এক দুই তিন !!
ট্রাপডোরের ডালাটা ওঠার সময় বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ডাঃ জামান। চোখ দুটো খুশীতে চিকচিক করছে তার। জায়গাটা এরোমেসা জাদুঘরের একদম গ্রাউন্ড ফ্লোর ঘঁষে। শত বছরের পুরোনো জাদুঘর।এখন ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। আর সেটার সুযোগটাই নিয়েছে তারা। তারা মানে সে আর ডাঃ নীল।
ডাঃ নীল একজন প্রথিতযশা জীববিজ্ঞানী। প্যাটেন্টের পর প্যাটেন্ট তৈরী করে ইতোমধ্যেই সে নিজেকে নিয়ে গেছে অন্য বিজ্ঞানীদের চাইতে বহু দূরে। তবে সমস্যা একটাই। জোর করে তাকে দিয়ে কোনো মিশনে পাঠিয়ে কাজ করানো যায়না।কিছুটা খেপাটে প্রকৃতির বলে কোনো ল্যাবেই বেশীদিন কাজ করতে পারেনা সে। ল্যাবের কাজে এতটাই মজে থাকে যে বিয়ে করার সময় পর্যন্ত পায়নি বেচারা। এ মুহূর্তে ডাঃ নীলের চোখ দুটো একত্রে স্তব্ধ। তামাটে চেহারায় কিছু একটার জন্য অসীম আগ্রহ। হাতের জয় স্টিকটায় মন লাগালো সে । খুট খুট শব্দ করে চলতে শুরু করলো মেশিনটা। ক্যাঁচ ক্যাঁ করে।
ওরা একটা প্রজেক্টের কাজে আজ বহুদিন যাবত মনুষ্য সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। ডাঃ নীল বিয়ে না করলেও অপরজন বিবাহিত। মাঝেমধ্যে দুএকবার স্ত্রী সন্তানকে দেখতে যায় বটে, তবে কোনোটাই নিজ থেকে নয়। প্রয়োজনের তাগিদে যায়। যখন সবকিছু বিরক্ত লাগে ল্যাবের আশেপাশের তখন। এ মুহূর্তে তারা যে ফিকশানারি চরিত্রটি নিয়ে কাজ করছে বাস্তবে মুখ দেখানোর জন্য সেটা একেবারেই একটা গোপন প্রজেক্ট। গোপন বলার কারন হলো প্রজেক্টটা সম্পর্কে না সরকার জানে। না জানে বিদেশী বৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলো।না জানে কোনো মানবাধিকার সংস্থা। জানলে আর নির্বিঘ্নে কাজ করতে হতোনা তাদের।
প্রজেক্টের মেইন থিম হলো আর্টিফিসিয়াল চিপ সেল হিউমেন ব্রেইনে ট্রান্সপ্লান্ট করে তার পূর্বের সব ডাটা অকেজো করে দেয়া। যেটা আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থাসহ আরো অনেক দেশের ইন্টারোগেশানে ব্যবহৃত হচ্ছে বহুলভাবে ।যেমন ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। আসামী, গোপন শত্রু এদেরকে ধরে মুহূর্তেই এ চিপ সেল ইমপ্লান্ট করে অন্য দেশের সব ভাইটাল ইনফরমেশান জেনে নেয় তারা। তারপর সে ভিকটিমের মেমোরি সেলগুলো পারমানেন্টলি ড্যামেজ করে দিয়ে খালি করা দেয়া হয় তার স্কালের ভল্ট। কেস ডিসমিসড।
তবে ডাঃ জামান আর নীল যেটা করছে সেটা ঠিক ইন্টারোগেশানে ব্যবহৃত হওয়া সে চিপ সেলের মত নয়। হিউম্যান ব্রেনের চিপ সেলগুলো যখন পারমেন্টলি ড্যামেজ হয়ে যাবার সময় চলে আসে অর্থাৎ মানুষ মারা যায় তখন তারা সেখানকার মৃত কোষগুলোকে ফ্রোজেন করে সেটা হিট ম্যাগনেটোমিটারে তাপ দিয়ে এমন স্টেটে নিয়ে যাওয়া হয় যেটা মোটামুটি মৃত মানুষকে জীবিত করে তুলতে সক্ষম। তাপের বিকিরণের সাথে ফ্যারাডের চুম্বকর্ষীয় বলের প্রভাবে তৈরী করা হয় এক ভেজিটেটিভ স্টেট। বছরের পর বছর ডাঃ নীল আর ডাঃ জামানের প্রচেষ্টার ফসল আজকের এই ম্যাগনেটিক স্টেট।
বেশ কিছু নিম্নগোত্রীয় প্রানীর উপর এপ্লাই করা হয়েছে তাদের এই থিওরেটিক্যাল প্রোপাগান্ডা। মোটামুটি সফল হওয়া এ পরীক্ষা নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত দুই তরুন বিজ্ঞানী। দরকার শুধু একটা ডেড হিউম্যান বডি। নাথিং এলস !!
