দ্বিতীয় স্বত্তা

দ্বিতীয় স্বত্তা

ডি টাওয়ার। বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে সুরক্ষিত সামরিক ভবনের একটি। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহার করা হলেও একাধারে মেটাহিউম্যান অ্যান্ড কমান্ডো অ্যালায়েন্সড প্রজেক্ট(ম্যাকাপ) ও এলিট ফোর্স এজেন্টস অব ডি এর সদর দপ্তরও এখানে।

যখন ভোর হয়, রোদের কিরণে ভবনের ছাদের মেটাল প্লেটেড ডাইসটা জ্বলজ্বল করে ওঠে। সেই আলোর দিকে তাকিয়ে প্রফেসর তানভীর মাথায় চিন্তার ঝড় বইয়ে চলেছেন। বুয়েটের স্বনামধন্য একজন প্রফেসর যার তত্ত্বাবধানে একদল নিরলস পরিশ্রমী তরুণ তৈরি করেছে বাংলাদেশের প্রথম অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ “রূপবান”।

এখনো মনে আছে দুষ্টুমি করে ছাত্রদের কেউ একজন ‘রূপবান নাচে কোমর দুলাইয়া’ গানটা ওর চিপ মেমোরিতে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। সেই রূপবানকে বন্ধুপ্রতিম গ্রহ ক্লিটোয়ার সালাফুক ফনখারকে উপহার দেয়ার ৩৪ সপ্তাহ পার হয়ে গেছে কিন্তু রূপবান ওখানে গিয়ে কোনো রিপোর্ট করেনি।

ধুপ করে একটা আওয়াজ হলো ছাদের সেই মেটাল প্লেটেড ডাইসের উপর। উপরে একজন মেশিনারিজ মেইন্টেইনার রাখা হয় যদি বড় বড় মেশিনগুলোতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।

হা হা করে ছুটে এলো সে। অ্যাডমিন রুমে ঢুকেই লাফাতে শুরু করলো।
“অ্যাই চুপ!”
-শার শার। চি চি করে মেকানিক বললো অ্যাডমিনকে, “শার ওখানে একটা জানোয়ারের মতন বিশাল হাত পাওয়ালা ডাইশের উপর পড়শে।”

সিসিটিভি রেকর্ডে দেখে অ্যাডমিন পর্যন্ত লাফ দিয়ে উঠলো। প্রফেসর তানভীরকে ফোন করলো সে।
-হ্যা বলো।
-স্যার, ইট’স রূপবান। বিল্ডিং এর ছাদে।

ল্যাবে আলতো করে শুইয়ে দেয়া হলো সাত ফুটের বিশাল শরীরটাকে। মায়াভরা চোখে সবাই তাকিয়ে আছে। এই সেই রূপবান না? একি বিধ্বস্ত চেহারা? ডান চোখের নিচে কালির মতন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোটর থেকে ঠিকরে বেরিয়ে গেছে চোখ। যদি রোবট হতো তাহলে এক কথা। মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে বানানো যে।

বুকের কষ্ট চেপে রেখে প্রফেসর তানভীর ইন্টার্ণদের ঘোষণা দিলেন,
‘এবার রিপেয়ার শুরু করুন’

শশব্যস্ত হয়ে সবাই ছোটাছুটি শুরু করলো। হলোগ্রাফিক ফিল্টার অন করে বিশাল বায়োলজিক্যাল প্রিন্টার অন করা হলো। চোখের উপর বিভিন্ন ধরণের ফিল্টারিং করা হলো। প্রিন্টার নিজ থেকেই টিস্যু প্রলেপণ দিতে শুরু করলো।

আরেক দল চিপ মেমোরি ডিভিশন দেখতে শুরু করলো। মাদারবোর্ড অনেকাংশ ক্ষয়ে গেছে। এমন কষ্ট লাগলো যে এজেন্ট সাদিয়া ডুকরে কেঁদে উঠলো। বাকিরা স্বান্তনা দিলো।

সেদিন বিকেল পেরিয়ে যখন সন্ধ্যা নামলো ঠিক তখনই রূপবান মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। জিওসি তানভীর এসেছেন ডি টাওয়ারে। রূপবানকে রিওপেন করবেন।
-জ্বি স্যার, শুরু করেন।
বাটন টিপে দিয়ে দু সেকেন্ড স্থবির হয়ে থাকলেন জিওসি। সবাই স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।

চোখ পিটপিট করে তাকালো রূপবান। সামনেই যন্ত্রমানব। সবাইকে অবাক করে দিয়ে যন্ত্রমানবকে লাথি মারলো রূপবান।
‘হোয়াট দ্য!’

হাতের মধ্য দিয়ে হঠাৎ গুলি বৃষ্টি শুরু করলো রূপবান। দেয়াল গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে পড়লো। বিশাল ফাকা জায়গা দিয়ে লাফ দিলো রূপবান।
যাবার আগে সবার দিকে চোখ ঘুরিয়ে বললো,
“ইউ অল উইল ডাই টু পে টু হাই”….

