শ্যাডোক্রাফট

শ্যাডোক্রাফট

দরজাটা এক ধাক্কায় খুলে রুমে ঢুকলাম। ভিজে গেছি পুরোপুরি।বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ঝড়ো বাতাস। এই অবস্থায় বাইরে থাকা বিপদজনক। আমি একা থাকি দুই রুমের একটা বাসায়। চাকরবাকর নেই।দরকার ও হয়না। আমার পুরো বাসাটা অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি দিয়ে ঘেরা। ডিজিটাল বাসা বুঝি একেই বলে। আমার দৈনন্দিন জীবনের সকল কর্মকাণ্ড প্রযুক্তি নির্ভর। এইতো বাইরে একটা কাজ সেরে নিজের এক্সপান্ডেবল টু হুইলার মোটরবাইক নিয়ে গন্তব্যে ফিরেছি। এই মোটরবাইক সাধারণ মোটরযান নয়। এতে ফুয়েল হিসেবে ব্যবহার করা যায় সাধারণ খাবার জল। শুধু ডাঙায় নয়, জলে এবং আকাশ উভয় জায়গায় সমানতালে ছুটতে পারে আমার ব্ল্যাক ড্রাগন-৫০ বাইকটি।সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই বাইক কে ভাঁজ করে আকারে ছোট বানিয়ে ফেলা যায়। তখন একদম হাতের মুঠোয় রাখা যায় ওটাকে। ভাঁজ করা অবস্থায় বাইকের ওজন ও কমে যায়। ফলে পকেটে করে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। রুমে ঢোকার আগে বাইক কে ছোট করে টেবিলের ওপর রেখে দিলাম।এখন ওটাকে একটা খেলনা শো পিসের মত দেখাচ্ছে।

তারপর ভয়েস কমান্ড দিয়ে ফায়ারপ্লেসের আগুন টা জ্বালিয়ে দিলাম। সাথে সাথেই দপদপ করে জ্বলে উঠলো আগুন। প্রকৃত আগুন নয়। ঘর গরম করার জন্য এক ধরনের হিট ওয়েভ ছড়ায় ওটা থেকে। আর ডেকোরেশন এর জন্য মনে হয় সত্যিকারের আগুন জ্বলছে।

ভেজা কাপড় পালটে ফায়ারপ্লেসের কৃত্রিম আগুনের পাশে চেয়ার পেতে বসলাম। সামনে রাখা স্টাডি টেবিলটা কাছে টেনে নিলাম। ওতে আমার দৈনন্দিন সকল কাজ লিপিবদ্ধ করার জন্য একটা ডায়েরী রাখা হয়েছে। প্রতিদিনের ঘটনাগুলো ওটাতে লিখে ফেলি আমি। ইচ্ছা করলে ডিজিটাল ভয়েস কমান্ডিং ডায়েরী তে মুখে বলেই রেকর্ডিং এর মাধ্যমে সব লিপিবদ্ধ করে ফেলা যায়। কিন্তু ওতে মনে শান্তি পাইনা। কাগজের ডায়েরী তে ফাউন্টেনপেন দিয়ে লেখার সময় যে খসখস শব্দ হয় তা আমার খুব ভালো লাগে। আজ ঘরে ফেরামাত্র ডায়েরী নিয়ে বসার একটা বিশেষ কারন আছে। কাজ করতে করতে পশ্চিমের আকাশে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখতে পেয়েছি আমি। কি দেখেছি সেটা বলার আগে আমার পরিচয়টা দিয়ে নিচ্ছি।

আমি রিক মরগ্যান। সবাই আমাকে পাগল বিজ্ঞানী রিক বলে ডাকে। আমার সহকর্মী এবং এই শহর অথবা এই HTRAE গ্রহের বাসিন্দা রা সবাই আমার এই নাম জানে। তাদের ধারনা আমি অপ্রকৃতিস্থ। তবুও গ্রহের নামকরা রোবোটিসিস্ট কোম্পানি “ফিউশন ” এর প্রধান রোবোটিসিস্ট হিসেবে আমাকে কাজ দেয়া হয়েছে। কারন আমি যেকোন ধরনের রোবট বানাতে পারি। শুধু একটু সময় আর শ্রম দিলেই আমার উর্বর মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে আসে নানারকম রোবট বানানোর পরিকল্পনা। আর সেটা শুধু পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনা। বাস্তবায়ন ও হয় খুব দ্রুত। আমার খ্যাতি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই নিন্দুকরা আমায় পাগল বলে। আমি ব্যপারটা আমলে নেইনি কোনদিন। এমনিতেই আত্মভোলা মানুষ আমি। কারো কথা কানে নিইনা। নিজের মতো চলি। আমাদের গ্রহের লোকসংখ্যা SRAM বা NRUTAS গ্রহের তুলনায় নেহায়েত কম। এই অল্পসংখ্যক লোকের মধ্যেও হিংসা জিনিসটা সশরীরে বিদ্যমান। ভাবতেই খারাপ লাগে।

যাই হোক আজ যা দেখেছি সেটা বলে ফেলি। রোজকার অভ্যেস মত আমার ট্রিপল টেলিফটো লেন্সে তৈরি টেলিস্কোপে করে SRAM আর NRUTAS গ্রহে চলমান সহিংসতা সরাসরি দেখছিলাম। সিসিডিতে কফি খাওয়ার সময় আমি রোজ এই কাজটা করি। আমার টেলিস্কোপ টাও বাইকের মতই পোর্টেবল। পকেটে করে নিয়ে চলাফেরা করা যায়। কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে আমি লেন্সে চোখ রাখলাম। টেলিভিশনে খবর দেখার চেয়ে সরাসরি দেখা অনেক আনন্দদায়ক। যদিও যুদ্ধ আমার ভালো লাগেনা। তবুও দুই প্রতিবেশী গ্রহের বেকুবদের মধ্যকার অনর্থক মারামারি দেখতে ভালোই লাগে। বেশ কিছুক্ষন ওদের হানাহানি দেখে লেন্সটা গুটিয়ে নিতে যাবো তখন হঠাৎ আমার দৃষ্টি চলে গেলো SRAM গ্রহের ডানদিকে। একটা বিরাট গোলাকার বস্তু ভাসছে ওখানে। প্রায় নীল রঙের বস্তুটাতে সবুজ আর আকাশী রঙের বাহার আছে।প্রবলবেগে ঘুরছে বস্তুটা। ওটা কি নতুন কোন গ্রহ? নাকি অন্যকিছু? কোন প্রানী নয়তো? আমার জানামতে সৌরজগতে মোট তিনটে গ্রহ রয়েছে যেটাতে প্রানী বসবাস করে। আমাদের গ্রহ HTRAE,SRAM এবং NRUTAS। “এওল্কিমি” ছায়াপথে আরো হাজার হাজার গ্রহ থাকলেও সেগুলোতে প্রানের অস্তিত্ব নেই। তবুও মাঝেমধ্যে অদ্ভুত আকৃতির সব প্রানীর আবির্ভাব ঘটে অজানা কোন মাধ্যম থেকে। দেখা যায় পুরো গ্রহটাই আসলে বিশাল কোন প্রানী!তারা নীলতিমির মত নিরীহ নয়, হিংস্র!আশেপাশে থাকা গ্রহগুলোকে ব্ল্যাকহোলের মত গ্রাস করে একসময় নিজেই ধ্বংস হয়ে যায়। যেন কোন পেটুক লোক বেশী খেতে খেতে পেট ফেটে মরে যাচ্ছে।

এটা অমন গ্রাহিক প্রাণী হতে পারে। আকার দেখে মনে হচ্ছে প্রথম হামলাটা SRAM গ্রহের ওপর করবে ও। তারপর ধীরেধীরে NRUTAS কে খতম করে আমাদের গ্রহের দিকে আসবে। আমি আর কাউকে ব্যপারটা বললাম না। কারন আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবেনা। পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দেবে। তাই নিজের তৈরি প্ল্যানেট মনিটরিং রোবটগুলো কে সঙ্কেত পাঠালাম ওরা যেন ঐ বস্তু বা প্রানীটা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসতে পারে। আশেপাশের গ্রহগুলোতে যুদ্ধ না চললে আমি নিজেই আমার স্পেসক্রাফটে করে যেতাম ঐ গ্রহে। কিন্তু এখন গেলে দুই গ্রহের প্রধান এর ক্ষোভানলে পড়তে হবে আমাকে। তাছাড়া আমার মনিটরিং রোবটগুলো এত বেশী দ্রুত উড়তে পারে যে আলোর গতি তাদের গতির কাছে কিছুই নয়। তারা ওড়ার সময় অতিরিক্ত গতির কারনে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়। ফলে কোন গ্রহের রাডার তাদের ধরতে পারবেনা।ঘরে বসে একদম গোপনে ঐ বস্তুটা সম্পর্কে জানতে পারবো আমি। স্পেসক্রাফট দিয়ে যা সম্ভব না। অন্তত এই পরিস্থিতিতে না।

সারাদিন ফিউশনের মেইন ল্যাবে কাজ সেরে আমি যখন ঘরে ফিরবো তখন মনিটরিং রোবটগুলো এসে একটা অদ্ভুত খবর জানালো আমায়। ওরা নাকি SRAM গ্রহের চারপাশ তন্নতন্ন করে খুঁজে ও নতুন কিছুই দেখতে পায়নি। আমার হিসাবে কি কোন ভুল হলো? আমি তো স্পষ্ট দেখেছি নীলাভ গোলাকার বস্তুটিকে। ওদের প্রোগ্রামিংয়ে নিশ্চই কোন বাগ ঢুকেছে। নইলে যন্ত্রমানবের তো কোন ভুল হবার কথা নয়। আমাকে এখুনি ছাদে গিয়ে দেখতে হবে ব্যপার টা। ছাদে পৌছে টেলিস্কোপ আবার তাক করলাম SRAM গ্রহের দিকে।

কিন্তু তাকিয়ে যা দেখলাম তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। দেখি SRAM গ্রহটাই বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। তারবদলে ওখানে শোভা পাচ্ছে নীলাভ গোলাকার বস্তুটি। ওটার আয়তন বেড়ে গিয়েছে দ্বিগুন। তারমানে SRAM কে এরই মধ্যে পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলেছে বস্তুটা।কিন্তু এত দ্রুত কিভাবে সম্ভব? কোন সংবাদ মাধ্যমে তো এই ভয়াবহ আকস্মিক আক্রমণের কথা বলা হচ্ছেনা। শুধু দুই গ্রহের যুদ্ধের খবরগুলো সম্প্রচার করা হচ্ছে। তারমানে ঐ নীলাভ বস্তুটা আমাদের গ্রহের স্যাটেলাইটে কোন প্রভাব ফেলেছে। হয়তো সাংবাদিক রোবটগুলোকেও হ্যাক করেছে অশুভ বস্তুটা।নইলে এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রানীসুদ্ধ এতবড় একটা গ্রহ লোপাট হয়ে যাবার ঘটনা চাপা থাকে কিভাবে?

মনিটরিং রোবটগুলোকে টেলিস্কোপে চোখ রাখতে বললাম।জিজ্ঞেস করলাম ওরা কি দেখছে। ওরা উত্তরে যা বললো তাতে বোঝা গেলো যে ওদের নিয়ন্ত্রণ এখন আমার হাতে নয় অন্য কারো হাতে। কারন ওরা বলছে SRAM আর NRUTAS গ্রহ ছাড়া ওরা আর কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা। আমি রাগান্বিত স্বরে বললাম” SRAM তো হাওয়া হয়ে গেছে, দেখতে পাচ্ছোনা টিনের বাক্সের দল?” ওরা জবাবে আগের কথাটাই পুনরাবৃত্তি করলো।

আমি বুঝলাম HTRAE গ্রহের কপালে খারাবি আছে। একটা অতিকায় ভয়াল প্রাণী এগিয়ে আসছে আমাদের ছোট্ট গ্রহটার দিকে। যার অস্তিত্ব আমি ছাড়া কেউ টের পাচ্ছেনা। আর পুরো গ্রহবাসী জানে যে আমি পাগল। তাই আমি যদি গ্রহের প্রধান কে যা দেখেছি তা জানাই সে ব্যাপারটা মিথ্যা মনে করে পাত্তাই দেবেনা। তাছাড়া যা প্রযুক্তিতে ধরা পড়েনি তা তুচ্ছ মানুষের মস্তিস্কে ধরা পড়ে কিভাবে সেটা ভেবে হাসাহাসি করবে।

ফিউশনের ল্যাব থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে দেখি আকাশের অবস্থা ভালো নয়। মোটরবাইকে উঠতেই বৃষ্টি নেমে পড়লো ঝমঝম করে।মিটার হাইপারস্পিডে সেট করে মোটরবাইকে করে উড়ে এলাম নিজের ঘরে। তবুও ভিজে গেছি। ডায়েরী তে সব ঘটনা গুছিয়ে লিখে ফেললাম এই ফাঁকে। একটা বিভীষিকার অপেক্ষা করছি। এই গ্রহে আমি একা অসহায় অবস্থায় ভাবছি গ্রহ বিলীন হয়ে যাবার কথা। আর কেউ তো জানেনা। সবাই যার যার মতো ব্যস্ত। ওরা কল্পনাও করতে পারবেনা যে কতবড় সংকট অপেক্ষা করছে ওদের জন্য।একটা গ্রহাকৃতির প্রানী ওদের ভক্ষণ করার জন্য ছুটে আসছে!

ঘড়িতে দেখলাম কাটায় কাটায় রাত ১২ টা বাজে।আবার টেলিস্কোপ নিয়ে নীলাভ আগ্রাসী প্রানীটার অগ্রগতি দেখতে হবে। হাতে সময় খুব কম। স্বাভাবিক সময় গুলোতে বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা এত প্রবল হয়না। কিন্তু আপনি যখন জানতে পারবেন আর মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে আপনি মরতে যাচ্ছেন,তখন বাঁচার আকুতি শেলের মত বিঁধতে থাকে বুকে।মনে হয় আর কিছু মূহুর্ত কেন পেলাম না।আরো বাঁচতে চাই। এই গ্রহে আমি একা এই কষ্ট বুকে নিয়ে হারিয়ে যাবো প্রানীটার মুখগহ্বরে। যেন বিশাল একটা পাথরের চাই আমার বুকের ওপর এনে ফেলেছে কেউ।দম নিতে কষ্ট হচ্ছে।খুব ভালো হয় যদি ঐ শয়তান টা আক্রমণ করার আগেই আমি হার্ট এটাকে মারা যাই।কিন্তু সেটাও সম্ভব না। আমি অসহায়। চরম অসহায়। কারো সাথে কষ্টটা ভাগাভাগি করে নিতেও পারছিনা।এতটা নিঃসঙ্গ আমি।এখন মনে হচ্ছে আমার যদি দু একজন বন্ধু থাকতো তাহলে হয়তো তাদের সাথে শেষবারের মত আড্ডায় বসতাম। পেগের পর পেগ হুইস্কি গিলতাম। মাতাল অবস্থাতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ হয়ে যেতো।

আমার মত হতভাগার সেই ভাগ্য হয় কি করে? জানালার কাছে এসে দাঁড়িয়েছি।কাঁপা কাঁপা হাতে টেলিস্কোপ টার স্লাইডিং লেন্স চোখ বরাবর তুলে ধরলাম। দেখতে ইচ্ছে করছেনা। চোখের জলে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। জীবনে এই প্রথম কাঁদছি আমি!কিন্তু এখন কেঁদে কি হবে?তাই চোখ রগড়ে মুছে নিলাম। তারপর ইচ্ছার বিরুদ্ধে লেন্সে চোখ রাখলাম। জুম কমিয়ে বাড়িয়ে SRAM গ্রহের দিকে তাক করতেই দেখলাম জায়গাটা খালি। শুধু এওল্কিমি ছায়াপথ দেখা যাচ্ছে। প্রানীটা তাহলে গেলো কোথায়?লেন্স ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলাম চারপাশ। অনেক চেষ্টায় পাওয়া গেলো ওটাকে। ঐ হিংস্র জন্তুটা NRUTAS গ্রহ কে প্রায় সম্পূর্নটাই গ্রাস করে ফেলেছে। এখন আমাদের গ্রহের পালা সেটা বলাই বাহুল্য। চোখের পলক পড়তে না পড়তেই NRUTAS গ্রহটা ঐ প্রাণীটার মুখের মত কালো খোলা গহ্বরের মধ্যে হারিয়ে গেলো।আর কিছু সময় পর আমাদের গ্রহের ও একই দশা হবে। কেউ জানবেনা। শুধু কালের সাক্ষী হয়ে চিরতরে হারিয়ে যাবো আমি।ঐতো প্রানীটা আক্রমণ করেছে। থরথর করে কেঁপে উঠছে সমস্ত গ্রহ। আর নিস্তার নেই। তুমুল কোলাহল আর আর্তনাদের মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে HTRAE গ্রহ! বড় নিষ্ঠুর এই নিয়তি!

“প্রফেসর রিক ?আপনি কি আমার কথা শুনতে পারছেন?প্রফেসর? ” আমি বোধহয় নরম তুলতুলে একটা বিছানায় শুয়ে আছি। চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বুঝতে পারছি ঘরে উজ্জ্বল আলো জ্বলছে। কেউ আমার নাম ধরে ডাকছে আর মৃদু ধাক্কা দিচ্ছে। চোখ খুলতে ইচ্ছা করছেনা। তবুও কৌতুহলী মন চোখ খুলতে বাধ্য করলো। চোখ খুলে যারপরনাই অবাক হলাম। কোথায় আছি আমি?সম্ভবত আমার নিজের ঘরেই। কিন্তু ঘরটা কেমন ওলটপালট করে সাজানো। আমার সামনে ঝুকে পড়ে যে লোকটা ডাকছে ও আমার এসিস্ট্যন্ট জ্যাক। কিন্তু আমি তো একা থাকতাম তাহলে এসিস্ট্যান্ট জ্যাক এর আবির্ভাব হলো কোথা থেকে?ওর নামটা এতো স্পষ্ট করে বলতে পারছি কিভাবে? আমার গ্রহটা তো ধবংস হয়ে যাচ্ছিলো। তাহলে কি গ্রহটা কোন কারনে ধ্বংস হয়নি?নাকি পুরো ব্যপারটা একটা স্বপ্ন ছিলো?এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে জ্যাক।

ওকে জিজ্ঞেস করে যা জানলাম তাতে চোখ কপালে উঠে গেলো। ও যা বললো তা অনেকটা এরকম। আমি নাসায় কর্মরত বিজ্ঞানী রিক মরগ্যান। জ্যাক কে সঙ্গে নিয়ে একটা বিষয় নিয়ে গোপনে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছি। বিষয়টা আর কিছু নয় “প্যারালাল ওয়ার্ল্ড।”

যেকোন বিষয়ের” মিরর ইমেজ” বা “আয়নার প্রতিবিম্ব” কে বাস্তবে রুপ দান করলেই “প্যারালাল ওয়ার্ল্ড” এর সন্ধান পাওয়া সম্ভব। সেইজন্য আমি একটা যন্ত্র আবিষ্কার করি। নাম নেই “প্যারামিরর”!এই যন্ত্রের ভেতরে একটা বিশাল আয়না রয়েছে। যার সামনে কোন বস্তু রাখলে তার ভেতরের প্রতিফলিত বস্তুটিকে বাইরে আনা যায়। যেমন ধরা যাক প্যারামিররের সামনে একটা আপেল রাখা হলো। আপেলের প্রতিবিম্ব আয়নায় দেখা গেলেই আয়নার ভেতর থেকে আরেকটি আপেল বের করে নিয়ে আসা যাবে। যেই আপেলটি প্যারালাল ওয়ার্ল্ড এর। দুটো আপেলের মধ্যকার রঙ আর স্বাদ সম্পূর্ন বিপরীত হবে আয়না থেকে বের করার সাথে সাথেই।

জ্যাকের কথা অনুযায়ী আমি নাকি সাহস দেখাতে গিয়ে নিজেই প্যারামিররের আয়নার ভেতরে ঢুকে পড়েছিলাম। এই পরীক্ষার নাম দিয়েছিলাম “শ্যাডোক্রাফট”! তাই অন্য ডাইমেনশানে পৌছে গিয়েছিলাম। যে ডাইমেনশানে বাস্তব পৃথিবীর ছায়া পড়ে প্যারালাল ওয়ার্ল্ড এ।

যেখানে সুস্থ স্বাভাবিক আমি পাগল হয়ে গেছি, বন্ধুপাগল আমি নিঃসঙ্গ হয়েছি, মিস্কিওয়ে ছায়াপথ হয়ে গেছে “এওল্কিমি”, SATURN (শনি গ্রহ) হয়ে গেছে NRUTAS আর MARS(মঙ্গল গ্রহ) হয়ে গেছে SRAM! আমি নিজেকে প্যারালাল ওয়ার্ল্ডের যে গ্রহে কল্পনা করেছি সেটাও আর কিছু নয় EARTH এর আয়নার প্রতিবিম্ব HTRAE! আমি বোধহয় শ্যাডোক্রাফট এর অনেক গভীরে পৌছে গিয়েছিলাম তাই বাস্তবে ফিরে আসার আগে মনে হয়েছে নীলাভ গোলাকার কোন বস্তু আমাদের গ্রাস করতে আসছে। বুঝতেই পারছি নীল, সবুজ ও আকাশী ছোপযুক্ত ঐ গোলাকার বস্তুটি আসলে আর কিছুই নয় আমাদের বাসস্থান EARTH বা পৃথিবী।

আমি নাকি সর্বমোট নয় ঘন্টা ছিলাম প্যারালাল ওয়ার্ল্ডে! এই নয়ঘন্টায় কত কিছু ঘটে গেছে।নিজের আলাদা জগত তৈরি হয়েছে। জ্যাক ভেবেছিলো আমি আর প্যারালাল ওয়ার্ল্ড থেকে ফিরতেই পারবোনা। ঈশ্বরের কৃপায় সেটা পেরেছি।

পরদিন সকাল।নাসার হেডকোয়ার্টার থেকে একটা খবর শুনে চিন্তায় পরে যেতে হলো। পৃথিবীর আয়তন নাকি দিন দিন বাড়ছে! তাহলে কি শ্যাডোক্রাফট এর ঘটনা সত্যি হতে চলেছে?সবার অজান্তে পৃথিবী গ্রাস করে চলেছে তার চাইতে ছোট সব গ্রহগুলোকে?

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
সাইন্স-ফিকশন
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত