জিগি বলল, পুরো ব্যাপারটা একবার পর্যালোচনা করা যাক।
আমি মাথা নাড়লাম। জিগি বলল, তুমি এসে বললে তোমার মস্তিষ্ক ম্যাপিং করে তোমাকে এবং রাজকুমারী রিয়াকে পরাবাস্তব জগতে আটকে রাখা হয়েছে। তাদেরকে সাহায্য করার জন্যে আমি মূল নেটওয়ার্কে ঢোকার চেষ্টা করলাম, পারলাম না। উল্টো আমার আস্তানাটি ধ্বংস হল।
আমি আবার মাথা নাড়লাম। জিগি বলল, আমার তখনই থেমে যাওয়া উচিত ছিল, কারণ তোমার কিংবা রাজকুমারীর কিছু হয় নি তাদের ম্যাপিং বা পরাবাস্তব অস্তিত্বটি শুধুমাত্র আটকা পড়েছে। তারা যদি মারাও যায় তোমাদের কিছু হবে না–তোমরা ভালোভাবে বেঁচে থাকবে। কিন্তু এই সহজ যুক্তিটি আমার চোখে পড়ল না– আমি বোকার মতো আবেগপ্রবণ হয়ে গেলাম।
আমি আবার মাথা নাড়লাম।
জিগি বলল, আবেগপ্রবণ হলে মানুষ ভুল করে, আমিও ভুল করলাম। খুব বড় ভুল। পালানোর রাস্তা ঠিক না করে এখানে এসে হাজির হলাম। শুধু হাজির হলাম তা নয়, নেটওয়ার্কের পরিবর্তন করে ছয়টি পরাবাস্তব জগৎ এক সমতলে নিয়ে এসে তোমাকে এর ভেতরে ঢুকিয়ে দিলাম। তখন একটা কেলেঙ্কারি হল–আমরা একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়ে গেলাম। এখন আমাদের কী হবে জানি না।
আমি আবার মাথা নাড়লাম। জিগি বিরক্ত হয়ে বলল, শুধু মাথা নাড়বে না, কিছু একটা বলো।
বলার বিশেষ কিছু নেই।
অন্ততপক্ষে বলল যে তুমি খুব দুঃখিত।
আমি দুঃখিত না হলে কেন মিছিমিছি বলব যে আমি দুঃখিত?
জিগি রেগে উঠে বলল, তোমার একটি পরাবাস্তব অস্তিত্বের জন্যে আমরা এত বড় একটা গাড়ায় পড়েছি–তুমি সেজন্যে দুঃখিত হবে না?
আমি মাথা নাড়লাম, বললাম, না
কেন না?
সেটা আমি বলতে পারব না
কেন বলতে পারবে না?
কারণ আমি নিশ্চিত আমাদেরকে খুব তীক্ষ্ণ চোখে লক্ষ করা হচ্ছে।
অবিশ্যি লক্ষ করা হচ্ছে। কিন্তু কোন ব্যাপারটি এখানে গোপন যেটা আমরা জানি কিন্তু ওরা জানে না?
আমি জিগির কথার উত্তর না দিয়ে বললাম, তোমার কাছে একটা চাকু আছে?
জিগি অবাক হয়ে বলল, না, কেমন করে থাকবে? আমাদের ব্যাগগুলো রেখে দিয়েছে!
খুব ছোট চাকু? যেটা বিপজ্জনক নয়?
জিগি তার প্যান্টের অনেকগুলো পকেট ঘেঁটে একটা ছোট চাকু বের করল, কষ্ট করে এটি দিয়ে ফলমূলের ছিলকে কাটা যেতে পারে। আমি চাকুর ধারটা পরীক্ষা করে বললাম, চমৎকার!
কী চমৎকার?
চাকুর ধারটুকু।
কেন?
আমি ঠিক করেছি আত্মহত্যা করব।
জিগি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, এরকম সময়ে ঠাট্টা তামাশা ভালো লাগে না।
আমারও ভালো লাগে না– এবং সে কিছু বলার আগেই আমি কবজিতে মূল ধমনির ওপর চাকু বসিয়ে দিলাম, নিখুঁত কাজ, সাথে সাথেই ধমনি কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম যেরকম যন্ত্রণা হবে ভেবেছিলাম, সেরকম যন্ত্রণা হচ্ছে না।
জিগি চিৎকার করে আমার হাত ধরে ফেলল, কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা দুজনে রক্তে মাখামাখি হয়ে গেলাম। আমি যথাসম্ভব শান্ত গলায় বললাম, এত ব্যস্ত হবার কিছু হয় নি। আমি যদি মরে যাই শুধুমাত্র তা হলেই তুমি বেঁচে যেতে পারবে।
কেন? কেন একথা বলছ? কারণ আমি বেশি জেনে ফেলেছি–তোমার সেটুকু জানার দরকার নেই।
আমি কথা শেষ করার আগেই একটা এলার্মের শব্দ শুনতে পেলাম এবং কিছুক্ষণের মাঝে দরজা খুলে একজন ডাক্তার ছুটে এল। আমি নিশ্বাস বন্ধ করে ডাক্তারটির মুখের দিকে তাকালাম, যা আশা করেছিলাম তাই, ডাক্তারটি জানা। তার সাথে যোগাযোগ করার জন্যেই আমি আমার ধমনিটি কেটেছি রক্তপাতটুকু বৃথা যায় নি।
ক্ৰানা আমার ওপর ঝুঁকে পড়ল, কী আশ্চর্য! এটা কোন ধরনের নির্বুদ্ধিতা?
হাতের টিস্যু জোড়া লাগানোর যন্ত্রটি একটি চাপা গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে, আমি সেই শব্দের আড়ালে কানার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম। ফিসফিস করে বললাম, ক্রানা এটা নির্বুদ্ধিতা না, তোমার সাথে যোগাযোগ করার এটা আমার একমাত্র উপায়।
ক্রানা কোনো কথা না বলে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল, আমি ফিসফিস করে বললাম, আমাদের খুব বিপদ। পৃথিবীর খুব বিপদ। আমাদের এখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ করে দাও।
ক্রানা আমার ধমনিটি জোড়া লাগিয়ে রক্তপাত বন্ধ করে ফিসফিস করে বলল, কেমন করে সেটা করব?
তোমার সিকিউরিটি কার্ড আছে সেটা আমাদের দিয়ে যাও।
ক্ৰানা চোখ বড় বড় করে বলল, তোমার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়েছে।
না, হয় নি। বিশ্বাস কর। পৃথিবীর খুব বিপদ।
আমি কেমন করে সেটি বিশ্বাস করব? তুমি হচ্ছ চাল–চুলোহীন ভবঘুরে একজন মানুষ? তোমাকে বিশ্বাস করার কী কারণ আছে?
আছে। দোহাই তোমার– আমি কাতর গলায় বললাম, আমার চোখের দিকে তাকাও–দেখো আমি সত্যি কথা বলছি কি না।
ক্ৰানা আমার চোখের দিকে তাকাল, তাকিয়ে মাথা নেড়ে বলল, আমি দুঃখিত। আমি খুব দুঃখিত। আমি পারব না।
ক্ৰানা উঠে দাঁড়াল, হাতের কবজিতে ছোট একটা সার্জিক্যাল টেপ লাগিয়ে আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল, এর ভেতরে দুটি বলকারক ট্যাবলেট দিয়েছি। খিদে পেলে খেও। রক্তক্ষরণ হয়েছে, দুর্বল লাগতে পারে।
আমি কোনো কথা বললাম না, অত্যন্ত আশাভঙ্গ হয়ে ক্রানার দিকে তাকিয়ে রইলাম, আমি বড় আশা করেছিলাম যে এই মেয়েটি ব্যাপারটির গুরুত্বটুকু বুঝবে। মেয়েটি বুঝল না।
ক্ৰানা চলে যাবার পর জিগি আমার দিকে এক ধরনের বিস্ময় এবং আতঙ্ক নিয়ে তাকিয়ে রইল, খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, আমার ধারণা ছিল তুমি মানুষটা স্বাভাবিক। ধীরস্থির, ঠাণ্ডা মেজাজের মানুষ। আমার ধারণাটা সত্যি নয়।
আমি কষ্ট করে হাসার চেষ্টা করে বললাম, তোমার ধারণাটা আসলে সত্যি। বিশ্বাস কর।
কেমন করে বিশ্বাস করব? যে মানুষ এভাবে নিজের হাতের ধমনি কেটে ফেলে প্র
য়োজনে কাটতে হয়—
জিগি চিৎকার করে বলল, প্রয়োজনে? প্রয়োজনে?
হ্যাঁ।
জিগি চিৎকার করে নিশ্চয়ই আরো কথা বলত কিন্তু তার আগেই খুট করে শব্দ হল এবং দরজাটা খুলে গেল। আমি দেখতে পেলাম খ্রাউস ভেতরে এসে ঢুকেছে। আমাদের থেকে খানিকটা নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে সে খানিকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল, তারপর একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আশ্চর্য!
ঠিক কোন ব্যাপারটি নিয়ে আশ্চর্য বলেছে আমি জানি না, কিন্তু সেটি নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করল না। উস আবার বলল, আশ্চর্য আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি তোমাদের কাছে এসেছি।
আমি এবারে জিজ্ঞেস না করে পারলাম না, কী জন্যে এসেছ?
একটা জিনিস জানার জন্যে।
কী জিনিস?
আমি নিশ্চিত তোমরা জান না–তবু কৌতূহল হচ্ছে তাই জিজ্ঞেস করছি। তোমরা কি জান পরাবাস্তব জগতে রিয়া কেন এখনো বেঁচে আছে? তার বেঁচে থাকার কথা নয়। সাতদিন পর তাকে খুন করার জন্যে নুরিগাকে পাঠিয়েছি, তার হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে–তার পরও রিয়া এখনো বেঁচে আছে কেন?
আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল, আমি বললাম, হ্যাঁ জানি।
খ্রাউস চমকে উঠে আমার দিকে তাকাল, সত্যি জান?
হ্যাঁ। সত্যি জানি।
খ্রাউস একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমার জানার খুব কৌতূহল হচ্ছে। বলো, কেন?
আমার অনুমান যদি সত্যি হয়ে থাকে তা হলে নুরিগা এখন পরাবাস্তব জগতে আমাকে এবং রিয়াকে সাহায্য করছে।
অসম্ভব। খ্রাউস মুখ বিকৃত করে বলল, নুরিগা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ। তার চরিত্রের প্রত্যেকটা দিক তুলে আনা হয়েছে পৃথিবীর বড় বড় অপরাধীদের ভেতর থেকে। তার চরিত্র হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য মানুষের চরিত্র। শুধু তাই না, রিয়া সম্পর্কে তার মনকে আমরা বিষাক্ত করে পাঠিয়েছি।
আমি আনন্দে হা–হা করে হেসে বললাম, ভুল! তুমি ভুল। নুরিগা পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ নয় সত্যি কথা বলতে কী একজন মানুষ কখনো সবচেয়ে খারাপ হয় না। তোমরা যেসব খারাপ মানুষের জিন্স এনেছ খোঁজ নিয়ে দেখো তারাও খারাপ মানুষ হয়ে জন্মায় নি–তারা ধীরে ধীরে খারাপ হয়েছে। পরিবেশ তাদের খারাপ করেছে।
তুমি বলতে চাইছ নুরিগা স্বাভাবিক একটা মানুষ?
আমি বিশ্বাস করি তাকে স্বাভাবিক একটা মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।
খ্রাউস মাথা নাড়ল, অসম্ভব। হতেই পারে না।
তুমি নিজেই তার প্রমাণ দেখেছ–নুরিগা এখন রিয়া আর আমার সাথে সাথে পরাবাস্তব জগতে ঘুরছে। আমার ধারণা–
তোমার ধারণা?
আমার ধারণা সেখান থেকে তোমাদের ওপর তারা একটা বড় হামলা করবে।
খ্রাউসকে কেমন যেন হতচকিত এবং ক্রুদ্ধ দেখায়। আমি ষড়যন্ত্রীদের মতো গলায় বললাম, তোমরা কেন নুরিগাকে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ হিসেবে তৈরি করেছিলে আমি জানি না। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।
কী সাহায্য?
তুমি এবং তোমার দলবল নুরিগা থেকে হাজার গুণ বেশি খারাপ মানুষ। তোমরা নিজেদের ব্যবহার করতে পার।
খ্রাউস রক্তচক্ষু করে আমার দিকে তাকাল, তারপর হিংস্র গলায় বলল, তোমার দুঃসাহস দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। তুমি জান আমি তোমাকে কী করতে পারি?
আসলে জানি না। আমি মাথা নেড়ে বললাম, তুমি সম্ভবত আর দশজন মানুষ থেকে অনেক বেশি নিষ্ঠুর আমাদের নিয়ে হয়তো অনেক কিছুই করতে পার। কিন্তু তাতে এখন আর কিছু আসে–যায় না।
খ্রাউস আরো কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল ঠিক তখন তার যোগাযোগ মডিউলটা শব্দ করে ওঠে, সে কানে লাগিয়ে কিছু একটা শুনে বলল, চমৎকার। দুজনকেই লঞ্চ প্যাডে। নিয়ে যাও। তারপর মডিউলটা পকেটে রেখে আমাদের বলল, তোমরা একদিকে খুব সৌভাগ্যবান যে, আমার হাতে যথেষ্ট সময় নেই। তাই তোমাদের মৃত্যুটাকে সেরকম আকর্ষণীয় করতে পারব না।
তুমি হয়তো সেরকম সৌভাগ্যবান নও। আমি মুখে হাসি টেনে বললাম, নুরিগা যখন পরাবাস্তব জগতে গিয়েছে আমি তখন তাকে দিয়ে একটা খবর পাঠিয়েছিলাম। খবরটা কি শুনতে চাও?
খ্রাউস হিংস্র চোখে আমার দিকে তাকাল, বলল, কী খবর?
রক্তের রঙ লাল। একটু থেমে বললাম, সবুজ নয়!
খ্রাউস বিস্ফারিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল, মনে হল সে আমার কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। কয়েকবার চেষ্টা করে বলল, কী বললে?
বলেছি রক্তের রঙ লাল–সবুজ নয়।
এক মুহূর্তের জন্যে মনে হল খ্রাউস বুঝি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঝাঁপিয়ে পড়ল না, দরজাটা সশব্দে বন্ধ করে বের হয়ে গেল। জিগি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কী হচ্ছে এখানে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
আমার হঠাৎ এক ধরনের ক্লান্তি লাগতে থাকে। পিছিয়ে এসে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আমি জিগির দিকে তাকিয়ে বললাম, মনে আছে একটু আগে তুমি আমাকে পরাবাস্তব জগতে পাঠিয়েছিলে?
হ্যাঁ। মনে আছে।
সেখানে আমি খ্রাউসকে খুন করার জন্যে একটা ধাতব দণ্ড দিয়ে আঘাত করেছিলাম। আঘাতে কানের নিচে ফেটে গিয়ে রক্ত বের হয়ে এসেছিল।
জিগি অবাক হয়ে বলল, তুমি–তু–তুমি আঘাত করেছিলে? খ্রাউসকে?
হ্যাঁ। আমি নিশ্বাস ফেলে বললাম, আঘাত করাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষ হঠাৎ করে রেগে গেলে তো একজন আরেকজনকে আঘাত করতেই পারে। যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে–
সেটা হচ্ছে?
খ্রাউসের কানের নিচে কেটে যে রক্ত বের হয়েছিল সেটা। সেই রক্তের রঙ ছিল সবুজ।
জিগি চমকে উঠে বলল, কী বলছ তুমি?
হ্যাঁ।
অসম্ভব। এটা হতে পারে না।
এটা হয়েছে। আমি জানি।
জিগি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, এর অর্থ কী?
আমার ধারণা খ্রাউস মানুষ নয়।
মানুষ নয়?
না। আমি মাথা নাড়লাম। খ্রাউস এন্ড্রয়েড, সাইবর্গ বা রোবটও নয়। খ্রাউস হচ্ছে। একটা ডিকয়।
ডিকয়?
হ্যাঁ। আমাদের পৃথিবীর প্রযুক্তি পরাবাস্তব জগৎ তৈরি করার জন্যে এখনো প্রস্তুত হয় নি। কিন্তু দেখতেই পাচ্ছ এখানে সেই প্রযুক্তি আছে। কারণ কোনো এক মহাজাগতিক প্রাণী সেই প্রযুক্তি পাঠিয়েছে। পৃথিবীর মানুষের সাথে যোগাযোগ করেছে যে ইন্টারফেস সেটাই হচ্ছে খ্রাউস। খ্রাউস হচ্ছে সেই ডিকয়। মানুষের মতো কিন্তু মানুষ নয়। তাই রক্ত সবুজ।
যারা এত কিছু করতে পারে তারা রক্তের রঙ লাল করতে পারে না?
নিশ্চয়ই পারে। কিন্তু আমি যে খ্রাউসকে দেখেছি সে ছিল পরাবাস্তব জগতে। সেখানে আমার কিংবা আর কারো যাবার কথা ছিল না। সেজন্যে মাথা ঘামায় নি। সেখানে আমি শুধু উসকে দেখি নি–আরো অনেক বিচিত্র জিনিস দেখেছি। যার অনেক কিছু সম্ভবত মহাজাগতিক
কী বলছ তুমি?
হ্যাঁ। তোমাকে বলার সুযোগ পাই নি।
আমি দেওয়ালে মাথা রাখলাম, হঠাৎ করে আমি এক ধরনের ক্লান্তি অনুভব করি। কোনো কিছু করতে না পারা থেকে এক ধরনের অসহায় ক্রোধ। সেই ক্রোধ থেকে ক্লান্তি। জিগি আমার ওপর ঝুঁকে পড়ে বলল, তোমাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
হ্যাঁ। হঠাৎ করে দুর্বল লাগছে।
ডাক্তার মেয়েটি তোমাকে বলকারক একটা ওষুধ দিয়ে গেছে তুমি খাও।
আমি জিগির দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বললাম, শরীরে বল বাড়িয়ে কী হবে? খ্রাউস এই মুহূর্তে পরিকল্পনা করছে কীভাবে আমাদের নিশ্চিহ্ন করবে।
করুক। জিগি কানার দিয়ে যাওয়া প্যাকেটের ভেতরে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল, কোথায়? এখানে কোনো ওষুধ নেই। একটা কার্ড।
কার্ড?
আমি চমকে সোজা হয়ে বললাম, কী কার্ড?
ক্রানার সিকিউরিটি কার্ড!।
মুহূর্তে আমার শরীর থেকে সকল দুর্বলতা উধাও হয়ে গেল। আমি সমস্ত স্নায়ুতে এক ধরনের তীব্র উত্তেজনা অনুভব করলাম। কানা আসলে আমাকে বিশ্বাস করেছে, তার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে আমাকে তার সিকিউরিটি কার্ডটি দিয়েছে, তার মানে আমাদের সামনে এখনো একটি সুযোগ রয়েছে। আমার শরীরে এড্রেনেলিনের প্রবাহ শুরু হয়ে গেল। আমি লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জিগিকে বললাম, চলল।
কোথায়, কেন, কীভাবে, কখন এসব নিয়ে জিগি এতটুকু মাথা ঘামাল না, সেও লাফিয়ে উঠে বলল, চলো।