হিমান্তের মৃত্যু

হিমান্তের মৃত্যু

বিষন্ন স্বরে অরিনবললো-আচ্ছা আদিব,তুমি আমায় ছেড়ে যাবে না তো ?
আদিব রেগে গিয়ে বললো-এগুলো কেমন কথা অরিন !আর কতবার বলবো আমৃত্যু আমি তোমার। আমাকে বিশ্বাসহয়না তাইনা ?
অরিন বললো-তোমাকে বিশ্বাস হয় । কিন্তু আমি যা চাই তা পাইনা ।
কথাটা বলে অরিন কেঁদেদিলো ।আদিব বেশ ঝামেলায় পড়েছে ।অরিন সকাল বিকাল তাকেশুধু ঐ একই কথা বলে,ছেড়ে যাবে না তো ?আদিবের খানিকটা রাগ হয়,অরিন তাকে বিশ্বাস করতেপারছেনা অথচ অরিনকে সেমনপ্রাণ,মগজ দিয়েই ভালবেসেছে ।
আদিব গলার স্বর খানিকটানীচু করে বললো-আচ্ছা অরিন,আমি কেনতোমাকে ছেড়ে যাবো বলো ? আমি তো তোমাকে ভালবাসি ।যাকে ভালবাসা যায়,তাকেছেড়ে যাওয়া যায় না অরিন ।
শুধু তুমি পাশে থেকো,আমিমরে যাওয়ার পর যেখানেইচ্ছা সেখানে যেও ।
অরিন এবার রেগে গিয়েবললো-ধুর কি বলো ।তোমাকে আমারআগে মরতে দিবোনা ।আমি তোমার আগে মরবো আরআমাদের ছেলেটাকে বলবো,তার বউ যেনো এই পেটুকটাকেকখনো না খাইয়ে রাখে ।হিহিহি ।
-আচ্ছা আমাদের ছেলের নামকি হবে অরিন ?
:তুমি বলো ?
-হিমান্ত হলে কেমন হয় ?
:এতো সুন্দর একটা নাম মাথায় নিয়ে ঘুরছো তুমি ?
-আমাদের ছেলেটাও সুন্দর হবে ।তোমার মতো ।
:আমি তো মেয়ে ।আমার মতো
হলে তো মেয়ে হতে হবে ।হিহিহি ।
-অরিন ! দেখো আমার ছেলেচাই ।মেয়ে চাই না ।আমিআমার ছেলেকে এই বঙ্গের শ্রেষ্ঠসন্তান বানাবো ।
:আচ্ছা বানিও ।
-আমি আর আমার ছেলে মিলেতোমাকে জ্বালিয়ে মারবো ।হাহাহা ।
:কিই ! ভাত বন্ধ করে দিবোতাহলে ।
-তাহলে রুম অগোছালো করবো ।গুছিয়েও পারবেনা ।
:দ্যাখো আবিদ,হিমান্তকে আমিআমার মতো করে গড়বো ।তোমার মতো এতো ফাজিলবানাবো না ।
-হাহাহা ।বললেই হলো ।ওকে আমি গড়বো ।আমি ওকে তুখোর কলমবাজ,তীক্ষ্ম বাগ্মী আর বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ বানাবো ।মানুষ নাম শুনেই বুঝবে,এটা তোমার আর আমারছেলে হু ।
:তুমি একটা পাগল ।কেউকারো ছেলেকে এভাবে গড়তেচায় আমি আজ পর্যন্ত শুনিনি ।দ্যাখো আবিদ,আমার ছেলেকেআমি ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাবো ।
-নো নেভার ।এই ধরনেরস্বার্থবাদী এবং আত্মকেন্দ্রিকশিক্ষা আমি তাকে দিবোনা ।আমি তোমাকে আগেই বলেছি ।ও হবে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠসন্তানদের একজন ।তোমার কাজ শুধু ওকে গর্ভেধারণ করা,আর কিছু না ।
:আদিব !
-বলো ।
:তুমি কি একটা সন্তানেরজন্য আমাকে এতো ভালবাসো ?সেটা তো অন্য মেয়েকে বিয়ে করলেও পাবে ।
-হ্যা পাবো ।কিন্তু তোমাক তো পাবো না ।হিমান্তের মাহিসেবে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে কোনদিন আমি নিতে পারবো না ।
:সত্যি !
-১০১ বার সত্যি ।
:ছেলে পাওয়ার পর আমাকে আর এতো ভালবাসবেনা তাইনা ?
-ছেলের বয়স ৬ বছর হওয়া পর্যন্ত বাসবো,তারপর একটু কম কম বাসবো ।হাহাহা ।
:কম কম বাসবে মানে !
-দ্যাখো অরিন, বাচ্চাকাচ্চা পালন করা আমার কাছে অতি বিরক্তিকর । আমি আমার ভাগনী-ভাতিজীদের তাই বড় হওয়ার আগপর্যন্ত একবারের জন্য ধরিনি । বাচ্চাকাচ্চা পালন আমার পক্ষে সম্ভব না ।ঐ কাজটা
তোমাকেই করতে হবে । বাচ্চা বড় হলে তোমার কাছ থেকে বাচ্চা আমার কাছে নিয়ে আসবো ।তখন তো আমি ওকে নিয়েই পড়ে থাকবো,মানুষ করতে হবে তো ।তুমি তো আর পারবেনা । তোমার কাছে থাকলে শুধুশোং শাং শিখবে ।
:হু,তোমারে কৈছে ? তোমার মতো বান্দর বানাতে দিবোনা আমি ।
-দেখা যাবে ।
:হ্যা দেখা যাবে । বাচ্চাকাচ্চা ধরবেনা,পালবেনা আবার উনার কথামতো বাচ্চাকে বান্দর বানাবে । এটা হবেনা জনাব ।আমার হিমান্তকে আমি ভাল ছেলে বানাবো ।তোমার মতো মানসিক রোগী না ।
-কি !আমি মানসিক রোগী ?
:নয় তো কি ? নিজের ছেলেকে যে পালতে চায়না সে তো মানসিক রুগীই ।
-ও আচ্ছা ।তাহলে এই মানসিক রোগীকে এতো ভালবাসো কেন ?
:হিমান্তের জন্য ।
-সেটাও তো অন্য কোন ছেলেকে বিয়ে করলেও পাবে ।
:তাতে তোমাকে তো পাবোনা আবিদ ।আমার তোতোমাকে চাই ।এমন প্রচন্ড রকম ভালবাসা তুমি ছাড়া
আর কে বাসবে বলো আমাকে ? আচ্ছা যাও, হিমান্তকে তুমি তোমার মতো করে গড়ে তুলো ।তোমার
স্বপ্ন পূরণ করো ।আমি তোমার পাশেই থাকবো ।
-বাচ্চা কিন্তু আমি পালতেপারবো না হু ?
:আচ্ছা বাবু,তোমাকে পালতে হবেনা ।আমিই পালবো ।
-রাতে একটুও কাঁদতে দিবেনা । পোলাপানের কাঁন্নার শব্দে আমার ঘুম আসেনা ।রাতে কাঁদলে কিন্তু গলাচিপে মেরেফেলবো ।
:আচ্ছা বাবু,আমার হিমান্তএকটুও কাঁদবেনা,শান্তশিষ্ট হবে ।
-আই লাভ ইউ অরিন ।
:আই লাভ ইউ ঠু আদিব ।।

১৮ মাস পর….
আজ অরিনের বিয়ে ।সে বউ সেজে বসে আছে । বিয়ে হচ্ছে অন্য একটা ছেলের সাথে । আদিবের সাথে অরিন সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ।আদিবের উপর সে অনেকগুরুতর অভিযোগ এনেছে । এর মধ্যে একটা হলো- আদিবের সাথে তাকে মানায়না, ইত্যাদি ইত্যাদি আরো ভয়ংকরসব অভিযোগ । আদিব কোন কথা বলেনি ।তার কিছু বলার ছিলনা ।যার মুখ থেকে এই কথাগুলি বেরিয়েছে এসব কথার বিপরীতের কথাগুলিও সে আদিবকে বলেছে । আদিব হিসাব মেলাতে পারছেনা,আসলে কোনটা সত্য । অরিনের বিয়ের দিন আদিব হলুদ একটা পান্জাবী পরে খালি পায়ে বের হয়ে গেলো উদ্দেশ্যহীনভাবে ।আদিবের কেন যেনো মনে হচ্ছে,সেএখন হিমু ।তাকে পৃথিবীতেপাঠানো হয়েছে হিমু হয়ে থাকার জন্য । অরিনের বিয়ে হয়ে গেল !হাসতেই হাসতেই সে “কবুল” বলেছে । আদিবের কথা একবারো ভাবেনি । গভীর রাত ।অরিনের বাসর আর আদিব রাঁস্তাদিয়ে একা একা হাঁটছে । তার বুকের ভেতর চাপা কষ্ট,চোখ স্থির,কন্ঠস্বর রুদ্ধ ।
আদিবের বিশ্বাস হচ্ছেনা,অরিন সমস্ত বিশ্বাস ভেঙ্গে বিয়ে করেছে ।একটা মেয়ে কিভাবে এটা পারে ! তার শরীরে কি রক্ত মাংস নেই !সে কি মানুষ না ! একটা মানুষকে হত্যা করা আর এভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করা
দুটোই সমান ।আদিবের দিনগুলি ভালোই কাটছিল । টাইম পাস করার জন্য অরিন কেন তাকেই বেছে নিলো ! ছেলেদের তো অভাব ছিলনা । আদিব হু হু করে কেঁদে ফেললো, জোছনার আলোয় তার চেপে রাখা অশ্রু ঝলমল করছিল ।

অরিনের স্বামী এসে ঝাঁপটেধরলো তাকে ।অসহ্য সুখে তখন অরিন কাঁতর ! অরিনকে বিবস্ত্র করে যখন
তার শরীরে আরেকটা শরীর গাঁথলো তখন এই পৃথিবীর কারো কোন ক্ষতি হয়নি শুধু নীরবে মারা গেছে
একটি জীবন,একটি স্বপ্ন, একটি সম্ভাবনা-হিমান্ত !

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত