শীত পরতে শুরু করেছে কয়েকদিন হলো। এই শীতের রাতে সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপারটা হলো
মাঝরাতে কম্বল ছেড়ে বাইরে বের হওয়া। আর এই বিরক্তিকর ব্যাপারটাই বদ অভ্যাসে
পরিনত হয়েছে মাঝরাতে প্রস্রাব চাপার ফলে। বাথরুমে যাওয়ার পথে একটা যায়গায় বেশ ঘাস আছে। ঠান্ডা
ঠান্ডা রাতে শিশিরভেজা ঘাসের উপর দিয়ে যাওয়াটা আরও বিরক্তিকর। তবে রাতের বেলা বাইরের পরিবেশ বেশ
চমৎকার । কয়েকদিন হলো খেয়াল করছি অনেকগুলো শেয়াল একজায়গায় দল বেধে দাঁড়িয়ে থাকে। ব্যাপারটা ভালোই লাগে।
……
আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যমুনা নদীর একটা শাখা বয়ে গেছে… বর্ষার সময় পানি থাকে…. বাকি সময় শুকনো।
বাথরুমটা নদীর পাশেই… তবে এখন পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে। আজও বের হয়েছি। অন্যদিনের মতোই শেয়ালগুলো দূরে
একজায়গায় দল বেধে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের কৌতুহলী দৃষ্টি একটু দুরের একটা ঝোপের দিকে। ব্যাপারটা প্রথম খেয়াল করেছি কয়েকদিন আগে….
কয়েকটা শেয়াল ঝোপের ভেতর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময়। এরপর থেকেই ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি।
আজ বেশ অন্ধকার তাই একটু ভয় ভয় লাগছে। ঘড়ে চলে যাবো ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ফোনের ফ্লাশলাইট নিভে গেলো…. মুহুর্তের
মধ্যেই আবার জ্বলে উঠলো।
ফোনের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম… স্ক্রিনে, অদ্ভুত সব লেখা উঠে আছে।
কিছুই বুঝতে পারছি না…. কি হচ্ছে এসব।
…….
ফোনের দিকে খেয়াল থাকায় ঝোপের ভিতর থেকে আসা অদ্ভুত আলোটা লক্ষই করি নি। আরও আশ্চর্যজনক
ব্যাপার আমার ফোনের ফ্লাশলাইট আর ঝোপের ভিতরের আলো সমান তালে জ্বলছে নিভছে………. ……. বুঝতে পারছি না কি করবো।
যদিও বেশ ভয় লাগছে.. তবুও কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারছি না।
মুহুর্তের মধ্যেই আশেপাশের পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে গেছে।
….
অপার্থিব আলোয় ভরে গেছে চারপাশ….
ফোন থেকে এবার অদ্ভুত ধরনের কর্কশ আওয়াজ বের হতে শুরু করেছে। শেয়ালগুলোও দৌড়ে পালাচ্ছে….
অজানা আতংক গ্রাস করে ফেলেছে রাতের পরিবেশকে। প্রচন্ড মাথাব্যথা হচ্ছে আমার.. ইচ্ছে হচ্ছে শেয়ালগুলোর মত দৌড়ে পালিয়ে
যাই.. কিন্তু পারছি না।
মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাবো।
…..
মন্ত্রমুগ্ধের মত এগিয়ে চলেছি ঝোপটার দিকে।
ঝোপের কাছে আসতেই আচমকা তীব্র আলো এসে লাগলো চোখে। আলোর তীব্রতায় ছিটকে পরে গেলাম অনেকটা
দূরে । আশ্চর্যজনক ব্যাপার এত দূর থেকে ছিটকে পরে গেলেও… একটুও ব্যাথা পেলাম না। মাথাব্যাথাও উধাও….।
আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো। আলোটাও অনেক কমে গেছে। এগিয়ে গেলাম ঝোপের
দিকে… কাছাকাছি যেতেই যেখান থেকে আলো আসছে সে জায়গাটা স্পষ্ট
দেখতে পেলাম। ঝোপের মাঝামাঝি একটা জায়গায় প্রদিপের কাপা কাপা শিখার মত জ্বলছে। আলোটা ঠিক কোথা
থেকে আসছে বোঝা যাচ্ছে না। অদ্ভুতভাবে আলোটা একটুও ছড়াচ্ছে না , আর আগের মত… নির্দিষ্ট একটা আকার নিয়ে জ্বলছে।
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি…
কি করবো বুঝতে পারছি না…।
আরো একটু কাছে এগিয়ে গেলাম….
অদ্ভুত একটা যন্ত্রকে ঘিরে জ্বলছে আলোটা। আচমকাই
তীক্ষ্ণ চি চি শব্দে খুলে যেতে লাগলো যন্ত্রটা।
একটা পর্দা বের হয়ে গেছে যন্ত্র থেকে…
সেখানে সেই দুর্বোধ্য লেখাগুলো দেখা যাচ্ছে যেগুলো আমার ফোনে দেখেছিলাম। লেখাগুলো দেখেই ফোনের কথা মনে পরে
গেলো… কোথাও পরে গেছে নিশ্চয়ই। লক্ষ করলাম যন্ত্রের একটা জায়গা থেকে কয়েকটা অংশ খুলে গিয়ে হেলমেটের
আকার নিলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই সয়ংক্রিয়ভাবে হেলমেটের মত দেখতে জিনিসটা আমার মাথায় সেট হয়ে
গেলো। মৃদু যান্ত্রিক গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে হেলমেট অাকৃতির জিনিসটা থেকে। হঠাৎ প্রচণ্ড কাপতে শুরু করলো হেলমেট টা । কিছুক্ষণ পর আবার আচমকাই
থেমে গেলো। কি হচ্ছে এসব… ভেবে কুল পাচ্ছি না। ভাবতে ভাবতেই মনে হলো কেউ যেন যান্ত্রিক স্বরে স্পষ্ট
বাংলায় বলে উঠলো স্বাগতম…………..
কথা টা যেন… ঠিক মাথার ভেতর থেকে কেউ বললো । বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম আমি। কে কথা বললো ভাবতেই..
উত্তর এলো…
– আমি “ক্রিকোশান”এর অপারেটিংসিস্টেম।
~”ক্রিকোশান” সেটা আবার কি।??
– আপনি এখন যে যন্ত্রটার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন সেটার নামই “ক্রিকোশান”।
আশ্চর্যজনক ব্যাপার… কোন কথাই মুখে বলতে হচ্ছে না ভাবতে না ভাবতেই উত্তর পেয়ে যাচ্ছি। আর উত্তরগুলোও
যেন কেউ ঠিক মাথার ভেতর থেকে বলে দিচ্ছে। অনেক গল্পে টেলিপ্যাথি
সম্পর্কে পড়েছি…. এটা কি সেই
টেলিপ্যাথি।???
– আপনার ধারনা সঠিক। এতো দেখছি বেশ মজার যন্ত্রণা যা ভাবছি তাই বুঝে ফেলছে যন্ত্রটা। আর কি অদ্ভুত নাম….!
– আপনি চাইলে নতুন কোন নাম দিতে পারেন।
~কিন্তু আমি এটার নাম পরিবর্তন করবো কেন।?
– এখন থেকে এটার মালিক আপনি।
~কিহ,?????? আমি এটার মালিক।?
– জ্বী।
~ কি সব আজেবাজে কথা!
– আজেবাজে কথা নয়….. উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে আপনার কাছে।
~উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে মানে.. কে পাঠিয়েছে।???
– এখান থেকে দুই আলোকবর্ষ দূরবর্তী
“অপ্লক” গ্রহের বিজ্ঞান পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাঠানো হয়েছে আপনার কাছে।
~ অপ্লক কি আশ্চর্য…! নামই শুনিনি
কখনো।……..
– তারাও জানতো না আপনাদের কথা….
জেনেছে খুব সম্প্রতি।
~ কিন্তু কেন পাঠানো হয়েছে।?
– অপ্লক এর বিজ্ঞান পরিষদের অনুসন্ধানী টিমের প্রধান মহাকাশচারী “মাজলুন” এর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী। বিজ্ঞান পরিষদের
অনুসন্ধানী মিশনে তিনি পৃথিবী নামের এই গ্রহের সন্ধান পায়। তার খুব ভাল লেগে যায় পৃথিবী ও আপনাকে ।
~ তিনি কি মারা গেছে। ?
– হ্যা বেশকিছুদিন আগে। আর আমাকে
মানে যন্ত্রটাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে টাইম ট্রাভেল শীপে।
খুব খারাপ লাগলো কথাটা শুনে যে আমার
জন্য এমন চমৎকার উপহার রেখে গেছে……
সে অনেক আগেই মারা গেছে।
~আচ্ছা তুমি কে।?
– আমি এই যন্ত্রের অপারেটিং সিস্টেম…
আমিই ক্রিকোশান।
~আচ্ছা তিনি আমাকেই কেন পছন্দ করলেন।?
– তিনি আপনার সুদুরপ্রসারী চিন্তাভাবনা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন… যা আপনাদের পৃথিবীতে অসম্ভব। তিনি বিজ্ঞান
পরিষদকে জানিয়েছিলেন আপনার এমন একটা যন্ত্রের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ রয়েছে।
সে মারা যাবার পর যেন তার ক্রিকোশান টা আপনার জন্য উপহার হিসেবে
পৃথিবীতে পাঠানো হয়।……
মজার ব্যাপার আপনার আর তার নামে যথেষ্ট মিল রয়েছে অপ্লক এর ভাষায়।
~কিন্তু আমার পুরো নাম তো নাজমুল হোসাইন নুর।
– তার পুরো নাম… মাজলুন নসাইহোমুর।
– বিজ্ঞান পরিষদ এটা নিয়ে অনেক
ভেবে…. শেষ পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়া হয় । তাদের ধারনা এর মাধ্যমে তাদের সাথে আপনাদের বন্ধুত্ব্বপুর্ন সম্পর্ক গড়ে উঠবে…
~আমি এটাকে কিভাবে ব্যাবহার করবো।?
– আপনি মনে মনে কমান্ড দিলেই আমি মানে এই যন্ত্র শুধুমাত্র টাইম ট্রাভেল
ছাড়া….. সব ধরনের কাজ করে দেবো। যে কোন ধরনের যানবাহন হিসেবে ব্যাবহার করতে পারবেন আমাকে। আপনার প্রাথমিক
নিরাপত্তা ব্যাবস্থাও আমি করবো।
~চমৎকার। কিন্তু তুমি তো মনে হয় আরো
কিছুদিন আগে এসেছো এখানে….. আজ কেন যোগাযোগ করলে আমার সাথে।?
– আমার নিজের জন্য শক্তির যোগান দেই আলো বাতাস থেকে। কিন্তু অপ্লক আর
পৃথিবীর আলো বাতাসে মিল নেই… তাই শক্তি উৎপন্ন করতে বেশ হিমশিম খেতে
হয় তাই দেরী হয়ে গেলো। এখন আর কোন সমস্যা হবে না।
~তাহলে এখন ঘড়ে যাওয়া যাক নাকি।?
– অবশ্যই।
~ ভাবছি এখন জেটপ্যাক হলে ভালোই হতো মাটি থেকে কিছুটা উপর দিয়ে উড়ে ঘড়ে চলে যেতাম। ভাবতে ভাবতে
লক্ষই করি নি কখন জেটপ্যাকের আকার নিয়েছে ক্রিকোশান….. ।
……………….
মাটি থেকে উপরে উঠে গেছে জেটপ্যাক ক্রিকোশান।
ধন্যবাদ মহাজাগতিক বন্ধু এই চমৎকার উপহারের জন্য।