শীতের কনকনে রাত। আকাশে চাঁদের শেষ খন্ডটাও মিলিয়ে গেছে সুদূর। ইস্কাটনের ২২/৩ বাসাটায় শুয়ে আছে রিদিতা। পাশে তার চার বছরের ছোট্ট মেয়েটা। শীতের দিনে বিছানার তোষক পর্যন্ত ভেজা মনে হয় রিদিতার কাছে। তুষি ঘুমাচ্ছে। রাত আনুমানিক দশটা। সারাদিন বাসায় হেঁটে বেড়িয়ে আর মেয়ের খেয়াল রাখতে রাখতে সে বড় বিরক্ত।! মানুষটা যে সারাদিন কই থাকে কে জানে। কতদিন হলো বিয়ের। আজ পর্যন্ত টানা একটা সপ্তাহ একসাথে থাকা হয়নি ওদের। বিজ্ঞানী বলে কি নিজের সংসারের কথা মনে থাকবেনা তার।? এ কেমন কথা ? কোথায় থাকে কে জানে। সারাদিন ল্যাব ল্যাব। কি করে ও ল্যাবে ? জিজ্ঞেস করলেও বলতে চায়না সে। রিদিতা বিরক্ত হয়। কি এমন প্রজেক্ট যেটার কথা নিজের স্ত্রীকেও বলা যায়না ? আজব !! ভাবতেই কপার কুকঁড়ে যায় ওর। কম্বলটা মেয়ের বুক পর্যন্ত টেনে দিয়ে লাইটটা অফ করে দেয় সে। কিছুক্ষন পরই তলিয়ে যায় গভীর ঘুমের দেশে।
কলিমুদ্দিনের লাশটা যখন নিজের হাতে ফেরত পায় রসুল তখন সে কি তার চিৎকার।!! শত হলেও বাবার লাশ। কলিমুদ্দিন মাস্টার আজ একেবারে ঘুমিয়ে গেছেন। জীবিত থাকতে মানুষটা মানুষের ভালো ছাড়া ক্ষতি করেনি। রসুল যখন শুনলো বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে তখন সাথে সাথে বুঝে গিয়েছিলো ঘটনাটা কি ? তার বাবা ছিলো বৃদ্ধ মানুষ।চোখে দেখতে পারতোনা রাতে। বহুবার ডাক্তার দেখিয়েও লাভ হয়নি। রাতকানা রোগের চিকিৎসা এ বয়েসে আর হয়না। বাবার অভ্যাস ছিলো রাত বিরাতে লাঠিটা হাতে নিয়ে হেঁটে বেড়ানো।বুড়ো মানুষ। রাতে ঘুম হতোনা ঠিকমত। তাই। তখনই বোধহয় রাস্তা পার হবার সময় বাস মেরে দিয়ে চলে গেছে। চোখের পানি হুড়মুড় করে পড়তে থাকে রসুলের।
একজন সাদ
একজন
– ভাইসাব সুনতাছুইন নি ?
প্রশ্নকর্তার ডাক শুনে কিছুটা ভড়কে যায় সে। এতরাতে এই লোক কি চায় তার কাছে ?
– কি কইবার চান ?
– তেমন কিছুনা মিয়া।
দাঁতের খিলি পান মুখে দিয়ে কেলাতে থাকে আগন্তুক।
– মাইনে ?
– মাইনে কিছু না মিয়া। আমি হইলাম হালিম। এই হাসপাতালের লাশ আনা নেওয়া, মুর্দা দাফন দেয়া, খাটিয়ার ব্যবস্থা করা এসবই আমার কাজ। মনে অইতাছে আফনের কেউ মইরা গেছে ?
– হয়। আমার বাপজান।
– কবে মরলো ? হালিম মিয়া খবর রাখেনা এমন কুনু মরা মরেনা এইহানে ।
– কাইল রাইতেই মরছে। আজ লাশ খুইজা পাইলাম।
– রাত তো মেলা হইছে মিয়া। লাশ লয়া ফিরবা কেমতে ?
– মিয়া ভাই, আপনে একটা বুদ্ধি দেননা আমারে । কই যাই এতো রাইতে ?
– হুম মিয়া শোনো। তোমারে একটা পস্তাব দেই। তোমার বাপের লাশটা বেইচা দেও আমার কাছে।
– কি ? ফাইজলামি করেন আমার লগে ?
– ফাইজলামি করমু কেন।? তুমি আমার পোলার বয়েসী। তোমার লগে ফাইজলামি করার বয়স আছে আমার ?
– লাশ বেচমু মানে ? এইডা কি বেচুনের জিনিস।?
– আরে মিয়া হুনো আগে । বাল আগেই চিল্লাও কেন।?
– কন ফুনতাছি।
– তোমার বাড়ি কই ?
– মানিকগঞ্জ।
– ভালা কথা। এখন কয়ডা বাজে ?
– রাইত বারোটা।
– এত শীতের রাইতে তুমি তোমার বাপের লাশ লয়া যাইবা কেমনে এইডা আমারে কও আগে। না পাইবা কোনো গাড়ি। না কোনো টেরাক।
– তাও কথা।
– হের উপর লাশ বেচলে তুমি পাইবা নগদ পাঁ হাজার টেকা। কোনডা বালা মিয়া ? ভাইব্বা জবাব দেও।
রসুল দোটানায় পড়ে যায়। মরা বাপ আইজ মরার পরে নিজে যখন কিছু টেকার ব্যবস্থা করতাছে, তখন সে নিবেনা কেনো ? তাও সংসার আছে। খরচ আছে। তা ছাড়া তার বাপ তার জন্য এমন কিছু রেখে যায়নি যার জন্য সে এত বড় সুযোগ মিস করবে। লাশ বেচার সাথে সাথে নগদ পাঁচ হাজার টেকা। ভাবতেই আনন্দে কিলবিল করে উঠে তার নোংরা চোখগুলো।
– মিয়া বাই, লাশ বেচমু আমি। অবশ্যই বেচমু।
– সাবাস বেটা। এই নে নগদ পাঁচ হাজার টাকা । গুইন্না দেখ।
.
– গুনা লাগবোনা মিয়া বাই। এত টেকা একলগে আমার বাপেও দেহেনাই কোনোদিন।। লাশ নিয়া যান আপনি। টেকাগুলা দিয়া দেন আমার হাতে।
টাকা নিয়ে হনহন করে হেঁটে অন্ধকার রাতের আঁধারে হারিয়ে যায় রসুল মিয়া। সে দিকে এক মনে তাকিয়ে চুকচুক করতে থাকে হালিম। এমন একটা ভাব যেনো বিয়ে শাদি না করেই ভালো করেছে সে। লাশটার দিকে তাকিয়ে একটা আক্ষেপের হাসি হাসে সে।…
কলিমুদ্দিনের লাশটা নিয়ে ডাঃ নীল আর ডাঃ জামান আজ খুবই উত্তেজিত। এতদিন প্রানী আর পশুদের উপর মেকানিজমটা এপ্লাই করে গেছে তারা। সফল ও হয়েছে। এখন সেটাকে চুড়ান্ত রূপ দিতে দরকার শুধু হিউম্যান ডেডবডির উপর পরীক্ষাটা চালানো।
– নীল, ডেডবডির ডিভাইটালাইজড টিস্যুগুলোকে -১৮৭৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ফ্রোজেন করে সেটার চিপ সেল তৈরী করো। কুইক। আর ম্যাগনেটোমিটারে দেখো চিপ সেলগুলার HLA typing করে সেটার জিরো স্টেট তৈরী হয় কিনা।
– হুম। দেখছি বন্ধু।
আস্তে আস্তে খোলা হলো স্কালের ভল্ট।।তারপর সেটার ব্রেইন মেটারে এক ধরনের হাই ভোল্টেজ রেসোনেন্স তৈরী করে তৈরী করা হলো সিলিকন কালারের চিপ সেল। নিজের কাজে মোটামুটি সন্তুষ্ট হলো নীল। মুখ দিয়ে চুকচুকে এক ধরনের শব্দ করলো সে।
– হয়ে গেছে জামান । হিট রেডি ? ইনফ্রা রেড রে ইউজ করো জলদি। চিপের অভ্যান্তরীন গুনাগুন নষ্ট করার আগেই।
এটা বলার দরবার ছিলোনা অপর পাশের মানুষটাকে। তার বহু বছরের সাধনার প্রহর আজ শেষ হতে চলেছে। ঘটঘট করে টাইপ রাইটারের উপর খেলতে লাগলো পাগলাটে বিজ্ঞানীর আঙ্গুলগুলো। দৃষ্টি মনিটরে নিবদ্ধ। ঠোঁটে হালকা ঢেউ খেলে যাওয়া এক প্রশান্তিময় হাসি।
কাজ শেষ। আজকের মত। চিপ সেলটা কম্পিউটারে প্লেনিং করে ভল্টে ইমপ্লান্ট করে দেয়া হয়েছে এবার ডেডবডিসহ পুরো স্পেসিম্যানটাকেই ফ্রোজেন সেকশন করে অপেক্ষা করতে হবে পুরো চব্বিশ ঘন্টা। তারপরেই বোঝা যাবে এ প্রজেক্টের কার্যকারিকা। আপাতত বাসা থেকে ফ্রেশ হয়ে আসা যাক। ভাবলো ডাঃ জামান । তিন দিন হয়ে গেছে বাসায় যাওয়া হয়নি তার। রিদিতা নিশ্চয়ই ক্ষেপে আছে অনেক। মেয়েটার কথাও মনে পড়ছে অনেক। ডাঃ নীলকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ির পথ ধরলো তরুন বিজ্ঞানী ।
ইস্কাটনের নতুন বাসাটায় ছোটোখাটো উৎসব লেগে গেছে আজ। তার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ডাঃ জামান। বাবাকে পেয়ে তুষি আজ লাফিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো ঘরময়। স্বামীকে দেখে তৃপ্ত রিদিতাও। বহুদিন পর আজ মানুষটা তাদের সাথে খেতে বসছে। মেয়েটার খুশিতে যেনো প্রান ফিরে এসেছে তার। চারপাশে একটা আনন্দের আভা। খাওয়ার দাওয়ার শেষে মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে স্বামীর বুকে লজ্জায় আর কপট অভিমানে চেপে ধরলো নিজেকে।
ল্যাবরেটরীতে বসে থেকে থেকে ডাঃ নীলের চোখটা লেগে এসেছিলো প্রায়। হয়তবা ঘুমিয়েও পড়েছিলো খানিকটা। শাবল টাইপ কিছু একটা মেঝেতে পড়ে যাবার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছে তার। খানিকটা এগিয়ে স্টোর রুমটার দিকে পা চালালো সে । ব্যাপার কি ? এখানকার লাইটের কি হলো আবার ?
কারেন্ট তো কখনো যায়না এখনো। অন্ধকারে চোখ গুলিয়ে যায় ওর। সেখান থেকেও ও যা দেখলো তা দেখলে হার্ট এটাক করে বসতো যেকোনো মানুষের।।
কলিমুদ্দিন মাষ্টারের ফ্রোজেন স্পেসিম্যানটা হেঁটে বেড়াতে শুরু করেছে !! এ কি ভুল দেখছেনা তো সে ? ভুল হবে কেনো ? আরে এটা তো সে স্পেসিম্যানটাই যা সে চিপ সেল তৈরীর জন্য ম্যাগনেটোমিটারে ইনফ্রা রেড রে দিয়ে তৈরী করেছিলো সে। তাহলে এটা টেবিল থেকে নামলো কিভাবে ? কি হচ্ছে কি এসব ? বেশীক্ষন ভাবার সময় পেলোনা সে। স্পেসিম্যানের হাতের বস্তুটা দেখতে পেলেও সেটার আঘাত থেকে মাথাটা সরাতে পারলোনা সে। মুহূর্তেই চোখে অন্ধকার এক ঝাঁক তারা দেখে জ্ঞান হারালো সে ! জ্ঞান হারানোর আগে সেন্ড বাটনে টিপ দিয়েই মূর্ছা গেলো সে !!
বাসায় আসলেও কখনো সরাসরি ইমেইল চেক করেনা জামান। একদিন প্রায় শেষের পথে। স্পেসিম্যানের উপর করা পরীক্ষাটার কার্যকারিতা তো এতক্ষনে শুরু হয়ে যাবার কথা। আর সেটা হলে তো নীলের তাকে জানানোর কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো ফোন বা ফ্যাক্স ও করেনি ছেলেটা। খারাপ কিছু হলোনা তো আবার।? মুহূর্তেই ভাবনাটা পেয়ে বসলো ওকে। দ্রুত ই মেইলটা চেক করতেই ইনবক্স ফোল্ডারে চোখ পড়ে গেলো তার। আর সেটা পড়ার সাথে সাথেই যা বোঝার বুঝে গেলো সে। তার ধারনাই ঠিক। বিপদে পড়েছে ডাঃ নীল। কিছু না ভেবেই পড়নের কাপড়ে চেপেই রওয়ানা হয়ে গেলো সে। গন্তব্য : পুরোনো সে জাদুঘরের আন্ডারগ্রাউন্ডের নীচের ল্যাবরেটরি।
সাধারনত দিনের বেলাই হোক আর রাতের বেলাই হোক এখানে সবসময় লাইট জ্বলে থাকে। তবু ঢোকার পথে অন্ধকার দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো তরুণ বিজ্ঞানী। এমনটা তো হবার কথা না। ছোটো ছোটো পায়ে ভেতরে ঢুকলো সে। ডান পাশটার অটোরেন্সারটা ভেঙ্গেগুড়ো হয়ে আছে। তার পেছনের ম্যাগনেটোমিটারটা নেই কোথাও। পেছনে ফিরে তাকাবার আগেই বামের মিররে সে যা দেখলো তা দেখে নিজেই স্তম্ভিত হয়ে গেলো সে। ঠিক তার মত গঠনের একজন মানুষ। হুবহু তার মত। গায়ের রং, উচ্চাতা সব এক ধরনের। সামনের মানুষটা তার দিকে তাকিয়ে হাসছে ।
তাচ্ছিল্যের এক হাসি। তার মানে তারই ভয়টাই সত্যি হলো। ডাঃ নীলকে মেরে ঠিক তার জেনেটিক ইনহেরিটেড ম্যাটারিয়াল জেনে নিয়েছে সে স্পেসিম্যান। আর তা দিয়ে তৈরী করেছে তার মত হুবহু ক্লোন। পরের কথাটা ভাবতেই চোখমুখ অসাড় হয়ে গেলো তার। কারন নীলের টেক্সটা। সেখানে পরিষ্কার লিখা আছে –
“ভাবী আর তুষিকে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলো জামান। ও আসছে !! ” বেশীক্ষন ভাবার সুযোগ পেলোনা সে। স্পেসিম্যানের ধাতব হাতটা ইতোমধ্যে চলে এসেছে তার গলার কাছাকাছি !!!
…………………………………………………………………..সমাপ্ত………………………………………………………