মেয়েঃ –হ্যালো মিঃ, কি মনে করেন নিজেকে?
ছেলেঃ –একজন মানুষ
—-হ্যা সেটাতো জানিই, কিন্তু এত পার্ট নেন কেন?
—-কই, কোন পার্ট নেই না তো।
—-একটা মেয়ে আপনার কাছে বেহায়া, নির্লজ্জের মত বারবার আসছে, আর আপনি দেখেও না দেখার ভান করছেন! আবার বলেন পার্ট নেন না!
—-কই দেখেনি তো! সম্ভবত চোখে সমস্যা হয়েছে, কিছুদিন হল কিছুই ভালোমত দেখছি না। ডাক্তার দেখাতে হবে……
—-দেখেন, আমি আপনার সাথে ফাইজলামো করছি না।
—-আপনি কি আমার বেয়াই হোন? আমি আপনার সাথে ফাইজলামো করব?
—-এত ভাব নেওয়া ভালো না, বুঝছেন?
—-বুঝলাম……
—-দেখুন, মাথা কিন্তু গরম হয়ে যাচ্ছে!
—-মাথা গরম হলে ঠান্ডা পানিতে চুবান, দরকার হলে বরফ লাগিয়ে নিন। এখানে আসছেন কেন? আমার কাছে ঠান্ডা পানিও নাই, আবার আমি বরফ বিক্রেতাও না……
ছেলেটা বিরক্তমুখে চলে গেল ক্লাসরুমের দিকে। মেয়েটি রাগে গজ গজ করতে ফিরে গেল বাসায়। কয়েকদিন হল, ক্লাস তো দূড়ে থাক কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছে না সে।
যার জন্য পাগল ছেলের অভাব নাই, হ্যা বলে দিলেই ৩-৪ টা ছেলে খুশিতে আত্নহারা হয়ে যাবে মূহুর্তেই! আর তাকেই কিনা পাত্তাই দিচ্ছে না সে।
এগুলো ভেবে ভেবে আরো বেশি ওর প্রতি দুর্বল হয়ে যায় সে। কিছুই ভালো লাগে না। মেজাজ সবসময়ই খিটখিটে হয়ে থাকে।
–
মেয়েটি হল আনিকা। অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী। দেখতে, শুনতে বেশ। পড়াশোনাইও ভালো। সবসময়ই প্রথম ৫ জনের ভিতর থাকে।
কিন্তু যেদিন থেকে সে রাজ নামক ছেলেটাকে ভালবাসতে শুরু করল, এবং তার সাথে মিল দেয়ার কোন ট্রিকই যখন কাজে লাগল না? তখন থেকেই সবকিছু উল্টো হতে লাগল।
সময় যেন উল্টোদিকে চলতে লাগল। যে ছাত্রী পরিক্ষাই সবসময়ই ১০০ তে ৯০+ মার্কস তুলত, সেই কিনা সর্বশেষ পরিক্ষাই ফেল। ভাবতে অবাক লাগে।
ছেলেটার নাম তামিম। সেও আনিকাদের ডিপার্টমেন্টের একজন ছাত্র। এবং সবসময়ই সেরা ছাত্র। একেবারে সাধারণ, কিছুটা বোকা ভোলা টাইপের।
আবেগ, অনুভূতি মন বলতে কিছু আছে কিনা? কে জানে??
–
মেয়ের অর্থাৎ আনিকার সবচেয়ে কাছের মানুষ হল তার বাবা । বাবা এবং একজন ভালো বন্ধুও বটে। মেয়ের সমস্যাটা তিনি অনেকদিন হল লক্ষ্য করে আসছিল।
আজ হঠাৎ ডেকে সমস্যার কথা শুনলেন। যেহেতু বাবার সাথে প্রায় সব বিষয়ই শেয়ার করে আনিকা, তাই এটাও গোপন করে নি। অকপটে সব বলে দিয়েছে।
আর ওর বাবাও কিছু বুদ্ধি পরামর্শ দিয়েছেন, এবং কথা দিয়েছেন তামিমের পরিবারের সাথে ওর বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবে।
অনেকক্ষন পরে আনিকার মনটা তাই ভালো। নতুন করে আবার সে পুরোনো হতে চেষ্টা চালিয়ে গেল।
–
বাবার প্লান মোতাবেক এখন আর সে তামিমের সাথে কথা বলে না, ওর দিকে তেমন তাকাই না, বেশি ভাবেও না।
ক্লাসে আগেরমত উপস্থিতি আর পড়াশোনা চালিয়ে যায়।
অনেকদিন হল, তামিম কলেজে আসে না। আগেরমত না হলেও, আনিকা সবকিছু একেবারে ছেড়ে দেয় নি।
সে এখনো ভাল ভবে লক্ষ্য রাখত তামিমের প্রতি। কলেজে আসার পরে কি করে? কোন মেয়ের সাথে কথা বলে কি না?
