“রাহাপ্পু”

“রাহাপ্পু”

(১)

“রাহাপ্পুউউউউউউউউ!” সুজানা ভয়ে ভয়ে ডাকছে। রাহানুমা রাগী চোখে তাকালো। “কী হয়েছে?” “আমি ঘুমাবোতো!” “মানা করেছে কে?” “তুমি আসোনা,খাটে বস।” “কেন?তুই ঘুমাতে আমার খাটে বসতে হবে কেন?” বলেই রাহানুমা খাটে এসে বসে। সুজানা এগিয়ে বোনের কোলে মাথা রাখে। তার শিশুসুলভ ভঙ্গীমায় রাহানুমার রাগ পড়ে যায়।

“সোনা,তুই এমন করিস কেন? সামির মাথাটা কেন ফাটিয়েছিস?” “ঐ বদ পোলাটা তোমাকে রাহাপ্পু বলেছে!” “ওতো ছোট আমার,তাই আপ্পু বলেছে!” “অন্য কিছু ডাকুক। রাহাপ্পুতো আমার দেয়া নাম!” সুজানা ছোট্ট দুই হাতে বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। “তাই তুই ইট মারবি?” “ইট না। আমার পিংকুশ ক্রিকেট বল! হুঁ মারবইতো। কেউ তোমাকে নিয়ে কিছু বললেই মারব! পঁচাদের শাস্তি দেওয়া উচিত।” রাহানুমা লুকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

(২)

“শাটআপ রাহানুমা,শাটআপ!” “জাভেদ,ইউ হ্যাভ ক্রস্ড ইউর লিমিট!” “মানে কী? কী বুঝাচ্ছ তুমি? ভুলে যাচ্ছ কেন,তুমি একটা মেয়ে? আমার বিরুদ্ধে কীইবা করতে পারবে?” রাহানুমার কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিল সে। “কেইসটা তুলে নাও,বাসায় ফেরো। ভাল চাওতো!” পেছনে হঠাত কিছু ভেঙ্গে পড়ার শব্দে দু:জনই চমকে তাকায়। কাঁচের একটা টব ভেঙ্গে ছড়িয়ে আছে। পাশে কলেজ ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে সুজানা কাঁপছে। রাগে না ঘৃণায় বোঝা গেলনা।

(৩)

দুইদিন পর। জানালার পাশে বসে রাহানুমা বই পড়ছিল। সুজানা হঠাত হন্তদন্ত হয়ে এসে তার কোলে মাথা রাখল। “কীরে,কী হয়েছে তোর?” বোনের কথার জবাব না দিয়ে সুজানা শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরল,ছোটবেলার মত।

“রাহাপ্পু… মেয়ে হয়ে জন্মানো কি খুব পাপ? কালো হওয়া কি খুব অন্যায়?” “এসব কী বলছিস?” “রাহাপ্পু,বলোনা ছেলে সন্তান না জন্মানো কি মায়ের দোষ? বাবার দোষ হয়না? যে বাবা তার মেয়েকে জন্মের আগেই মেরে ফেলে,সে খুনী না?” “সোনা বলবিতো তোর কী হয়েছে?” “রাহাপ্পু,আমার নিজেকে ঘেন্না হচ্ছে। মনে হচ্ছে একটা সরিসৃপ কিলবিল করছে শরীরে।শীতল চিটচিটে স্পর্শ। রাহাপ্পু রক্ত! চারপাশে সব রক্ত। তাজা,উষ্ণ রক্ত… পঁচাদের শাস্তি দেয়া উচিত,তাইনা?” “হ্যাঁ,উচিত। কিন্তু…” “আমি শাস্তি দিয়েছি। যে তার স্ত্রীর বান্ধবীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখে,স্ত্রীকে অসম্মান করে,টর্চার করে,ছোটবোনের মত শালীর গায়ে হাত দেয়,সে মানুষ না। সে একটা পিশাচ। রাহাপ্পু… ও রাহাপ্পু… আমাদের পুতুল.. ঐ পিশাচের জন্যই জন্মাতে পারলনা। আমি এজন্যই শাস্তি দিয়েছি।” রাহানুমা ফিসফিসিয়ে বলে, “তুই কী …করেছিস?” “সামির হকিস্টিক দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছি।অনেক অন্নেক রক্ত। আমার গায়ে ও লেগেছিল। রাহাপ্পু,ও কেন মানুষ হয়ে জন্মালোনা?” রাহানুমা অসহায়ের মত তাকিয়ে রইল। সে কিছু ভাবতে পারছেনা। সদর দরজায় একসাথে অনেকগুলো শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। “তুমি… আমার রাহাপ্পু,না? আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবনা। কোথ্থাও যাবনা।” “হ্যাঁরে, আমি শুধু তোর রাহাপ্পু। শুধু তোর। কেউ পারবেনা তোকে। কেউনা!” রাহানুমা জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। কি অসহ্য জ্যোছনায় ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। “আমার ভীষণ ক্লান্তি লাগছে,রাহাপ্পু। ঘুম পাচ্ছে। ছোটবেলার সেই গানটা গাওনা। আদর আদর গান।”

সদর দরজার শব্দটা বেড়েছে। রাহানুমা উঠে গিয়ে বাবার রেখে যাওয়া পিস্তলটা বের করে নিল। বোনের মাথাটা আবার কোলে তুলে নিয়ে গাইতে লাগল,

“ঘুমা,ঘুমা লক্ষীসোনা। যাবি স্বপ্নের দেশে! লাল-নীল পরী তুই, হবি যে এক নিমেষে। মিছে রাগ করেনা বুড়ি আমার, চেয়ে দেখ আছি। বিশ্বাস কর এই আমি তোর রাহাপ্পুটা, তোকে বড্ড ভীষণ ভালবাসি!”

পরিশিষ্ট: পুলিশ দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে দেখল,ভীষণ মায়াবতী এক তরুণী পিস্তল হাতে,ছোটবোনের মাথা কোলে নিয়ে ঘুমপাড়ানি গান গেয়েই যাচ্ছে… গেয়েই যাচ্ছে….

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত