রিক্সা চালক ছাত্র

রিক্সা চালক ছাত্র

এবার বক্তৃতা দেয়ার জন্য আমাকে মঞ্চে ডাকলো। আমি জানতাম আমাকে ডাকা হবে কারন আমার জন্য এতো বিশাল আকারে অনুষ্ঠান করা হয়েছে এবার বক্তিতা দেয়া শুরু করলাম।

:- ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি তাদের কে যাদের জন্য আজ আমি এই বিশাল জন সভায় বক্তিতা দিতে পারছি।আমি এক মাত্র ছাএ যে টিউশনি না করে রিক্সা চালিয়ে পড়া শুনার খরচ চালয়েছি। আমি SSC পরিক্ষার পর থেকে ভেবে ছিলাম নিজের খরচ নিজে চালাবো কিন্তু তখন পারিনি কারন আমি বেশি পরিশ্রম করতে পারতাম না তবে ইন্টার পরিক্ষার পরে আর হাল ছাড়তে হয়নি। এডমিসন কচিংএ ভর্তি হয়ে একটু সমস্যা হয়েছিল কিন্তু আমার পরিশ্রম এর কাছে তা হার মেনে ছিলো।সকালে কচিং করতাম বিকালে রিক্সা চালাতাম আর রাতে পড়তাম। মাত্র তিন ঘন্টা রিক্সা চালিয়ে ২০০ টা হতো। এভাবে এডমিসন আগে রিক্সা চালিয়েছি এডমিসনের পরে সারা দিন চালাতাম ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতো। আমি যখন রিক্সা চালাতাম তখন সবায় হাসতো বলতো দেখ কি পাগল মানুষ আমরা টিউনশনি করে খরচ চালায় আর ও রিক্সা চালিয়ে। যারা এসব কথা বলত পরে তারাই হন্য হয়ে টিউনশনি খুজে বেরাতো। কিন্তু আমি কখনো টাকার জন্য কারোর কাছো হাত পাতিনি কারন আমি রিক্সা চলাতাম।

যখন ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পোলাম তখন অনেক সম্মান পেয়েছিলাম যশোহর থেকে। আঞ্চলিক পত্রিকায় আমার নামে লেখা হলো কিন্তু যারা টিউনশনি করে নিজের খরচ চালাতো তারাও চান্স পেয়েছে কিন্তু তাদের নামে লিখা হয়নি।

ঢাকাতে আসার পরে যখন রিক্সা চলাতাম তখন সবায় আমাকে দেখে সম্মান করতো। বলত ছেলেটা অনেক পরিশ্রমী তখন বুঝতে পারলাম আমি রিক্সা চালয় বলে আমাকে সবায় ভালোবাসতে চায়। আমাদের কলেজের শিক্ষাকরা আমাকে একটু বেশি ভালোবাসতো কারন আমি রিক্সা চালিয়ে নিজের খরচ চালাতাম। আমি আগে শুনেছিলাম যারা গরীব তাদের নাকি কেও ভালোবাসেনা কিন্তু আমি নিজে প্রমান গরিব দেরকে সবায় ভালবাসতে চায় কিন্তু তারা ভালোবাসার যগ্য নয়।আমি পকেট থেকে ২৬৬৭ ( ছাব্বিশ শত সাতষট্টি) টাকা বের করে আবার বলতে শুরু করলাম।

এই ছাব্বিশ শত সাতষট্টি টাকা আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর হাবীব এর।এখানে হবীব আছে এবং তার বাবাও আছে।কেও হয়তো জানে না হাবীব এর বাবা কি করেন। আমি জানি হাবীব এর বাবা কি করেন সে একজন সাধারন কৃষক তার মাসিক আয় ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার কিন্তু হাবীব এর মাসিক খরচ ১০ হাজারের উপরে হাবীব তার বাবার কাছে পরিক্ষার ফর্মফিলাপ এর নাম করে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ছিলো কিন্তু হাবীব ২০ হাজার টাকা দিয়ে ফর্মফিলাম করিনি। হাবীব সেই টাকা দিয়ে তার প্রেমিকাকে একটা ফোন কিনে দিয়েছিল আর রেস্তরায় খেয়ে টাকা উড়িয়েছে। কিন্তু হাবীব জানতো না তার বাবা টাকা কোথাথেকে তাকে এনে দিয়েছে। বেচারা হাবীব এর বাবা চাষ এর জমিটুকু বন্দক রেখে হাবীব কে টাকা দিয়েছিল আর আমাদের গর্বের হাবীব সেটা দিয়ে প্রেমিকার সাথে আনন্দ করেছে।হাবীব আমাকে বলতো দোস্ত তুই এতো কষ্ট না করে টিউশনি কর আমার মতন। দেখ আমি কেমন বিন্দাস আছি আমি কিন্তু হাবীব এর কথায় আমি সায় দেয়নি। হবীব আমাকে এই কথা বলার তিন দিন পরে আমার কাছে দুই হাজার টাকা ধার চেয়েছিল কিন্তু আমি তাকে টাকা দেয়নি।আমাদের ভার্সিটিতে বেশির ভাগ ছেলে মেয় গরিব কিন্তু গরিবদের অহংকার বেশি। সাইফুল আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর ছেলে তার বাবার মুদি দোকান আছে কিন্তু তার এতো অহংকার যেন মাটিতে পা পড়েনা। তার পরে শিউলি আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর স্মার্ট মেয়ে তার বাবা ফুটপাতে কাপুড় বেচেন কিন্তু শিউলিকে দেখে কেও বলবে সে গরিব ঘরের সন্তান। শউলি আমার রিক্সায় চড়ে ৬ হাজার টাকা নষ্ট করেছে মানে আমাকে আমার পরিশ্রম এর দাম দিয়েছে। শিউলি আমাকে বলতো ছাব্বির আমিতো সব সময় রিক্সা করে যাতায়াত করি তাই ভাবছি তোমার রিক্সা করে যাতায়াত করবো যাতে তোমার একটু টাকা হয়।

আরো এমন উদাহরণ আছে তারা গরিব কিন্তু তাদের পোশাক দেখে মনে হয় অন্য কিছু।

একদিন কলেজে ক্লাস করার জন্য এসে দেখি একজন বয়সকো ব্যাক্তি কান্না করছেন আমি তাকে বল্লাম কি হয়েছে সে বল্ল তার ছেলেকে সুহাগ নামে এক জন অনেক মেরেছে সোহাগ নাম শুনে বুঝতে পারলাম নেতা সুহাগ ভাই এর কথা বলছেন। আমি সোহাগ ভাইকে জিগ্যেস করেছিলাম তাকে কেন মেরেছেন তোখন সোহাগ ভাই বল্ল ছেলেটার বাসা গ্রামে সে একটা মেয়েকে প্রোপজ করেছে মেয়েটার বাবা বড় ব্যাবসাহি কিন্তু ছেলেটা অনেক গরিব বাবা রিক্সা চালায় মেয়েটা তার প্রোপজে রাজি হয়নি বলে মেয়েটাকে বলেছে মেয়েরা শুধু টাকা চিনে আজ আমি গরিব কিন্তু আমি তোর বাবার থেকে বেশি টাকার মালিক হবো তখন তোকে দিয়ে আমার জুতা মুছাবো। তাই আমি ছেলেটার হাত কেটে দিয়েছি সে যেন কখনো আর বড়লোক না হতে পারে কারন সে বড়লোক হলে মানুষকে মানুষ মনে করবে না। আমি সোহাগ ভাইয়ের কথার কোন জবাব দিতে পারিনি

আমাদের কলেজের সেক্রেটারি মনির ভাই সে গ্রেমের ছেলেদের কে প্রেম করতে দেখলে উল্টা পাল্টা মারতেন একদিন আমি তাকে বল্লাম আপনি এমন করেন কেন সে বলেছিল এরা গ্রামের গরিব ঘরের সন্তান এদের বাবা অনেক কষ্টকরে এদের জন্য টাকা পাঠায় আর এরা এখানে আনন্দ করে সেই টাকা দিয়ে। বাবার ঘাম ঝরানো কষ্টের টাকা দিয়ে মেয়েদের পিছনে খরচ করে এদের কে কি করা উচিত তুমি বলো আমি সেই দিনও চুপ করে ছিলাম কোন কথার উওর ছিলনা আমার কাছে।

আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার তিনি একজন মহান ব্যাক্তি কিন্তু তার এই ব্যাক্তিত ফল তিনি পান্নি। তিনি প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার খাবার স্টিশনের পাশের বস্তিতে দিতেন কিন্তু তার খাবার দিয়ার ফলে মাত্র তিন জনের উপকার হয়েছে আর বাকি সবার জন্য ক্ষতি হয়েছে। স্যার সবায় কে মাসে মাত্র একদিন খেতে দিতেন এতো কারোর কিছু আসে যায় আরো ২৯ দিনবাকি থাকে মাসের। স্যার সুধু সুধু টাকা নষ্ট করতেন এই টাকা দিয়ে যদি তিনি একটা কর্মস্থান তৈরি করতেন তা হলে অনেকের উপকারে আসতো। স্যার এর দান ছিলো লোক দেখানো দান।এখানে আমাদের ভার্সিটির সকল ছাত্র ছাত্রী এবং তাদের বাবা মা উপস্থীত আছেন আপনারা আপনার সন্তানদের কির্তিকালাপ জানতে পারবেন কারন সকলের কাছে একটা করে চিঠি চলে গিয়েছে সাথে মেমরি আছে আপনারা দেখে নিয়েন আপনাদের ছেলেমেয়ের ঘটিত ঘটনা। তাই আমার সকল বন্ধ এবং ছোট ভাই বোনদেরকে বলি তোমরা ভার্সিটিতে যে সকল কাজ
করেছো সকল প্রমান তোমাদের বাবা মায়ের কাছে আমি পোওছে দিয়েছি এখন তোমরা তোমাদের কর্মের ধারন সঠিক করার চেষ্টা করবে।যেন পরে আর তেমাদের পিতামাতার কষ্ট করতে না হয়

আপনারা ভাবছেন আমি রিক্সা চালিয়ে সবার খবর কেমন করে নিয়েছি আসলে সত্যি বলতে কি যানেন আমি বকর গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি এর মালিক এর ছেলে।আপনারা অবাক হতে পারেন দেশের তিন নম্বর ধনীর ছেলে রিক্সা চালিয়েছে দীর্ঘ ৫ বছর।হ্যা এটায় সত্যি আমাদের সারা দেশ খুজে একটা ছেলে পেতে পারেন যে নিজে রিক্সা চালিয়ে বা অন্য কাজ করে জীবনে বড় কিছু হয়েছে কিন্তি America তে যান ঘরে ঘরে পাবেন এমন ছেলে মেয়ে। আর আমাদের অনেক মানসম্মান আমি পড়াশুনা করি আমি কাজ করলে মানুষ কি বলবে। সত্যি বলতে মানুষ কিছু বলেনা আমরা নিজেরা এটা মনে করি। আজ থেকে আমরা টিউশনির আশায় আর না থেকে নিজের পথ নিজেই তৈরি করার চেষ্টা করবো। ফেলেদিন আপনার লজ্জা কে কি হবে লজ্জা দিয়ে। আজ আমার কলেজের শেষদিন আমি চায় আমার আদর্শে আদর্শ হয় তোমরা হয়তো কখনো আবার দেখা হবে তোমাদের সাথে।

এবার আমি বক্তিতা দেওয়া শেষ করলাম চার দিকে করতালির আওয়াজ হচ্ছে আমি দেখতে পাচ্ছি কতো বাবা মায়ের চোখে পানি চিকচিক করছে চোখ গেল মিছনে গেটের দিকে পরপর গাড়ি ঢুকতেই আছে বুঝতে পারলাম এবার কলেজ থেকে আমায় যেতে হবে আব্বু আমাকে নিতে এসেছে

জানিনা আমার লেখা গল্পটা আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। আমি শুধু বাস্তবতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আসলে আমি ছাত্র বলে আমাকে টিউশনি করাতে হবে এটা কোন কথা নয় America এর প্রধান মন্ত্রী এর মেয়ে যদি হটেলে কাজ করতে পারে আপনিতো তার কাছে ছোট্ট একটুরা বালির সমান তাই লজ্জা নয় কাজ করার মনভাব নিয়ে বাচতে শিখুন

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত