১৫ এপ্রিল, রোম
কাল এক আশ্চর্য ঘটনা । এখানে আমি এসেছি। একটা বিজ্ঞানী সম্মেলনে । কাল স্থানীয় বায়োকেমিস্ট ডাঃ দানিয়েলির বক্তৃতা ছিল। তিনি তাঁর ভাষণে সকলকে চমৎকৃত করে দিয়েছেন । অবিশ্যি আমি যে অন্যদের মতো অতটা অবাক হয়েছি তা নয়, কিন্তু তার কারণটা পরে বলছি।
দানিয়েলির আশ্চর্য ভাষণের কথা বলার আগে একটা কথা বলা দরকার । বিখ্যাত ইংরাজ লেখক রবার্ট লুই স্টিভেনসনের উপন্যাস ‘ডাঃ জেকিল অ্যান্ড মিঃ হাইড’-এর কথা অনেকেই জানে। যারা জানে না তাদের জন্য বলছি যে, ডাঃ জেকিল বিশ্বাস করতেন প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই একটা ভাল আর একটা মন্দ দিক থাকে। এই মন্দ প্রবৃত্তিগুলো মানুষ দমন করে রাখে, কারণ তাকে সমাজে বাস করতে হলে সমাজের কতকগুলো নিয়ম মানতে হয় । কিন্তু ডাঃ জেকিল দাবি করেছিলেন তিনি এমন ওষুধ বার করতে পারেন, যে ওষুধ কেউ খেলে তার ভিতরের হীন প্রবৃত্তিগুলো বাইরে বেরিয়ে এসে তাকে একটা নৃশংস জীবে পরিণত করবে। ডাঃ জেকিলের এ কথা কেউ বিশ্বাস করেনি, তাই তিনি তাঁর গবেষণাগারে ঠিক এইরকমই একটা ওষুধ তৈরি করে নিজের উপর প্রয়োগ করে এক ভয়ংকর মানুষ মিঃ হাইডে পরিণত হয়েছিলেন । সেই অবস্থায় তিনি খুনও করেছিলেন, যদিও ডাঃ জেকিল। এমনিতে ছিলেন অতি সজন ব্যক্তি ।
স্টিভেনসনের এই উপন্যাস যথেষ্ট আলোড়নের সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু এমন ওষুধ বাস্তবে এবং দানিয়েলির আগেই গিরিডিতে আমার ল্যাবরেটরিতে আমি করেছি। আমার ওষুধ আমি নিজে খাইনি, কিন্তু আমার পোষা বেড়াল নিউটনকে এক ফোঁটা খাইয়েছিলাম। খাওয়ানোর তিন মিনিটের মধ্যে সে আমাকে অত্যন্ত হিংস্রভাবে আক্রমণ করে আমার ডান হাতে আচড় দিয়ে আমাকে জখম করে। আমি আমার ওষুধের নাম দিয়েছিলাম “এক্স’। একই সঙ্গে “অ্যান্টি-এক্স’ নামে আরেকটা ওষুধ বার করি যেটা “এক্স”-এর অ্যান্টিডেট ; অর্থাৎ যেটা খেলে মানুষ আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। নিউটনকে “অ্যান্টি-এক্স’ খাইয়ে শান্ত করতে হয়েছিল । বৈজ্ঞানিক—ইংলন্ডের ডাঃ স্টেবিং, জামানির প্রোফেসর ক্রুগার ও স্পেনের ডাঃ গোমেজ—দানিয়েলির কথার তীব্র প্রতিবাদ করেন। ফলে মিটিং-এ একটা তুমুল বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। দানিয়েলির পক্ষে তাঁর মেজাজ ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনিতে দানিয়েলির সঙ্গে আমার এখানে এসেই আলাপ হয়েছে। অত্যন্ত বিনয়ী, নম্র স্বভাবের লোক বলে মনে হয়েছিল । অনেক দিন পরে একটা বিজ্ঞানী সম্মেলনে আজকের মতো একটা গোলযোগ হতে দেখলাম। আমি অবিশ্যি আমার নিজের ওষুধের কথা দানিয়েলি বা অন্য কাউকে বলিনি। দানিয়েলি বললেন, তাঁর ওষুধ দু-একদিনের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে। তারপর সেটা তিনি নিজের উপর পরীক্ষা করে দেখবেন, যেমন স্টিভেনসনের গল্পে ডঃ জেকিল করেছিলেন । ব্যাপারটা আমার ভাল লাগল না, কারণ এক্সপেরিমেন্ট যদি সফল হয়, তা হলে ওষুধ খাওয়া দানিয়েলি কীরকম ব্যবহার করবে তা বলা কঠিন । নিউটনের যা হিংস্র৷ ভাব দেখেছি তাতে আমার রীতিমতো ভয় ঢুকে গেছে। আজ আর আধা ঘণ্টার মধ্যেই ডেলিগেটদের লাঞ্চ আছে। আমরা আছি হােটেল সুপিাবাঁতে । এইখানেই একতলায় ডাইনিংরুমে লাঞ্চ । সম্মেলন চলবে। আর দু দিন । তারপর আরও দিন দু-তিন রোমে থেকে দেশে ফিরব ।
১৭ এপ্রিল
আজ সম্মেলনের পর দানিয়েলির সঙ্গে দেখা করলাম। বললাম, তাঁর বক্তৃতায় তিনি যা বলেছেন তা আমি বিশ্বাস করি। আমারও একই মত। তাতে ভদ্রলোক যারপরনাই খুশি হলেন । আমি বললাম, ‘তুমি যে ওষুধ বানাচ্ছি, সেইসঙ্গে তার প্রভাব দূর করার জন্যও ওষুধ তৈরি করছি। আশা করি । ” “তা তো বটেই, বললেন দানিয়েলি । “এ ব্যাপারে। আমি স্টিভেনসনের উপন্যাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি। এতদিন কেন যে কেউ এরকম একটা ওষুধ তৈরি করতে চেষ্টা করেনি, তা জানি না। ” আমি বললাম, “তার কারণ স্টিভেনসনের গল্পেই পাওয়া যাবে। যদি সেই ওষুধ মিঃ
হাইডের মতো এমন মানুষ তৈরি করতে পারে, তা হলে সে ওষুধ খাওয়ার কী বিপদ সে তো বুঝতেই পারছি। ” “কিন্তু তা বলে তো বিজ্ঞানকে থেমে থাকতে দেওয়া যায় না,’ বলল দানিয়েলি ।
“পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতেই হবে । এবং আমার পরীক্ষা যদি সফল হয় তা হলে তার পরিণাম যাই হােক না কেন, এটা মানতেই হবে যে সেটা হবে বিজ্ঞানের অগ্রগতির একটা নিদর্শন ৷ ” ‘তবে তুমি যদি একটা হাইডে পরিণত হও, তা হলে ব্যক্তিগতভাবে আমার সেটা মোটেই ভাল লাগবে না । ” “দেখা যাক কী হয় | ” “তুমি কী কী উপাদান দিয়ে ওষুধটা তৈরি করেছ, সেটা জানতে পারি কি ?” ভদ্রলোক যা উত্তর দিলেন তা শুনে আমি একটা অদ্ভুত রোমাঞ্চ অনুভব করলাম। আমিও ঠিক একই উপাদান দিয়ে আমার ওষুধটা তৈরি করেছি। সেটা অবিশ্যি আর দানিয়েলিকে বললাম না, এবং দানিয়েলিও তাঁর উপাদানের পরিমাণ আমাকে বললেন না ।
১৮ এপ্রিল
আজ কাগজে সাংঘাতিক খবর। ।
ডাঃ স্টেবিংকে পাওয়া যাচ্ছে না ।
আমাদের হােটেলটা টাইবার নদীর উপর । স্টেবিং নাকি রোজ ডিনারের আগে টাইবারের ধারে হাঁটতে যেতেন। আজও গিয়েছিলেন, কিন্তু আর ফেরেননি। পুলিশ সন্দেহ করছে তিনি কোনও গুণ্ডার দ্বারা নিহত হয়েছেন, এবং গুণ্ডারা তাঁর মৃতদেহ টাইবারের জলে ফেলে দিয়েছে।
আমার কিন্তু ধারণা অন্যরকম। স্টেবিং দানিয়েলির বক্তৃতার পর তার তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং দানিয়েলিকে অবৈজ্ঞানিক আখ্যা দেন। দানিয়েলিও বলেছিলেন, তাঁর ওষুধ দু দিনের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে।
আমি টেলিফোন ডিরেক্টরি খুলে দেখলাম যে দানিয়েলির বাড়ির ঠিকানা হচ্ছে ২৭ নং ভিয়া সাক্রমেন্টো । আমি আর দেরি না করে একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা তার বাড়িতে চলে গেলাম ।
বাড়ি খুঁজে পেতে কোনও অসুবিধা হল না, কিন্তু গিয়ে শুনি দানিয়েলি বাড়ি নেই। দানিয়েলির চাকর দরজা খুলেছিল ; আমাকে জিজ্ঞেস করল, “সিনিয়র আলবের্তির সঙ্গে কথা বলবেন ?
“তিনি কে ?”
“তিনি প্রোফেসর দানিয়েলির সহকমী ৷ ”
চাকর চলে গেল। দু মিনিটের মধ্যেই একটি বছর ত্ৰিশের যুবক বৈঠকখানায় এসে ঢুকল। কালো চুল, কালো চােখ, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা।
“তুমি কি দানিয়েলির সহকমী ? আছি। আপনি কি ভারতীয় বৈজ্ঞানিক প্রোফেসর শঙ্কু ?
আমি বললাম, ‘হঁ্যা । ”
যুবকের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল । বলল, “আমি আপনার বিষয়ে অনেক শুনেছি। আপনার আবিষ্কার সম্বন্ধে অনেক পড়েছি। আপনার দেখা পেয়ে অত্যন্ত গর্ব বোধ করছি। ” আমি বললাম, “সে কথা শুনে আমারও খুব ভাল লাগছে। কিন্তু আমি ডাঃ দানিয়েলির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম । তিনি কখন আসবেন ?” “যে কোনও মুহুর্তে’ বলল আলবের্তি। “তিনি বাজারে গেছেন কিছু কেনাকাটা করতে । আপনি একটু বসে যান ৷ ” আমি অপেক্ষা করাই স্থির করলাম। সময় কাটানোর জন্য আলবের্তিকে প্রশ্ন করলাম, ‘প্রোফেসরের ওষুধ কি তৈরি হয়ে গেছে ? “হঁ্যা, সে তো পরশুই হয়ে গেছে। ’ বলল আলবের্তি, “তারপর থেকেই প্রোফেসর কেমন যেন একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছেন। সামান্য একটা পরিবর্তন লক্ষ করছি তাঁর মধ্যে । সেটা যে কী সেটা স্পষ্টভাবে বলতে পারব না । ” “তিনি কি ওষুধটা খেয়েছেন ?? ‘তা তাে বলতে পারছি না। ওষুধটা উনি সম্পূর্ণ নিজে তৈরি করেছেন। আমি ওঁকে কোনওরকমভাবে সাহায্য করিনি। ওষুধের ফরমুলাও আমি জানি না। তবে ওষুধটা যে হয়ে গেছে সেটা উনি আমাকে বলেছেন। অবিশ্যি না বললেও আমি বুঝতাম, কারণ গত এক মাস উনি সারাদিন ল্যাবরেটরিতে কাজ করেছেন দরজা বন্ধ করে। দুদিন থেকে ওঁকে আর কাজ করতে দেখছি না। ’ দরজার ঘণ্টা বেজে উঠল। চাকর এসে দরজা খুলে দিতে দানিয়েলি হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে ঢুকলেন । ‘গুড মর্নিং প্রোফেসর শঙ্কু। দিস ইজ এ ভেরি প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ ।” আমিও ভদ্রলোককে প্রত্যাভিবাদন জানালাম । বললাম, ‘খবর না দিয়ে এসে পড়েছি বলে আশা করি কিছু মনে করছ না। ’ “মোটেই না, মোটেই না । ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম । তারপর কী খবর বলে । ” “খবর তো তোমার—তোমার ওষুধের খবর। ওটা তৈরি হল ?” “হয়েছে বই কী । পরশুই রাত্রে হয়েছে তৈরি । ” “পরীক্ষা করে দেখেছ ?” “আমি চায়ের চামচের এক চামচ খেয়ে দেখেছি। ” “তারপর ? “তারপর কী হল জানি না। ’ ‘তার মানে ?” “মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম। সকালে উঠে দেখি আমার বিছানায় শুয়ে আছি। শরীরে কোনও গ্লানি নেই। রাত্রে কী ঘটেছে কিছু জানি না। ’ ‘আজ কাগজে স্টেবিং-এর মৃত্যুসংবাদ পড়েছ ? ‘পড়েছি বই কী—আর পড়ে অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছি। যদিও সে আমার বক্তৃতার প্রতিবাদ করেছিল, কিন্তু সে অত্যন্ত উচ্চস্তরের বিজ্ঞানী ছিল।” ‘স্টেবিং-এর মৃত্যু সম্বন্ধে তুমি কোনও সিদ্ধান্তে পৌছেছ ? “এ তো বোঝাই যাচ্ছে স্থানীয় গুণ্ডাদের কীর্তি। তাকে মেরে শুনলাম টাইবারের জলে লাশ ফেলে দিয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই অবিশ্যি সে লাশ আবার ভেসে উঠবে। ” আমি আর দানিয়েলির সময় নষ্ট করলাম না । তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে হােটেলে ফিরে এলাম। দানিয়েলির ওষুধ খাওয়ার কথাটা এখনও মাথায় ঘুরছে। সে যে কিছুই টের পেল না, এটা খুব আশ্চর্য ব্যাপার। আমার ওষুধেও কি এই একই প্রতিক্রিয়া হবে ? নিউটন যে আমাকে আক্রমণ করে, সেটা কি সে অজান্তে করে ?
১৯ এপ্রিল
কাল রাত্রে সাড়ে এগারোটার সময় জামানির প্রোফেসর ক্রুগার আর স্পেনের ডাঃ গোমেজ খুন হয়েছেন তাঁদের ঘরে । সেইসঙ্গে টাইবার নদীতে স্টেবিং-এর লাশও পাওয়া গেছে। লাশের গলায় আঙুলের গভীর দাগ। অর্থাৎ তাকে গলা টিপে মারা হয়েছিল।
এবার আর আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই। তিনটে খুনই দানিয়েলির কীর্তি। পুলিশ অবশ্য তদন্ত করছে। ক্রুগার বা গোমেজের কোনও টাকা পয়সা চুরি যায়নি। কাজেই এটা চোরাডাকাতের কীর্তি নয় ।
পুলিশ আমাদের হােটেলের রিসেপশনিস্টকে জেরা করে জানতে পারে যে, কাল রাত্রে এগারোটার সময় একটি কুৎসিত লোক নাকি হােটেলে এসে ক্রুগার আর গোমেজের ঘরের ম্বর জানতে চায়। তারপর সে দুজনকেই টেলিফোন করে। ‘কী কথা বলেছিল সেটা শুনেছিলে ?” পুলিশ জিজ্ঞেস করে। “আজ্ঞে না, তা শুনিনি । ” ক্রুগার আর গোমেজ দুজনকেই স্টেবিং-এর মতোই গলা টিপে মারা হয়েছে। আততায়ী যে অত্যন্ত শক্তিশালী সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। অথচ দানিয়েলিকে দেখলে তার মধ্যে শারীরিক শক্তির কোনও লক্ষণ পাওয়া যায় না । ওর বয়সও হয়েছে। অন্তত ষাট । আমি এবার দানিয়েলির বাড়িতে একটা ফোন করলাম। সে নিজেই ফোন ধরল। শান্ত কণ্ঠস্বর। কোনও উত্তেজনার লেশমাত্র নেই। আমি ফোন করছি শুনে অত্যন্ত হৃদ্যতার সঙ্গে আমাকে অভিবাদন জানাল । আমি বললাম, “আমি একবার তোমার বাড়িতে আসতে চাই ৷ ” “এক্ষুনি চলে এসো, বলল দানিয়েলি। ‘আমি সারা সকাল বাড়িতে আছি। ” দশ মিনিটে দানিয়েলির বাড়িতে হাজির হলাম। অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আমার সঙ্গে করমর্দন
করে আমায় সোফায় বসতে বলে বলল, “বলো কী খবর ৷ ”
আমি বসে বললাম, “তুমি কি কাল রাত্রে আবার ওষুধটা খেয়েছিলে ?
“হঁ্যা, এবং সেই একই প্রতিক্রিয়া, বলল দানিয়েলি। ‘ওষুধ খাবার পরে কী করেছি, কোথায় ছিলাম, কখন ফিরলাম-কিছুই মনে নেই ৷ ”
‘এক চামচই খেয়েছিলে ?
“হঁ্যা । ”
“তুমি বােধ হয় জান যে কাল ক্রুগার আর গোমেজ খুন হয়েছে, এবং স্টেবিং-এর লাশ পাওয়া গেছে। ”
‘জানি ৷’
‘এরা তিন জনেই কিন্তু তোমার বক্তৃতায় ঘোর আপত্তি তুলেছিল ৷ ”
“তাও জানি ৷ ”
“আমার একটা কথা শুনবে ?”
“কী
‘ওষুধটা আর খেও না । তুমি যখন নিজে কিছুই অনুভব করছি না, তখন খেয়ে লাভ কী ? বিজ্ঞানের দিক দিয়ে তো তুমি কোনও জ্ঞান আহরণ করছ না। সত্যি বলতে কী, তুমি তো কিছুই জানতে পারিছ না। ’
‘তা পারছি না, কিন্তু একটা যে কিছু হচ্ছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।”
“কিছু মনে করো না, কিন্তু আমার ধারণা এই তিনটে খুনের জন্যই তুমি দায়ী ; অর্থাৎ তোমার ওষুধই দায়ী ৷ ”
‘ননসেন্স । ‘
“ননসেন্স নয়। কেন সেটা আমি বলছি। আমি নিজে একই ওষুধ আবিষ্কার করেছি ভারতবর্ষে আমার ল্যাবরেটরিতে । আমি সেটা আমার পোষা বেড়ালের উপর পরীক্ষা করেছিলাম। ড্রপার দিয়ে এক ফোঁটা ওষুধ তার মুখে ঢেলে দিয়েছিলাম। তিন মিনিটের মধ্যে সে আমাকে আক্রমণ করে জখম করে । তার আধা ঘণ্টার মধ্যেই অবিশ্যি সে আমারই তৈরি একটা অ্যান্টিডেট খেয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।”
দানিয়েলি একটুক্ষণ চুপ করে রইল। আমি লক্ষ করলাম, তার জোরে জোরে নিশ্বাস পড়ছে। তারপর চাপা স্বরে সে বলল, “তুমি আমার আগে এই ওষুধ আবিষ্কার করেছ ?
“হঁ্যা । ”
“আই ডোন্ট বিলিভ ইট । ”
দানিয়েলির কণ্ঠস্বরে এই প্রথম একটা তিক্ততার আভাস পেলাম। সে আবার বলল, “আই ডেন্ট বিলিভ ইট । ”
আমি বললাম, “তুমি বিশ্বাস না করতে পারো। কথাটা কিন্তু সত্যি। তুমি তোমার ওষুধের উপাদানের কথা আমাকে বলেছ, কিন্তু পরিমাণ বলনি। আমিও এই একই উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করেছি, এবং আমার পরিমাণ মুখস্থ আছে। সেটা আমি তোমাকে বলছি। দেখ তোমার সঙ্গে মেলে কি না । ”
আমার পুরো ফরমুলাটা কণ্ঠস্থ ছিল। আমি সেটা দানিয়েলিকে বললাম। তার দৃষ্টি বিস্ফারিত হয়ে উঠল । তারপর সে ফিসফিস করে বলল, “আই কান্ট বিলিভ ইট ; পরিমাণ দুজনের হুবহু এক৷
‘তা হলেই বুঝতে পারছ। ”
“তুমি নিজে খাওনি তোমার ওষুধ ?
“না, এবং কোনওদিনও খাব না । ”
“কিন্তু আমাকে খেতেই হবে। যতদিন না জানতে পারছি ওষুধ খেয়ে আমার কী হচ্ছে, আমি কী করছি, ততদিন আমাকে এ ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। দরকার হলে পরিমাণ বাড়াতে হবে ; এক চামচের জায়গায় দু চামচ । ” –
“তুমি কি সত্যিই কিছু বুঝতে পারিছ না, ওষুধ খেয়ে তুমি কী কর ?”
‘প্রথম দিন কিছুই বুঝিনি। কালকের সামান্য স্মৃতি আছে। আমি জানি, আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে আমার
গাড়িতে উঠেছিলাম । ”
‘তোমার কি ড্রাইভার আছে?’
“না। আমি নিজেই গাড়ি চালাই ৷ ”
‘তারপর কী হয় কিছুই মনে নেই ?
“না। কিন্তু এইভাবেই আমি আস্তে আস্তে জানতে পারব আমি কী করছি, আমার কী পরিবর্তন হচ্ছে। ”
‘এর ফল ভাল হবে না, দানিয়েলি । ”
‘তা না হলেও, বিজ্ঞানের খাতিরে এটা আমাকে করতেই হবে । তুমি আর আমি এক লোক নই। আমার কৌতুহল তোমার চেয়ে অনেক বেশি।”
আমি বুঝলাম দানিয়েলিকে অনুরোধ করে কোনও ফল হবে না। ওর মাথায় ভূত চেপেছে।
আমি বিদায় নিয়ে হােটেলে ফিরে এলাম ।
আমায় একটা কিছু ভেবে বার করতে হবে। এ দু দিনে দানিয়েলির তিনটি শত্রু খুন হয়েছে । আরও কত শত্রু আছে তার কে জানে ?
२० ७थिव्ल
আজ চতুর্থ খুনের খবর কাগজে বেরিয়েছে। রোমের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ডাঃ বার্নিনিকে কেউ কাল রাত্রে তার বাড়িতে গিয়ে গলা টিপে মেরে এসেছে। পুলিশ গলায় আঙুলের ছাপ পেয়েছে, সেই অনুসারে তারা অনুসন্ধান চালাচ্ছে। আমি তো অবাক । এ আবার কে খুন হল ? কেন ? আমি দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে দানিয়েলির বাড়িতে আলবের্তিকে ফোন করলাম । আলবের্তি ফোন ধরার পর বললাম, “তুমি একবার আমার হােটেলে আসতে পারবে ? আমার ঘরের নম্বর হচ্ছে ৭১৩ । বিশেষ দরকার আছে তোমার সঙ্গে ৷ ” পনেরো মিনিটের মধ্যে আলবের্তি আমার ঘরে চলে এল । আমি তাকে প্রথমেই বললাম, “আমার একটা বিশ্ৰী সন্দেহ হচ্ছে যে, এ ক’দিন যে খুনগুলো হয়েছে সেগুলো দানিয়েলির কীর্তি। সে ওষুধ খেয়ে এই কাণ্ডটি করছে। তোমার কী মনে হয় ?” আলবের্তি গভীর হয়ে বলল, “আমারও কাল থেকে সেই ধারণা হয়েছে, কারণ যারা খুন হয়েছে তারা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও সময় দানিয়েলির বিরুদ্ধে কিছু বলেছে, তার কথা বিশ্বাস করেনি বা তার কথার প্রতিবাদ করেছে। ” “কিন্তু কাল রাত্রে যিনি খুন হলেন—এই বার্নিনি ভদ্রলোকটি কে ?” ‘ইনি। এখানকার একজন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী । দানিয়েলির একটা প্রবন্ধের তীব্র প্রতিবাদ করে তিনি তিন বছর আগে একটা প্ৰবন্ধ লেখেন । সেটা একটা পত্রিকায় বেরিয়েছিল ৷ ” ‘সেই রাগ দানিয়েলি এখনও ভোলেনি ? “তই তো দেখছি। এবং দানিয়েলিকে কোনও না কোনও সময় আক্রমণ করেছেন, এরকম বিজ্ঞানী রোমে অনেক আছে। প্রোফেসর তুচ্চি, ডাঃ আমাটি, ডাঃ মাৎসিনি—আর কত নাম করব ? আমার এখন ধারণা হয়েছে। এদের প্রত্যেকের উপরই দানিয়েলি রাগ পুষে রেখেছেন । এতদিন কিছু করেননি, কারণ দানিয়েলি এমনিতে খুবই ভদ্র এবং অমায়িক ব্যক্তি । কিন্তু এই ওষুধই হয়েছে। ওঁর কাল। আর একটা কথা আমি আপনাকে বলতে চাই ৷ ” ‘কী “আপনি বোধ হয় প্রোফেসরের আগে এই ওষুধ তৈরি করেছেন, তাই না ?” ‘সেটা তুমি কী করে জানলে । ” ‘আমি কাল প্রোফেসরের সঙ্গে লাঞ্চ খাচ্ছিলাম। উনিই বললেন, এবং যেভাবে বললেন তাতে মনে হয় না যে, উনি আপনার উপর খুব প্রসন্ন । ” “তই কি ? “তাই—এবং আমি বলি আপনি সাবধানতা অবলম্বন করুন । রাত্রে আপনার ঘরে কাউকে ঢুকতে দেবেন না। ’ “কিন্তু শুধু তা হলেই তো হবে না। এখানে হত্যাকাণ্ড যে চলতেই থাকবে । এরপর নিরীহ লোককেও দানিয়েলি খুন করতে আরম্ভ করবে সামান্য ছুতো পেলেই। ” ‘তা হলে কী করা যায় ?” ‘সেটাই ভাবছি। ” আমি কিছুক্ষণ ভেবে একটা ফন্দি বার করলাম। বললাম, “তুমি প্রোফেসরের ল্যাবরেটরিতে যাও ?? “হঁ্যা, যাব না কেন ? দিনের বেলাতে যাই । ” “ওই ওষুধ কি তোমার নাগালের মধ্যে থাকে ?” “না। ওটা উনি আলমারিতে বন্ধ করে রাখেন । চাবি ওঁর কাছে থাকে ৷ ” আমি আরেকটু ভাবলাম। তারপর বললাম, “তুমি কি ওর বাড়িতেই থাক ?” “না। আমি সকাল দশটার সময় আসি, আবার সন্ধ্যা ছটায় বাড়ি চলে যাই ৷ ” ‘ওর ল্যাবরেটরির চাবি তোমার কাছে আছে ? ‘তা আছে। ” ‘তা হলে রাত্রে আমাদের দুজনকে ওর ল্যাবরেটরিতে ঢুকতে হবে । ও যাতে ওষুধ আর না খায় তার ব্যবস্থা করতে হবে । ” ‘কাল আমি একটু মিলান যাচ্ছি। পরশু সন্ধ্যাবেলা আপনার কাছে চলে আসব। ” ‘বেশ, তাই কথা রইল । ” আলবের্তি চলে গেল । ঘটনাটা আজকে ঘটলেই ভাল হত, কিন্তু উপায় নেই। আলবের্তিকে প্রয়োজন ।
২১ এপ্রিল
আজ দুটাে খুনের খবর বেরিয়েছে কাগজে। তারমধ্যে একজনের নাম আলবের্তি কালকে করেছিল। আরেকজন প্রোফেসর বেলিনি—জীববিদ্যবিশারদ। দুজনকেই রাত্তিরে গলা টিপে মারা হয়েছে। আঙুলের ছাপ আগের খুনের সঙ্গে মিলে গেছে। পুলিশ এটা বুঝেছে যে, সব খুন। একই লোক করেছে। বেলিনির চাকর পুলিশকে বলেছে যে, রাত এগারোটার সময় সে দরজার ঘণ্টা শুনে দরজা খুলে দেখে যে, একজন বীভৎস দেখতে লোক দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করতে সে বলে তার নাম আরাতুরো ক্রোচে। ক্রোচে বেলিনির সঙ্গে দেখা করতে চায়। বেলিনি। তখনও ঘুমোতে যাননি। ক্রোচের নাম শুনে তিনি চাকরকে বলেন লোকটিকে ভিতরে আসতে বলতে । পনেরো মিনিট পরে এই ক্রোচে লোকটি চলে যায় । বেলিনির চাকরাই তার হ্যাট আর কোটি তাকে এনে দেয় । তারপর মনিব ঘুমােতে যাচ্ছেন না দেখে চাকরীটি তাঁর ঘরে উকি মেরে দেখে বেলিনি মেঝেতে পড়ে আছেন—মৃত অবস্থায়। সে তৎক্ষণাৎ পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ বেলিনির গলাতে আততায়ীর আঙুলের ছাপ পায়, কিন্তু এখনও পর্যন্ত আততায়ীর সন্ধান পায়নি।
২৩ এপ্রিল
কাল রাত্রের সাংঘাতিক ঘটনার বর্ণনা দেবার ক্ষমতা আমার নেই, কিন্তু তাও যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কাল সকালে রোমের কিছু দ্রষ্টব্য দেখতে বেরিয়েছিলাম একটা টুরিস্ট দলের সঙ্গে । ফিরেছি। বিকেল সাড়ে চারটায়। তারপর কফি খেয়ে টাইবারের ধারে হােটলাম আধা ঘণ্টা । রাত সাড়ে আটটা নাগােত আলবের্তি আমার হােটেলে এল। আমরা দুজনে একসঙ্গেই ডিনার খেলাম। তারপর স্থির করলাম সাড়ে দশটা নাগাত দানিয়েলির বাড়ি যাব । বাড়ি যাব মানে বাড়ির বাইরে ওত পেতে থাকব । ল্যাবরেটরিটা বাইরে থেকে দেখা যায়, তাতে আলো জ্বললেই বুঝব দানিয়েলি ঢুকেছে। তখন আমরা বাড়িতে গিয়ে ঢুকব । দানিয়েলির পাড়াটা এমনিতেই নির্জন—তার উপরে রাত্রে তো বটেই। বাড়ির সামনেই একটা পার্ক আছে ; আমরা দুজনে সেই পার্কের রেলিঙের ধারে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ল্যাবরেটরি অন্ধকার, অথচ বাড়ির অন্য ঘরে আলো জ্বলছে। বাড়ির দুশো গজের মধ্যেই একটা গিজা, তাতে সাড়ে দশটার ঘণ্টা বাজার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ল্যাবরেটরির আলো জ্বলে উঠল । আমি আর আলবের্তি দানিয়েলির বাড়ির দরজায় গিয়ে ঘণ্টা টিপলাম । চাকর এসে দরজা খুলে আমাদের দেখেই বলল, “এখন সিনিয়র দানিয়েলির সঙ্গে দেখা হবে না। তাঁর বারণ আছে। ” তার কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে আলবের্তি তাকে একটা মোক্ষম ঘুষি মেরে অজ্ঞান করে দিল । আমরা চাকরকে টপকে ভিতরে প্রবেশ করলাম। আলবের্তি বলল, “ফলো মি ৷ ” সিঁড়ির পাশে একটা ঘর পেরিয়ে একটা প্যাসেজ, সেটা দিয়ে বাঁ দিকে হাতদশেক গেলেই কোনও আলো জ্বলছে না । আমি আলবের্তিকে ফিসফিস করে বললাম, “আমি ঢুকছি। ভিতরে। তুমি দরজার বাইরে থেকে, দরকার হলে তোমাকে ডাকব । ” খোলা আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে একটা বােতল থেকে চামচে ওষুধ ঢালছে। “দানিয়েলি |’ – আমার গলা শুনে সে চরকিবাজির মতো ঘুরে আমাকে দেখে চােখ কপালে তুলে বলল, ‘সে কী, তুমি নিজেই এসে গেছ ? আমি তো তোমার হােটেলেই যাচ্ছিলাম । ”
এই বলার সঙ্গে সঙ্গে সে ওষুধটা খেয়ে ফেলল, আর তারপরে অবাক হয়ে চােখের সামনে দেখলাম, মুহুর্তের মধ্যে তার চেহারার পরিবর্তন হতে । সে এখন আর সৌম্যদর্শন বৈজ্ঞানিক নয়, সে হিংস্র চেহারার আধা মানুষ আধা জানোয়ার | এর পরেই সে আর এক মুহুর্ত সময় না দিয়ে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি বিদ্যুদ্বেগে পাশ কাটাবার সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় চরম ফন্দিটা এসে গেল। দানিয়েলি রাখা ওষুধের বোতলটা হাতে নিয়ে এক ঢোক ওষুধ মুখে পুরে দিলাম । তারপর এইটুকু শুধু মনে আছে যে আমি ভীমবিক্রমে দানিয়েলির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছি, এবং দুজনে একসঙ্গে মেঝেতে পড়ছি। জড়ােজড়ি অবস্থায় । এও মনে আছে যে, আমার দেহে তখন অসুরের শক্তি। এ ছাড়া আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান হল, তখন দেখি আমি আমার হােটেলের বিছানায় শুয়ে আছি, আমার সবঙ্গে বেদনা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দরজা খুলে আলবের্তি ঘরে ঢুকল । “আপনি নিজে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেন না বলে রুমন্বয়ের কাছ থেকে চাবি নিয়ে দরজা খুলেছি—আশা করি কিছু মনে করবেন না। ’
‘গুড মর্নিং’ বললাম। আমি ।
“আপনি আছেন কেমন ?
‘শরীরে কোনও জখম নেই, কেবল বেদনা ৷ ”
“আমি ডাক্তারকে খবর দিয়েছি, সে এসে আপনার ব্যবস্থা করবে। ”
“কিন্তু কাল কী হল ?’
‘কাল দুই হিংস্র পিশাচকে মরণপণে লড়াই করতে দেখলাম। আমি এসে আপনার পক্ষ না নিলে কী হত বলা যায় না । আমি এককালে বক্সিং করেছি। দানিয়েলিকে একটা আপারকট মেরে নক আউট করে দিই। তার আগে অবশ্য আপনিও ওকে যথেষ্ট কাবু করেছিলেন । ও অজ্ঞান হলে আমি আপনাকে নিয়ে হােটেলে চলে আসি । যখন আপনাকে বিছানায় শুইয়ে দিই তখনও আপনার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। যতক্ষণ না আমার চেনা প্রোফেসর শঙ্কুকে আমার সামনে দেখতে পাই, ততক্ষণ আমি আপনার ঘরে ছিলাম। তারপর বাড়ি ফিরে আসি । তখন রাত সাড়ে বারোটা । ”
“আর দানিয়েলি ?”
এই প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার চলে এলেন । তিনি আমাকে পরীক্ষা করে প্রশ্ন করলেন, “তোমার কি কাল কারুর সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছিল ?
আমি বললাম, ‘হঁ্যা । তাঁর বাড়ি এই যুবকটি জানে। তিনি থাকেন সাতাশ নম্বর ভিয়া সাক্রমেন্টোতে। তাঁর নাম ডাঃ এনরিকো দানিয়েলি। তিনি তাঁর আবিষ্কৃত একটি ওষুধের প্রভাবে এই দশা করেছেন আমার । গত চার-পাঁচ দিনে যে কজন বৈজ্ঞানিক খুন হয়েছেন, তাঁদের গলার আঙুলের ছাপের সঙ্গে এই দানিয়েলির আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখলে দেখা যাবে তাতে কোনও পার্থক্য নেই।”
“এটা তা হলে পুলিশের কেস ?
‘তা তো বটেই। ”
‘আমি এক্ষুনি পুলিশে খবর দিচ্ছি। ”
ডাক্তার আমাকে ওষুধ দিয়ে চলে গেলেন।
এবার আলবের্তি তার পকেট থেকে একটা বোতল বার করে টেবিলের উপর রেখে বলল, “এই হল বাকি ওষুধ । এটা আপনার কাছেই থাক ; আপনার গবেষণাগারে যে বোতলটা রয়েছে সেটার পাশে রেখে দেবেন। আশা করি এখন খানিকটা সুস্থ বােধ করবেন। ”
“ওষুধ পড়েছে, আর চিন্তা কী । আমার মনে হয়। পরশুর মধ্যেই দেশে ফিরতে পারব। তোমার সাহায্যের জন্য অজস্র ধন্যবাদ। তোমার কথা ভুলব না। কখনও । ”
……………………………………………………………………..(সমাপ্ত)………………………………………………………………..