হঠাৎ করেই বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ম্যাকাপের টেকনিক্যাল টিম। ডক্টর তানভীর চোখ লাল করে আছেন। হাতে চশমা খুলে রেখেছেন। এজেন্ট সাদিয়া আর আসিফ বিমর্ষ মুখে কাচের সারফেস দিয়ে যতটুকু চোখ যায় তাকিয়ে আছে সেদিকে।

যন্ত্রমানব হাতে লম্বা একটা ডিভাইস নিয়ে ঘরে ঢুকলো। পেছন পেছন অনুমানব আর কপিরানার ঢুকলো।
-ডক্টর। কপিরানার আবার আলাদা হতে চায়।
-হুম। কিন্তু কেনো?
-কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।
-কাজ কি অন্য মেয়েরা করছে না?
-যেহেতু দুজন পুরুষকে বায়োলজিক্যালি এক করা হয়েছে সেহেতু কিভাবে দুজন পুরুষ এক হয়ে মেয়ে হলো সে প্রশ্নে সবাই বিব্রত হচ্ছে। এবং কপিরানার ও কাজ করতে গিয়ে বিব্রতবোধ করছে।

এরপর আর কথা বলা যায় না। ল্যাবে কপিরানারের বিয়োজন শেষে দুটো আলাদা স্বত্তা আবার বেরিয়ে আসলো। মানে কপিমাস্টার আর রানার।
-রানার। ভারি গলা নিয়ে অণুমানব রানারের দিকে তাকিয়ে বললেন ছোট একটা অপারেশনে যাবো আমরা। যন্ত্রমানব, আমি, তুমি, রানার আর আসিফ-সাদিয়া।
-ওকে স্যার।

বেতবুনিয়া সম্প্রচার কেন্দ্র। সবে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ডুবো ডুবো সূর্য জানান দিচ্ছে নিকষ কালো আধার গিলে খাবে হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই।

এমন সময়ই রূপবান টেরেস্ট্রিয়াল টাওয়ারের পাশেই ধুপ করে এসে পড়লো। সারা বিশ্ববাসী জানে না যে কি হতে যাচ্ছে ভয়ংকর ভাবে।

বেতবুনিয়া ভূ উপগ্রহ সম্প্রচার কেন্দ্র। সকাল আটটা। মেইন স্যাটেলাইট টাওয়ারের সামনে ধুপ করে পড়লো কিছু একটা বিশালাকারের। এরপর আরো কয়েকটা পড়লো। ব্যাপার না বুঝেই সিকিউরিটি থেকে দৌড়ে আসলো কয়েকজন গার্ড।

যান্ত্রিক আওয়াজ তুলে খুলে গেলো টাওয়ারের সামনে পড়া জিনিসগুলো।
-রোবোটিক প্রোটোটাইপ স্যার।
-স্ট্যান্ড ডাউন। ডোন্ট শ্যূট। এটা টেরোরিস্ট এটাক হতেও পারে।

ব্যাঙের মতন লাফিয়ে ধাতব প্রানীগুলো সার্ভার রুমেই ঢুকলো। এবার গার্ডরা ভয় পেয়ে গেলো। সিকিউরিটি থেকে কল আসলো।
-স্টার্ট নিউট্রিলাইজ দেম।
টিম লিডার এক পাশে অবস্থান করলো। এবার ফিউজ গান বের করে শ্যূট করা শুরু করলো। কিন্তু আশ্চর্যরকম ভাবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে রোবোটিক জন্তুগুলো কাজ করে গেলো দিব্যি। তারা পিসিগুলার ইউএসবি পোর্টে অাঙ্গুল ঢ়ুকিয়ে কমান্ড দেয়া শুরু করলো।

লেডিজ অ্যান্ড জেন্টেলম্যান। আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে কিছুদিন আগে ভিনগ্রহের কিছু প্রানী পৃথিবীতে এসে আপনাদেরই কাছে নিগৃহীত হয়েছিলো। হ্যা, আমরাই তারা। আমাদেরকে আপনারা এমন করেছিলেন বলেই আমরা আমাদের কিছু বট আপনাদের কাছে পাঠিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলা। সাথে আপনাদের রূপবানকে পাঠালাম।

নিউজটা গোটা দেশে টিভির মাধমে ছড়িয়ে পড়লো।
-কি করবো এখন? যন্ত্রমানবের দিকে তাকিয়ে অণুমানব বললো।
-ঠেকানো ছাড়া আসলে গতি নাই। রূপবানকেও ফিরিয়ে আনা দরকার।

নন ল্যান্ডিং একটা এয়ারক্রাফট ম্যাকাপ টিমকে নিয়ে পৌঁছে গেলো বেতবুনিয়াতে। বট গুলাকে ট্রেসিং করতে হবে তাই ট্রেসার লাগিয়ে দেয়া হলো সেন্ট্রাল কম্পিউটার গুলোকে।
পিট পিট করে মেইনফ্রেইমে গোটা বাংলাদেশে ১৫ টা বট পাওয়া গেলো যেগুলো পাওয়া গেছে।
-বাংলাদেশ ব্যাংকে! সংসদ ভবনে! অর্থ মন্ত্রনালয়!
-অদ্ভুত তো! এরা তো দেখছি সবখানেই বসে আছে।

বুউম করে শব্দ হলো একটা। আওয়াজটা মেইন স্যাটেলাইট অ্যান্টেনার এরিয়া থেকে। গিয়ে দেখা গেলো অ্যান্টেনা থেকে নীল সাদা রশ্মি নির্গত হওয়া শুরু করেছে।
-এলিয়েন ইনভেশন।

ডি টাওয়ারের ল্যান্ডপ্যাডে দুটো সি এইচ ভেনম বসে আছে। দুনিয়ার সবচেয়ে লাইটওয়েট আকাশযান বলা হয়। যদিও ডিফেন্স অ্যাটাকের জন্য জঘন্যতম মেশিনরুম এই মডেল গুলি। মিনিটে ৩৬.৮ কিলো লেজার ছুড়তে পারে এই ভেহিকাল গুলো। আন্দাজ করুন একটা মানুষকে ফায়ার করা হলে সে অল্প সময়ে ফ্রাই নয়, ভ্যানিশই হয়ে যাবে।

এ দুটোতে চড়ে অনুমানব ইজমার আর যন্ত্রমানব সহ রেড ব্যাটেলিয়ন টিম যাচ্ছে অ্যাসল্ট অপারেশনে: মিশন স্টারব্লাস্ট।

ভেনম দুটির আলাদা পরিচয় হচ্ছে এরা টাইম ট্রাভেলারও। ককপিটে বসে পাইলট অনুমানবের দিকে তাকালো। তারপর পেছনে তাকিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
-রেডি গাইজ?
-লেটস গো। যন্ত্রমানব ধীরস্থিরভাবে বললো।

মুহুর্তেই একটা ঝটকা দিয়ে কপ্টার দুটো গায়েব হয়ে গেলো। দুদিকে রওনা দিয়েছে দুটো। উদ্দেশ্য অ্যালিয়েন রোবট গুলোকে ট্রাংকুলাইজ করার। প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ঢোকা হলো। ধরে ধরে ডিফিউজ করে বেতবুনিয়ার দিকে রওনা দিলো।

বিপদটা ঘটলো এখানেই। নামার সাথে সাথে চারদিক থেকে অদৃশ্য আক্রমণ শুরু হলো। যদিও কপ্টারগুলোতে ডিফেন্স ওয়াল আছে তাই লাফ দিয়ে ভেতরে ফিরে এলো রানার।
-আরে বাপরে। ওরা তো দেখি এখানেই ক্যাম্প করেছে।
-শালার রূপবান। গিফট হয়ে গেলি আসলি অ্যালিয়েন গিফট নিয়ে। কপিমাস্টার গজ গজ করে উঠলো।
-বয়েজ, ইনিভিজিলেন্স গগলস পরে নাও।

আসিফ, সাদিয়া স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে ছিলো এতোক্ষণ। চিল্লিয়ে লাফ দিয়ে উঠলো দুজনই।
-রূপবান! ইজমার ভাই রূপবান!
সবাই তাকালো সেদিকেই। বিশাল এক লঞ্চার হাতে দাঁড়িয়েছে সে। তাক করে আছে ভেনমের দিকেই। বিশাল ওই মুখ থেকে যেটা বের হবে তা আচ করতে পেরে যন্ত্রমানব সিধা হয়ে গেলেন।
-ইজমার, ৪৫ ডিপিপি লেজার। আমাদের ডিফেন্স এক সেকেন্ডও থাকবেনা। ডু সামথিং।
-রানার, আমি অ্যাটমিক সার্কেল বানাচ্ছি। তুমি কপিকে নিয়ে রূপবানকে নিউট্রিলাইজ করো।

সেকেন্ডেরও দশ ভাগের এক ভাগ সময়ে রানার কপিকমাস্টারকে নিয়ে রূপবানের কাছে পৌছে গেলো। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেলো রূপবান লেজার ছুড়েই দিয়েছে। এ অবস্থায় রানার তার চারপাশে চক্রাকারে ঘোরা শুরু করলো। সাথে কপিও ট্রাংকুলাইজার ছুড়লো নিজের কয়টা কপি করে। ব্যস নিঊট্রিলাইজড হয়ে গেলো রূপবান। নতুন মেমোরি চিপও বসিয়ে দিলো রূপবানের ঘাড়ের পেছনে।

বিশ সেকেন্ড পর পিট পিট করে তাকালো রূপবান।
-আররে আমি এইহানে ক্যান? আম্রে কেডা মারছে?
মুখ টিপে হাসছে রানার আর কপি। রূপবান ইজ ব্যাক অন ট্র‍্যাক।
হাত দিয়ে অ্যালিয়েন গুলোর দিকে ইশারা করলো রানার।

দাত বের করে রূপবান বললো, “আই অ্যাম অ্যাবচলুট ফাইন। অ্যালিয়েন্স! রূপবান মারে হাত ঢুলাইয়া” বলে রওনা দিলো সেদিকে..

গল্পের বিষয়:
সাইন্স-ফিকশন
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত