ঊন্নিশশো শতাব্দী। তখন ডাকবাহকের প্রচলন ছিলো অত্যধিক। কারণ আমাদের জমিদার মশায়েরা তাদের চিঠিপত্র আদান প্রদান করতেন এইভাবেই। যারা এই চিঠিপত্র, পার্সেল আনা নেয়া করতো তাদের “রানার” বলা হয়। কাধে ঝুলতো ইয়াব্বড়ো ঝোলা, হাতে ধার দেয়া শানিত বল্লম। সে কি? বল্লম কেনো?
আরে বল্লম হলো ব্যাক্তিগত সুরক্ষার জন্য। সেকি শ্বাপদসংকুল দিন ছিলো তখন! বাঘ-ভাল্লুকে ওত পেতে থাকতো সেসময়। পারলে হাড়গোড় খেয়ে নেয়। আরো আছে চোরার চোরা গুপ্তচর। পরজমিদারের গুপ্তচরেরা পারলে টেনে ঝোপের ভেতর হাপিস করে দেয়।
আজ এমনই একজন রানার’র এর গল্প বলবো যার পরিচয় অকুতোভয় এক দু:সাহসিক মানুষ হিসেবে। তার নাম আবদুর রহিম। সময়ের সেরা সাহসী রানার এই আবদুর রহিম পারেনি ডাক সংক্রান্ত এমন কাজ ছিলো না। তার গায়ে সেকি জোর! এক দৌড়ে ঘন্টায় দশ মাইল দৌড়োতো। বিশ্বাস হচ্ছেনা?
একদিন জমিদার বিশ্বজিৎ চন্দ্র রায় তাকে ডেকে পাঠালেন অন্দর ঘরে।
-কি র্যা? কেমন যাচ্ছে দিনকাল? বৌ-ছ্যালার ভরন পোষণে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
-ছি কি বলেন দাদা? আপনার খাই পড়ি, আল্লাহ সুখে রেখেছেন এই অল্পেই তুষ্ট আছি বৈকি।
-তা বেশ তা বেশ। এখন বল দিকি অনেক দিন তো হলো তোর এই ডাকের কাজ কর্ম করচিস, পাশের জমিদারীর সুর্য প্রতাপ সিংহের কাছ থেকে একটা অতি গোপনীয় মূল্যবান জিনিস বার করে আনতে হবে।
-সে কি বলচেন দাদা, আমি পারবনে অমন কাজ দুনিয়াতে আচে নাকি। বলুন কবে যেতে হবে?
-এইব্বাস আমার খাটি ডাকবাহক তুই। যা কাল সকালেই চলে যা আটটা নাগাদ।
-আচ্ছা দাদা।
কিন্তু সে কি জানতো তার কপালে কাল কোন ভয়াবহ বিপদ আছে?
মেটাহিউম্যান আ্যান্ড কমান্ডো আ্যালায়েন্স প্রজেক্ট(macap) এর গোপন মিশনের একটা অংশ হিসেবে অতীত সময়ের ঐতিহাসিক সমরনায়ক, যোদ্ধা এবং লোকমুখে ফেরা চরিত্রগুলো ঘেটে বের করার নির্দেশ এসেছে উপর মহল থেকে। কিন্তু কেউ বুঝে উঠতে পারছে না এর মানে কি? নাম এসেছে এমন কিছু মানুষের যাদের অতীত থেকে টেনে আনতে হবে।
-কিভাবে সম্ভব?
-টাইম ট্রাভেল। যন্ত্রমানব বললেন।
-এইটা দেখেন। রানার। খুব একটা অতিমানবীয় শক্তি না থাকলেও এর ঘন্টা প্রতি দশ মাইল দৌড়ানোর ক্ষমতা আছে। রণিন বললো।
-সমস্যা নাই। আমি আর শরীফ ভাই ল্যাবে এক্সপেরিমেন্ট চালাবো। সেকেন্ডে পঞ্চাশ মাইল দৌড়াবে।
-এখন?
-এখানে দেখাচ্ছে যে পথে আব্দুর রহিম যাচ্ছে সেই পথে সে খুন হচ্ছে। সুতরাং টাইম ট্রাভেলারে আমাদের আগেই পৌছাতে হবে।
প্রত্যেকের দু হাতে দুইটা করে টাইম সুইংগার। মেশিন চালু করে দিলেন যন্ত্রমানব। চুইইই করে আওয়াজ শুরু হলো।
-নাউ!
ধাম করে ছিটকে পড়লো রণিন উনিশশো শতাব্দীর বাংলার মাটিতে। রে শালা। একটু পর যন্ত্রমানব। চল্লিশটা মিনি নেটওয়ার্ক স্প্লিটার আ্যাক্টিভেট করে দিলেন। বলা যায় না আবার কখন আসতে হয়। একবিংশ শতাব্দীতে কন্ট্রোলার যারা আছে তাদের সাথে কথা বলার জন্য এই নেটওয়ার্ক সেট আপ এমনিই করতে হতো।
আব্দুর রহিম জমিদার বাড়ি থেকে তার কাজ সেরে ঘরে ফিরছে। এমন সময় দেখলো দশজনের একটা দল।
-এই দাড়া।
-কে আপনারা? অমন করে পথ আগলে রেখেছেন কেনো?
-তোকে মারার জন্য।
-তা আর হবে না বোধ করি। আমরা এসে গেছি। পেছন থেকে যন্ত্রমানব বলে উঠলেন।
আঠারোশো শতকের লোকজন দেখলো অদ্ভুত দর্শন দুজন লোক তাদের বাধা দিচ্ছে। একজনের গায়ে ধাতব বর্ম আরেকজন আকাশে উড়ছে। যন্ত্রমানব দু হাত সামনে বাড়ালেন,
-ছেড়ে দাও নাহলে…
-নাহলে কি?
সাইই করে হাত থেকে দুটি মিনি মিসাইল ছুটে এলো যন্ত্রমানবের কাছ থেকে। পাশের ঝোপটা বিস্ফোরিত হলো। লোকগুলো ছুটে পালালো।
-রানার। আমরা ভবিষ্যৎ থেকে এসেছি।
-মেশিন অন করুন শামীম।
-ট্রান্সফরমেশন লেভেল ফিফটি, স্পীড বাড়াবো শুধু? কোন ধরণের গামা রেডিয়েশন?
-রানার আপনার কোন আলোকরশ্মি লাগবে?
-আমার বল্লমের লাগবে।
এক্সিলারেটর অন হলো। দম খিচে বসে আছে আঠারাশো শতকের আবদুর রহিম রানার। ক্রস সিট বেল্ট পরে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
ক্লিং!
যান্ত্রিক শব্দ করে রিআ্যক্টর মেশিন চালু হয়ে গেলো।
-ক্যাপাসিটি ৫৬০% ছুয়েছে। পাওয়ার ট্রান্সফরমেশন শুরু হয়েছে।
-রোল অন।
হঠাৎ ওয়ার্নিং দিতে শুরু করলো স্ক্রীনে।
টিট টিট টিট।
-সাস্পিসিয়াস লেভেল ৮০০%! ব্লাস্ট করবে!
-ড্যাম ইট! মেইন সুইচ মেইন সুইচ!
বুউম্মম!
ঘন্টাখানেক বাদে জ্ঞান ফিরতে শুরু করলো সবার।
-রানার কই?
-আউট!
সাই সাই করে সেকেন্ড প্রতি পঞ্চাশ মাইল দৌড়ে যাচ্ছে রানার। আগে যেখানে ঘন্টায় দশ মাইল দৌড়ানো যেতো সেখানে এটা অবিশ্বাস্য!
গাবতলীতে এসে থেমে গেলো রানার। ওদিকে ট্র্যাকিং চিপ শরীরে প্রতিস্থাপিত থাকার কারণে রানারকে খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য হলো নক।
-স্যাটেলাইট ভিশন অন প্লিজ!
বলে রাখা ভালো ঐ সময়ে দেশে পেট্রোল বোমায় মানুষ জন বাসে গাড়িতে পুড়ে মরছিলো। ভাগ্যক্রমে একজন বোমা নিক্ষেপকারী একটা বাসে নিক্ষেপ করতে যাচ্ছিলো মোটর সাইকেল থেকে।
-ভাই মাইরেন না। বাসে মহিলা শিশু আছে। আল্লাহর দোহাই লাগে।
-চোপ।
-ক্র্যানক!
সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে দেখলো! বোমাবাজকে কি একটা যেনো অতি দ্রুত বোমাবাজকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেলো। অবাক হয়ে বোমাবাজ দেখলো এক অদ্ভুত সাজে বল্লম হাতে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
-কে তুই? এতো বড়ো সাহস আমারে টাইনা নিলি?
দ্রিম করে একটা ঘুষি পড়লো তার মুখে।
-আমি রানার!