প্রেমের সমাপ্তি

প্রেমের সমাপ্তি

তামিম গেইটে দাঁড়িয়ে আমন্ত্রিত মেহমানদের সাথে কুশল বিনিময় করে হরেক রকমের উপহার রিসিভ করছে। সবার সাথে যদিও একগাল হেসে দিচ্ছে, আসলে পুরোটাই ফরমালিটি । ভিতরটা এক আকাশ টেনশনে কালো হয়ে আছে। সবাই আসলেও তামিম যেন কেউ একজনের অনুপস্থিতি অনুভব করছে। এদিক সেদিক চোখের ঈশারায় খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না। অতঃপর পিছনের দিকে দেখতে দেখতে ভিতরে প্রবেশ করলো।
.
আজ তামিমের জন্মদিন। বাড়িতে বিশাল আয়োজন। বন্ধুরা সবাই আসলেও তার বিশেষ অতিথি আসেনি তাই মন খারাপ। কেকের সামনে এসে মন চাচ্ছিলো সব ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে কিন্তু না, তাতে পরিবারের অসম্মান হবে। তাই কাউকে কোন কিছু বুঝতে না’দিয়ে কেক কাটলো। সকলে করতালির সাথে তামিমকে শুভ জন্মদিন জানালো।
কিছুই খেলো না, হেসে হেসেই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করে ক্ষুধা পেটে শুয়ে পড়লো।
.
কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই। প্রায় তিনদিন পর মন ভালো হলে উপহারগুলো খুলতে লাগলো। প্রত্যেকটা উপহারের সাথে নাম পরিচয় লিখা থাকলেও একটাতে কোন কিছু লেখা নেই। সেটা নিয়ে কৌতুহল জাগলো। নামহীন কে এই গিফ্ট টা দিলো। প্যাকেটটা খুলে দেখলো রাজা রানীর হ্যান্ডশেক করা পুতুল। সাথে একটা চিরকুট তাতে লেখা তামিমের সেই অনুপস্থিত অতিথির নাম মিলি। তামিমতো দেখেই অজ্ঞান। আবার দেখলো, না স্বপ্ন নয় সত্যি মিলির গিফ্ট। সে আসেনি গিফ্ট পাঠিয়ে দিছে।
.
মিলি হলো তামিমের ক্লাসমেট। তামিম সেই নবম শ্রেণি থেকে মিলিকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে গলা শুকিয়ে আসতেছে। আর জবাবে আজ অবধি শুনছে ভালোবাসি না, ভালোবাসি না, ভালোবাসি না। তথাপি তামিম মিলির পিছু ছাড়ছেনা কারন মিলি ভালোবাসা ছাড়া তামিম না চাইলেও তার অন্য সব কাজে সাড়া দেয়। তাই তামিম মনে করে সে মুখ দিয়ে না’বললেও মনে মনে অবশ্যই পছন্দ করে। তবে মিলি কখনো ঘৃনা করে বলেনি। আজ তারা অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।
.
নাম্বারটা নিয়ে মিলিকে ফোন দিলো দেখা করতে কথা আছে। মিলিতো ফোন ধরেই আগুন “তুমি আমাকে ফোন দিলে কেনো “?” প্লিজ মিলি কথাটাতো শুনো! কালকে কলেজে আসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো ” প্রশ্নের জবাবে “যদিও কালকে কলেজে যেতাম, তুমি বলাতে এখন আর যাবো না “। (তামিম) কিন্তু কেনো আমি কি করেছি? (মিলি) কারন তোমার সাথে আমার কোন কথা থাকতে পারে না। (তামিম) মিলি আমি তোমাকে ভালোবাসি। (মিলি) কিন্তু আমি তোমাকে ভালো বাসি না বলেই কলটা কেটে দিলো। তামিম পারছেনা নিজের চুল নিজে ছিড়তে। কেনো মিলি তাকে কোন কথার দাম দেয়না? কেনো সর্বদা এড়িয়ে যেতে যায়? এসব প্রশ্নের জবাব তার কাছে অজানা।
.
বিষয়টা কলেজের সবাই জানে। সবার মুখে বলতে শোনা যেতো যে তামিম মেয়েটির একটুকু ভালোবাসা পেতে যত সাধনা করছে মেয়েটির মধ্যে তার বিন্দুমাত্র আকর্ষন দেখা যাচ্ছে না। প্রতিটা মুহুর্তে তামিম মিলির ভালোবাসার বৈরাগী সেজে আছে কিন্তু মিলির মধ্যে সেই রকম কোন অনুভূতিই নাই। একদিন সাব্বির সিরিয়াসলি বললো “তুমি যদি আমাকে ভালো না বাসো তবে আমি আত্মহত্যা করবো “। তখন মিলির রিপ্লাই ছিলো ” করেই দেখো না তবে বুঝবে মজা “। আসলে মিলি কি চায় তামিমের নিষ্পাপ ভালোবাসা নাকি তামিমের মৃত্যূ?
.
তামিম একটি মুহুর্তের জন্যও মিলির পিছু ছাড়েনি। তার শুধু একটাই কথা ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি। ঘুমের ঘরেও মিলিকে ভালোবাসি বলে ডাকতে থাকে। মিলি ছাড়া তার জীবন শূন্য। মিলিহীন জীবন সে কল্পনাই করতে পারে না। অনেক মেয়ে অফার করেওফিরে গেছে খালি হাতে। তার জবাব হলো “আমি একজনকে ভালোবাসি “। তার এই অবস্থা দেখে পরিবার বিয়ে করানোর চেষ্টা করেছিলো কিন্তু রাজি নয়। তামিমের মা-বাবা মিলিদের বাড়িতেও গিয়েছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, দুই পরিবার মোটামুটি সম্মত হলেও তামিমের কথা শুনে মিলি নিষেধ করে দিলো। মিলির কথা হচ্ছে “বিয়েতো এখন করবেই না, তার মধ্যে তামিমকেতো প্রশ্নই উঠে না “। তামিমের কথা শুনে তার লোমকুপ খাড়া হয়ে গেছে।
.
মিলির এসব কর্মকান্ড দেখে তামিম খুব ভেঙ্গে পড়লো। মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে গেলো। ভালো না’লাগা রোগে আক্রান্ত হলো। খেতে ভালো লাগে না , শুইতে ভালো লাগে না, পড়তে ভালো লাগে না, কলেজে যেতে ভালো লাগে না, এবং কি কারো সাথে কথা পর্যন্ত ভালো লাগে না। একাকী নিরব হয়ে গেলো। আর মিলির পিছু ছুটে না, তার ভালোবাসার জন্য কাকুতি মানতি করে না। তার সাথে কথা বলারও প্রয়োজন মনে করে না। তার মধ্যে অনার্স ফাইনাল হয়ে গেলো। ভালো রেজাল্ট করে এমবিএ’র এডমিশন নিলো। এর ফাঁকে প্রাইভেট ফার্মে ভালো একটা জবেরও ব্যবস্থা হলো। এখন তামিমের কর্পোরেট লাইফ শৃৃঙ্খলাবদ্ধ রুটিন। ইচ্ছে করলেও কারো পিছনে ছুটার সময় হয় না। পরিবারকে নিষেধ করে দিলো বিয়ে করবে না।
.
ঐদিকে একদা মিলির সাথে তামিমের মায়ের দেখা। দুজনে অনেক্ষন গল্প করলো। তামিমের কথা বলতেই মিলি চুপ করিয়ে দিয়ে বললো” আমি সব জানি আন্টি “। “তুমি সব জানো কিন্তু….. ” কথার উত্তরে মিলি বললো ” আমি এটাই চেয়েছিলাম যে তামিম জীবন সম্পর্কে বুঝুক, পরিবার থেকে আলাদা হয়ে নিজে কিছু করুক “। “তোমাকে তামিম অনেক ভালোবাসে। তুমি কি একবার ওর সাথে কথা বলে দেখবা? “। উত্তরে “হ্যা মা, আমি আপনাদের বাড়িতে আসবো “।
.
মিলি আসলেই তামিমকে ভালোবাসতো কিন্তু কখনো প্রকাশ করেনি। কারন সে চায়তোনা ভালোবাসার মায়ায় পড়ে এত তাড়াতাড়ি ক্যারিয়ারটা নষ্ট হোক। ভালোবাসার যেই পাগলামি তার মাথায় চড়ে বসেছে তাতে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। পড়াশুনাটা নষ্ট করা ছাড়া কিছুই না। মুলত তামিমের ক্যারিয়ার ডেপেলপ্ড করার জন্য মিলি দূরে সরে ছিলো। সব সময় তিরস্কার করেছে একটুও বুঝতে দেয়নি যে মিলিও তাকে অনেক ভালোবাসে।
মিলি চেয়েছে তামিম পড়াশুনাটা শেষ করে কিছু একটা করুক তারপর ভালোবাসা যাবে। আজকে তামিম সফল আর কোন বাঁধা নেই। এখন চোখ বন্ধ করে ভালোবাসি বলা যাবে।
.
মিলি কল দিলো তামিমকে মিষ্টিবাড়ি আসতে এখানে সবার সবসময় আড্ডা হয়। প্রথমে আসতে পারবে না বললেও পরে আসার সম্মতি জানালো। মিলি আসার আগেই বসে রইলো। যতই হোক ভালোবাসে তো। প্রথম প্রেম বলে কথা। মিলি এসে তো অবাক চোখে চেয়ে রইলো কারন তামিমের হাতে সিগারেট জ্বলছে। সিগারেটটা মিলি কেড়ে নিয়ে ফেলে দিলো। পকেট থেকে আরো এক প্যাকেট বের করে পা দিয়ে মুড়ে নিলো। তামিম কখনো সিগারেট শুকেও দেখেনি। ধোঁয়া পর্যন্ত সইতে পারতো না আর এখন বান্ডেল নিয়ে ঘুরে। সাব্বির চুপচাপ চেয়ে রইলো মিলির কোন কথায় প্রতিবাদ করলো না। মিলি এসছিলো ভালোবাসি কথাটা বলতে কিন্তু আর তা বলা হয়ে উঠেনি। তামিমেরও এখন আর ভালোবাসি কথাটা ভাবার সময় হয়না। তার কাছে শব্দটি পুরাতন পুরাতন মনে হয়। তাই ভালোবাসি শুনার কোন আগ্রহ নেই।
.
বয়সের কোন এক সীমান্তে দাঁড়িয়ে আর ভালোবাসার রম্য গল্প ভালো লাগে না। জীবনের কোন এক মুহুর্তে ভালোবাসার রংধনু সাত রঙ্গে সাজে না। জয় পরাজয়ের এক পর্যায়ে ভালোবাসা স্তিমিত হয়ে যায়। ভালোবাসার একটা সময় বয়স থাকে।সেই সময় ভালোবাসা ছাড়া আরকিছুই ভাবনায় আসে না। যেমন ছিলো তামিমের মধ্যে। মিলি ছিলো অল্পতেও ম্যাচিউর্ড তাই তার ভালোবাসা ছিলো অপ্রকাশ্য।
.
এক সময় মিলি রাগে ক্ষোবে কাতর হয়ে চলে যেতে লাগলো। তখনো তামিমের কোন রেসপন্স নেই দাঁড়িয়ে আছে স্ট্যাচিউ মত। মিলি চলে গেলে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে বাসায় ফিরলো। পরের দিন মিলিকে ফোন দিলোঃ
__ হ্যা বলো( মিলি)
__ তুমি রেডি হয়ে বনফুলে চলে এসো এক্ষুনি। আমি অপেক্ষা করছি।
__ কিন্তু সেখানে কেনো?
___ কোন প্রশ্ন নয় যা বলছি তাই করো তাড়াতাড়ি।
__ ওকে আসছি।
গাড়ি থেকে নামতেই কোন কথা ছাড়া মিলির হাত চেপে ধরে সোজা কাজী অফিসে। মিলিতো অবাক “এসব কি তামিম “? “চুপচাপ বধূ বেশে বসে থাকো আমরা বিয়ে করবো “(তামিম)।
অতঃপর দুজনে বিয়ে করে বাসায় ফিরলো।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত