মা – বাবার ভালবাসা

মা – বাবার ভালবাসা

সেদিন রাতে মা এর সাথে অনেক ঝগড়া করেছিলাম।এক পর্যায়ে মা আমার গালে থাপ্পড় দেন। আমিও নিজের রাগটা সামলাতে পারিনি।

মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে খচখচ করতে করতে নিজের রুমে চলে যাই।সেদিন রাতে মা অনেক কেঁদেছিল।

কিন্তু আমি সেদিকে খেয়াল দিই নি।রুমের লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।

প্রায় আমার বাবা-মা’র সাথে ঝগড়া হত।এটা কিনে দাও, ওটা কিনে দিচ্ছো না কেন বলে প্রায় জ্বালাতাম আর ঝগড়া করতাম।
আমি শহরের নামি দামি এক কলেজে পড়তাম।শহরের বড়লোকের ছেলেরা ঐ কলেজে পড়ে।বাবা আমাকে এই কলেজে পড়াতে চায় নি।

কারণ আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার ছিলাম।কিন্তু আমি জেদ করেছিলাম যে আমি ঐ কলেজেই পড়বো।

সেদিন আমি বাবাকে একটা কটু কথা বলেছিলাম।সেটা এখনো আমার মনে আছে।

আমি বলেছিলাম -“তোমার টাকা- পয়সা নেই বলে কি আমার ইচ্ছাগুলোকেও তোমার মত বিসর্জন দিতে হবে!

ইচ্ছে যখন পূরণ করতে পারবেই না তবে মেরে ফেল আমায়।”

বাবা কথাটায় মনে আঘাত পেয়েছিল।তাই হয়তো আমাকে সেই দামি কলেজ টাতে ভর্তি করে দিয়েছিল।
আমার বন্ধুরা খুবই বড়লোক ছিল।তাদের পিছনেই তাদের মা বাবা মাসে ৩০,০০০ খরচ করত।আর আমার বাবা বেতনই পায় ৩০,০০০ টাকা।

প্রতিদিন টিফিনে তারা দামি ফাস্টফুড খেত।আর আমি সমুচা খেয়ে পেট ভরাতাম।এই ব্যাপারটা আমায় খুব রাগাচ্ছিল।
আমি বাসায় গিয়ে রুমের দরজা আলতো করে লাগিয়ে কান্না করতে লাগলাম।মা আমার রুমে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে কান্নার কারণটা জানতে চেয়েছিল।

আমি বলেছিলাম আমার বন্ধুরা অনেক টাকা পয়সা খরচ করে।এটা আমার সহ্য হচ্ছে না।কালকে থেকে আমাকে ১০০ টাকা করে দিবে।
মা বলেছিল আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার। এত টাকা দিলে তো আমরা পুরো মাসটা চলতে পারবনা।তোর ছোট বোনকেও তো দেখতে হবে।

আমি সেদিকে কান দিই নি।আমি জেদ করেছিলাম টাকা না দিলে আমি আর কলেজেই যাব না।
মা আর কিছু বললো না।রাতে বাবা আসলে বাবাকে বললাম -বাবা আমাকে কলেজে যেতে ১০০ টাকা করে দিবে।নয়তো আমি আর কলেজে যাবই
না।বাবা কিছু না বলে রাজি হয়ে গেল।
.
তবে একটা বিষয়ে আমার মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলাম না।
আমার বন্ধুরা নিজেদের গাড়িতে করে কলেজে আসে। আর আমি পাবলিক বাসে ঝুলে ঝুলে আসি।

তাই দুই মাস পরে একদিন খাবার টেবিলে বাবার কাছে জেদ করে বসলাম আমাকে একটা বাইক কিনে দিতে।
বাবা বললো আমি বাইক কিনার এত টাকা কোথায় পাব?
কিন্তু আমি আমার দাবিতে অটল ছিলাম।
“আমার বন্ধুরা কেউ প্রাইভেট কারে করে কলেজে আসে, কেউ বাবার বাইকে করে কলেজে আসে।

আর আমি!!!আমি কিছু বুঝি না।তোমার আমাকে একটা বাইক কিনে দিতে হবেই।নইলে….. ”
বাবা রেগে বললো “নইলে কি? কি করবি? তুই কলেজ যাওয়া ছেড়ে দিবি? আত্মহত্যা করবি?”
এটা শুনে আমার রাগটা আরও বেড়ে গেল।আমি বলে বসলাম-“তোমাকে খুন করবো”
সাথে সাথে মা আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন।আমি খাবারের প্লেটটা মাটিতে ছুড়ে ফেলে রুমে চলে গেলাম।
পরদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে ঘরের সামনে একটা নতুন বাইক দেখলাম।আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকলাম।
“কত সুন্দর বাইক!”
আমার ঘাড়ে কেউ একজন হাত রাখলো।
পেছন ফিরে দেখি বাবা।
-বাবা তুমি এটা আমার জন্য কিনেছো?
> হ্যাঁ।কেনো তোর বিশ্বাস হচ্ছে না?
– সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছেনা।
এটা বলেই ধন্যবাদ জানাতে জানাতে
বাবাকেজড়িয়ে ধরি।বাবাও আমাকে জড়িয়ে ধরে।
রাতে আমার মনে প্রশ্ন জাগে বাইকের টাকা বাবা কোথায় পেল! ছোট বোনকে রুমে ডেকে জিজ্ঞেস করি।
সে বলে – বাবা আমাদের পাশের জমিটা বন্দক দিয়েছে।সেখান থেকেই টাকা এসেছে।তখন একটু মন খারাপ হয়েছিল।

কিন্তু বাইক পাওয়ার আনন্দে মন খারাপের সময়সীমাটা বেশিক্ষণ ছিল না।পরের দিন সকালেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।৮০-৯০ কিলো গতি তুলি।
কিন্তু হঠাৎ একটা অ্যাক্সিডেন্টে সব এলোমেলো হয়ে যায়। একটা ট্রাক ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায় আমাকে।
.
.
এগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটা হাত আমার কাঁধ স্পর্শ করে। আমি চেতনায় ফিরে আসি।মা বললো-
-কিরে, কি ভাবছিস?
> মা, আমাকে একটু বাইরে থেকে ঘুরিয়ে আনবে? কতদিন বাইরে যাই না।
-অবশ্যই ঘুরিয়ে আনবো (মুখে একটা হাসি)
তারপরে বাবা আমাকে আমার হুইলচেয়ারটা সামনে এগিয়ে দেয়।আমাকে খাট থেকে কোলে তুলে নিয়ে হুইলচেয়ারে বসিয়ে দেয়।

মা আমাকে পেছন থেকে ঠেলে বাইরে ঘুরাতে নিয়ে যায়।

কোমরের নিচের শুণ্য শরীরটা দেখে এক ফোঁটা চোখের জল আমার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে।
আজ দুই বছর ধরে তারা এই বোঝাটাকে বয়ে বেড়াচ্ছে।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত