ক)
হেমন্তের সন্ধ্যেগুলো কেমন যেন উদাস করা হয়। দূর আকাশে অস্তগামী সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতেও ভাল লাগে, বেশ ভাল লাগে। রেল স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য অপেক্ষাটাও অন্তহীন মনে হয়না। দ্রুত হাতে ব্যাগ খুলে ক্যামেরা বের করি, পূর্ব পশ্চিমের রেললাইনের পার হয়ে ওপাশের সবুজ ধানের ক্ষেত, তার ওপারেই দিগন্তে অস্ত যাওয়া সূর্যের ছবি ধরে রাখি কয়েকটা। কিছুটা লো এঙ্গেলে ছবি নিতে হাঁটু গেড়ে বসে যাই নোংরা প্লাটফর্মে। জুম করে কিছুটা ক্লোজআপ ছবি তুলি, রক্ত লাল সূর্যের পটভূমিতে কালচে হয়ে আসা ধানের পাতার ছবি ফ্রেমে বন্দি করতে গিয়ে অস্পষ্ট চাঁপা হাসির শব্দ কানে আসে। আমি কোন দিকে নজর সরাই না, সবটুকু মনোযোগ তখন ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে। ছবি তুলতে তুলতেই সূর্যটা ডুবে যায়। উঠে দাঁড়িয়ে জিনসের ধুলো ঝাড়ি এক হাতে। রেললাইনের ওপর তখন বিশাল রেল ইঞ্জিনের আবছা অবয়ব। আমি ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে ব্যাগটা হাতে নেই।
ডিজেল ইঞ্জিনের বিকট ঝমঝম শব্দে রেল স্লিপারের উপর দিয়ে গড়িয়ে এসে থামে একটা ট্রেন। না, এটা আমার ট্রেন না, লোকাল ট্রেন একটা। বোকার মত ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছি আমি আলো আঁধারী এই প্লাটফর্মে। এদিক ওদিক তাকিয়ে ব্যস্ত মানুষ জনের যাওয়া আসা দেখি। কেউ বাক্স পেটরা নিয়ে নামছে ট্রেন থেকে, কেউবা উঠছে ট্রেনে। একপাশে বাঁশি আর সবুজ পতাকা হাতে রেলের একজন স্টাফকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে যাই, জিজ্ঞেস করে জানি আমার ট্রেন আসতে এখনও সম্ভবত: আধ ঘণ্টা বাকি। এত নির্বিকার ভাবে এরা লেট হয়ে যাওয়া ট্রেনের খবর বলে, যেন কিছুই হয়নি। আন্ত নগর ট্রেন কেন চার ঘণ্টা লেট, এই ভদ্রলোক তাও জানেন না। কি আর করা, ব্যাগ হাতে পা বাড়াই ওয়েটিং রুমের দিকে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকার মানে নেই আর।
ওয়েটিং রুমটা বেশ বড়, আর চারপাশে দেয়াল ঘেঁসে লম্বা বেঞ্চ দেয়া। মাঝে একটা বিশাল আকারের টেবিল, টেবিল ভর্তি অপেক্ষারত মানুষের লাগেজ, ঝুড়ি, খাবারের কন্টেইনার, পানির বোতল। বেঞ্চের কোথাও বসার মত জায়গা নেই। লোক খুব বেশী না, কিন্তু তারা এমন ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছে, যে কাউকে না সরিয়ে মাঝখানে বসার উপায় নাই। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝে উঠতে চেষ্টা করি কি করবো। এমন সময় দুটি ছেলে উঠে গিয়ে আমাকে বসার জায়গা করে দেয়। স্থানীয় ছেলে, যাত্রী বলে মনে হয় না। হয়তো কাউকে নিতে এসেছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি আমি, তাই ধন্যবাদ দিয়ে ফাঁকা জায়গাটায় গিয়ে বসি। ওরা বেশী দূরে যায় না, অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। আমার মধ্যে সুক্ষ্ণ একটা অপরাধ বোধ কাজ করে। শার্ট প্যান্ট পড়া ভদ্র চেহারার শহুরে মানুষের জন্য লুঙ্গি পড়া গ্রাম্য লোকজন বরাবরই কিছু বাড়তি সুবিধা দেয়। আমরাও এটাকে আমাদের পাওনা ভেবে সদ্ব্যবহার করি। এক্ষেত্রে আমিও তাই করলাম। কিন্তু আমি কি কখনও কোন সাধারণ পোশাকের মানুষের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতাম? অবশ্যই না।
আমার দাদা ছিলেন গ্রামের মানুষ। নিজের চেষ্টায় কিছু লেখাপড়া করে হাই স্কুল পাশ করেছিলেন। আমার বাবাকে উনি শহরে পাঠিয়েছেন, ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী পাবার পর বাবা চাকুরী নিয়ে এখনও এই শহর ওই শহরেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গ্রামের সাথে আমাদের যোগাযোগ তেমন নেই। কোন এক অজানা কারণে বাবা গ্রামে ফিরতে চান না। এ নিয়ে দাদার সাথে উনার মতবিরোধও ছিল। আর আমি হয়েছি একটু আলাদা। সুযোগ পেলেই গ্রামে চলে আসি। দাদা চলে গেছেন অনেক দিন। দাদী এখনও পুরনো ভিটেমাটি আঁকড়ে ধরে আছেন। শহরে যান বছরে একবার, দু সপ্তাহও থাকেন না। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত বারান্দায় বসে থাকেন, মানুষ দেখেন, আর মাঝে মাঝে বিড়বিড় করে বলেন – “এখানে আমার গ্রামের পোকাটাও নাই রে, পোকাটাও নাই”। ছোটবেলায় আমরা দাদীর এই কথা নিয়ে হাসাহাসি করতাম। এখন বুঝি, মাটির টান – মানুষের টান তাকে শহরের ইট পাথরের নিষ্প্রাণ আধুনিকতায় আটকে রাখতে পারে না। খুব সকালে দাদী ফজরের নামাজ পড়ে উত্তর বাড়ীর বড় পুকুরটার ধারে গিয়ে দাঁড়ান। এখানে এলে আমিও গিয়ে দাঁড়াই তার সাথে। প্রতিবারই দাদী আমার হাতটা তার মুঠোতে তুলে নেন, কোন কথা বলেন না। একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম – কি করেন উনি প্রতিদিন এখানে। দূরে আঙ্গুল ইশারা করে দেখান – “ওইখানে তোমার দাদু শুয়ে আছে”।
দাদুর কবর এতদূর থেকে দেখা যায় না। তবুও দাদী রোজ সকালে এখানটায় এসে দাঁড়ান। হয়তো দিগন্তে চেয়ে স্মৃতিচারণ করেন দাদুর সাথে কাটানো সময় গুলোর কথা। বড় অসহায় লাগে আমার সে সময়টা। তবুও প্রতিদিন সকালে উঠে গিয়ে দাঁড়াই পুকুর পাড়ে। একসময় দাদী ঘরে ফিরে আসেন, দু কাপ চা বানিয়ে কয়েকটা বিস্কুট কিংবা মুড়ি মেখে নিয়ে আসেন। টুকটাক গল্প করি আমরা। বেশীরভাগই আমার ছোটবেলার কথা। আমার খুব ভাল লাগে সে সব শুনতে। আমি কখনই খুব বেশী সময় গ্রামে ছিলাম না, দাদা দাদীর কাছে ছিলাম না। তবুও দাদী কি আশ্চর্য মমতায় আমার ছোটবেলার সব দুষ্টুমি, সব কথা মনে রেখেছেন।
গ্রামে এলে আমার শহরে ফিরে যেতে ইচ্ছে করেনা, একটুও না।
খ)
রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে ঢং ঢং শব্দ করে ট্রেন আসার সংকেত দেয় রেলের লোক। আমার নস্টালজিয়ায় বাধা পড়ে। বাইরে এসে দাঁড়াই। নানা ধরনের মানুষ প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। আমার বা’ দিকে দাঁড়ানো একটি পরিবার, মা বাবা ভাই বোন সম্ভবত। চোখের কোণ দিয়ে মেয়েটাকে দেখতে পাই, কুড়ি একুশ বছর হবে মনে হয়, তারুণ্যের দীপ্তি চোখে মুখে। মফস্বল শহরের মেয়ে হিসেবে বেশ আধুনিক। পরিবারের বাকি সদস্যদের সাথে একটু যেন বেমানান। ঢাকায় কোন কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে মনে হয়।
ট্রেনের কামরায় মুখোমুখি সিট পড়েছে সবার। সিটে বসে ইয়ার ফোন কানে দেই, প্লে লিস্টে নতুন পুরানো অনেক গান। মেয়েটা বসেছে আমার মুখোমুখি এবং অস্বস্তি বোধ করছে মনে হয়। এই বয়সের মেয়েরা খুব সেনসিটিভ হয়। অল্পতেই ওদের মুড পালটে যায়, আর সেটা তাদের চোখমুখে ধরা পরে। মনের ভাব ভাল ভাবে লুকাতে শেখেনি এখনও। মেয়েটির মা বসেছে তার পাশেই। ছোট ভাইটি জানালার কাছে বসার বায়না ধরায় তাকে মেয়েটির পাশে বসিয়ে দেয়া হলো। উল্টোদিকের সিটে তাদের পরিচিত কোন পরিবার যাচ্ছে মনে হয়। ওপাশের সিটের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটির বাবার সাথে কথা বলছেন এক ভদ্রলোক। আমি গান শুনতে শুনতে চোখ বুজি।
ট্রেন ছাড়তেই মেয়েটির বাবা নেমে গেলেন। দুপুরের ট্রেনে যাবে বলেই হয়তো মা মেয়ে আর ছোট ছেলেটি যাচ্ছিলো, কিন্তু ট্রেন লেট হওয়াতে সন্ধ্যে পেড়িয়ে গেছে আমাদের স্টেশন থেকে ছাড়তেই। চোখ অল্প একটু খুলে ওদের দেখি, মেয়েটির মা আমার দিকে কেমন সন্দেহজনক দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছেন। সাত দিনের শেভ না করা খোঁচা খোঁচা দাড়ি, গলায় ঝোলানো ক্যামেরা, আর সর্বোপরি আমার তরুণ বয়সটাকেই হয়তো সন্দেহ করছেন উনি। তরুণী মেয়েদের মায়েরা সবসময়ই সন্দেহপ্রবন হন। মনে মনে হাসি। বাইরে নিকষ কালো আঁধার। গ্রামের ভেতর দিয়ে ছুটে যাচ্ছে ট্রেন। মাঝে মাঝে দু একটা আলোর বিন্দু দেখা যায়। ঢাকায় বসে এই কালি গোলা আঁধার দেখবারও সুযোগ নেই।
ট্রেনের ছুটে চলার ছন্দবদ্ধ শব্দ আর দুলুনিতে ঘুমিয়ে গেছিলাম। চোখ মেলতেই দেখি মেয়েটি আনমনা ভঙ্গিতে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। আজ সম্ভবত পূর্ণিমা, বিশাল থালার মত চাঁদ উঠেছে আকাশে। একবার ভাবলাম ছবি তুলে রাখি, পরক্ষনেই মনে হলো ট্রেনের দুলুনিতে ফোকাস নড়ে যাবে। স্লো স্পিডে ছবি কিছুতেই ভাল আসবে না। ট্রেন থামলে যদি আকাশে চাঁদ দেখা যায়, তবে একটা চেষ্টা করা যাবে। তার আগে পর্যন্ত আরেকটু ঘুমিয়ে নেয়া যাক।
আমি ঘুমুতে পারছি না, আমার সব মনোযোগ চলে যাচ্ছে সামনে বসা মেয়েটির দিকে। আহামরি সুন্দরী হয় মেয়েটি। তবে খুব স্নিগ্ধ। ছোট ভাইটি ঘুমিয়ে গেছে তার কোলে। কি পরম মমতায় ভাইটিকে ধরে মেয়েটি চেয়ে আছে আকাশের দিকে। জানালার কাঁচে মেয়েটির মুখের প্রতিফলন অদ্ভুত এক সৌন্দর্য তৈরি করছে। খুব ইচ্ছে করছে একটা ছবি তুলে রাখি, কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। অপরিচিত মেয়েটির ছবি তুলতে গেলে অপমান তো হতেই হবে, অতি উৎসাহী মানুষের কল্যাণে কিছু উত্তম মধ্যমও জুটে যাবে ফ্রিতে। তাই আবার চোখ বন্ধ করে গান শোনায় মন দিতে চেষ্টা করি। কিন্তু বেশীক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখতে পারি না। অন্যদিকে মনোযোগ দিতেও পারি না। আমার অচেনা সহযাত্রী বার বার আমাকে আকর্ষণ করে।
বিস্তীর্ণ প্রান্তর পেড়িয়ে ট্রেন চলেছে বিশাল এক জলাভূমির পাশ দিয়ে। পূর্ণিমার চাঁদের আলো কালো জলের ওপর পড়ে অদ্ভুত মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করছে। মেয়েটি সিটের পেছনে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। ট্রেনের বাতির মৃদু আলোয় অথবা চাঁদের নরম আলোতে আরও বেশী স্নিগ্ধ লাগছে। আমি ক্যামেরা এডজাস্ট করে জানালা দিয়ে চাঁদের ছবি তোলার চেষ্টা করি। আড় চোখে দেখতে পাই মেয়েটির মা উৎকণ্ঠিত দৃষ্টি মেলে দেখছেন আমার দিকে। এই সুযোগে তার মেয়ের ছবি তুলে ফেলছি কি না বোঝার চেষ্টা করছেন। তরুণ বয়সে সব ছেলেই হয়তো প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। আমার ইগোতে লাগে উনার এই অযথা সন্দেহ। ক্যামেরার ফোকাস সরিয়ে জানালার কাঁচে নিয়ে আসি, নিখুঁত ভাবে মেয়েটির মুখের ছায়া উঠে আসে ছবিতে। এরপর ক্যামেরা গুটিয়ে রেখে মনে বিচিত্র একটা তৃপ্তি নিয়ে চোখ বুজি।
কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম জানি না। চোখ মেলতেই দেখি ট্রেন একটা স্টেশনে দাঁড়ানো। মেয়েটির মা ট্রেনের দরজায় দাঁড়ানো, বাইরে যাচ্ছেন, মনে হয় কিছু কিনে আনবেন। বারবার তাকাচ্ছেন এদিকে। আমি ব্যাগের পকেট থেকে পানির বোতল বের করে গলা ভেজাই। এমন সময় আমাকে অবাক করে দিয়ে কথা বলে ওঠে মেয়েটি –
– আপনি আমার ছবি তুললেন কেন?
অপ্রস্তুত অবস্থা। আমি এমনিতেও খুব গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারিনা, এমন পরিস্থিতিতে তো নয়ই। বিব্রত ভাবে হাসলাম। মেয়েটি কঠিন গলায় বললো –
– এক্ষুনি মুছে ফেলেন ছবি। আপনি কি ভেবেছেন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম? আমি দেখেছি আপনি আমার ছবি তুলেছেন। মুছে ফেলেন এক্ষুনি।
আমার বোকা বোকা হাসিই প্রমাণ করে দিয়েছে আমি ছবি তুলেছি। এখন আর মানা করবার উপায় নেই। ক্যামেরা অন করতে করতে বলি –
– মাত্র একটা ছবি এসেছে মনে হয়।
– ওই একটাই মুছে ফেলেন, এক্ষুনি।
– আপনাকে খুব স্নিগ্ধ লাগছিল সে সময়।
মেয়েটি সরু চোখে তাকায় আমার দিকে …
– এখন লাগছে না?
– নাহ … এখন ঝগড়াটে লাগছে
– কি !! … আপনি ছবি মুছেন।
ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব জেদি বলে আমার বদনাম আছে। কথাটা পুরোপুরি মিথ্যে না। আমি দ্রুত হাতে ছবিটা কপি করে অন্য ফোল্ডারে সরিয়ে ফেলে আগের ছবিটা ডিলিট করে দেই। তারপর ক্যামেরাটা এগিয়ে দেই মেয়েটির দিকে, বলি –
– ডিলিট করে দিয়েছি, চেক করতে পারেন।
– লাগবে না, ধন্যবাদ। আর শোনেন … আমি ঝগড়াটি না।
– তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
হেসে ফেলি আমি। মেয়েটি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু ট্রেনের দরজায় ওর মা’কে দেখা যায়। হাতে কিছু খাবার নিয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে আসছেন। চুপ করে যায় মেয়েটি, আমিও একটা ম্যাগাজিন বের করে পড়ায় মন দেই। আমার মন ভরে আছে অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে। বারবার একটা গানের কলি মনে হচ্ছে …
“এই পথ যদি না শেষ হয় …
তবে কেমন হতো তুমি বল তো …”
গ)
ঢাকায় এসে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ক্লাস, পরীক্ষা, টিউশনি নিয়ে মোটামুটি যাচ্ছেতাই অবস্থা। সেদিনের ছবিগুলো ক্যামেরা থেকে তুলে ল্যাপটপে রেখে দিয়েছিলাম, তবে ভাল মত দেখবারও সময় হয়নি। সপ্তাহ দুয়েক পর একদিন সময় পেলাম সেগুলো খুঁটিয়ে দেখবার। তখনই মনে পড়ে গেল ট্রেনের সহযাত্রী মেয়েটির সেই ছবিটার কথা। আলাদা ফোল্ডারে সরিয়ে রাখা ছবিটা বের করে দেখছিলাম। কি আশ্চর্য স্নিগ্ধ একটা মুখ। ট্রেন জার্নির ক্লান্তি এতটুকু মলিন করেনি তার স্নিগ্ধতা। একা একাই হাসলাম কিছুক্ষণ। পথে আসতে যেতে তো কত জনের সাথেই দেখা হয়, তাদের কথা কেই বা মনে রাখে। মেয়েটি হয়তো এতদিনে আমাকে ভুলে গেছে একেবারেই। আমিও দু’দিন পরেই ভুলে যাব নাম না জানা মেয়েটির কথা।
আমার ধারণা সঠিক ছিল না। সেদিনের সেই মেয়েটির কথা আমি ভুলতে পারছিলাম না কিছুতেই। কতবার কাঁচের গায়ে আবছা ভাবে ফুটে ওঠা সেই ছবিটা মুছে ফেলবো বলে ঠিক করেছি, কিন্তু পারিনি একেবারেই। মেয়েটি এই শহরেই কোথাও আছে, হয়তো আমার আশে পাশেই আছে, আমি না তার নাম জানি, না কোন ঠিকানা। আর কোন দিনই আমি খুঁজে পাবো না তাকে। তবুও রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে আমার সন্ধানী চোখ মেয়েটিকে খোঁজে। অবসর পেলেই ঢাকার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে বেড়াই, যদি আর একটি বার দেখা হয়ে যায় তার সাথে। বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ কমে যাচ্ছে আমার। পড়াশুনায় মন দিতে পারিনা ঠিক ভাবে। সারাক্ষণ আমার মনের মাঝে অচেনা সেই স্নিগ্ধ মুখটার ছবি ভাসে।
দিনের পর দিন আমি পাগলের মত খুঁজে ফিরি সেই মুখ … একবার … আর একটিবার যদি তাকে দেখতে পাই …