আমি অন্তু। ভালো নাম ইজমার হোসেন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জুনিওর ওয়ারেন্ট অফিসার। আজ দশদিন ধরে আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। অবশ্য হাসপাতালে কেনো আছি তা বলতে গেলে আমার দুইটা আত্নজীবনীর বই লিখতে হবে। এবং সেটা আমার দ্বারা কখনোই সম্ভব হবে না। কিন্তু আজ আমি বলবো, কেন গত দশদিন ধরে আমি এই বেডে শুয়ে আছি।
সেদিন ছিলো সোমবার। আমাকে ডেকে নেয়া হলো চট্টগ্রাম বিমান ঘাঁটিতে।
-ইজমার।
-ইয়েস স্যার।
-তোমার ফার্স্ট ক্লাস এসেছে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিয়ারিং এর মাস্টার্স এ। ইউ হ্যাভ সাকসিডেড। এখন তোমাকে পাঠানো হচ্ছে এমন এক জায়গায় যেখানে তুমি অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে এগোতে পারবে।
-জ্বি স্যার?!
-হ্যাঁ। ম্যাকাপ এখন তোমার গন্তব্য।
-ম্যাকাপ?! মানে মেটাহিউম্যান অ্যান্ড কমান্ডো অ্যালায়েন্স প্রজেক্ট?
-ইয়েস মাই বয়। যাও।
সেদিন থেকে স্বপ্নটা ডানা মেলতে শুরু করলো।
ম্যাকাপে এসে পরিচয় হলো এমন এক মানুষের সাথে যিনি শুদ্ধ বিজ্ঞান চর্চা করেন। তার চেয়েও বড় কথা তিনি অনেক বড় মনের মানুষ। হ্যাঁ ডক্টর তানভীর। শান্ত, ধীরস্থির প্রকৃতির মানুষ। যার কাছে যে কোনো মেকানিক্যাল ডিভাইস বানানো বাম হাতের ব্যাপার। এখানে আরো আছেন জুনিয়র সায়েস্টিস্ট শান্ত ওরফে যন্ত্রমানব,
বায়োকেমিস্ট শামীম। বাংলাদেশের সকল অতিমানবেরা-মাটিমানব, রশ্মিমানব, পাহাড়মানব, অঙ্গারমানব, জুজুমানব, আধারমানব, দশবজ্র(দশজন বজ্রশক্তির অধিকারীরা) এবং সুপারসেভেন গ্রুপ। আছেন এজেন্ট রিশাদ যাকে বাংলাদেশের স্পাই জগতের এক অপ্রতিরোধ্য পৌরুষ ও তার স্ত্রী এজেন্ট আরমিন। আছেন এজেন্ট সাদিয়া ও এজেন্ট আসিফের মতো টেক জিনিয়াস। এবং আছে বাংলাদেশের ক্ষুদে স্পাই এজেন্ট রণিন। এদের সবাইকে নিয়ে হয়েছে বিশাল এক জোট যার নাম “দুর্ধর্ষ সংঘ”।
-ওয়েলকাম টু ম্যাকাপ, মিঃ ইজমার।
-থ্যাংকিউ।
-আসুন আমরা কাজের জন্য কথা বলি। বিনয়ী ডক্টর তানভীর বললেন।
-অবশ্যই।
-এই কয়েক ঘন্টা হলো আমরা তৈরি করলাম একটা নিউক্লিয়ার এনার্জি চালিত ফিউচার ড্রোন শীপ।
-ওয়াও। ফার্স্ট জেনারেশন?
-হ্যাঁ। তা তো অবশ্যই।
-দেখতে পারি?
-হোয়াই নট।
আমি শীপ টাতে ককপিটে গিয়ে বসলাম। ডক্টর তানভীর তার সদা হাস্যমুখ নিয়ে তকিয়ে আছেন। শীপটা একটা মাঝারি আকারের কক্ষের মতো। অনেকটা হেলিকপ্টারের সামনের দিকের অংশ, লেজটা যেনো কেটে দেয়া হয়েছে। চুপচাপ নতুন বাটন দেখতে কন্সোলে চোখ দিলাম প্রথমে। তানভীর ইশারা করলেন সবুজ কাগজ দেখিয়ে। বুঝলাম সবুজ বাটনটাই পাওয়ার অনের জন্য। পাওয়ার অন বাটনে টইপ দিলাম। সবুজ রংয়ের আলো জ্বলে উঠলো তাতে।
চুইইইইই!
পেছনে নীল রঙ এর আগুন জ্বলে উঠলো। হঠাৎ কেঁপে উঠলো শীপটা। আগুনটা ধরে গেছে শীপের পেছন দিকটায়! আণবিক বিস্ফোরণ ঘটতে চলেছে!
ডক্টর চিৎকার করে কি যেনো বোঝানোর চেষ্টা করছেন। “সেফটি কি চাপুন” আবছাভাবে কথাটা ভেসে এলো।
আমি ভুলে গেছিলাম। ততোক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। এনার্জি ব্যাংক ব্লাস্ট করেছে। সামনের দিকে ধাবিত হতে শুরু করেছে আগুন। তারপর আর কিছু মনে নাই। শুধু তখন বাবা, মা আর প্রিয়তমা শামানার কথা চোখে ভাসছিলো।
আজ দশম দিন রাত। স্যালাইন খোলা হয়েছে। হাঁটতে পারছি। আমার পাশে সর্বক্ষণ শামানা ছিলো। সেই ধ্বংসযজ্ঞে কিভাবে বেঁচে ফিরেছি সে শুধু আমরা ক’জন জানি।
-আস্তে।
-হ্যাঁ। কোন সমস্যা হচ্ছে না আমার। চলো বারান্দায়। শামানাকে বললাম আমি।
বারান্দায় এসে শামানা বললো,
-এই কি ব্যাপার?! তুমি খালি গায়ে বারান্দায় এসেছো আমার তো মাথায়ই নেই।
-আমার তো গরম লাগছে।
-কি?!
-হ্যাঁ। আরে…
আমি হঠাৎ আঁতকে উঠলাম! আমার শরীরের বাইরে নীলচে আগুন জ্বলতে শুরু করেছে। আমি… আমি শূন্য ভাসতে শুরু করেছি।
শামানা চিৎকার করে উঠলো।
-কিচ্ছু হবে না। শামানার পেছনে ডক্টর তানভীর এসে দাঁড়িয়েছেন। “ওর শরীরে আণবিক শক্তি অ্যাবসরব ক্ষমতা এসে গেছে।”
তারও পাঁচদিন পর। পনেরোতম দিনে আমি যখন এলাম ডিজিএফআই এর অবজারভেটরির ডি টাওয়ারের তৃতীয় তলায়, আমাকে দেখে সবাই হকচকিয়ে গেলো। আমার সারা শরীরে নীলচে আগুন জ্বলছে।
-স্বাগতম ইজমার। চেনা যায় আমাদের ল্যাবটিকে? যখন আপনি এসেছিলেন? ডক্টর তানভীরের সদাহাস্য প্রশ্ন।
-অবশ্যই কেনো নয়?
-আগামী সপ্তাহে অতিমানব রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। আপনি হবেন দ্বিতীয় সেশনে আমাদের প্রথম রেজিস্ট্রারড অতিমানব।
-তাই?
-জ্বি হ্যাঁ জনাব অণুমানব।
সেদিন থেকে আমার নাম হলো অনুমানব।