বোঝা

বোঝা

:-এইই,তোকে না বলছি তুই আমার সামনে আসবি না,আবার এসেছিস?(নিহা)
:-আসলে,আমি খেয়াল করি নাই যে আপনি এখানে প্লিজ ক্ষমা করে দিন।(অনুরোধের সুরে কথাটা বলেই,মাথা নিচু করে ফেলল রাজু)
:-আচ্চা,এরপর যদি তুই আমার সামনে আসিস তাহলে তোকে টি,সি হাতে ধরিয়ে দিব,যত্তসব আবাল মার্কা পোলা।

এই বলে নিহা রাজুর সামনে থেকে চলে গেল। রাজুও আর কিছু না বলে ভার্সিটি থেকে বাসার দিকে রওয়ানা দিল।

নিহা যেই তার ক্লাসে ডুকলো,তখন তার বান্ধবি স্নেহা বলল,
:-কিরে,তুই রাজুর সাথে কি কথা বললি যে ও তোর কথা শুনেই ক্লাস না করে চলে গেল(স্নেহা)
:-কোন রাজু?(নিহা)
:-আরে গেইটের সামনে দাড়িয়ে যার সাথে কথা বলছিলি।
:-ওই আবাল আর খ্যাত মার্কা ছেলেটার কথা বলছিস,আরে ওকে তো আমি আমার সামনে আসতে নিষেধ করলাম,ক্লাস করতে তো বারণ করি নাই,পুরোই আবাল,হা হা হা,,
:-নিহা,তুই কেন ওর শুধু শুধু এমন করস ও তো একজন মানুষ নাকি?
:-আবালতো পুরোই আবালও আবার মানুষ নাকি,আর তুই ও তো দেখি আবালের পক্ষ নিতেছিস,আবাল হতে চাস নাকি?চল ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
:-আচ্ছা চল।
এই বলে তারা ক্লাস করতে চলে গেল।
আর অপরদিকে রাজু আনমনে রাস্তা দিয়ে হাটতেছে আর ভাবতেছে,”আসলে কি রাজু দেখতে এত খারাপ?”
এবার রাজুর আর নিহার পরিচয়টা দিই।
নিহা হলো ধনি পরিবারের সন্তান।যা চায় তাই পায়।তার বাবা তাদের ভার্সিটির প্রিন্সিপাল।যার কারণে নিহার দেমাগটা একটু বেশি।ওর কারণে,অনেক ছেলেকে তার বাবা টি,সি হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।তাই ভার্সিটির কোন ছেলে তার সাথে কথা বলাতো দুরে থাক,তার দিকেই তাকাতেই পারে না।
রাজুকে যেদিন নিহা ভার্সিটিতে দেখে,ঐদিনই সে তাকে বলে দেয়,তার সামনে যেন রাজু না আসে।আসলে তাকে টি,সি হাতে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
রাজু যখন জানতে পারে,নিহা প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়ে।তখন থেকে নিজেকে নিহার আড়ালে রাখে।
আর রাজু হলো নিহারই ক্লাসমেট।এবার অনার্স ১ম বর্ষে।একটা মেসে থেকে,অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালায়।
বলতে পারেন রাজুর আপন বলতে কেউ নাই।
রাজু সবই ছিল।যখন তার মা জীবিত ছিল।এখন সব থেকেও নেই।
রাজু যখন ক্লাস সেভেনে উঠে,তখনই তার মা একটা কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।যার ফলে তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে।এরপর থেকেই তার উপর শুরু হয়,তার সৎ মায়ের অমানুষিক নির্যাতন।তাকে প্রতিটা অক্ষরে অক্ষরে কটুক্তিকর কথা শোনাতো।কারণে অকারণে মারধর করত।
আর তার বাবাও হয়েছে সেইরকমের।তিনি রাজুকে তার সামনে কিছু বলতো না।
রাজু যতই দিন দিন বড় হতে লাগল,ততই তার উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকলো।
যখন তার সৎমায়ের ঘরে ছেলে হয়,তখনই রাজুকে তার সৎ মা,কথার আকার ইংগিতে বাহির হয়ে যেতে বলত।
কিন্তু রাজু উনার কথায় কান না দিয়ে বেহায়ার মতই সেখানে থেক যেত।
রাজু ইন্টার পরিক্ষা শেষ করে যখন ভার্সিটিতে পড়ার জন্য তার বাবাকে বলে,তখন তিনি এক কথায় বলে দেন,তিনি নাকি রাজুর পড়ালেখা আর চালাতে পারবে না।
তাই রাজু তার বাবাকে তার পড়ালেখার ব্যাপারে কিছুই বলল না।
একদিন গভীর রাতে রাজুর ঘুম ভাংলে তার মা-বাবার আলাপ শুনতে পায়।আলাপটা এমন ছিল,
:-তুমি এই বোঝাটাকে বাহির করবে না আমি বাহির হয়ে যাবো?(রাজুর সৎ মা)
:-কিভাবে বাহির করবো?ওতো আমার ছেলো হয় নাকি?আমি কি ভাবে তাকে বাহির হতে বলব,,?তুমি পারলে তাকে বাহির করে দাও।(রাজুর বাবা)
:-আচ্ছা,তাহলে আমি তাকে মিথ্যা চুরির অজুহাতে বাহির করার ব্যবস্থা করবো,কি বলো?
:-তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই কর।
রাজু তার বাবার মুখে এমন কথা শুনে সারারাত ভর কাদে।
পরদিন সকালে সে কাপড়-ছোপড় গুছিয়ে,,,তার হাতে থাকা কিছু টাকা নিয়ে বাহির হয় অজানা পথের দিকে।
রাজু বেরিয়ে গিয়ে উঠলো একটি ব্যস্ত শহরে।যে শহরে মানুষের থেকে সময়ের মুল্য অনেক বেশি।
শহরটায় রাজু যাওয়ার কারণ হলো,এ শহরে রাজুর মামা তার পরিবার নিয়ে এখানে থাকে।আর তার কাছে তার মামার ঠিকানা থাকায় সে,তার মামার বাসায় গিয়ে উঠলো।তার মামা ছিল সহজ সরল।তাই তার মামাও তাকে আর কিছু বলল না।
তবে তার মামি তার দিকে কেমন করে যেন তাকালো।
যাইহোক,রাজু তার মামাকে বলল যে সে পড়ালেখা করতে চায়।
তার মামাও তার একথায় সায় দিলেন।
তার কাছে থাকা টাকাগুলো দিয়ে,তার মামা তাকে ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিল।
রাজুর দিনকাল এভাবেই চলছিল।

ইদানিং তার মামিও তার সাথে কেমন যেন ব্যবহার করছে।করবেনা কেন?যেখানে রাজুকে নিজের বাবাই বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল,সেখানে মামিতো পরই।

আর অপরদিকে রাজু যেদিন ভার্সিটিতে যায়,সেদিন রাজুকে দেখে নিহার ঘৃনাবোধ হয়।
ঘৃনা হবেই বাই না কেন?
রাজুর চালচলন দেখে,আর পোশাক-পরিচ্ছেদ দেখে সকলেই কেমন করে তার দিকে দেখতো।
নিহা তো সুযোগ পেলেই সকলের সামনে রাজু কে অপমান করে।
কেন করে?
সেই কথাটা আদো রাজুর অজানা।
আর ঐদিনই নিহা রাজুকে তার সামনে যেতে বারণ করে দেয়।
আর রাজুও কিছু না বলে নিজেকে নিহার থেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করে।
আজ কেমনে যেন আবার নিহার সামনে পরে যায় রাজু।যার কারণে তাকে এখন ভার্সিটি থেকে বাহির হয়ে আসতে হল।
যদি আবারও নিহার সামনে পড়ে,তাহলে তাকে হয়তো বা,ভার্সিটি থেকে একেবারে টি,সি নিয়ে বাহির হতে হবে।

এখন রাজু রাস্তা দিয়ে আনমনে হাটতেছে,আর ভাবতেছে,কেন যে তার সাথে সকলে এমন করে?যাদের মা নেই,তারা কি আসলে পৃথীবির বোঝা?
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে সে।
হাটতে হাটতে রাজু একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে একটা গাছের নিছে বসল।
তার পেটেও অনেক ক্ষুদা লাগছে।কিছু কিনে খাবে,সে টাকাও পর্যন্ত নেই।
আজ সকাল থেকে না খেয়ে আছে রাজু।
রাজু যখন ঘুমে ছিল,তখন তার মামা খেয়ে-দেয়ে অফিসে চলে যায়।
আর রাজু যখন ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করতে টেবিলে যায়,তখন,
:-কিরে,এখানে কেন আসছিস?(রাজুর মামি)
:-আসলে মামি,আমি আজ ভার্সিটিতে যাবো,এখন যদি কিছু খাবার।(রাজু)
:-ভার্সিটিতে যাবিতো যা,এখানে কোন খাবার নাই।আর আমরা এখানে কারও জন্য কোন খাবারের ফ্যাক্টরি নিয়ে বসি নাই যে,চাইলেই খাবার পাওয়া যাবে।(রাজুকে হিট লাগিয়ে কথাটা বলে তিনি রান্নাঘরে চলে গেল)
আর রাজু কিছু না বলেই,ভার্সিটির উর্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
এরপরের,কাহিনীতো আগের পর্বেই জানলেন।

রাজু এখন নির্জনে বসে,তার আগের দিনের কথা ভাবতেছে।যখন তার মা জীবিত ছিল,তখন সবাইতো ওকে খুব ভালোবাসতো।আর এখন?
তাহলে কি মা ছাড়া সবই মিথ্যা?
আর তা না হলে,যখন তার মা জীবিত ছিলো তখনতো তার বাবা তাকে উনার জীবনের ছেয়েও বেশি ভালোবাসত।
আর এখন?
আজ প্রায় চারমাসের মত হবে,রাজু তাদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে চলে এসেছে।অথচ তার বাবা এখনও পর্যন্ত তার কোন খোজ-খবর নিলো না যে,রাজু বেচে আছে কি মরে গেছে?
একটা সময় ছিলো,যখন তিনি কাজ করে বাসায় পিরতো,তখন তিনি রাজুকে একনজর না দেখলে কিছুতেই উনার মনে শান্তি পেত না।
রাজুকে সাথে করে বসে খাবার না খেলে খাবারে তৃপ্তি পেত না।
রাজুকে সাথে করে ঘুমাতে না গেলে,কিছুতেই উনার ঘুম আসতো না।
আর এখন তিনি দিব্যি শান্তিতে আছে রাজুকে ছাড়া।
এসকল কথা ভাবতে ভাবতে রাজু তার চোখে জলের উপস্থিতি অনুভব করলো।

যাইহোক,এখন প্রায় দুপুর হয়ে আসছে।
তাই রাজু বাসার উর্দেশ্য রওয়ানা দিলো।
রাজু এতক্ষন পর্যন্ত এখানে বসে সময় কাটানোর কারণ হলো,
রাজু যদি এখন বাসায় থাকতো,তাহলে তাকে তার মামির বিভিন্ন ধরনের কটু কথা শুনতে হত।
তাই সে এ নির্জনে বসে সময় কাটালো।
এখন রওয়ানা দিল এই কারণে যে,এখন তার মামা বাসায় থাকবে।আর উনি বাসায় থাকলে রাজুকে তার মামির কথা শুনতে হয় না।
কারণ,রাজুর মামি রাজুকে তার মামার সামনে কিছুই বলে না।রাজুকে উনি যা বলে সব রাজুর মামার অনুপস্থিতে।
যাইহোক,
দীর্ঘক্ষন হাটার পর রাজু বাসায় পৌছালো।
শরীরটা অনেক দুর্বল হয়ে আছে।তার উপর সে এখনও না খেয়ে আছে।
রাজু বাসার কলিংবেল বাজালে তার মামাতো ভাই দরজা খুলল।
(আপনাদের তো বলাই হয়নি,রাজুর একটি মামাতো ভাই আছে।তার নাম সজিব।এখন সে ক্লাস ফাইভে পড়ে।রাজু আর সে একই রুমে থাকে এবং পড়াশুনা করে।সজিব রাজুকে খুব ভালোবাসে এবং রাজুও।সজিব রাজুর কাছেই রাতে পড়াশুনা করে।যার ফলে রাজুকে তার মামা ও হাত খরচের টাকা দেয়।)
:-আরে ভাইয়া,তুমি আজ ভার্সিটিতে গেছ?(সজিব)
:-হুমম,মামা বাসায় আছে(ভেতরে ডুকতে ডুকতে বলল রাজু)
:-হুমম।
তখনই,
:-এইই সজিব,কেরে আসছে?(রাজুর মামি)
:-আম্মু,রাজু ভাইয়া আসছে।(সজিব)
:-ওই,লাটসাহেবের বাচ্চা নাকি?(রাজুর মামি)
:-আম্মু,তুমি এমনভাবে কথা বলছো কেন?(সজিব)
:-তুই কোন কথা বলবি না।
রাজু তার মামির কথাগুলো মাথায় না নিয়প রুমের দিকে চলে গেল।কারণ সে জানে,যদি রাজু এখন উনার সামনে থাকে,তাহলে তিনি আরো কিছু কথা শুনিয়ে দিবে।
রাজু রুমে ডুকার পরই,সজিব ডুকেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল,
:-ভাইয়া,আম্মু তোমার সাথে এমন করছে কেন?(সজিব)
:-এমনিই(রাজু)
:-আম্মুতো,তোমাকে কখনই এমন করে কথা বলেনি।আজ কয়েকদিন ধরে খেয়াল করলাম আম্মু তোমাকে কেমন ঝাঝি মেরে কথা বলে।
:-সজিব,তোমারে তোমার আম্মু বকে না?(রাজু)
:-হুম।(সজিব)
:-তাহলে তিনি আমাকেও বকবেন,এটাই স্বাভাবিক।কি বলো?
:-হুমম,তবে তুমিতো বড়।তোমাকে বকাটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।
:-আরে বড়রা ছোটদের বকবে,এটাই স্বাভাবিক।আমি তোমার বড়,কিন্তু উনাদের ছোট।তাই,বোঝাতে পেরেছি নিশ্চয়?
:-হুমম,ভাইয়া,তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।তারপর একসাথে খেতে যাব।
রাজু আর কিছু না বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেল।আর সজিব রাজুর জন্য রুমে বসে অপেক্ষা করতে লাগল।
রাজু ফ্রেশ হয়ে আসলে,সজিব আর রাজু একসাথে খাবার টেবিলে যায়।
রাজুর মামা আসলে খেতে বসে তারা।
এ ফাকে রাজুর মামি কয়েকবার রাজুর দিকে কেমন করে তাকালো।
তিনি রাজুকে এটা বোঝাতে চাচ্ছেন,উনার কাছে রাজুকে বিরক্ত লাগে।
যাইহোক দুপুরের খাবার খেয়ে রাজু আর সজিব তাদের রুমে গিয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নেয়।

এরপর ঘোরাপিরা পড়ালেখা করে রাজু আর সজিব রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যায়।

ঘুমানোর কিছুক্ষন বাদে রাজুর ঘুম ভেংগে যায়,কারো ঝগড়ার আওয়াজে।
হ্যা,আওয়াজটা আসছিল তার মামার রুম থেকে।
এই রুম থেকে ওই রুমের কথা স্পষ্ট না হওয়ায়,রাজু তার মামার রুমে গিয়ে দরজায় কান দেয়,এরপর,
:-এই গলার আওয়াজ ছোট কর,তা না হলে তোমার খবর আছে।(মামা)
গলার আওয়াজ আরো জোরালো করে,
:-তুমি কি করবে আমায়,আমি কালই ওই ফকিরেরর বাচ্ছাকে এখান থেকে বাহির করতেছি,(মামি)
তখনই,
:-ঠাসস,তুমি আমার বোনকে ছোট করতেছ?তোমার সাহসতো কম না(রাজুর মামা তার মামিকে চড় মেরে বলল)
:-তুমি আমাকে মারলে?এই রাস্তার ছেলেটার জন্য তুমি হয় এই বোঝাটাকে দুই দিনের মধ্যে বাহির করবে আর নাহয় আমিই বেড়িয়ে যাবো।(কাদতে কাদতে কথাগুলো বলল তার মামি)

না।রাজুর আর কিছু শুনতে মন চাইলো না।তাই সোজা রুমে চলে আসল।এসে দেখে সজিব ঘুমিয়ে।তাই রাজু আর কিছু না ভেবে তার কাপড়-ছোপড় গুছিয়ে নিতে লাগল আর চোখের পানি ফেলতে লাগল।
তার মামা-মামির রুম থেকে আর কোন আওয়াজই আসতেছে না।
তার মানে ঝগড়া থেমেছে।
আর রাজু চায় না,তার কারণে তার মামা-মামির সংসারে কোন প্রকার ঝামেলা হোক।তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল এখান থেকে চলে যাওয়ার।
একমুহুর্তের জন্য রাজু চোখ বন্ধ করে ভাবল,
এখন তার কাছে কোন টাকা পয়সা ও নাই।এখন যদি সে বাহির হয়ে যায়,তাহলে সে কোথায় যাবে।
বাড়ির পথ তো রাজু আর মাড়াবেই না।তাহলে,
পরে রাজু একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হলো,
মাস শেষ হলেই তো,তাকে তার মামা কিছু হাত খরছের টাকা দিবে।তখন নাহয় একেবারেই চলে যাবে এ বাড়ি থেকে।আর মাস এখন শেষের দিকে।

এইসকল কথা ভাবতে ভাবতে রাজু আবার ও চোখের পানি পেলতে লাগল।যদি আজ তার মা জীবিত থাকত,তাহলে হয়তো তাকে এমন দিনগুলো দেখতে হতো না বা এসব নিয়ে কখনো তাকে ভাবতে হতো না।
এগুলো ভাবতে ভাবতে রাজু ঘুমিয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে রাজুর ঘুম ভাংলো সকলের আগে।তাই সে আর কিছু না ভেবে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে লাগল।
এ সময়ের মাঝে সকলে ঘুম থেকে উঠলো।

তার মামা যদিও স্বাভাবিক আচরন করছে রাজুর সাথে,কিন্তু তার মামি তার সাথে কেমন খারাপভাবে আচরন করছে।
রাজু এসব মাথায় না নিয়ে,নাস্তা করে ভার্সিটির দিকে রওয়ানা দেয়।

ভার্সিটি গিয়ে রাজু যেই গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল।
অমনি কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে রাজু মাটিতে পড়ে গেলো।
মাটি থেকে উঠে রাজু যেই মাথাটা নিচু থেকে উচু করল,
:-ঠাসসসস,,,,
চড়টা রাজুর গালে পড়ল।হ্যা,চড়টা রাজুকে নিহাই দিল।কারণ রাজু নিহারই সাথে ধাক্কা খেয়েছে।
এটা হলো ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।
রাজু যেখানে নিজেকে নিহার থেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করে,সেখানে সে বারবার পড়ে।

অবশেষে রাজু চড়টা খেয়ে মাথা নিচু করে রাখলে,নিহা রাজুর হাত ধরে প্রিন্সিপালের মানে তার বাবার রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল।

আর ভার্সিটির সকলে এই দৃশ্যটা উপভোগ করছিল।আর কেউ কেউ বলবলি করছে,ছেলেটার ঘাড়ে আজ না জানি কি নেমে আসবে।

অবশেষে রাজু প্রিন্সিপালের রুম থেকে বাহির হয়ে আসলো।
তবে চোখে পানি এবং হাতে কাগজ নিয়ে।
হ্যা,প্রিন্সিপাল স্যার রাজুকে অনেক কথা শুনিয়ে দিয়ে টি,সি পেপার হাতে ধরিয়ে দেয়।

এখন রাজু মাথা নিচু করে ভার্সিটি থেকে বাহির হয়ে যাচ্ছে।
আর রাজুর দিকে তাকিয়ে আছে ভার্সিটির সকলে।
এখন রাজু মন চাইতেছে নিজেকে শেষ করে দিতে।

অপরদিকে নিহা আজ মনে মনে শান্তি পেল।কারন,সে চাইছিলো রাজুকে যে কোন প্রকারে ভার্সিটি থেকে বাহির করতে।কারন,সে চায় না রাজু মত ক্ষ্যাত ছেলে তাদের ভার্সিটিতে থাকুক।

হঠাৎই নিহার চোখ গেল ভার্সিটির বাইরের রাস্তার জটলার দিকে।
সেখানে অনেক মানুষ যেন কোন কিছুকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে।
তাই সে আর দেরী না করে ওখানে গেল।
নিহা জটলার কাছে গিয়ে,
নিহা দেখল ছেলবয়সি কেউ একজন মনে হয় এক্সিডেন্টের স্বীকার হয়েছে।
লোকজন বলাবলি করছে,ছেলেটি নাকি মারা গেছে।
ছেলেটিকে দেখে,নিহার কেমন যেন পরিচিত মনে হলো।তাই সে নিশ্চিত হতে ভীড় ঠেলে ছেলেটির সামনে গিয়ে,ছেলেটির চেহারার দিকে তাকিয়েই নিহা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।
হ্যা,ছেলেটি আর কেউ নয়।ছেলেটি হলো রাজু।
রাজু যখন ভার্সিটির গেট থেকে আনমনে হেটে রাস্তা পার হচ্ছিল,তখনই রাজুর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের নিছে চাপা পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই মারা যায় রাজু।
আর তার পাশে পড়ে রয়েছে তাকে দেওয়া টি,সি পেপারটা।
হ্যা,রাজু আজ সবাইকে মুক্ত করে দিয়েছে।এতদিন সে বোঝা হয়েছিল এই পৃথীবির জন্য।
আজ সে পৃথীবিটাকেও মুক্ত করে দিল তার বোঝা হওয়া থেকে।
আজকের পর থেকে কেউই রাজুকে বোঝা বলতে পারবে না।
পারবে না কেউ তাকে খ্যাত বলে ডাকতে।
আসলেই কি রাজু পৃথীবির বোঝা ছিল,,,,,?

……………………………………….সমাপ্ত………………………………….

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত