ফাতেমা কাঁদছে,এই প্রথম ফাতেমাদের বাড়ীতে কেউ কাঁদছে।এ বাড়ীটা ঠিক হাসবাড়ীর মত এখানে কেউ
কাঁদে না,সবাই হাসি খুশি থাকে।কিন্তু
ফাতেমা কেঁদেই চলেছে,অঝোর ধারায় বয়ে চলেছে নোনা জল।ফাতেমার বাবাও কেমন জানি নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।যেই বাড়ীতে
প্রতিদিন আনন্দ উল্লাসের আওয়াজ বের হতো সেই বাড়ীতে কাঁন্নার রোল পড়েছে।
.
কিন্তু সবাই কাঁদছে কেন?হ্যাঁ ফাতেমার মা মারা গেছে আজ।মেয়েটা বড্ড একা হয়ে গেলো আজ।এই পৃথীবিতে ফাতেমা যাকে
ভীষণ ভালবাসতো তার সেই মা আজ পৃথীবি ছেড়ে চলে গেছে।গতরাতের ঘটনা হঠাৎ করেই ফাতেমার মা অসুস্থ হয়ে
পড়ে,হাসপাতালে নেবার আগেই ফাতেমার মা মারা যায়।ডক্টর বলে স্ট্রোক করার ফলেই তিনি মারা গেছেন।তারপর থেকেই যে
ফাতেমার কাঁন্না থামছে না,মেয়েটা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।এর কিছুদিন পর..
-মামণি তুমি এভাবে না খেলে কিভাবে থাকি আমি?
-(…)
-তোমার আম্মু তো আর ফিরে আসবে না।
>কথাটা শুনেই ফাতেমা কেঁদে দিলো।
-মামণি আমি তোমার আম্মুর দায়িত্ব পালন করবো।খেয়ে নাও এবার?
-(…)
-মামণি তুমি না খেলে আমিও খাবো না বলছি।
-বাবা আমি মায়ের শরীরের ঘ্রান কোথায় পাবো,আম্মু কে বড্ড জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে।এনে দাও না আম্মু কে।
>কথাটা বলেও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা।রফিক সাহেব নির্বাক হয়ে গেছে তার মেয়ের কথা শুনে।
-ও বাবা কথা বলছো না কেন?দাও আম্মু কে এনে।
>ফাতেমা রফিক সাহেব কে ধাক্কা দিচ্ছে আর কথাগুলো বলছে।
-ও বাবা তুমি না বললে মায়ের দায়িত্ব পালন করবে,তাহলে মায়ের শরীরের ঘ্রান কোথায় পাবো,ও বাবা কথা বলো?
>রফিক সাহেব নিস্তব্ধ হয়ে গেছে,তার চোখ থেকে টুপ টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।কিছুই যেন বলার ক্ষমতা তিনি হারিয়ে
ফেলেছেন।তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
.
এভাবেই আরো বেশ কিছুদিন চলতে লাগলো।হঠাৎ হঠাৎ ফাতেমা মায়ের জন্য ঘুমের ভেতরেই আত্নচিৎকার করতে থাকে।
ফাতেমা না খেয়ে না ঘুমিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ল।মেয়েটা বড্ড রোগা হয়ে গেছে।রফিক সাহেবের যেন মেয়ের কারনে দুচোখের
পাতা এক করতে পারে না।একটি মাত্র মেয়ে তার,বড্ড আদরের, সেই মেয়েটি মায়ের শোখে আজ নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
রফিক সাহেব নিজের চাপা কষ্টগুলো নিজের মধ্যেই রেখে দেয়।
.
ডক্টর ফাতেমা কে হাসিখুশী রাখতে বলেছে,ঠিকমত খাবার খাওয়া,এছাড়া সময় মত ঔষধ খাওয়াতে বলেছে।রফিক সাহেব ঠিক
তার ব্যতিক্রম করে না।নিজের মেয়েকে নিজের সবটুকু দিয়েই আগলে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।এই মেয়েটাই এখন তার সব
কিছু।
.
ফাতেমা সবে মাত্র অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।অল্প বয়সে নিজের মা কে হারানোর শোক যেন সে ভুলতেই পারছে না।তার বাবাও তার
যতটুকু সম্ভব নিজের মেয়ের সেবা যত্ন করে যাচ্ছে।
এভাবেই ফাতেমা আর তার বাবার জীবন চলতে লাগল।ফাতেমাও ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে,স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে
থাকে।তার মায়ের স্মৃতি বুকে নিয়ে এভাবেই চলতে লাগল।
.
দুই বছর পর…
.
ফাতেমা এখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী।তার বাবা আর তার জীবনটা এখন ভালভাবেই চলছে,ফাতেমাও এখন অনেক পরিণত।যেভাবে
রফিক সাহেব সংসার সামলাতো আর ফাতেমার যত্ন নিতো ঠিক সেভাবেই ফাতেমা এখন সব দায়িত্ব নিজে নিয়েছে তার
পাশাপাশি নিজের পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু হঠাৎ একদিন–
-বাবা তুমি আরেকটা বিয়ে করো?
-কী বলো এসব মামণি?
-ঠিকই বলছি।আমার একটা আম্মু চাই।
-দেখো মামণি আমরা বাবা-মেয়ে ভালই আছি,আর কাউকে দরকার নেই আমাদের।
-না বাবা আমার আম্মু চাই।আম্মু না আনলে আমি কিন্তু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিবো।
>রফিক সাহেব আর কিছু বলে না, নিজের মেয়ের কাছ একটু সময় নিয়েই নেয়।
.
এর কিছুদিন পর..
.
রফিক সাহেব আজ বিয়ে করেছে,হ্যাঁ ফাতেমার জন্য একটা আম্মু নিয়ে এসেছে রফিক সাহেব।নিজের মেয়ের কথা অমান্য
করতে পারেননি।ফাতেমা নিজের মায়ের মত করেই তার নতুন আম্মু কে জড়িয়ে ধরে।কিন্তু সেই ঘ্রান সে খুজে পায় না।
ফাতেমার একটু মন খারাপ হলেও কাউকে তা বুঝতে দেয় না।
.
ফাতেমা তার নতুন আম্মুকে পেয়ে বেশ খুশী।রফিক সাহেবও তার মেয়ের এমন আনন্দ দেখে নিজের আনন্দ আর ধরে না।রফিক
সাহেব ফাতেমার নতুন আম্মু (জামেনা বেগম) কে বলে দিয়েছেন যাতে তার মেয়ে কোন কষ্ট না পাই,ফাতেমার কারনেই তিনি
বিয়ে করছেন।
.
বেশ ভালই যাচ্ছে ফাতেমার জীবন।জামেনা বেগমও ফাতেমাকে নিজের মেয়ের মত করেই যত্ন করতে থাকে।ফাতেমাও এখন
বেশ খুশী।বেশ ভালই চলছে সব।কিন্তু যেদিন থেকে জামেনা বেগম প্রেগনেন্ট হলো সেদিন থেকেই যেন ফাতেমার কপাল পোড়া
শুরু হলো….
-আম্মু তুমি জানো না আমি এসব খায় না?
-জামেনা বেগম একটু উচু স্বরে বললেন-দেখো ফাতেমা খেলে খাও না খেলে না খাও।তোমার বাবাও এসব খেয়ে গেছে,আমি
তোমার জন্য আলাদা কিছু রান্না করতে পারবো না।
-কিন্তু তুমি আমার জন্য রান্না করতে আগে।।
-আগে করেছি কিন্তু এখন পারবো না।তুমি জানো না আমার শরীর খারাপ।পারলে নিজে করে খাও।
.
>ফাতেমা কিছু বলে না,চুপটি করে খাবার টেবিল থেকে চলে যায়।নিজের রুমে গিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদে মেযেটা।নিজের
মায়ের সাথে জামেনা বেগম কে মিলাতে পারে না।তার নিজের মা কে কোন কিছু বললেই সেটা করে দিতো কোন কথা ছাড়ায়।
.
দিন শেষে রফিক সাহেব নিজের মেয়েকে দেখতে যান।ফাতেমা তার বাবা কে দেখেই জড়িয়ে ধরে কাঁন্না করতে থাকে।রফিক
সাহেব মেয়ের এমন কাঁন্না দেখে বলল….
-কী হয়েছে মামণি তোমার?
-নাহহ তেমন কিছু না।খুব মায়ের কথা মনে পড়ছিলো।
-তুমি নাকি রাতের খাবার খাওনি?
-বাবা তুমি তো জানোই ঐসব আমি খাই না।
-দেখো মামণি একটু বুঝতে শেখো।সব সময় এমন করলে হয় না।তোমার আম্মুও তো অসুস্থ,তাই যা রান্না করবে তাই একটু কষ্ট
করে খেয়ে নিও।
>ফাতেমা আর কিছু বলে না, তার বাবার এমন আচরনে বড্ড কষ্ট পাই।তার বাবাও এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে।আগের মত আর
ফাতেমার কোন কিছুরই গুরুত্ব দেয়না।
.
এর পর থেকে জাহানারা বেগমও সাহশ পেয়ে যায়।কারনে অকারনে ফাতেমাকে দু-চার কথা শুনিয়ে দেয়।রফিক সাহেবও
জামেনা বেগমের কথার সাথে তাল মেলাতে থাকে।ফাতেমা এখন কাউকে কিছু বলে না।নিজের কষ্টগুলো নিজের মধ্যে রেখেই
চাপা কাঁন্না করতে থাকে।তার কষ্ট দেখার মত কেউ নেই।
.
এবার ফাতেমা প্রথম বর্ষের ছাত্রী।কলেজে আসার সাথে সাথেই ফাতেমার জীবনে নতুন কারো আগমন ঘটল ঠিক এভাবেই…
-এই যে শুনুন?
-আমাকে বলছেন?
-হ্যাঁ আপনাকেই বলছি।
-কী বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন? [মাথা নিচু করে]
-আসলে একটা কথা ছিলো?
-বলুন তাড়াতাড়ি।
-এত তাড়া কেন আপনার?
-দেরি হলেই মা বকবে।
-ও আচ্ছা।তাহলেই বলেই ফেলি-আসলে আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি,আপনাকে বিয়ে করতে চাই।
>কথাটা বলেই ছেলেটি চলে যায় দ্রুত।ফাতেমাও একটু লজ্জা পেয়ে চলে যায়।বাড়ীতে যেতে একটু দেরি হওয়াতেই জামেনা
বেগম বলতে লাগল…
-ঐ নবাবের বেটি এত দেরি হয় কেন তোর?
-কই আম্মু একটু দেরি হইছে, আর তাতেই তুমি এমন চিল্লাচ্ছো।
-বাড়ীর কাজ কে করবে শুনি?
-দেরি হলেও তো কাজগুলো তো আমিই করি।
-ওরে নবাবের বেটি আবার মুখে মুখে কথা বলে।আজ তোর একদিন কী আমার একদিন।
-জামেনা বেগম ফাতেমা কে মারতে থাকে।তোর বাপ আসুক আজকে হয় তুই থাকবি এই বাড়ীতে না হয় আমি।
.
রাতে বেলা রফিক সাহেব বাসায় আসার পর…
.
-কী ব্যাপার ফাতেমা তুমি তোমার আম্মুর মুখে মুখে কথা বলো কেন?
-বাবা আমার কথা শুনো?
-কী শুনবো আর।বড়দের সম্মান করতে জানো না।বড্ড বেয়াদপ হয়ে গেছো তুমি।
-বাবা তুমিও?
-আমিও কী হ্যাঁ।দিন দিন তুমি খারাপ হয়ে যাচ্ছো দেখছি।
>ফাতেমা আর কিছু বলে না।চুপটি করে নিজের রুমে গিয়ে কাঁন্না করতে থাকে।দিনশেষে এভাবেই তাকে চার দেয়ালের মাঝে
মনের কষ্টগুলো চোখের পানি হয়ে বের হয়ে আসে।ফাতেমা মনে মনে বলে-আম্মু তুমি আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলে।
তোমার মত কেউ আমাকে ভালবাসে না।বাবাও পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমাকে আর কেউ ভালবাসে না,সবাই বকাবকি করে
শুধু,তোমার কাছে নিয়ে যাও আম্মু আমাকে,তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমোতে চাই আমি।এভাবেই ফাতেমা প্রতিরাতে মায়ের
কথা ভাবে আর কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
পরের দিন..
.
-এই যে ম্যাম আমার কথা কী ভাবলেন?
>ফাতেমা পিছনে তাকিয়ে দেখে সেই ছেলেটি।
-কী ভাববো আমি?
-আপনাকে ভালবাসি তো?
-সত্যিই কী ভালবাসেন?
-কেন বিশ্বাস হয় না?
-বিয়ে করবেন আমাকে?
-হ্যাঁ বিয়ে করতেও রাজি আছি।
-তাহলে আমার কিছু কথা আছে।
-কী কথা?
>ফাতেমা তার সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছুই ছেলেটাকে (মাহিন) বলল।মাহিন সব কিছু শুনেই কেমন নির্বাক হয়ে গেলো…তবে
মাহিন এতটুকু বুঝতে পেরেছে মেয়েটা ভালবাসার কাঙাল।
-কী সব তো শুনলেন,এবার বিয়ে করার শখ মিটছে তো?
-(…)
-হ্যাঁ সবাই মুখেই ওমন ভালবাসার কথা বলতে পারে।কেউ ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দেয় না সব শুনে।
-(…)
-আমার উত্তর পেয়ে গেছি আর কখনো ভালবাসার দাবি নিয়ে আমার সামনে আসবেন না।গেলাম আমি।
-এই যে শুনুন?
-কী বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।
-বিয়ে করব আপনাকে।
-দয়া করছেন?
-নাহহ,ভালবাসা প্রকাশ করছি।
কথাটা বলেই মাহিন তার হাতটা বাড়িয়ে দিলো ফাতেমার দিকে।ফাতেমা নিজেকে ধরে রাখতে পারল না,মাহিন কে জড়িয়ে ধরে
কাঁদতে লাগল।আর বলতে লাগল…
-এতদিন অনেক অবহেলা পেয়েছি।আমাকে তুমি কষ্ট দিও না।একটু ভালবাসা দিও।
-আমি কখনোই কষ্ট দিবো না।ভীষণ ভালবাসবো পাগলীটাকে।
.
এর কিছুদিন পরেই পারিবারিক ভাবে ফাতেমা আর মাহিনের বিয়ে হয়ে যায়।জামেনা বেগমও হাফ ছেড়ে বাঁচলো,মনে মনে
বলতে লাগল-আপদটা তো বিদায় হইছে,এতদিনে অনেক যন্ত্রনা দিছে।
.
ফাতেমাও এখন মাহিনের সাথে বেশ ভাল আছে।টাকা পয়সা কম হলেও ভালবাসার কমতি নেয়,যেই ভালবাসা ফাতেমা
চেয়েছিলো।মাহিনের সাথে বেশ ভালই সংসার করছে।নিজের সংসার কে নিজের মত করে গুছিয়ে নিয়েছে ফাতেমা।
.
কিন্তু সুখ ফাতেমার কপালে সইলো না।হঠাৎ করেই মাহিন পরিবর্তন হতে লাগল।কাজ কর্ম ছেড়ে দিয়ে ফাতেমা কে বলে বাবার
বাড়ী থেকে টাকা এনে দিতে।কিন্তু ফাতেমা তো নিরুপায়, সব দরজা তার বন্ধ।মাহিন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে।কাজ কর্ম ছেড়ে
দিয়ে দিনরাত নেশার মধ্যে পড়ে থাকে।আর রাতে ফিরে এসে টাকা না পেয়ে ফাতেমা কে মারতে থাকে….
-কিরে টাকা এনেছিস?
-তুমি তো সবই জানো,তবুও কেন বার বার টাকার কথা বলছো?
-এত কিছু জানি না আমি।কালই টাকা আনবি না হলে আর তোর রক্ষা নেই।
-তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো?
-এত বুঝে কাজ নেই আমার।
-তুমি নেশা করা ছেড়ে দাও,আমরা আবার আগের মত হয়ে যাবো।
-বেশী কথা বললে তোকে ছেড়ে দিবো।এবার খেতে দে?
-বাড়ীতে কিছু থাকলে না রান্না করবো।
-কিছু নেই মানে।সব কী তুই একা খেয়ে নিস।তোকে খাওয়াচ্ছি আজ….
>কথাটা শেষ করেই মাহিন ফাতেমাকে মারতে লাগল।মারার ফলে ফাতেমা অজ্ঞান হয়ে যায়,জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে ব্যাথার
যন্ত্রনায় আর উঠতে পারে না।ফাতেমার এক হাতের কয়েকটা আঙ্গুল থেতলিয়ে দিয়েছে মেরে।পুরো শরীরে মারের চিহ্ন।প্রচন্ড
কাপুনি দিয়ে জ্বর আসে ফাতেমার।দেখার মত কেউ পাশে থাকে না।প্রচন্ড জ্বরের কারনে আবোল তাবোল বকতে থাকে মেয়েটা।
মা মা বলে চিৎকার করতে থাকে,কেউ আসে না তার চিৎকার শুনে।
.
এভাবেই এক সময় ফাতেমা নামের মেয়েটি হারিয়ে যাবে।সবার অবহেলায় আর অত্যাচারে।মেয়েটা বড্ড ভালবাসা
পাগল,একটুখানি ভালবাসা তার কপালে সহ্য হলো না।
.
মাহিনও আর ভাল হয়ে উঠতে পারে না।দিনের পর দিন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে অনেক।ফাতেমার কপালে যেন কোন
ভালবাসায় সহ্য হয় না।যাকে ভালবাসে বিয়ে করল একটুখানি সুখের জন্য সেই ভালবাসাগুলো এক সময় হারিয়ে গেলো।
.
রাত যত গভীর হয় ফাতেমারও কষ্টগুলো চোখের পানি হয়ে ঝড়ে পড়ে।নিজের মায়ের কথা ভাবতে থাকে তখন।একটু একটু
ঘুমন্ত চোখে মেয়েটা স্বপ্নে মা কে দেখেই চিৎকার করে ওঠে,মা কে ডাকতে থাকে,চারপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই।তার
ক্ষতগুলো গভীর রাতে তাকে ঘুমোতে দেয় না,রাত হলে যেন তারা আরো জেগে ওঠে।
.
ফাতেমার মধ্যেরাতের চিৎকার কেউ শোনে না।তার মায়ের ভালবাসা কে কেউ ভুলিয়ে দিতে পারে না।সে যেন এখনো সেই তার
মায়ের ছোট্ট ফাতেমা হয়েই রয়ে গেছে।তার মা মধ্যে রাতে তাকে ডাকে।ফাতেমা হাত বাড়িয়ে দেয় তার মায়ের দিকে,যেমন ছোট
বেলায় দিতো,তার মা সেই হাত দুটো ধরে বুকে নিয়ে আদর করতো।এখন আর সেই হাত কেউ ধরে না,বুকে নিয়ে কেউ আদর
করে না।
.
ফাতেমা একটু শান্তিতে ঘুমোতে চাই।অনেক শান্তি করে ঘুমোতে চাই।যাতে কেউ তাকে শত অত্যাচার করলেও ঘুম যেন না
ভাঙে।এ ঘুম ভাঙার নয়,এই ঘুম পরম শান্তির ঘুম।