“স্যার, আপনার কাছে একটা চিঠি এসেছে” দপ্তরি একটা মুখবন্ধ খাম বাড়িয়ে ধরল প্রোফেসর আলমগির কবিরের দিকে। দু সেকেন্ড ভ্রু কুঁচকে খামটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন প্রোফেসর। তারপর হাত বাড়িয়ে খামটা নিলেন।
কলেজের ঠিকানায় তার কাছে চিঠি পাঠাল কে? খামের উপর প্রেরকের বিস্তারিত দেখে চোখ কপালে উঠল তার। চিঠি এসেছে ইংল্যান্ডের এক বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি থেকে। তার মত বাংলাদেশের একজন নগণ্য কলেজ শিক্ষকের কাছে ইংল্যান্ড থেকে চিঠি আসবে কেন?
খামটা খুললেন আলমগির কবির। চিঠির সারমর্ম যা বুঝলেনঃ ইংল্যান্ডের ওই বিখ্যাত ইউনিভার্সিটিতে একটা গনিত বিষয়ক ২ দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিশ্বের বিখ্যাত সব গনিতবিদরা আসছেন। প্রোফেসর আলমগির কবিরকেও তারা আমন্ত্রন জানিয়েছেন। কারন গনিত বিষয়ে তার গবেষণা তাদের কাছে ভাল লেগেছে। যাতায়াত ও থাকা খাওয়ার সমস্ত খরচ ইউনিভার্সিটি কতৃপক্ষ বহন করবে।
অবিশ্বাসের চোখে চিঠিটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন প্রোফেসর। তাকে তার এলাকার মানুষই ঠিক মত চেনেনা। দেশের বাইরে চিনল কিভাবে?
আলমগির কবির গনিত ভালবাসেন কিন্তু শিক্ষকতা তার কাছে মোটেও পছন্দের কোন পেশা নয়। অবশ্য সারাজীবন গনিত নিয়ে মেতে থাকতে চাইলে শিক্ষক হওয়া ছাড়া কোনও গতি নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গনিত বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষে বিসিএস দিয়েছিলেন। বর্তমানে একটা সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করছেন। ছাত্র মহলে তিনি খুব একটা পছন্দনীয় নন। ক্লাসে ছাত্রদের বইয়ের অংক যতটা করান তার চেয়ে বেশি মেতে থাকেন গনিত বিষয়ে যুক্তি তর্ক বোঝাতে। আর সারাক্ষন বাদাম খাওয়ার একটা বদভ্যাস তো আছেই!
এক প্রকাশনীর মালিকের সাথে খাতির ছিল আলমগির কবিরের। তার হাতে পায়ে ধরে গত বছর তিনি গনিত বিষয়ে ব্যাক্তিগত কিছু গবেষণা নিয়ে ইংরেজি ভাষায় একটা বই প্রকাশ করেছেন An easy approach to mathematical problems নামে। সেই বই তো একটা মাছিও পড়েনি। প্রকাশনীর মালিক বেশ ভাল লস খেয়েছেন বইটা প্রকাশ করে। এখন দেখা হলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু এই বই সেই লন্ডনের ইউনিভার্সিটিতে পৌছাল কিভাবে?
এমন বিলাশবহুল একটা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস সামনা সামনি দেখার সৌভাগ্য হবে এটা আলমগির কবির ভাবেন নি কখনো। বিশাল হলরুম, সুইমিংপুল আর কত আধুনিক ব্যাবস্থা! সেমিনারে অসংখ্য বিখ্যাত মানুষের ভিড়ে নিজেকে কেমন যেন বেমানান মনে হচ্ছে আলমগির কবিরের। তিনি কোনার একটা সিট দেখে বসে পড়লেন। চুপচাপ আশে পাশের মানুষজনকে দেখতে লাগলেন। পকেটে বাদাম আছে, বের করে খেতে মন চাচ্ছে কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে তাও করতে পারছেন না।
এখানকার মানুষ সময় সম্পর্কে খুব সচেতন। সিডিউল অনুযায়ী সেমিনার শুরু হল ঠিক ১০টায়। একে একে বিখ্যাত সব গনিতবিদরা ডায়াসে উঠলেন। তারা নিজেদের গবেষণা উপস্থাপন করলেন। প্রোজেক্টরের সাহায্যে বিভিন্ন নতুন নতুন সমস্যা ও সমাধান তুলে ধরা হল। কিভাবে গনিত বিষয়ে আরও অগ্রগতি সম্ভব সেটা নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা চলল। তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোতে গনিত বিষয়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করা হল।
এক পর্যায়ে ডায়াসে উঠলেন অক্সফোর্ড এর বিখ্যাত গনিতবিদ এবং এই গনিত বিষয়ক কর্মশালার প্রধান অতিথিদের একজন ড. উইলিয়াম স্পেনসার। ভদ্রলোক সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শুরু করলেন। গনিত বিষয়ক নানান আবিষ্কার নিয়ে কথা বললেন। তারপর এলেন নিজের গবেষণা প্রসঙ্গে….
“আপনারা জানেন গনিত বিষয়ে এমন অনেক সমস্যা আছে যার কোনও সমাধান আজ পর্যন্ত করা যায়নি। লজিকাল কোনও ব্যাখ্যা না পাওয়ায় আমরা সেই সব সমস্যাকে “আনডিফাইনড” আখ্যা দিয়ে রেখেছি। আমার গবেষণার বিষয় হল সেই সব সমস্যার লজিকাল সমাধানে পৌঁছানো। ছোট একটা উদাহারন দিলেই বুঝবেন। কোনও ইকুয়েশন যদি 2x=2x+1 এ পৌছায়, দুই সাইডে কোনও ব্যালেন্স না থাকে এবং এক্স কে অন্য কোনও নাম্বার দিয়ে রিপ্লেস করা সম্ভব না হয় তাহলে আমরা ধরে নেই সেই ইকুয়েশনের কোন সমাধান নেই। এমতাবস্থায় আমরা “অসঙ্গায়িত” নামক একটা শব্দ উচ্চারন করে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে দেই। কিন্তু একজন সত্যিকারের ম্যাথামেটিশিয়ানের দায়িত্ব কখনো এখানে শেষ হতে পারেনা।
প্রতিটি সমস্যার সমাধানের জন্য নিজের ব্রেইন খাটাতে হবে। গনিতে অসঙ্গায়িত বলে কোনও শব্দ থাকা উচিত নয়। আরও একটা উদাহারন আপনাদের সামনে তুলে ধরছি, শুন্য কে কোনও সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মান অসঙ্গায়িত বলা হয়। কিন্তু কেন? শুন্য আনকাউন্টেবল ফিগার বলে? গনিতের ভাষায় শুন্য হল নেগেটিভ ফিগার থেকে বড় সংখ্যা। নেগেটিভ ফিগার যদি কাউন্ট করা যায় তবে শূন্যকে কাউন্ট করা যাবেনা কেন? নেগেটিভ ফিগার যদি ভাগ করা যায় তবে শুন্যকে যাবে না কেন? ফাইনান্সের সাথে একটা মিল খুজলে আপনারা দেখবেন শুন্য হচ্ছে মুলত একটা ব্রেক ইভেন পয়েন্ট। কোনও বস্তু না থাকা মানে এই নয় যে সেটা ডিফাইন করা যাবেনা! এটা কি কোনও লজিকাল ব্যাখ্যা হল? একবারও কি মনে প্রশ্ন জাগেনা যে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব? এবার আপনাদের কিছু ম্যাথ প্রবলেম এর মুখোমুখি করছি যার কোনও সমাধান এখনও সম্ভব হয়নি…”
এই পর্যন্ত প্রোফেসর স্পেনসার এক গ্লাস পানি খেলেন। তারপর প্রোজেক্টরের সাহায্যে একটা পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড দেখানো শুরু করলেন। প্রত্যেকটা স্লাইডে বেশ কিছু ইকুয়েশন রিলেটেড প্রবলেম দেওয়া আছে যার কোনও সমাধান সম্ভব নয়। অন্য সবার মত প্রোফেসর আলমগির কবির সমস্যাগুলো দেখতে থাকলেন। নতুন কিছু নয়, এই সংক্রান্ত বিষয়ের সাথে সবাই মোটামোটি পরিচিত।
Problem 1: 4x-2+3x = 3x+12+4x-14
Solution:
Step 1: 4x+2x-2 = 3x+4x+12-14
Step2: 7x – 2 = 7x – 2
Step 3: 7x – 7x = -2 + 2
Step 4: 0 = 0
So there is no solution of this equation.
Problem 2: 7x-4y+12z+4 = 5-3y+7x-y+12z
Solution:
Step 1: 7x-4y-7x+3y+y+4 = -12z+12z+5
Step2: 0+4 = 0+5
Step 3: 4 = 5
So there is no solution of this equation.
Problem 3: 8(2x – 3) = 4(4x – 8)
Solution:
16x – 24 = 16x – 32
16x – 16x – 24 = 16x – 16x – 32
-24 = -32
The 16x cancels so that there is no x left. How can this be solved?
Problem 4:
solution:
-3(x – 3) >= 5-3x
-3x + 9 >= 5-3x
-3x + 3x + 9 >= 5-3x+3x
9 >= 5
But it’s impossible!
প্রোফেসর স্পেনসার বলছেন, “শুধু এখানেই শেষ নয়। বিখ্যাত কিছু ম্যাথ সমস্যা আছে যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে বাঘা বাঘা গনিতবিদ নাকাল হয়েছেন কিন্তু সমাধান খুজে পাননি। যেমনঃ The Goldbach conjecture, The Riemann hypothesis,The twin prime conjecture, Determination of whether NP-problems are actually P-problems, The Collatz problem, Proof that 10 is a solitary number, Solving the happy end problem for arbitrary , Finding an Euler brick whose space diagonal is also an integer, Proving which numbers can be represented as a sum of three or four cubic numbers, Lehmer’s Mahler measure problem and Lehmer’s totient problem, Determining if the Euler-Mascheroni constant is irrational, Deriving an analytic form for the square site percolation threshold ইত্যাদি।
এছাড়া আরও প্রচুর সমস্যা আছে যার কোনও সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি অথবা সমাধান করা হলেও সেটা লজিকাল সমাধান না। আমার গবেষণা ছিল এই সমস্ত জটিলটার একটা সহজ সমাধানে পৌঁছানো। দীর্ঘ ৫ বছর গবেশনায় আমি যে ফলাফলগুলো তুলে আনতে পেরেছি তার কোনটাই আমার মনঃপুত হয়নি। এরপর আমি এসব বিষয় নিয়ে অনেক আগের গনিতবিদ ও বিজ্ঞানীদের গবেষণা উপর পড়াশোনা আরম্ভ করি। তখনই একটা তথ্য পেলাম। প্রায় হাজার বছর আগে ইতিহাসের একজন অখ্যাত গনিতবিদ বলেছিলেন ম্যাথের সকল “অসঙ্গায়িত” সমস্যা গুলো সহজেই সমাধান করা যেত যদি এক থেকে বিশের ভেতর কোথাও একটা বাড়তি মৌলিক পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা কল্পনা করে নেওয়া হয়। আমি বিষয়টা নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনার পর ধারনাটি গ্রহন করেছি। গোপন সংখ্যাটির নাম আমি দিয়েছি ব্রিজ। ১ থেকে ২০ সংখ্যাগুলির মাঝে কোথাও একটা বাড়তি মৌলিক পূর্ণ সংখ্যা আছে, এখন প্রশ্ন হল এর অবস্থান কোথায়?”
উপস্থিত দর্শকদের মাঝে হাসির রোল উঠল।
প্রোফেসর স্পেনসার হাত উচিয়ে সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। “আমি জানি আমাকে আপনারা পাগল ঠাউরেছেন, ভাবছেন অতিরিক্ত গবেষণা করতে গিয়ে মস্তিষ্কে কোনও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমি বলছি আমি সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ। আমি যা বলছি ভেবে চিন্তেই বলছি। আমি কথা দিচ্ছি আমার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর আপনারা আমাকে আর পাগল ভাবতে পারবেন না। আমি বলতে চাইছি আমি মেনে নিয়েছি ১ থেকে ২০ পর্যন্ত আসলে মোট ২১টি সংখ্যা আছে। এখন খুজে বের করতে হবে যে সেই গোপন সংখ্যাটি আসলে কোথায়? আমি আমার গবেষণার শুরুর দিকে ধারনা করেছিলাম সঙ্খাতির অবস্থান আসলে ১৯ থেকে ২০ অথবা ১ থেকে ২ এর মাঝে অথবা ১ এর আগে। কিন্তু একটা সময় বুঝতে পারলাম আমি আসলে ভুল পথে আছি। অনেক আগেই বোঝা উচিত ছিল সেই গোপন সংখ্যাটির অবস্থান হল ৩ ও ৪ এর মাঝামাঝি। আরও সহজ করে বলতে গেলে পাইয়ের মানই হল সেই গোপন সংখ্যা”।
দর্শকের মাঝে আবার একটা গুন গুন ছড়িয়ে পরল।
ডক্টর স্পেনসার হাত তুলে সবার উদ্দেশ্যে বললেন, “আপনারা শান্ত হন। আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। আমি আজ নিজের গবেষণার কথাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য এসেছি”।
দর্শকরা সবাই একটু নড়ে চড়ে বসল। প্রোফেসর বলছেন, “আপনারা জানেন পাই হচ্ছে এমন একটা সংখ্যা কোনও ইন্ডপয়েন্ট নেই। তাই পাই এর মানকে বলা হয় ইনফাইনিট এমাউন্ট অফ নাম্বারস। সম্প্রতি একটি সুপার কম্পিউটার দ্বারা পাইয়ের মান নির্ণয় করতে গিয়ে ৩ দশমিকের পর ১.৪ ট্রিলিয়ন ঘর পর্যন্ত অংক পাওয়া গেছে। কিন্তু খুজে পাওয়া যায়নি শেষ, খুজে পাওয়া যায়নি কোনও প্যাটার্ন যার সাহায্যে সংখ্যাটিকে পৌনপুনিক হিসেবে প্রকাশ করা যায়। তাই পাই এর মান ধরা হয় ৩.১৪১৬। কিন্তু এটা কখনো সঠিক হতে পারেনা। কারন পাই এর মান ৩.১৪১৬ হলে, পাই= ২২/৭ সমীকরণটি সম্পূর্ণ শুদ্ধ হয়না। আপনারা যারা বাটারফ্লাই ইফেক্ট সম্পর্কে জানেন তারা বোঝেন কোনও বিষয়ে সামান্য একটা নিয়মের হেরফের অন্য কোথাও কত বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে! তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এই ব্রিজের সন্ধান কোনও প্রচলিত পদ্ধতিতে অংক কষে পাওয়া সম্ভব নয়। ভাবতে হবে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে। আপনারা জেনে খুশি হবেন আমি সমাধানের খুব কাছাকাছি পৌছে গেছি। খুব তাড়াতাড়ি হয়ত আপনাদের সামনে একটা যুগান্তকারী তথ্য নিয়ে হাজির হতে পারব। ধৈর্য ধরে আমার বক্তব্য শোনার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ”।
দর্শকরা এতক্ষন চুপচাপ শুনছিল, বক্তৃতা শেষ হতেই প্রচণ্ড হাততালির শব্দ ছড়িয়ে পড়ল। স্থায়ী হল অনেকক্ষণ। ডক্টর উইলিয়াম স্পেনসার একজন শক্তিমান মানুষ। নিজের ভাবনাগুলো খুব সহজেই অন্যদের মাঝে পৌছে দিতে পেরেছেন তিনি। হলভর্তি সবগুলো মানুষ বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল, প্রোফেসর আলমগির কবিরও তার ব্যাতিক্রম নন।
সেমিনারের বাকিটা সময় ধরে প্রোফেসর কবির সুযোগ খুজলেন ডক্টর উইলিয়াম স্পেনসারের সাথে কথা বলার। ব্যস্ত মানুষ, সারাক্ষণই কিছু না কিছু করছেন, না হয় কারো সাথে কথা বলছেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সুযোগটা পেলেন প্রোফেসর কবির। বিকেলে সুইমিং পুলের পাশে বসে ড্রিংকস করছিলেন ড. স্পেনসার। কাছে কেউ ছিল না।
প্রোফেসর কবির সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। “স্যার, আমি প্রোফেসর আলমগির কবির। এসেছি বাংলাদেশ থেকে। আপনার সাথে কি কিছু কথা বলতে পারি?”
ভদ্রলোক অমায়িক ভঙ্গিতে হাসলেন। “বলুন”।
“স্যার… বসে বলি?”
“অবশ্যই”! ড. স্পেনসার পাশের চেয়ারের দিকে ইঙ্গিত করলেন।
প্রোফেসর আলমগির কবির বসলেন। “আপনার গবেষণা নিয়ে দুটো প্রশ্ন আছে আমার”।
“কি প্রশ্ন?”
“প্রথম প্রশ্নটা হল এই গোপন সংখ্যার নাম আপনি ব্রিজ দিয়েছেন কেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন হল এই ব্রিজ খুজে পেলে আমাদের কি লাভ হবে? এই দ্বিতীয় প্রশ্নটা করছি কারন আপনি শুধুমাত্র জটিল অংকগুলোর সহজ সমাধানের জন্য নিজের জীবনের এত মূল্যবান সময় ব্যয় করে ব্রিজ খুজে চলেছেন ব্যাখ্যাটা আমার কাছে যুতসই মনে হয়নি”।
ডক্টর স্পেনসার আবার একটু হাসলেন। হাতের গ্লাসটা দেখিয়ে বললেন, “আপনি ড্রিংকস করেন?”
“না স্যার, আমি ওসব খাইনা”।
হাতের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনার দুটো প্রশ্নের উত্তর আসলে একটাই। এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট এর মত। কাউকে বলা নিষেধ কিন্তু জানে সবাই”।
“স্যার দয়া করে হেয়ালি করবেন না। আমি হেয়ালি বুঝিনা। আমি বোকা শোকা মানুষ! সহজ কথাটা সহজভাবেই বুঝি। আমি এসেছি থার্ড ওয়ার্ল্ডের একটা দেশ থেকে। সেখানে গবেষণা করার মত যথেষ্ট ফ্যাসিলিটি নেই, গবেষণা বিষয়টাকে উৎসাহিতও করা হয়না। আমাদের দিন কেটে যায় পরবর্তীদিনের অন্ন কিভাবে যোগার করব সেই চিন্তা করে। তবুও আপনাদের মত মানুষের সান্নিধ্যে থেকে কিছুটা জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পেয়েছি, এটা আমার পরম সৌভাগ্য”।
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে থামলেন প্রোফেসর কবির। ডক্টর স্পেনসার কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। প্রোফেসর থামতেই বললেন, “আপনি প্যারালাল ইউনিভার্স বা অল্টারনেটিভ রিয়েলিটি সম্পর্কে কিছু জানেন?”
“স্যার… দু একটা সায়েন্স ফিকশন বই পড়ে যতটা জানা সম্ভব”!
“সায়েন্স ফিকশন বইয়ে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় বিষয়টা আসলে তেমন নয়। প্যারালাল ইউনিভার্সের কনসেপ্ট বলে, একই সাথে অনেকগুলো ত্রিমাত্রিক জগত পাশাপাশি অবস্থান করছে। কিন্তু এক ইউনিভার্স থেকে অন্য ইউনিভার্স এর অস্তিত্ব বোঝা যায়না। অপর ইউনিভার্সে কি ঘটছে তা জানার কোনও উপায় নেই। সায়েন্স ফিকশন বলে, প্রত্যেকটা প্যারালাল ত্রিমাত্রিক জগতে একই প্রানি বিদ্যমান। কথাটা হয়ত ঠিক। কিন্তু সব ক্ষেত্রে প্রাণীটির অবস্থান এক নয়। বুঝতে পারছেন?”
“কিছুটা…. শেষের দিকে বুঝিনি”।
“একটা উদাহারন দিলেই বুঝবেন। আমাদের ইউনিভার্সে হিটলার যুদ্ধে হেরে গিয়ে আত্মহত্যা করেছে, কিন্তু হয়ত অন্য ইউনিভার্সে হিটলার জয়ি হয়েছে! হতে পারে সেখানে পৃথিবী শাসন করছে হিটলার আর মুছলিনির অনুসারীরা! আরও ব্রড কনসেপ্ট বলে এমন অনেক ইউনিভার্স আছে যেখানে মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে আমাদের ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের চরম শিখরে অবস্থান করছে। আবার এমনও হতে পারে যে তারা আসলে সেই আদিমযুগেই পড়ে আছে, গাছের বাকল গায়ে দিয়ে, গুহায় বসবাস করছে আর হিংস্র পশুদের সাথে অনবরত লড়াই করে চলেছে বেঁচে থাকার জন্য”।
“এবার বুঝেছি স্যার”।
“আমার বিশ্বাস এই ব্রিজ হচ্ছে এইসব প্যারালাল ইউনিভার্সগুলোর মাঝে একটা যোগসূত্র! ব্রিজটা খুজে পেলেই আমরা অন্য ইউনিভার্সের সাথে যোগাযোগ করতে পারব, হয়ত যাতায়াত করাও সম্ভব হবে! তাই আমি এর নাম দিয়েছি ব্রিজ….”
প্রফেসর কবির হাসলেন, “বুঝতে পেরেছি স্যার। আমার একটা জিনিস চিন্তা করে খুব হাসি পাচ্ছে! আপনাদের চিন্তা ভাবনা সেই কোথায় চলে গেছে আর আমরা এখনও ২ আর ২ মিলে চার হয় সেই ধারনাতেই পড়ে আছি”!
ডক্টর উইলিয়াম স্পেনসার বললেন, “আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে মিস্টার….”
“কবির, আলমগির কবির”।
ডক্টর স্পেনসার অবশ্য ঠিকভাবে উচ্চারন করতে পারলেন না নামটা। “মিস্টার ক্যাবির” টাইপের একটা উচ্চারন করে বললেন, “আপনি কি জানতে চান আমি এখন সমাধানের কোন পর্যায়ে আছি?”
“জী যদি আপনার বলতে কোনও আপত্তি না থাকে”!
“আমার কি মনে হয় জানেন? আমি যে ধারায় চিন্তা করছি তাতে অনেক আগেই সমাধানে পৌছে যাওয়ার কথা! কিন্তু পৌছাতে পারছি না কারন মনে হচ্ছে কিছু একটা আমাকে বাধা দিচ্ছে। অনুভূতিটা ঠিক বোঝানো সম্ভব নয়। মনে হয়… মনে হয়…. কোনও একটা অদৃশ্য শক্তি চায়না আমি সমাধানটা খুজে পাই! যতবার কাছাকাছি পৌঁছাই ততবারই কিছু একটা যেন মাথার মধ্যে কাজ করা শুরু করে! সব কিছু গুলিয়ে যায়! মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়, কিছু ভাবতে পারিনা। তারপর সবকিছু আবার গোঁড়া থেকে শুরু করতে হয়। তবে এবার একটা উপায় খুজে পেয়েছি…..”
“স্যার, সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে” প্রোফেসর তাকিয়ে দেখলেন একজন কোট টাই পড়া বডিগার্ড মার্কা লোক এসে দাঁড়িয়েছে।
ডক্টর স্পেনসার ঘড়ি দেখলেন। “ওহ! আমার তো একটা রাউন্ড টেবিল বৈঠকে যোগ দেয়ার কথা ছিল। উঠে দাঁড়ালেন তিনি। প্রোফেসর কবিরের দিকে তাকিয়ে বললেন, মনে রাখবেন প্রোফেসর ক্যাবির, আমি যদি আমার জীবদ্দশায় ব্রিজটাকে খুঁজে নাও পাই, তাতে কোনও সমস্যা নেই। কেউ না কেউ একদিন সেটা খুঁজে পাবেই। মানুষের জন্য অসম্ভব বলে কিছু নেই, কোনও অদৃশ্য শক্তি তাকে আজীবন আটকে রাখতে পারবে না!”
পরের দিন সেমিনারে প্রোফেসর আলমগির কবির অনেক খুজেও আর ডক্টর উইলিয়াম স্পেনসারের দেখা পেলেন না। আরও অনেক কিছু জানার ছিল তার কিন্তু সে সুযোগ আর হলনা।
পাঁচ বছর পরঃ
সকালের পত্রিকা হাতে ধূমায়িত কফির মগে চুমুক দিচ্ছিলেন ডক্টর ইকবাল আহমেদ। তার ছোট মেয়ে এসে দাঁড়াল। “বাবা তোমার ফোন এসেছে। অনেকক্ষণ ধরে বাজছে”।
মোবাইলটা হাতে নিলেন ডক্টর ইকবাল। হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছে, শহিদের ফোন। ডক্টর শহিদ একসময় তার ছাত্র ছিল। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত মানসিক হাসপাতালের ইন-চার্জের দায়িত্বে আছে। ডক্টর ইকবাল রিসিভ করলেন, “কি ব্যাপার শহিদ?”
স্যার, “একবার যদি আসতে পারেন খুব ভাল হয়। ৩১১ নাম্বার কেবিনের সাবজেক্ট খুব ঝামেলা করছে”।
“তোমাকে না কতবার বলেছি সাবজেক্ট বলবে না! মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে কিন্তু সে তো মানুষ! তার একটা নাম তো আছে!”
“সরি স্যার! আসলে বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে গেছে তো”!
“এসব আমার হাসপাতালে চলবে না”!
“সরি স্যার। ৩১১ নং কেবিনের রোগী প্রোফেসর আলমগির কবির অস্থির আচরন শুরু করেছেন, হাতের কাছে যা পাচ্ছেন সব কিছু ভেঙে ফেলছেন”।
“ওনাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখ। আমি আসছি….”
৩১১ নং কেবিনে ঢুকে ডক্টর ইকবাল দেখলেন প্রোফেসর আলমগির কবির তার বেডে ঘুমিয়ে আছেন। তিনি বিছানার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলেন। হাতে প্রোফেসর আলমগির কবিরের কেস ফাইল।
ডক্টর ইকবাল দেশের বিখ্যাত সাইক্রিয়াটিস্টদের মধ্যে অন্যতম। সারা জীবন তিনি মানুষের মানসিক সমস্যা সমাধানের উপর প্রচুর কাজ করেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশের সবচেয়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন মানসিক রোগের হাসপাতাল।
প্রোফেসর আলমগির কবিরের ফাইলটা খুললেন তিনি। আগেও পড়েছেন একবার, নতুন করে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন। প্রোফেসর আলমগির কবির ছিলেন একটা সরকারি কলেজের গনিত বিষয়ের অধ্যাপক। গনিত নিয়ে বেশ কিছু ব্যাক্তিগত গবেষণা করেছেন তিনি। An easy approach to mathematical problems বইটার মাধ্যমে প্রথম আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত হন। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
গনিত বিষয়ে নানা অবদানের মাধ্যমে দেশের জন্য বয়ে এনেছেন সম্মান। খুব অল্পদিনেই দেশের গুরুত্ব পূর্ণ একজন নাগরিকে পরিনত হন। দেশ ও দেশের বাইরে বড় বড় স্কুল কলেজগুলোতে গনিত বিষয়ে তার লেখা বইগুলো ফলো করা হয়। কিন্তু এই গনিতবিদ একটা গবেষণা করতে গিয়ে মানসিক সমস্যার শিকার হয়েছেন। অক্সফোর্ড এর গনিতবিদ উইলিয়াম স্পেনসার সর্বপ্রথম সেই গবেষণা শুরু করেছিলেন। গবেষণার বিষয় ছিল ১ থেকে ২০ এর মাঝে বাড়তি একটা পূর্ণ সংখ্যার সন্ধান। সংখ্যাটির নাম দেয়া হয়েছিল ব্রিজ। কিন্তু ড. স্পেনসার গবেষণা শেষ করে যেতে পারেন নি। বছর খানেক আগে হঠাৎ করে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। তার কোনও খোঁজ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ড. স্পেনসার নিখোঁজ হওয়ার পর একই বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন প্রোফেসর কবির। কিছুদিন যাচ্ছিল ভালভাবেই। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন। আশে পাশে যা পেতেন সব কিছু ভেঙে ফেলতেন আর চিৎকার করতেন। সরকারি খরচে তার ভাল চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে….
প্রোফেসর আলমগির কবির জেগে উঠেছেন। ডক্টর ইকবাল বললেন, “কেমন আছেন প্রোফেসর সাহেব?”
প্রোফেসর কবির উঠে বসলেন, “ভাল আছি, আপনি?”
“আমি তো ভালই থাকি সব সময়। আপনার অবস্থা বলুন। শুনলাম সকালে নাকি হঠাৎ করে রেগে উঠেছিলেন”!
প্রোফেসর হাসলেন, “কি করব বলুন? আপনাকে তো আগেই বলেছি কেউ একজন আছে যে চায়না আমি আমার গবেষণাটা সফল ভাবে শেষ করি। কেউ একজন আড়ালে বসে আমার মাথার ভেতর কলকাঠি নাড়ছে! সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছালেই সব গুবলেট করে দেয়!”
ডক্টর ইকবাল বললেন, “আর কতদিন এই মরিচিকার পেছনে ছুটবেন প্রোফেসর? এবার থামুন! সত্যটাকে গ্রহন করে নিন! ব্রিজ বলে আসলে কিছু নেই”!
“ডক্টর ইকবাল আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে ব্রিজ খুঁজতে গিয়ে অক্সফোর্ড এর বিখ্যাত গনিতবিদ ডক্টর উইলিয়াম স্পেনসার নিখোঁজ হয়ে গেছেন”।
“হ্যা জানি…”
“আপনার কি ধারনা? কি হয়েছে তার?”
“হয়ত তার কোনও শত্রু ছিল। তাকে মেরে লাশটা গুম করে ফেলেছে!”
“বাকি বিশ্বের সবাই সেই ধারনাই করেছে। কিন্তু আমি জানি সেটা সত্যি নয়”।
“তবে সত্যি কি? আপনিই বলুন”।
“ডক্টর স্পেনসার ব্রিজের সন্ধান পেয়েছিলেন। তিনি ব্রিজ ব্যবহার করে কোনও একটা প্যারালাল ইউনিভার্সে চলে গেছেন”।
ডক্টর ইকবাল অসহায় কণ্ঠে বললেন, “আপনার মত একজন যুক্তিবাদী মানুষ কিভাবে এই ধারনায় বিশ্বাস করলেন সেটা আমার মাথায় আসছে না! যদি ব্রিজ ব্যাবহার করে প্যারালাল ইউনিভার্সে যাওয়া যায় তবে ফিরেও তো আসা যাবে! তাহলে ডক্টর স্পেনসার কেন ফিরে আসছেন না?”
“হতে পারে তিনি আর ফিরতে চাইছেন না, হতে পারে তিনি ফেরার পথ পাচ্ছেন না, হতে পারে কোনও বিপদে পড়েছেন! অনেক কিছুই হতে পারে!”
“ডক্টর উইলিয়াম নিজেই তো বলেছেন গনিতের ভাষায় “হতে পারে” বলে কোনও কিছুর স্থান নেই! সেই আপনি এই ধারনা কেন মেনে নিচ্ছেন?”
“আমি বলছি সম্ভাবনার কথা! ডক্টর স্পেনসারের কি হয়েছে আমার তা জানা নেই। তবে তিনি যে ব্রিজের সন্ধান পেয়েছিলেন এটা সন্দেহাতীত!”
“কি খামাখা ব্রিজ ব্রিজ করেছেন! লজিকালি চিন্তা করুন! ব্রিজ বলে কোনও কিছু থাকতে পারে না!”
“আমার লজিক তো বলে থাকতে পারে! দেখি আপনার লজিক দেখান আমাকে”।
“লজিক দেখতে চান? ঠিক আছে আপনাকে একটা সিম্পল লজিক দেখাচ্ছি! আপনার কাছে নিশ্চয়ই বাদাম আছে! আপনি তো বাদাম ছাড়া চলতে পারেন না! বের করেন দেখি”।
প্রোফেসর বালিশের নিচ থেকে একটা বাদামের ঠোঙা বের করলেন।
“এবার ঠোঙা থেকে কিছু বাদাম নিন”।
প্রফেসর তাই করলেন।
“আপনি বলছেন ব্রিজ একটি পূর্ণ সংখ্যা, রাইট?”
“হ্যা”
“প্রত্যেক পূর্ণ সংখ্যাই গননা করা যায়!”
“হ্যা”
“এবার আপনি আমাকে ব্রিজ গুনে দেখান”।
“দেখাচ্ছি” বলে বাদাম গুনতে থাকলেন প্রোফেসর। “১, ২, ৩” বলে তিনটি বাদাম আলাদা করলেন। এবার আরও একটি বাদাম হাতে নিলেন। বাদামটা আগের গুলোর পাশে রাখতে গিয়েও হাত ফিরিয়ে আনলেন।
ডক্টর ইকবাল যেন যুদ্ধজয় করেছেন এমন ভঙ্গিতে হাসলেন, “কি হল? রাখছেন না কেন? রাখুন। ঐটা রাখলে ৪ হবে। তিন এর পর চার এটাই লজিক! মাঝখানে কিছু নেই”।
“আপনি বুঝতে পারছেন না! কেউ একজন আমাকে বাধা দিচ্ছে…আমাকে…. আমাকে আটকে রাখছে। ব্রিজটা বের করে আনতে দিচ্ছে না!”
“আজগুবি কথা বলবেন না প্রোফেসর। কেউ আপনাকে বাধা দিচ্ছে না। আপনি তিনটি বাদাম আলাদা করেছেন, হাতেরটা তার পাশে রাখলে চার হবে। ব্রিজ বলে কিছু নেই”।
আলমগির কবির অস্থির হয়ে উঠলেন, “আপনি বুঝতে চেষ্টা করুন! ব্রিজ আসলে একটা অসিম সংখ্যা, কিন্তু এটা গোনা যাবে। আমি যদি ব্রিজ সংখ্যক বাদাম একসাথে করতে পারি তাহলে সেখান থেকে বাদাম কখনো কমবে না। একটা সরিয়ে নিয়ে সেখানে নতুন একটা বাদাম সৃষ্টি হবে। কেউ একজন চাচ্ছেনা মানুষ এই রহস্য উদ্ঘাটন করুক। তাই আমাকে সে বাধা দিচ্ছে”।
“অনেক হয়েছে বাদ দিন”।
“না আমি বাদ দেবনা। আমি প্রমান করে ছাড়ব। কেউ একজন আমাকে … আটকাচ্ছে…. আমাকে দিচ্ছে না… আমার মাথার ভেতর সব গুলিয়ে যাচ্ছে… আমার গবেষণা হারিয়ে যাচ্ছে…..” প্রোফেসর বিছানার ওপর হাতদিয়ে জোরে জোরে ঘুষি মারতে থাকলেন, হাতের কাছের সব কিছু ছুড়ে ফেলতে শুরু করলেন।
“প্রোফেসর থামুন বলছি” ডক্টর ইকবাল ডাকলেন, “এই নার্স!”
দুজন নার্স দৌড়ে কেবিনে ঢুকল।
ডক্টর নির্দেশ দিলেন, “ওনাকে শান্ত কর, দরকার পড়লে ঘুম পাড়িয়ে দেও”।
নার্স দুজন প্রোফেসর আলমগির কবিরকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। প্রোফেসর তখনো বলছেন, “তুই কে জানিনা… কিন্তু তুই আমাকে আটকে রাখতে পারবি না….আমি ব্রিজ খুজে বের করবই………”
ডক্টর ইকবাল কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে তার হাসপাতালের ইন-চার্জ ডক্টর শহিদের সাথে দেখা করলেন। বললেন, “শহিদ, ৩১১ নং কেবিনের রোগীকে যেন কোনও কাগজ কলম দেওয়া না হয়। তাকে অংক থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে”।
শহিদ মাথা দুলিয়ে বলল, “জী স্যার!”
পরদিন আবার প্রায় একই সময়ে ফোন এল ডক্টর ইকবাল মাহমুদের কাছে। ফোন করেছে শহিদ।
“কি ব্যাপার শহিদ?”
“খারাপ খবর আছে স্যার!”
“কি খবর?” উৎকণ্ঠা বোধ করছেন ডক্টর ইকবাল।
“৩১১ নং কেবিনের পেসেন্ট প্রোফেসর আলমগির কবিরকে পাওয়া যাচ্ছে না!”
“বল কি?”
“হ্যা স্যার। রাতেও সব ঠিক ছিল। সকালে ব্রেকফাস্ট দিতে গিয়ে নার্স দেখে কেবিনে কেউ নেই” শাহিদের কণ্ঠে অস্থিরতা টের পেলেন ডক্টর ইকবাল। “আপনি এক্ষুনি আসুন, স্যার!”
“হ্যা আমি আসছি। আমি আসার আগে তুমি কেবিনে কাউকে ঢুকতে দিওনা….”
হাসপাতালে পৌছাতেই ডক্টর শহিদ দৌড়ে এল। ডক্টর ইকবাল বললেন, “দরজা খোলা ছিল বা জানালা ভাঙা?”
“না স্যার, দরজা বাইরে থেকে বন্ধ ছিল। ভেতর থেকে খোলার কোনও উপায় নেই। জানালার কাচ আর গ্রিল ঠিক আছে, ভাঙ্গার কোনও প্রশ্নই আসেনা। আর বাথরুম থেকে পালাবার কোনও রাস্তা তো নেই”।
“কিন্তু একটা মানুষতো স্রেফ গায়েব হয়ে যেতে পারেনা!”
“আমি কিছু বুঝতে পারছিনা স্যার!”
“সিসি ক্যামেরার ফুটেজে কিছু আসেনি?”
“স্যার… হাসপাতালের নতুন নিয়ম অনুযায়ী আমরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য রাতে
রোগীরা ঘুমিয়ে পড়লে সিসি ক্যামেরাগুলো অফ করে দেই”।
কেবিনে ঢুকে চমকে উঠলেন ডক্টর ইকবাল। সমস্ত কেবিনের দেয়ালে আর সিলিং জুরে অংক করে রেখেছেন প্রোফেসর। কাগজ কলম না পেয়ে অন্য কায়দায় অংক করেছেন তিনি। দেয়ালের কালচে দাগগুলো দেখে স্পষ্ট বলে দেয়া যায় নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে অংক করেছেন প্রোফেসর!
শহিদ বলে উঠল, “ওহ গড! লোকটা একটা বদ্ধ উন্মাদ ছিল!”
একবার সারা কেবিনে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বিছানার উপর একটা কাগজ পড়ে থাকতে দেখলেন ডক্টর ইকবাল। এগিয়ে গিয়ে হাতে তুলে নিলেন। একটা চিঠি, ডক্টর ইকবালকে উদ্দেশ্য করে লেখা। তিনি পড়তে থাকলেন,
ডক্টর ইকবাল,
আপনি যখন এই চিঠি পরছেন, তখন আমি অনেক দূরে । হয়ত কোনও প্যারালাল ইউনিভার্সে অবস্থান করছি। আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে অবশেষে আমি সেই ব্রিজের সন্ধান পেয়েছি।
আপনি কি জানেন এই ব্রিজ খুজে বের করার ব্যাপারে আপনি আমাকে পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করেছেন! আপনি নার্সদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন আমাকে কোনও কাগজ কলম দেয়া না হয় । আমি আগেই ধারনা করেছিলাম এই ধরনের একটা সিদ্ধান্ত আপনি নিতে পারেন, তাই বেশ কিছু কাগজ আর কলম কেবিনের বিভিন্ন যায়গায় লুকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু আপনার কাগজ কলম না দেয়ার সিদ্ধান্ত আমাকে নতুন একটা পথ দেখাল।
আমি খেয়াল করে দেখলাম, যতবার ব্রিজের খুব কাছাকাছি পৌছাতে পেরেছি, প্রত্যেকবারি আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিলাম। আপনি জানেন মানুষের শারীরিক কোনও ব্যাথা বা অসুস্থতা যখন প্রকট আকার ধারন করে, তখন মানুষিক সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবার অবকাশ পাওয়া যায় না বা ভাবতে ভাল লাগে না। আপনাকে বলেছি এক অদৃশ্য শক্তি আছে, যা ব্রিজকে প্রতিনিয়ত রক্ষা করে চলেছে। তাই যতবার ব্রিজের কাছাকাছি পৌছাই, প্রত্যেকবারই মস্তিষ্কের ওপর চাপ পরে। সবকিছু গুলিয়ে যায়। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার সময় সেই শক্তি খুব একটা কার্যকরী থাকে না। আমাদের অসচেতন মনের ওপর সে প্রভাব খাটাতে অক্ষম। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের শরীরকে কষ্ট দেব আর অসচেতন মনকে ছেড়ে দেব ব্রিজের সন্ধানে। শরীরকে খতবিক্ষত করলাম। রক্তের আচরে ফুটিয়ে তুললাম সমীকরণের ছক এবং একটা সময়ে পৌঁছে গেলাম সমাধানে।
আপনি আমাকে ব্রিজ সংখ্যাটি গুনে দেখাতে বলেছিলেন। যেহেতু ব্রিজ একটি পূর্ণ সংখ্যা তাই এতি সহজেই গোনা যায়। কিন্তু ব্রিজ হচ্ছে একটি অসীম সংখ্যা। যা গুনে কখনো শেষ করা যাবে না। আপনি ডেক্সের ওপর দেখুন আমি ব্রিজ সংখ্যক বাদাম গুনে রেখেছি। এখান থেকে যতবার একটি বাদাম সরিয়ে নিবেন, নতুন একটি বাদাম সৃষ্টি হবে। কিন্তু মনে রাখবেন একাধিক বাদাম সরিয়ে নিলে ব্রিজের ব্যালেন্স নষ্ট হবে এবং ব্রিজ সংখ্যাটি বিলুপ্ত হবে।
আপনার জন্য শুভ কামনা……..
আলমগির কবির
ড. ইকবাল ডেস্কের দিকে তাকালেন কোনও বাদাম চোখে পরল না। বললেন, “শহিদ! ডেস্কের ওপর কি কিছু বাদাম ছিল?”
“ছিল স্যার, খেয়ে ফেলেছি”।
“কি বলছ তুমি? কেন খেলে?”
ডক্টর শহিদ আমতা আমতা করে বলল, “ইয়ে….স্যার, আসলে আপনি চিঠি পড়ছিলেন….. আমার করার মত তেমন কিছু ছিল না । বাদামগুলো দেখলাম……”
“কয়টা বাদাম ছিল ওখানে?”
“মনে নেই স্যার”।
“মনে নেই মানে? মনে করার চেষ্টা কর”।
“তিন-চারটা হবে”।
ডক্টর ইকবাল অস্থির কণ্ঠে বললেন, “তিনটা নাকি চারটা?”
“খেয়াল করতে পারছিনা স্যার”।
ডক্টর ইকবাল হতাশ ভঙ্গিতে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
প্রফেসর আলমগির কবির দেখলেন তার কেবিনের দেয়ালগুলো খুব জীর্ণ মনে হচ্ছে,
যেন শত বছরের পুরনো। জানালার কাচ ভাঙা, কেবিনে কোন দরজা নেই। কোথায় গেল ডেস্ক আর রিভলভিং চেয়ার? পুরনো জংধরা মরিচা পরা বেড! তিনি বুঝতে পারছেন চিরচেনা পৃথিবীর বাইরে চলে এসেছেন। এটা তার পরিচিত কোনও ইউনিভার্স নয়। ব্রিজ তাকে অন্য কোনও ইউনিভার্সে নিয়ে এসেছে!
প্রফেসর দ্রুত কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। সমস্ত হাসপাতাল জনশূন্য। তবে দু একটা আসবাব দেখে বোঝা যাচ্ছে কোনও এককালে এটি একটি হাসপাতাল ছিল। যেখানটায় লিফট থাকার কথা, সেখানে দেখা যাচ্ছে একটা বিশাল কাল গহ্বর। প্রফেসর দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল। কিন্তু রাস্তায় বেড়িয়ে যা দেখলেন, তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। রাস্তার দুপাশে রং ঝলসে যাওয়া ভেঙে পরা বাড়িঘর, রাস্তায় পুরনো যানবাহন আর যন্ত্রপাতির স্তূপ, যতদূর চোখে যায় একটা গাছও চোখে পড়ছে না, সমস্ত আকাশ লালচে আভায় ঢেকে গেছে! সমস্ত শহরকে মনে হচ্ছে পুরনো কোনও সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। ব্রিজ তাকে কোথায় নিয়ে এসেছে? এ তো এক পরিত্যাক্ত পৃথিবী!
জোরে চিৎকার করে উঠলেন প্রোফেসর। “কেউ কি আছেন….?” উদ্দেশ্যহীনভাবে রাস্তায় দৌড়াতে শুরু করলেন তিনি। এ কেমন পৃথিবী? এখানে কি কোনও মানুষ বাস করেনা? কোনও এককালে নিশ্চয়ই মানুষ বাস করত এখানে! অন্তত বাড়িঘর, রাস্তা আর যানবাহন তো দেখা যাচ্ছে! কি হয়েছে সব মানুষজনের? হঠাৎ কিছু একটার সাথে পা বেঁধে পরে গেলেন প্রোফেসর। বুকে ব্যাথা পেলেন। ওঠার চেষ্টা করতেই মুখ দিয়ে কাতর একটা আওয়াজ বেড়িয়ে এল। ঠিক তখনই রাস্তার ওপাশ থেকে কাউকে আসতে দেখলেন তিনি। একজন না দুজন আসছে। প্রোফেসর কবির কষ্ট করে উঠে দাঁড়ালেন। যে দুজন আসছে তাদের সারা শরীর ইউনিফর্মে ঢাকা, মুখে মুখোশ, গায়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা বর্ম, হাতে ধরে আছে কোনও অদ্ভুতদর্শন মারণাস্ত্র। এরা কি মানুষ না রোবট?
ওরা কাছে আসতেই প্রোফেসর বলা শুরু করলেন, “আমি একজন মানুষ। অন্য ইউনিভার্স থেকে….” এর বেশি কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। ওদের একজন কিছু একটা ছোঁয়াল তার গায়ে। অচেতন হয়ে ঢলে পরলেন।
ধীরে ধীরে চোখ মেললেন প্রোফেসর কবির। প্রথমদিকে সব কিছু ঝাপসা দেখলেন। বার কয়েক চোখ মিট মিট করতেই দৃষ্টি কিছুটা পরিস্কার হয়ে এল। অন্ধকার একটা কক্ষে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। রুমের ভেতর অল্প পাওয়ারের বাতি জ্বলছে। একটু নড়া চড়া করতেই বাধনগুলো আরও শক্ত হয়ে গেথে বসল। বুঝলেন, এ বাধন নিজের চেষ্টায় খোলা সম্ভব হবেনা।
দরজা খোলার আওয়াজ হল। দীর্ঘদেহী একজন মানুষ ঢুকলেন ভেতরে। লোকটা একটু পা টেনে টেনে হাঁটছে। একটা খালি চেয়ার টেনে এনে প্রোফেসর কবিরের মুখোমুখি বসলেন। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না প্রোফেসর। তার সামনে বসে আছে ডক্টর উইলিয়াল স্পেনসার!
“ডক্টর স্পেনসার! আমি জানতাম আপনি বেঁচে আছেন! আমি জানতাম আপনি ব্রিজের সন্ধান পেয়েছেন”।
ডক্টর স্পেনসার তিক্ত ভঙ্গিতে একটু হাসলেন। “আপনি যার কথা ভাবছেন, আমি সেই ব্যাক্তি নই”।
“তারমানে?”
“আমি উইলিয়াম স্পেনসার। তবে আমি আপনার ইউনিভার্সের লোক নই। আমি এই ইউনিভার্সের মানুষ!”
“কিন্তু আমাদের ইউনিভার্সের ডক্টর স্পেনসার? তার কি হয়েছে?”
“আপনার ধারনাই ঠিক। সে ব্রিজের সন্ধান পেয়েছিল। আমাদের ইউনিভার্সে এসেছিল অথবা বলতে পারেন আমরাই তাকে টেনে নিয়ে এসেছিলাম এখানে”।
“আপনারা এনেছেন মানে? সেটা কিভাবে সম্ভব?”
“আমরা ব্রিজের সাহায্যে সমস্ত ইউনিভার্সে সাথে যোগাযোগ রাখি। যখনই কেউ ব্রিজের কাছাকাছি চলে আসে তার মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি করে তাকে দিকভ্রান্ত করে দেই। কিন্তু সে যদি ব্রিজ আবিষ্কার করেই ফেলে, তাহলে তাকে এখানে টেনে এনে মেরে ফেলি”।
“কি বলছেন? ডক্টর উইলিয়ামকে কি করেছেন?”
“তাকে মেরে ফেলা হয়েছে, যেমনটি করা হবে আপনার ক্ষেত্রেও”।
“আতঙ্কিত বোধ করলেন প্রোফেসর। কিন্তু কেন?”
“আমি ব্রিজরক্ষক। যেকোনো মূল্যে ব্রিজের গোপনীয়তা রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। তাই কেউ ব্রিজের সন্ধান পেলেই তাকে সরিয়ে দিতে হয়”।
“কিন্তু কেন করছেন আপনি এই কাজ? এমন একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার কেন আপনি আড়াল করে রাখতে চাইছেন?”
“প্রোফেসর কবির! আপনার কোনও ধারনাই নেই এই ব্রিজ আসলে কি! আপনি ব্রিজ হচ্ছে প্যারালাল ইউনিভার্সগুলোর মাঝে যোগসূত্র স্থাপনকারি। কিন্তু ব্রজের ক্ষমতা এখানেই শেষ নয়”।
প্রোফেসর চুপ করে থাকলেন আরও কিছু শোনার আশায়।
“এই ব্রিজ হচ্ছে দ্বিমাত্রিক-ত্রিমাত্রিক-চতুর্মাত্রিক এমনকি পঞ্চম মাত্রার জগতের মেলবন্ধন। ব্রিজের সাহায্যে যেমন এক ইউনিভার্স থেক আর এক ইউনিভার্স যাওয়া যায়, ঠিক তেমনি এক ডাইমেনশন থেকে অন্য ডাইমেনশন, এক সময় থেকে অন্য সময়, এক স্পেস থেকে অন্য স্পেস সহ সবখানে যাওয়া সম্ভব। ব্ল্যাক হোল, ওয়ার্ম হোল, হাইপার ডাইভ, কোয়ান্টাম মেকানিজম, টাইম প্যারাডক্স সহ সমস্ত তত্ত্বের মুল হল এই ব্রিজ। সৃষ্টির সকল রহস্যের সমাধান আছে ব্রিজের কাছে!
“কিন্তু আপনি এই ব্রিজকে গোপন রাখতে চাইছেন কেন?”
“আপনি এখনও বুঝতে পারছেন না! এখনও ধারনা করতে পারছেন না এই জিনিস সাধারন মানুষের হাতে পড়লে কি ঘটতে পারে?” ডক্টর উইলিয়াম স্পেনসারের চোখ দুটো যেন দপ করে জ্বলে উঠল। “চেয়ে দেখুন আমাদের ইউনিভার্সের দিকে। সবার হাতে ব্রিজের সন্ধান পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। সবাই হয়ে উঠে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। মেতে উঠে একে ওপরকে ধ্বংস করে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার খেলায়! তার ফলাফল কি দারিয়েছে দেখুন! পৃথিবীতে নেমে এসেছিল চরম বিপর্যয়। আমি ও আমার কিছু অনুসারীরা শুধু সারভাইভ করতে পেরেছি। আর কেউ বাচেনি। আপনি কি জানতে চান এই ব্রিজের রহস্য আমাদের ইউনিভার্সের সমস্ত মানুষকে জানিয়ে দিয়েছিল কে? লোকটা হল “প্রোফেসর আলমগির কবির” নামের একজন অতি মূর্খ, গোঁয়ার! বিপর্যয়ের প্রথম ধাক্কাতেই সে মারা পরেছে”!
প্রোফেসর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন।
“তাই আমি ব্রিজরক্ষকের মহান দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছি। আমি চাইনা এখানে যা ঘটেছে তা অন্য ইউনিভার্সগুলোতে ঘটুক। তাই তো ব্রিজের কাছ থেকে সবাইকে দূরে রাখার কাজ করে চলেছি অনবরত। আমার মৃত্যুর পর আমার অনুসারীরা এই দায়িত্ব পালন করে যাবে”।
এরপর আর বেশি কথা হলনা। ডক্টর উইলিয়াম তার দুজন অনুসারীকে নির্দেশ দিলেন
প্রোফেসরকে নিয়ে যেতে। অনুসারিদুজন যখন প্রফেসরকে একটা নদীর ধারে দাড় করিয়ে গুলি করে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়েছে ঠিক তখন অন্য একটা ইউনিভার্সে “ডক্টর ইকবাল মাহমুদ” নামে একজন সাইক্রিয়াটিস্ট জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছেন। কিন্তু নিজের অবচেতন মনকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন ব্রিজের খোঁজে…
****************************************(সমাপ্ত)*************************************