প্রতিদিন একবার না দেখলে যেন মন ভরত না। কিন্তু অনেকদিন হল, দেখা নেই। তাই আবার মন খারাপ।
কিছু ভাললাগে না, অজানা এক চিন্তা সবসময়ই মনের ভিতর থাকে।
–
দেখতে দেখতে ২য় বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষার সময় ঘনিয়ে আসল। ঠিক পরিক্ষার আগের দিন তামিমকে দেখতে পেল আনিকা।
যেমন ছিল তেমনই আছে সে।
বান্ধবির মাধ্যমে জানতে পারল, আজ নাকি তামিম তার এইস.এস.সির ছার্টিফিকেট তুলতে এসেছে, এবং অনার্সের ভর্তিটা ক্যানসেল করার জন্য এসেছে।
কিন্তু, কেন সেটা জানা নেই। ওর মত একটা ভালো ছেলে, ভালো ছাত্র হঠাৎ কেন এমন করল, সেটা কারোরই মাথাতে ধরল না।
স্যাররাও ভিষণ অবাক! তারা অনেক বুঝালেন, এবং বললেন, যে কোন প্রকার সমস্যাই হোক না কেন? তারা সমাধান করবে, তবুও সে যেন পড়াশোনা না বাদ দেই।
কিন্তু কোন কাজ হল না।
ফেরার পথে আনিকা পথ আগলে দাড়াল……
—-কি সমস্যা আপনার?
—-কই কোন সমস্যা না তো……
—-তাহলে এমন করছেন কেন?
—-আমার ইচ্ছা!
—-আপনার ইচ্ছাতেই সব হয় না, হবে না……
—-এটা আমার জীবন, আমার মর্জি……
—-খুব দামি ভাবেন নিজেকে তাইনা?
—-দামি জিনিস, এমনেই দামি……
-হঠাৎ আনিকা একটা চড় মারল তামিমের গালে। তামিম তবুও তার মুখের হাসি ভাবটা ধরে রাখল।
গালে হাত দিয়ে বল মুছকি হেসে বলল আসি………
–
পরিক্ষা শেষ হয়েছে, সেদিনের পরে আর তামিমোর দেখা মিলেনি। আনিকার পরিক্ষাটা আশানুরূপ হয়নি, তবুও খুব বেশি খারাপ হয়নি।
আনিকা পরিক্ষা দিতে চাইনি, তবে তার বাবা বলেছিল পরিক্ষা দিলে, শেষ হবার পরে তামিমের ব্যাপারে একটা সারপ্রাইজ আছে।
আর সে জন্যেই পরিক্ষা দেওয়া……
পরিক্ষা শেষ হতে অনেক আগ্রহ নিয়ে বাবার কাছে আসে। আনিকার বাবা বলে……
—-তামিমের সাথে আমার কথা হয়েছে, সত্যিই ছেলেটা অনেক ভাল। তোর জন্য একটা চিঠি……
চিঠিটা আনিকার হাতে দেন তিনি। তবে তার মন ভার ছিল, তার চোখের কোণে পানি ছিল, সে দ্রুত আনিকার সামনে থেকে চলে যায়।
আনিকা চিঠি খুলে পড়তে থাকে……
প্রিয় আনিকা,
ভালবাসা নিও। তুমি যখন এই চিঠিটা পড়ছ? তখন আমি অনেক দূরে! এত দূরে যে, চাইলেও আমি তোমার কাছে আসতে পারব না।
তুমি আমার সম্পর্কে তেমন কিছু না জেনেও আমাকে ভালবেসেছিলে, তাই আজকে আমার সম্পর্কে তোমাকে কিছু জানানোর ইচ্ছা হল।
আমি এক এতিম ছেলে। জন্মের পরে বাবা-মাকে পাইনি। এক এতিমখানায় বড় হয়েছি, আর সেখানে থেকেই পড়াশোনা করেছি।
জানো, আমার পড়াশোনার প্রতি খুব ঝোক ছিল, খুব ইচ্ছা ছিল অনেকদূড় পর্যন্ত পড়ার। সেই ইচ্ছাশক্তি আমার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছিল।
তুমি যখন প্রথমদিন আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে আসলে? তখনই আমি বুঝেছিলাম, তোমার মনে অন্য কিছু আছে।
প্রথমে আমারও খুব ইচ্ছা ছিল তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার, একসাথে অনেককিছু করার। কিন্তু আমার সময় ফুরিয়ে গিয়েছিল।
আমি খুব কঠিন রোগে ভূগছি। তাই তোমাকে অবহেলা করে, দূড়ে সরিয়ে দিতে চাইছিলাম।
কিন্তু তুমি মোটেও অবহেলা করার মত কেউ নও, এটা যেমন আমি জানি, তেমন তুমিও জানো, এবং সবাই জানে।
জানো? সেদিন শেষবার কলেজে গিয়েছিলাম, ভর্তি ক্যানসেল আর ছার্টিফিকেট তুলতে নয়! তোমাকে একনজর দেখার জন্য।
ওগুলো তো ছিল, তোমাকে দেখার ছলনা মাত্র। মূত্যুর আগে তোমার দেয়া চড়টাই আমার জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি।
আরে কাদছ কেন পাগলী? চিঠিটা ভিজে গেলে পড়বে কেমনে? একটা কথা দিবে?
বল, তোমাকে কথা দিলাম, তোমাকে কথা ভেবে কখনো কষ্ট পাব না, তোমার জন্য কাদব না, নিজের ক্ষতি হয় এমন কিছু করব না।
কথা দিলে কিন্তু! ভুল না কেমন?
তোমার বাবা অনেক ভালো মানুষ, তোমার কিছু হলে সে কষ্ট পাবে, তাকে খুশি রাখার জন্য হলেও, তোমার নতুন করে জীবনটা শুরু করা দরকার।
বেশি কিছু লিখতে পারছি না, হাত অবশ হয়ে আসছে, চোখে কম দেখছি।
কখনও ভেবোনা ভূলে গেছি, ওপাড়ে গিয়েও শুধু তোমাকেই ভালোবেসে যাবো।
দোয়া রইল, ভালো থেকো……
ইতি,
তোমার তামিম…..