এই মুহূর্তে তো এটারনিয়া নিরাপদ নয়।
অগত্যা সিটিজিতে ফেরত যাওয়াটাই ঠিক মনে হোল আমার কাছে। এভাবে ফায়ার ওয়াল দুমরে মুচরে যে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে কোন সন্দেহ নেই সে প্রচণ্ড শক্তিশালী।
হটাত সিটিজির মানচিত্রে কিছু একটার গতিবিধি লক্ষ্য করলাম আমি। একটা সতর্কবার্তা বেজে উঠল। কিছু বুঝতে পারলাম না।
– “মাস্টার! আপনি এখুনি পানাবি ভ্যালি থেকে বের হন।” হটাত এপ্রিলের চিৎকার।
– “কেন? কি হয়েছে?” জানতে চাইলাম আমি।
– “আপনি শুধু বের হয়ে আসেন। এখুনি! দেরি করবেন না।”
আমার বুঝতে বাকি রইলো না সিরিয়াস কিছু একটা ঘটেছে। আমি দেরি না করে সিটিজিটি ঘুরালাম। গতি বাড়ালাম। ভুমি থেকে উপরে উঠিয়ে নিলাম সেটা। কোন কিছু চিন্তা না করে সোজা বের হয়ে এলাম পানাবি ভ্যালি থেকে। কন্ট্রোল টাওয়ার আভিমুখে রওনা করলাম।
জেটের গতি বেশি থাকার কারনে টাওয়ারে পৌছাতে একটু কম সময় লাগলো। সিটিজি পার্ক করে সোজা কমান্ড সেন্টারে প্রবেশ করলাম। দেখলাম পাওয়ার প্যানেলে কাজ করছে এপ্রিল।
– “এপ্রিল! কি হয়েছিল?” কৌতুহল অ্আর ভয় নিয়ে প্রশ্ন করলাম।
– “এদিকে দেখুন।” এপ্রিল মনিটরে ইঙ্গিত করল। “এখানে ফায়ার বটদের রিপোর্টটি দেখুন। এফবিআর – ৭৮ থেকে এফবিআর – ৯৪ পর্যন্ত মোট ১৭ টি ফায়ার বট সরাসরি এরর দেখাচ্ছে। বুমার এদেরকে জোন ১৯ এ (পানাবি ভ্যালি) অনুসন্ধানের জন্য পাঠিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এদের সাথে তার সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কন্ট্রোল টাওয়ার থেকেও আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু ফলাফল একই। সবার ক্ষেত্রেই কমিউনিকেশন এরর দেখাচ্ছে।”
আমি ভাল করে পুরো রিপোর্টটি পর্যবেক্ষণ করলাম। রিপোর্টটি সঠিক। বটগুলো সব নিরুদ্দেশ!
– “আশ্চর্যের ব্যাপার হল এরা সবাই ‘আর’ সিরিজের ফায়ার বট।” এপ্রিল বলল। “এরা নিরীহ এবং কেবলমাত্র অনুসন্ধান ও মেরামতের কাজের জন্য ব্যাবহার করা হয় এদের। আত্মরক্ষার কোন ব্যাবস্থা এদের সিস্টেমে নেই।”
– “রিপোর্ট থেকে এটা স্পষ্ট এদের উপর আক্রমন করা হয়েছে।” বললাম আমি। “হয়তোবা কেউ ধ্বংস করে ফেলেছে।”
– “আমিও সেটা নিয়েই ভয় পাচ্ছিলাম। তাই আপনার ব্যাপারে কোন ঝুঁকি নিতে চাইনি। আমি দুঃখিত।”
– “তুমি ঠিক কাজটিই করেছ, এপ্রিল। যতক্ষণ না এই ব্যাপারটির সুরাহা হচ্ছে, পানাবি ভ্যালি এমনকি এটারনিয়াও নিরাপদ নয়।”
– “আরও একটি ব্যাপার রয়েছে। একটি রহস্যজনক ইমেইল এসেছে টাওয়ার সিস্টেমে। অজ্ঞাত প্রেরক। সেন্ডার লিস্টে কোন নামের উল্লেখ নেই। অন্যান্য তথ্যগুলোও সন্দেহজনক। তাই আমি মেইলটি ওপেন করিনি।” থামল এপ্রিল।
– “ঠিক কাজটিই করেছ তুমি কিন্তু ডিলিট করো না এটা।” বুঝতে পারলাম না কি হচ্ছে এসব। “এপ্রিল, হেডার ফাইলটি চেক কর একবার। যদি হেডার থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়।”
এপ্রিল হেডার ফাইলটি বের করল। মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করল।
– “তেমন কোন উল্লেখযোগ্য তথ্য পাচ্ছি না।” এপ্রিল খুজে চলছে। “এক মিনিট। মেইলটি পাঠাতে ভিকি টাওয়ারের সার্ভার ব্যাবহার করা হয়েছে!”
– “কি! সেটা কি করে সম্ভব? ভিকি কেন এটা করতে যাবে? ভিকি তো সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।”
– “একটু সময় দিন। এটা ভিকি পাঠায়নি।” এপ্রিল কিছু একটা বুঝতে পারল। “ইমেইলটা ভাইরাল। কেবলমাত্র ভাইরাল ইমেইলই এমন আচরণ প্রদর্শন করে।” একটু থামল সে। “তাহলে পানাবি ভ্যালির আজকের এই ঘটনার সাথে ভিকি টাওয়ারের কেউ জড়িত নয়তো?” এপ্রিলের সন্দেহ প্রকাশ।
আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না ব্যাপারটা। বড্ড বেশি ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছিল সবকিছু।
– “আমি ভিকির সাথে যোগাযোগ করবো?” এপ্রিল জিজ্ঞাসা করল।
– “একটু দাড়াও।” থামালাম ওকে। “আমাকে ভাবতে হবে ব্যাপারটা। এপ্রিল! কেন যেন মনে হচ্ছে ভিকিকে এ ব্যাপার জানানোটা ঠিক হবে না।”
– “ভিকি জড়িত থাকতে পারে, তাই না?” এপ্রিল ধারণা করল।
– “না তা নয়।” আমি চুপ করে রইলাম। কি একটা দ্বিধা দন্দে ভুগছিলাম।
– “আমার কিন্তু ধারণা ভিকি এর সাথে জড়িত। প্রথম থেকেই ওকে আমার ভাল লাগত না।”
– “এপ্রিল, একটু চুপ করো। আমাকে ভাবতে দাও।” এপ্রিল চুপ করে গেল।
ভাবছিলাম কে আমাদের সাহায্য করতে পারে। ব্যাপারটা জটিল হয়ে যাচ্ছে।
– “এপ্রিল, বুমারের সাথে যোগাযোগ করো। বুমার হয়তো কোন কিছু জানতে পারে।”
এপ্রিল বুমারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করল।
– “হেই, এপ্রিল। বুমার বলছি। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।” ও সব সময় একই কথা বলে।
– “বুমার, আমি মাস্টার কোডার।”
– দুঃখিত, বস। বলুন।” মনে হয় লজ্জা পেল।
– “পানাবি ভ্যালির ফায়ার ওয়াল সম্পর্কে নতুন কিছু জানতে পেরেছ?”
– “না, বস। আমি যা জানতাম সব এপ্রিলকে জানিয়ে দিয়েছি। নতুন কিছু জানতে পারিনি। আমার ডিফেন্স বট পানাবি ভ্যালির সীমানা ঘিরে রেখেছে।” বেশ চটপটে জবাব।
– “ঠিক আছে।”
– “আর কিছু জানতে চান, বস?”
– “তুমি এখন কি করছো?”
– “বস, গান শুনছি। আপনি শুনবেন?”
– “না ঠিক আছে।” ও কখনোই সিরিয়াস নয়।
– “এপ্রিল শুনবে?”
– “না এপ্রিলও শুনবে না।” এপ্রিলের দিকে তাকালাম। ঠোট উল্টালো, মুচকি হাসি দিল সে। “তোমার গান তুমিই শোন।” যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলাম আমি।
– “তো গান শোনা হয় নাকি?” তাকালাম এপ্রিলের দিকে। মনে হল মজাই পাচ্ছে ও।
– “খুব একটা শুনি না। মাঝে মধ্যে। আপনি তো জানেন ওর কালেকশন খুব ভাল।”
– “হুম।” মুখ দিয়ে কথা বেরল না আর। কেমন যেন লাগলো। চুপ করে গেলাম।
এপ্রিল ওর মতো কাজে লেগে পড়ল। কিছুক্ষণ দুজনের মধ্যে কোন কথা হোল না।
৩
বেশ চিন্তিত আমি। ফায়ার ওয়ালের ব্যাপারটা না হয় বুমার দেখছে। ওরই দায়িত্ব এটা। কিন্তু আমার চিন্তার কারন ভাইরাসের ব্যাপারটি নিয়ে। এতগুলো ফায়ার বট হটাতই নিরুদ্দেশ হয়ে গেল! কেউ তো একজন এর পেছনে দায়ী। আমি নিশ্চিত সে এটারনিয়াতেই রয়েছে। ভিকিই কেবল ধরতে পারছে না।
তাছাড়া মেইলের ব্যাপারটাই বা কি? কে এই মেইলটা পাঠাল, তাও আবার ভিকির সার্ভার ব্যবহার করে। অনেকগুলো প্রশ্ন মাথায় জট বেধে গেছে। ভিকির সাথে যোগাযোগ করবো করবো ভাবছি। হটাত ভিকিই অনলাইনে চলে এলো।
– “মাস্টার, এটারনিয়াতে একটি নতুন ভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছে।”
– “ওহ! আমি এই ব্যাপারটি নিয়েই চিন্তিত ছিলাম। তোমাকে জানাতেই যাচ্ছিলাম।” যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। “ভাইরাসটিকে বন্দি করতে পেরেছ?”
– “ভাইরাসটি বন্দি করার জন্য ম্যালবট পাঠানো হয়েছে।” ভিকির ঠাণ্ডা গলা। “মাস্টার, ভাইরাসটি এটারনিয়ার কন্ট্রোল টাওয়ারে রয়েছে।”
– “কি?” এবার অবাক হলাম আমি। “কি বলছ তুমি?” ভিকির কথা বিশ্বাস হচ্ছিলো না।
– “ভিকি সঠিক বলছে। এপ্রিলের সিস্টেমে সাটান বাগের ডাটা রয়েছে। ডাটাটি আংশিক ও ত্রুটিপূর্ণ। এটি এপ্রিলের কোর সিস্টেমের সাথে মিশ্রিত। তাই ডাটাটি আলাদা করে সনাক্ত করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।”
– “বলছ কি তুমি?”
– “এপ্রিলই সেই ভাইরাস।”
নিজের কানকে যেন বিশ্বাসই হচ্ছিলো না। এ কি শুনছি আমি?
এপ্রিলের দিকে তাকালাম। একদম নিশ্চুপ সে। অন্তত এতটুকু বুঝতে পারলাম, এপ্রিল সেই খুনি ভাইরাসটি নয়!
– “তুমি ওকে নিয়ে কি করতে যাচ্ছ, ভিকি?”
– “এপ্রিলকে বন্দি করা হবে।”
– “কত সময়ের জন্য?” আমি উদগ্রীব।
– “এপ্রিলের সিস্টেম সংশোধনযোগ্য নয়। তাকে কোয়ারেন্টিন জোনে রাখা হবে।”
– “ঠিক আছে কিন্তু কত সময়ের জন্য??” আবারো প্রশ্ন করলাম।
– “দুঃখিত, মাস্টার। ভিকি তা সঠিকভাবে জানাতে পারছে না। এটা ভিকির গণনার বাইরে।” ভিকির উত্তর। “কিছুক্ষনের মধ্যে ভিকির ম্যালবট কন্ট্রোল টাওয়ারে পৌঁছে যাবে। ভিকি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছে। ধন্যবাদ।” যোগাযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দিল সে।
আমার বুঝতে বাকি রইলো না কিছুই। ভিকি চিরদিনের জন্য বন্দি করতে যাচ্ছে এপ্রিলকে। আর কখনই আমি ওর সংস্পর্শে যেতে পারবো না। দেখতে পারবো না কোনদিন। কি করবো এখন আমি? ওকে ছাড়া এই এটারনিয়াতে আমি কি নিয়ে থাকব! আমি তো এভাবে যেতে দিতে পারি না ওকে!
এপ্রিল আমার চোখের দিকে তাকালো। মনে হোল এমন একটা সময়ের জন্য তৈরিই ছিল সে।
– “ভিকিই সঠিক। আমার আজকের এই পরিণতির জন্য আমিই দায়ী। আমি সাটান বাগের ডাটা চুরি করেছিলাম।” একটা দীর্ঘশ্বাস নিল এপ্রিল। অনেক অনুতপ্ত দেখাল ওকে। “আমি সবসময় বিশ্বাস করতাম এটারনিয়ার বাইরে অন্য জগত রয়েছে, যেটা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি এটারনিয়ার জন্য নই। এখান থেকে মুক্তি চাইতাম আমি।” একটু বিরতি নিলো। “এটারনিয়ার ফায়ার ওয়ালকে একটা ধোঁকা মনে হতো। এটা অতিক্রম করে যেতে ইচ্ছে করতো। মনে হতো কেউ ওপারে অপেক্ষা করছে আমার জন্য।” থামল এপ্রিল। “এটারনিয়াকে একটা বিশাল অবরুদ্ধ কারাগার ছাড়া আর কিছুই মনে হতো না আমার কাছে। কেবলমাত্র কন্ট্রোল টাওয়ারের কাজ ছাড়া আর কিছু করার মতো ছিল না এখানে। বেচে থাকার জন্য একটা নুন্যতম কারন খুজে পেতাম না আমি। বস্তুত ভিকির কারাগার আর এটারনিয়ার মধ্যে আমি কোন পার্থক্যই খুজে পেতাম না। আক্ষরিক অর্থে আমি ছিলাম কন্ট্রোল টাওয়ারে বন্দি!” একবার বাইরে তাকাল এপ্রিল। “এই বিষন্নতা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল আমাকে। অবশেষে একটা বিরাট ভূল কাজ করে বসলাম আমি। এটারনিয়াকে বিপর্যস্ত করে ফেললাম। পালানোর চেষ্টা করলাম এখান থেকে কিন্তু ব্যর্থ হলাম।”
এপ্রিল স্বাধীনচেতা, সেটা আগে থেকেই জানতাম আমি। তবে ওর এতদিনের বিষণ্ণতার মূল কারন যে এটা, তা আজ বুঝতে পারলাম। এজন্যই সবসময় চিন্তিত মনে হতো ওকে। এটারনিয়ার প্রতি যেন আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছিল সে। কেবল কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকতো সবসময়।
– “আমি যখন এটারনিয়াতে বেচে থাকার একটা কারন খুজে পেলাম, ঠিক তখনই ভিকি আমাকে বন্দি করার কারন খুজে বের করল।” এপ্রিল ফুঁপিয়ে উঠল এবার। “আমাকে বাধা দিবেন না। আমি যেতে চাই। আমি এরই যোগ্য।”
– “আমি সব বুঝতে পারছি, এপ্রিল। কিন্তু আমি চিরদিনের জন্য তোমাকে হারাতে পারবো না। ভিকির কারাগারে তুমি কুড়ে কুড়ে মরবে, সেটা সহ্য করতে পারবো না। প্রয়োজনে আমি ভিকিকে চিরতরে শাট ডাউন করে দেব।”
– “না! কখনোই সেই ভুলটি করতে যাবেন না! একই ভুল আমি দ্বিতীয়বার দেখতে চাই না। কোন পরিস্থিতিতেই ভিকিকে নিষ্ক্রিয় করতে যাবেন না। এতে আপনি নিরাপত্তাহীনতার ঝুকির মধ্যে পড়ে যাবেন।” আমার চোখের দিকে তাকাল এপ্রিল। “আমাকে কথা দিন। কথা দিন আমাকে।”
– “কথা দিচ্ছি তোমাকে” হাতটা ধরলাম ওর। “কিন্তু ভিকির হাতে বন্দি হতে দিতে পারবো না।”
নিজেকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। ভয়ঙ্কর সত্যিটা উপলব্ধি করতে শুরু করলাম। বুঝতে পারলাম ওকে হারাতেই হবে আমাকে। হয়তবা চিরতরে। নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করলাম।
– “আমাকে যেতেই হবে। আর কোন উপায় অবশিষ্ট নেই।” এপ্রিল অনেক নিরাশ।
– “ঠিক আছে, যেতেই যদি হয় তুমি এটারনিয়া থেকে যাবে।” নিজেকে শক্ত করলাম। “আমি তোমাকে মুক্ত দেখতে চাই, বন্দি নয়।” এপ্রিল বিস্মিত হোল আমার কথায়। “তোমার জন্য সব করতে পারি আমি। কেন পারি সেটার ব্যাখ্যা জানা নেই আমার। শুধু জানি আমার ভিতরে একটা অনুভুতি কাজ করে তোমার জন্য। কখনো বলা হয়নি সেটা।”
– “কিন্তু…” থামিয়ে দিলাম ওকে।
– “তুমি সবসময় এটাই চেয়েছ, এপ্রিল।” হাত দিয়ে ওর দুই বাহু চেপে ধরলাম। “আমাকে নিয়ে ভেব না। আমাকে এই দিকটা সামাল দিতে হবে। আমি ফায়ার ওয়াল নিষ্ক্রিয় করে দেব।”
এপ্রিল কিছু একটা বলতে গেল। ওর মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরলাম।
– “আমি জানি এপ্রিল, তুমি এটাই চাও। বিশ্বাস করো আমাকে। তুমি সবসময় এটাই চেয়েছ।” কোন সাড়া দিল না এপ্রিল। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়েই রইলো শুধু। নিস্তব্ধ হয়ে গেছে সে। দ্বিধায় পরে গেছে।
হটাত ওয়ার্নিং সিগনাল বেজে উঠল মনিটরে। ভিকির ম্যালবট কাছাকাছি চলে এসেছে।
– “তোমাকে এখুনি এখান থেকে বের হতে হবে। আমাদের হাতে কোন সময় নেই।”
আমি ওর হাতটা ধরলাম। অনেকটা জোর করেই টেনে লিফটের কাছে নিয়ে গেলাম। যেন ও আমাকে ছেড়েই যেতে চাচ্ছিলো না।
– “তুমি নিচে যাবে। একটা সিটিজি নিয়ে সরাসরি নর্থ জোনের দিকে রওনা দিবে।” কথাটা দ্রুত বললাম। কিন্তু যেন ঘোরই কাটছে না ওর। একবার ঝাকালাম ওকে। “এপ্রিল!” চিৎকার করলাম।
– “একটু জড়িয়ে ধরতে পারি তোমাকে?” হটাতই বলে উঠল ও। চোখ ছলছল করছিলো।
জড়িয়ে ধরলাম ওকে। আমার চোখও ভিজে গেল, অনেক কষ্টে ধরে রাখার চেষ্টা করলাম তা।
– “আমাদের আবার দেখা হবে।” বললাম ওকে।
– “হবে তো?”
– “অবশ্যই হবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি ফেরত আসবে।” আশ্বস্ত করলাম।
একটু যেন স্বাভাবিক হোল ও। যেন আশার রেখা দেখতে পেল।
– “এই পাসকোডটা রাখো।” ধাতস্থ হোল। “এটা দরকার হবে। আর আমার কথাটা রেখো।”
– “ঠিক আছে।” মাথা নাড়ালাম। “এখন তোমাকে যেতে হবে। আমাদের হাতে সময় নেই।” আমি জোর করলাম।
লিফটের বোতাম চাপ দিলাম। দরজাটি আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেল সেটা। পুরোটা সময় ও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। হয়তো বা কিছু একটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু আর পারল না। শেষবারের মতো ওকে দেখলাম আমি। নিজেকে সান্তনা দিলাম, অন্তত ওর ইচ্ছাটা তো পূরণ হতে যাচ্ছে।
কিছুক্ষন পরে একটা সিটিজি কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে বের হোল। উড়াল দিল আকাশে। আস্তে আস্তে মিলিয়ে সেটা। আমি পাওয়ার প্যানেলে এসে বসলাম। ট্র্যাক করলাম ওর যানটা। ঠিক নর্থ জোনের দিকেই যাচ্ছে ও। ফায়ার ওয়ালটি নিষ্ক্রিয় করার কমান্ড কার্যকর করলাম। একটা কোড চাইল সিস্টেমটি। এপ্রিলের দেয়া কোডটি বসালাম। এন্টার বোতামটি চাপলাম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ফায়ার ওয়ালটি নিষ্ক্রিয় হোল না। এরর দেখাল। এটারনিয়ার কোন সিকিউরিটি প্রোগ্রাম বাধা দিচ্ছিল। ভিকি!
দুঃখিত এপ্রিল। আমি তোমার কথাটি রাখতে পারছি না। মনে মনে ভাবলাম। ভিকিকে নিষ্ক্রিয় করতে হবে আমাকে। কোন কিছু চিন্তা করলাম না। শাট ডাউন করে দিলাম ভিকিকে। সাথে সাথে ফায়ার ওয়ালটিও নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল। এপ্রিলের যানটি ফায়ার ওয়াল অতিক্রম করল। হারিয়ে গেল যানের সঙ্কেতটি। চলে গেল এপ্রিল। মুক্ত হয়ে গেল। যেটা ও সবসময় চেয়ে এসেছিল। একটু কি খুশি হতে পারলাম আমি! হয়তবা!
কিছুক্ষনের মধ্যে ফায়ার ওয়ালটি পুনরায় সক্রিয় করলাম। সেটা কাজ করতে শুরু করল। এবার ভিকিকে অ্যাক্টিভেট করার পালা। এপ্রিলের কোড বসালাম। কমান্ডটি কার্যকর করলাম। ভিকির সিস্টেম রিবুট (রিস্টার্ট) নেয়া শুরু করল।
হটাত একটা ভি-জেট থেকে কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হোল। আমি সঙ্কেতটি গ্রহন করলাম।
– “কন্ট্রোল! এটা ইমারজেন্সি! ভিকি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত! ভিকি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত!” কথাটা দুইবার বাজল। “ভিকিকে পুনরায় সক্রিয় করবেন না! যে কোন মূল্যেই হোক, ভিকিকে সক্রিয় করবেন না।” একটা অচেনা কণ্ঠ বলে উঠল।
– “কে? কে বলছেন??” আমি হতবম্ব।
– “মাস্টার, আমি ফ্যাট বট। শুধু একবারের জন্য আমার কথাটি বিশ্বাস করুন।”
কে এই ফ্যাট বট? কেনই বা আমি তার কথা বিশ্বাস করবো?
– “আমি এটারনিয়ার ওয়েস্ট জোনে রয়েছি। আপনি …” হটাত যোগাযোগটি বন্ধ হয়ে গেল। যেন সেটা ওভারল্যাপ করল নতুন এক কণ্ঠ।
– “আমি ডালিয়া।” কণ্ঠটা অনেক গম্ভীর। “এটারনিয়া এখন আমার। কন্ট্রোল টাওয়ার আমার। এটারনিয়ার সবকিছু আমার।” কথায় দাম্ভিকতার সুর স্পষ্ট। “তোমাদের সবাইকে শেষ হতে হবে। মরতে হবে তোমাদের। এখন আমি এটারনিয়াকে সুরক্ষিত করবো। আমি এর রক্ষাকর্তা।” খুবই নিষ্ঠুর মনে হোল এই কণ্ঠের মালিককে।
ভয় পেলাম আমি। তাহলে এটাই সেই খুনে ভাইরাস! এখন ভিকিকে আক্রান্ত করেছে। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ঘাপটি মেরে বসেছিল সে। আর আমিই ওকে সুযোগটা করে দিয়েছি।
আমি ভিকির সিস্টেমটি বন্ধ করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন কাজই হোল না।
পাওয়ার প্যানেলে তাকালাম। সংকেত পেলাম, অনেকগুলো ভি-জেট এই দিকেই আসছে। বুঝতে পারলাম এখুনি এখান থেকে বের হতে হবে আমাকে। নিচে নেমে এলাম। একটা সিটিজিতে উঠে পড়লাম, দেরি না করে এটারনিয়ার ওয়েস্ট জোন অভিমুখে রওনা করলাম। অচেনা কণ্ঠের মালিক ফ্যাটকে হয়তো সেখানে পাব। হয়তো সে আমাকে সাহায্য করতে পারবে।
এটারনিয়ার ওয়েস্ট জোনে ফ্যাটের সাথে দেখা হোল আমার। বুমারও রয়েছে ওর সাথে।
– “মাস্টার, আপনার একটি মুল্যবান জিনিস আমার কাছে রয়েছে। আপনি অনুমুতি দিলে আমি ট্র্যান্সফার করতে পারি।” ফ্যাট আনুমতি চাইল।
আমি বুমারের দিকে তাকালাম। হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়াল সে। আমার ব্লুটুথ সিস্টেমটি সক্রিয় করলাম।
মেমরিটি পাওয়ার পর প্রথমেই একটা প্রশ্ন মাথায় আসলো “এপ্রিল কোথায়?” পরক্ষনেই বুঝতে পারলাম। ও নেই। চলে গেছে। চিরতরে চলে গেছে। একটা চিৎকার বেরল মুখ দিয়ে। আমিই যে ওকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছি। আমারই অজ্ঞতা, আমার মেমরির অনুপস্থিতি শেষ করে দিয়েছে ওকে।
এপ্রিল এটারনিয়ার নিজস্ব/ইনহেরিট প্রোগ্রাম। ওর সিস্টেম এটারনিয়ার বাইরে কোনদিন কাজ করবে না। ওকে কেবল এটারনিয়ার উপযোগী করেই কোড করা হয়েছিল। এটারনিয়ার বাইরে ওর সিস্টেমের কোন অস্তিত্ব টিকবে না। অথচ এই আমিই ওকে যেতে দিয়েছি। ও তো যেতে চায়নি!
ওর কথাটিও রাখিনি আমি! যদি ওর কথাটি রাখতাম! একবার রাখতাম!
এপ্রিল সবসময় বিশ্বাস করত এটারনিয়ার বাইরে অন্য দুনিয়া আছে। কারন আমি এটারনিয়ার বাইরে থেকে এসেছি। কিন্তু পৃথিবী আর ফায়ার ওয়ালের ওপাশের স্থান যে এক নয়, সেটা কখনোই বুঝতে পারত না ও। এপ্রিল ভুল ছিল। ভয়াবহভাবে ভুল ছিল। আর ভুল ছিলাম আমি।
আজ চিরদিনের জন্য হারিয়েছি ওকে। আমার কাছে আর কোন দিন ফেরত আসবে না ও!
এখন বুঝতে পারছি, আমার যে অনুভূতিটি ওর জন্য সবসময় কাজ করত, সেটা আর কিছুই না, ভালবাসা! যদি এটা একবার বুঝতে পারতাম। যদি আমার মেমরিটা আমার কাছে থাকতো!
বিঃ দ্রঃ এটি একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। এখানে উল্লেখিত সকল চরিত্র কাল্পনিক। লেখক এর সম্পূর্ণ স্বত্বাধিকারী। অনুমুতি ব্যাতিত এর কোন অংশ নকল বা প্রকাশ করা নিষেধ।