উপহাস

উপহাস

পাবলিক ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা এক এক করে সব গুলো শেষ হয়ে গেল কিন্তু একটাতেও টিকলাম না। হয়ত আমার মাঝেই কোন কমতি ছিল নয়ত সেটা ভাগ্য। তাই আর কোন উপায় না পেয়ে নিজের শহরের সরকারী কলেজে পদার্থ বিষয়ের উপর অনার্সে ভর্তি হলাম। কিন্তু সবাই আমায় দেখলেই বলে “কিরে একটাতেও টিকলি না, কি এমন লেখাপড়া করিস।” আমি তো আমার যথা সাধ্য চেষ্টা করেছি কিন্তু যদি আমি না টিকি তাহলে আমার কি দোষ? আচ্ছা যদি পাবলিক ভার্সিটিতে লেখাপড়াটা সব হয় তাহলে অনার্সে ছাত্রছাত্রীরা কেন পড়ে? মাঝে মাঝে নিজের উপর রাগ হয়। ইচ্ছা করে জীবনটাই শেষ করে দেই কিন্তু কিছু পিছুটান আমাকে মরতেও দেয় না।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হবো এমন সময় আশের বাড়ির আন্টি দেখি আমাদের বাসায় আসছে। আমাকে দেখে কেমন করে যেন তাকলো? তারপর মাকে গিয়ে প্রশ্ন করলো…
— কি গো তোমার ছেলে রাজ নাকি একটা ভর্তি পরীক্ষায়ও টিকে নি?
–( মা চুপ করে আছে)
— আমার ভাইয়ের ছেলে জানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাউন্টিং এ চান্স পাইছে।
— (মা তবুও চুপ)
— শুনছি রাজ নাকি পাশের এলাকার কোন মেয়ের সাথে প্রেম করে? সত্যি নাকি ঘটনা।
— তোমারে এইসব কে বলছে?
— কে আবার বলবে?শাক দিয়ে কি আর মাছ ঢাকা যায়? এলাকার সবাই তো তাই বলছে। আসলে তোমার ছেলের মাথাটা ওই মেয়েই খেয়েছে নয়ত এস.এস.সি আর এইচ.এস.সি তে এত্তো ভাল রেজাল্ট করলেও ভার্সিটিতে কেন টিকলো না?
— বোন আপনি এখন চলে যান। রাজ ঘুম থেকে উঠছে যদি এইসব শুনে তাহলে কষ্ট পাবে।
— হুমম যাচ্ছি। সত্য কখনো চাপা পরে না বুঝলে। তোমার ছেলে এলাকায় মেয়ে নিয়ে ঘুরবে আর আমরা কিছু বললেই এলাকার মানুষ খারাপ।
মা ওনার কথায় কোন জবাব দিলো না। শুধু চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো শুনলো।আসলে সত্যের দিন কবেই হয়ত চলে গেল। নিত্তিয়া আমার ক্লাস মেট ছিল কলেজে। ওরে কয়েক বার আমি ওর বাসায় দিয়ে আসছি আর এলাকার মানুষ এটাকে কি ভেবে নিলো। আজ হয়ত আমার বাবা মা চুপ কিন্তু কতটা সহ্য করবে ওরা। একদিন ওরাও আমার দিকে আঙ্গুল তুলবে। আর তাছাড়া নিত্তিয়াকে আমি ভালই বাসি কিন্তু সেটা তো পাড়ার লোকের জানার কথা না কারন আমার ভালবাসার কথা তো নিত্তিয়া নিজেও জানে না।
— মা আন্টি কি বলতে এসেছিল?
— তেমন কিছু না। তুই খাওয়া দাওয়া করে কলেজে ক্লাস করতে যা।
— হুম।
আমি জানি সবাই আমার উপর বিরক্ত কিন্তু এতে আমার হাত কোথায়? আমি তো কম চেষ্টা করি নি। আমি আর বাসায় বসে থেকে কথা না শুনে খাওয়া দাওয়া করে কলেজের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলাম।
কলজে এসে দেখি আরো ৩০ মিনিট পর ক্লাস শুরু হবে। আসলে আমি রুটিনটা পাই নি তাই তারাতারি চলে এসেছি। একদিকে বাবার আলালের ঘরের দুলালরা বাইক নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে আর আরেক দিকে কিছু ছেলে মেয়ে মাঠে বসে পরছে। আমিও মাঠে বসে পড়ার দলে যোগ দিলাম। ১০ মিনিট ভালই লাগছিল হালকা মিষ্টি রোদে। হঠাৎ আমার কাঁধে কেউ হাত রাখলো। আমি মাথাটা ঘুরিয়ে দেখি আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ আমার ডাকের চিন্তা না করে আমার পাশে বসলো।আকাশ আমায় বলল…
— কিরে তুই কলেজে কি করিস?
— এই তো এই কলেজেই অনার্সের ১ম বর্ষে ভর্তি হলাম।
— মজা করিস না তো।
— মজার কি আছে? যা সত্যি তাই বললাম।
— তোর মত ছাত্র পাবলিক ভার্সিটিতে না টিকে এইসব ন্যাশনাল ভার্সিটিতে ভর্তি হইলি।
— এটা কি লজ্জা দিলি নাকি?
— আরে কি বলিস? তোরে নিয়ে লজ্জা দেওয়ার কি আছে?
— থাক আমায় নিয়ে আর উপহাস করিস না। এখন যে কাজে এখানে এসেছিলি তাই কর।
— হইছে রাজ আমার সাথে রাগ কম দেখা।
— হুমম।
আকাশ আমার সামনে আর বসলো না বরং উঠেই চলে গেল। আসলে এখন তো দেখছি ঘরে বাইরে সমানে উপহাসের শিকার হচ্ছি।
আমি আর কিছুক্ষণ বসে থেকে ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাসের অনেককেই আমি চিনি তবে বেশির ভাগই মুখ চেনা চিনি। আসলে আমি কলেজ জীবনে কারো সাথে মিশি নি। সব সময় শুধু বই নিয়ে থাকতাম আর যে আমার সাথে কথা বলতো আমিও তার সাথে কথা বলতাম। এর জন্য অবশ্য অনেক বার আমাকে উপহাসের শিকার হতে হয়েছে। আমি সবার মত স্মার্ট ফোন চালাই না বলে সবার চোখে ক্ষ্যাত ছেলে।
.
ক্লাস শেষ করে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় আসতেই দেখি আমার কাজিন দিয়া এসেছে।আমাকে দেখে বলল…
— আরে রাজ ভাই তুমি চলে এসেছো?
— কেন রে কোন দরকার?
— ভাইয়া আজ আমার জন্মদিন কিন্তু তুমি একবারও আমায় শুভেচ্ছা জানাও নি।
— ইশশ মনেই ছিল না রে বোন।
— হুমম তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
— হুমম এবার বল তো আমার ছোট বোনটা আমার থেকে কি চায়?
— চাই একটা জিনিস তবে যা চাইবো তা কিন্তু দিতেই হবে?
— হুমম দিবো।
— ওকে আজ রাতে বার্থ দে পার্টি তুমি আমাদের বাসায় যাবে।
— কিন্তু….
— কোন কিন্তু নেই। তুমি আমার জন্মদিনে যাবে আর আমায় এটা আমায় তুমি কথা দিয়েছো। আর তাছাড়া তোমার ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তো আমাদের বাসায় যাওই না।
— কেন যাই না? এটা তুই যখন ভর্তি পরীক্ষা দিবি তখন বুঝবি।
— এতো বুঝে শুনে কাজ নেই। আমার বুঝা গুলো তুমিই বুঝে নাও ওকে।
— আচ্ছা যাবো নে।
আসলে দিয়াদের বাড়িতে আমি যাই না কারন ওদের পাশের বাসায় নিত্তিয়া থাকে। যদিও আমি নিত্তিয়াকে ভালবাসি তবুও ওরে বলার সাহস পাই না। কারন সবাই বলে আমার জীবনটা নাকি অন্ধকারে চলে গেছে। তাই আমি চাই না আমার জীবনের সাথে কারো জীবন জড়াক।
.
রাতে দিয়াদের বাসায় আসলাম। আমি বাবার থেকেই টাকা নিয়ে একটা গিফট কিনে নিয়ে আসলাম। আসলে আমার টিউশনি থেকে পাওয়া বেতনের টাকা আমি নিজেই দেখতে পারি না। কখন যে টাকা আসে আর চলে যায় খেয়ালই থাকে না।
দিয়া আমাকে দেখে খুব খুশি কিন্তু দিয়ার মা বাবা যদিও আমায় দেখে খুশি তবুও এমন একটা ভাব ধরে আছে যেন আমি বিনা নিমন্ত্রণে চলে এসেছি।
একটু পর দিয়া কেক কাটার সাথে সাথে আমি বাসা থেকে বেড়িয়ে আসি যেন আমায় কেউ না দেখে। ক্লাস ওয়ান থেকে এই পর্যন্ত ১২টা বছর লেখাপড়ায় যোগ করলাম কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি ভার্সিটিতে না টিকতে পেরে আমার থেকে জীবনের আগামী ৪০ বছরের সুখ বিয়োগ হয়ে গেল।
আমি ওদের বাসা থেকে বের হয়ে পাশের দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনলাম। যদিও আমি এটা পছন্দ করি না আর খাইও না। তবু আজ বড্ড ইচ্ছা হচ্ছে এটা খাওয়ার। পরীক্ষা খাতায় অনেকবার লেখেছি সিগারেটের একটা টান আমাদের শরীরে ১০ থেকে ১৫ PPMS পরিমান ক্ষতি করে। আজ সেটাই বাস্তবে পরীক্ষা করতে যাবো। যেখানে নিজের আপন আত্নীয়রাও পরের চোখে দেখে এতে আমার যতটা ক্ষতি হয়েছে, একটা সিগারেট খেয়ে তো তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে না।
আমি সিগারেট টা কিনে মোবাইল টা অফ করে দিলাম। কারন দিয়া নয়ত ফোন দিতে পারে। আমি সিগারেট টা জ্বালিয়ে একটা টান দিলাম আর কাশতে শুরু করলাম। কাশতে কাশতে পিছনে ফিরতেই দেখি নিত্তিয়া দাঁড়িয়ে আছে। আমি সিগারেট টা লুকানোর চেষ্টাও করলাম না। তখন নিত্তিয়া বলল…
— শুনে ছিলাম রাজ কখনো সিগারেট ছুঁয়েও দেখে না আর কোন মেয়েদের সাথে সম্পর্কও করে না।আজ সেই রাজের আসল চেহারা সামনে চলে আসলো।
— (আমি চুপ)
— স্কুল জীবন আর কলেজ জীবনে তোমার সাথে আমিও লেখা পড়া করে ছিলাম। সেখানে সবাই তোমাকে আইডল মানতাম। বার বার ইচ্ছা হতো রাজের পাশে বসে ক্লাস করি তাহলে হয়ত পড়া গুলো খুব তারতারি বুঝবো। কিন্তু আজ সব কিছুই বদলে গেল।
— নিত্তিয়া তুমি আমায় ভুল বুঝতেছো।
— হুমম যা দেখতে পারছি এটাই আমার সব চেয়ে বড় ভুল।আর আরেকটা কথা হলো “রাজ কখনো তুমি আমার সামনে আসবে না। আমার সব স্বপ্ন নষ্ট করে দিলে “।
আমি নিত্তিয়াকে আটকাতে যেতেই সব চেয়ে কঠিন ঘটনাটি ঘটলো আর সেটি হলো নিত্তিয়া আমায় চড় মারলো। রাস্তায় অনেক বাজে ছেলে এটা দেখে মজা নিতে লাগলো। আমি আর সেখানে না দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
.
সকালে ঘুম ভাঙ্গলো মায়ের ডাকে। মায়ের পাশে দেখি একটা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে।
— মা কি হলো?
— রাজ ওনি এসে ছিল ওনার ছেলেকে তোর কাছে পড়াইতে? তুই যদি বাসায় গিয়ে পড়াস?
— হুমম পড়াবো। কিসে পড়ে আপনার ছেলে?
— ক্লাস এইটে পড়ে। (মহিলাটি বলল)
— ও আচ্ছা কবে থেকে পড়াতে যেতে হবে?
— আজ বিকালে তুমি আমাদের বাসায় এসো। আর আমার ছেলের সাথে বসে সময়টা ঠিক করে নিও।
— আচ্ছা আপনার নাম্বার টা দিয়ে যান।
— ওকে।
তারপর মহিলার নাম্বারটা একটা কাগজে লেখে নিলাম। মহিলাটা চলে গেল। আমি ওয়াশরুমে যেতে যাবো তখন জানালা দিয়ে দেখি পাশের বাড়ির আন্টির সাথে আজকে আসা মহিলাটা কথা বলছে। এই পাশের বাড়ির আন্টি তো আমাকে জীবনেও একটু ভাল করে দেখে নি। আমি ওদের কথা শোনার জন্য একটু সামনে এগিয়ে গেলাম। সামনে যেতেই পাশের বাড়ির আন্টির কিছু কথা শুনতে পেলাম………
— আরে বোন এই রাজ তো নামের লেখা পড়া করছে। এই ছেলে না লাগে যজ্ঞে আর না লাগে হোমে।এর কাছে পড়িয়ে নিজের ছেলেকে ফেল করাতে চাও।
— না না আমার ছেলেকে ওর মত বানাতে চাই না।
— আরে বোন রাজ নিজেই একটা পাবলিক ভার্সিটিতে টিকতে পারলো না আর তোমার ছেলেকে কি শিখাবে? ( বলেই হাসতে লাগলো)
আমি জানালার সামনে এবার ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমাকে নিয়ে আরো কিছু কথাই বলল।আমি চুপচাপ শুধু শুনলাম।যখন পাশের বাড়ির আন্টি আমায় দেখতে পেল তখন চুপ হয়ে গেল। আমি রুম থেকে বের হয়ে ওনার সামনে গেলাম।
— আন্টি আপনি ওনাকে কি বলছিলেন?
— তেমন কিছুই না।
— হুমম আমার কাছে যেন ওনার ছেলেকে না পড়ায় এটা তো কোন কথাই না।
— (আন্টি চুপ করে রইলো)
— আন্টি কারো পেটে লাথি মারা কথাটার মানে বুঝেন তো। লাথি মারলেই শুধু লাথি মারা হয় না। কারো থেকে কাজ কেড়ে নিলে এই কথাটা বুঝায়।
— আমি তো কিছুই বলি নি।
(এতক্ষনে অনেক মানুষ জমে গেল)
— আন্টি মিথ্যার বলার দরকার কি? যদি সৎ সাহস থাকে তাহলে সত্যিটা বলেন না।আমি একটাও ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে পারি নি। এটাই তো আমার দোষ। একটু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন তো আপনি কতটুকু লেখা পড়া করেছেন। আমি যতটুকু শুনেছি আপনি নাকি ফাইভ পাশ করার পরই আপনার বাসা থেকে বিয়ে দেওয়া হয়। আচ্ছা তখন কি কেউ বলে নি যে আপনি নিজের লেখাপড়াও শেষ করতে পারেন নি। এই কথাটা বলার জন্য মাফ করে দিয়েন। আচ্ছা আপনার মেয়ের তো বিয়ে হয়ে গেছে। ওনি তো ইন্টার পরীক্ষা দেওয়ার আগে ওনার বিয়ে দিয়ে দেন। আচ্ছা ওনাকে কেন লেখাপড়া করতে দেন নি? এটা নিয়ে যদি আপনার মেয়ের শশুড় বাড়িতে উপহাস করে তাহলে আপনার কেমন লাগবে? যাই হোক, আপনার কথা তো বাদই দিলাম। আচ্ছা এখানে যারা উপস্থিত আছে তাদের মাঝে কয়জনের ছেলে মেয়ে পাবলিক ভার্সিটি পরে বলতে পারেন। হয়ত বলতে পারবেন না কিন্তু আমি টিকি নি বলে আমাকে নিয়ে উপহাস করার এক বিন্দুও ছাড়েন নি। আপনি কি জানেন প্রতি বছর সাড়ে আড়াই লক্ষ ছেলে মেয়ে লেখাপড়া শেষ করে বেকার বের হচ্ছে। এর মাঝে ৪০% বেকার হলো পাবলিক ভার্সিটির ছাত্রছাত্রী। এবার আপনি বলুন তো এই ৪০% বেকার পাবলিকের ছাত্রছাত্রীরা কি করবে? আচ্ছা এইসব বাদ দেন? সম্প্রতি গত জে.এস.সি পরীক্ষায় ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ। এর মাঝে ১৮ লাখের মত পাশ করেছে।এবার ওর নাইনে ভর্তি হবে তারপর এস.এস.সি দিবে। তারপর ধরেন সেই ১৮ লাখের থেকে ১৪ লাখ পাশ করলো। এবার এই ১৪ লাখ কলেজে ভর্তি হবে আর এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিবে। এবার ধরেন এদের মাঝে ১০ লাখ ছাত্রছাত্রী পাশ করলো। তারপর এর মাঝে ৮ লাখ শিক্ষার্থী ভার্তি পরীক্ষায় অংশ নিলো। সম্পূর্ণ বাংলাদেশে পাবলিক ভার্সিটির সিট ১ লাখও নেই। এবার ৮ লাখ যে পরীক্ষা দিলো তাদের মাঝে কয়জন টিকবে একটু বলবেন। আর বর্তমানে তো টাকা দিয়ে সিট কিনে নিচ্ছে মানুষ। আন্টি আমার আর কিছুই বলার নেই। যদি আপনার আমাকে নিয়ে আরো কিছু বলার সাথে তাহলে বলতে পারেন।
আমি আন্টির কোন কথা শোনার জন্য না দাঁড়িয়ে চলে আসলাম। রুমে এসে দেখি মা কান্না করছে।আমি মায়ের সামনে গেলাম….
— মা তুমি কান্না করছো কেন?
— রাজ আজ যদি তুই কোন ভার্সিটিতে টিকতে পারতি তাহলে হয়ত এতো কিছুর মুখমুখী হতে হতো না। আর আমাকেও রোজ রোজ এইসব তর্কে জড়াতে হতো না।
— মা তুমিও ওদের মত শুধু পাবলিক ভার্সিটির কথা বলো।
— আমি না। গতকাল রাতে তোর বাবা অনেকে রাগারাগি করেছে।
— আচ্ছা আর কান্নাকাটি করো না। বাবাকে বলে দিও ওনার ছেলে আর কখনো ওনাকে কারো কাছে উপহাসের পাত্র বানাবে না।
আমি কথাটা বলে মায়ের সামনে থেকে চলে আসলাম। সারাদিন আমি ঘর বন্ধি হয়েই কাটিয়ে দিলাম। কারে উপহাস আর সহ্য হচ্ছে না। এই কি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।
.
রাত প্রায় ১১টা বাজে। একটু আগে আমি মা আর বাবার সাথে বসে রাতের খাবার খেলাম। কিন্তু বাবা আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি। শুধু বলেছে এমন ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল। হুম এখন আমি তাই করবো। টেবিলে খাতা,কলম আর পাশে একটা নতুন ব্লেড রাখা আছে। আমি খাতাটা খুললাম আর লেখতে শুরু করলাম…
প্রিয় বাবা, আজ থেকে আমার জন্য তোমাকে আর উপহাস করতে হবে না। তুমি তো সব সময়ই বলতে আমি কিছুই করতে পারবো না। কিন্তু আজ বুঝবে তোমার ছেলে পৃথিবীর সব চেয়ে কঠিন কাজটা করতে পারে আর সেটা হলো আত্মহত্যা। আমিও জানি এটা খারাপ কাজ কিন্তু তোমাকে যে প্রমান দিতে চাই। আজ যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে হয়ত আগামী ৪০টা বছর আমাকে বেঁচেও মরে থাকতে হবে। তবে বাবা কথা দিচ্ছি আমি সব সময় দূর থেকে তোমাদের দেখবো। জানো বাবা আমি তিনটা মানুষকে খুব ভালবাসতাম। তোমাকে,মাকে আর নিত্তিয়াকে। আপাতত ৩ জনেই আমাকে বুঝলে না তাই আমার বেচেঁ থাকার দরকার নেই। পৃথিবীতে উপহাসের কারনে প্রতিদিন ২৫০+ মানুষ মৃত্যু বরন করছে। তাদের মাঝে না হয় আমার সংখ্যাটাও যোগ হলো। তোমরা সবাই ভাল থেকে আর যদি পারো আমাকে নিজের থেকে দূরে সড়িয়ে দিয়ো। আর মা তুমি কেঁদো না। এখন থেকে কারো থেকে তোমাকে কথা শুনতে হবে না ভাল থেকো।
তোমাদের অপ্রিয় ছেলে
“রাজ”
চিঠিটা লেখা শেষ করে চোখটা বন্ধ করে বাবা মাকে স্মরন করে হাতের শিরায় ব্লেডটা বসিয়ে দিলাম। আমার প্রতিটা সময়কে যেন আমি আমার সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। হয়ত মৃত্যুর আগে একটা মানুষ তার অতীতকেও ভুলতে পারে না। আমার হাত থেকে রক্তের ফোটা পরছে আর জীবনের প্রতিটা সেকেন্ড মনে পরছে। আর শেষ চোখের পাতা বন্ধ হওয়ার সময় মা আর বাবার চেহারাটা বেশে উঠলো।
.
সকালে আমার লাশটা রুম থেকে বার করা হলো। বাবা মা কেঁদেই চলেছে। এখানে নিত্তিয়াও রয়েছে। ওর চোখের কোনেও দুই ফোটা জল দেখতে পারছি। পাশের বাড়ির আন্টি টাও চোখে মুছতেছে। কিন্তু পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু লোক বলতে শুরু করলো “জীবনে কিছু করতে পারি নি বলে আত্মহত্যা করেছি। ” হায়রে মানুষ তোমরা সত্যি রঙ্গিন ফানুস।অন্তত মৃত মানুষটার কথা ভেবে একটু চুপ করো।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত