আবেগীকন্যা

আবেগীকন্যা

বার বার মেসেঞ্জার চেক করছি। আজ মালিহার কোন মেসেজ নেই। সকাল সকাল সেই ফোনের রিংটোনটা বেজে ওঠছে না। সম্পর্কের পর থেকে এমনটা কোনদিন হয়নি। মিস হয়নি সকাল সকাল কল করা আর মেসেজ দেওয়া। আমি একদিন ঠিক করেছিলাম সকাল ১২ টা পর্যন্ত ফেইসবুকে ঢুকবনা আর ফোনটাও বন্ধ করে রাখব। যথারীতি তাই করলাম। রাতেই ফোনের সুইচ অফ করে রাখলাম। এমনিতেই ঘুম থেকে উঠি ১০ টা বা ১১ টায়। অলস ছেলে বলে কথা।
.
যাই হোক, সেদিন দুপুর ২টার পর ফেইসবুকে ডুকলাম। ওরে বাবা, মেসেজের গোডাউন। শুধুমাত্র মালিহার মেসেজ। মেসেজের বক্তব্য ছিল,
-আপনি এখনও ঘুমাচ্ছেন? ফোন বন্ধ করে রেখেছেন কেন?
ধাপে ধাপে……
-না এত বেলা পর্যন্ত তো ঘুমানোর কথা না। আপনি ঠিক আছেন তো?
-আমার কথা কি একবারও মনে পরছেনা আপনার?
-কি এমন কাজ করছেন যে ফোনটা বন্ধ করে রাখতে হয়।
-আমার কিন্তু কিছু ভালো লাগছেনা।
-দ্যাত, আমি আর মেসেজ দিব না আপনাকে।
-আপনিও কি আমার সাথে এমন করছেন?
-এটাই আমার লাস্ট মেসেজ। আর দিব না। প্লিজ….
-আপনিও বুঝি……
এসব মেসেজ দেখে আমি সত্যিই অসম্ভব খুশি হয়েছিলাম। কারন আমি চেয়েছিলাম যে, মালিহা কতটুকু মিস করে তা জানতে। আর সেটাই প্রমাণিত হল, সত্যিই অনেক লাভ করে সে।
আর দেরি না করে দ্রুত মেসেজ দিলাম। রিপ্লেটা আসল অদ্ভুদ মায়াবী ধরনের।
ঐদিন অর্ধবেলা আমার সাথে চ্যাট করতে না পেরে দু’টো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিল। অনেক বকাবকি করেছিলাম তাকে। এমনটা যেন আর কখনো না করে। সেদিন আমি সত্যিই বিশ্বাস করেছি কতট লাভ করে মালিহা। ভেবেছিলাম আরো ক’দিন এমনটা করব, কিন্তু মালিহার এমন কান্ড-কারখানা আমাকে নিষধাজ্ঞা জারি করল।
.
সেদিনের কথা সত্যিই ভূলার নয়। আজ তার কোন খবর পাচ্ছিনা। একটাও মেসেজ নেই, কল নেই।
ঠিক ১২ টা বেজে ৩০ মিনিট। এখনও কোন মেসেজ নেই, ফোন নেই। কিছুটা টেনশন অনুভবে মেসেজে দিলাম,
–‘আজ পেত্নীটার কোন খবর নাই?’
মেসেজটা পাঠিয়ে অন্যকোন কাজে মগ্ন হয়ে গেলাম। ঠিক ২০ মিনিট পর রিপ্লে আসল,
-‘ও আজ অনেক অসুস্থ। মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে তাকে।’
মালিহা বলেছিল ওর নাকি খুব জ্বর এসেছে। মনে হয় জ্বরটা ভালো ভাবেই চেপে বসেছে। তাই মনে হয় মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। এরকমটা দেখে মেসেজটা ভালো করে পড়িনি। একটু বিভ্রান্ত হয়ে রিপ্লে দিলাম,
–‘ও মাই গড! কি বলো তুমি?
আরেকবার রিপ্লে আসল….
-‘আমি ওর ভাতিজী’
এ মেসেজটাও সঠিকভাবে পড়িনি। মালিহা হাসপাতালে, কথাটা শুনেই তো চমকে গেলাম। তাড়াহুড়ো করে রিপ্লে দিলাম,
–‘এখন তোমার কি অবস্থা?’
-‘আমার অবস্থা ভালো। আমি আপনার পেত্নীর কথা বলতেছি।’
রিপ্লেটা দেখে আগের মেসেজগুলো পূনরায় পড়লাম। স্পষ্ট বলা আছে, আমি ওর ভাতিজী। মানে ওর ভাতিজী ওর আইডি থেকে মেসেজ দিচ্ছে। একটু থতমত হয়ে রিপ্লে দিলাম,
–‘ওহ সরি। বুঝতে পারিনি। আপনি কি হোন ওর? ভাতিজী? আচ্ছা ঠিক কি হয়েছে ওর?
-‘আপনি কি জানেন ও কাল রাতে সুইসাইড করে চাইছিল? ঘুমানোর আগে অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে।’
হে গড, কি শুনছি আমি। পুরোই হতবাক হয়ে গেলাম। হঠাৎ সুইসাইড করতে যাবে কেন? না, আমি তো তেমন কিছু বলিনি ওকে। কোন ঝগড়াও তো হয়নি। তো সুইসাইড করবে কেন সে? হাজারো প্রশ্ন মনের ভেতর। উত্তরের আশায়।
–‘ওহ মাই গড!! কি বলেন আপনি? এখন কি অবস্থা ওর? কেমন আছে?
-‘সকালে ওকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এখনও সঠিক কোন খবর পাওয়া যায়নি।’
–‘আচ্ছা, হঠাৎ সে এমনটা কেন করল বলতে পারেন? আমি তো কিছুই বুঝতেছিনা।’
-‘আমি জানিনা। কাল রাতে আমাকে জোর করে আইডির পাসওয়ার্ডটা দিয়েছে। আর বলেছে দরকার হতে পারে। কেউ কোন খোঁজ নিলে বলে দিবি যে আমি মারা গেছি।’
–‘আজব তো! আপনি পাগল হয়ে গেছেন নাকি?’
-‘শুধু আমি কেন? বাসার সকলেই ওর জন্য পাগল হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই আগে থেকেই ওর প্ল্যান ছিল!’
২ ঘন্টা পর…..
–‘আচ্ছা, এখন মালিহার কি অবস্থা জানেন?’
-‘অনেক খারাপ অবস্থা। ডাক্তার বলল, বাঁচবে কিনা সন্দেহ!
মেসেজটা দেখে মেজাজটা এত খারাপ হয়েছিল বলা বাহুল্য। হুট করে বলে দিল। ইচ্ছে হচ্ছে এখনি এই মেয়েটাকে আচ্ছা করে থাপ্পর দিতে।
–‘আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন? সে কি আপনাকে সব শিখিয়ে দিয়েছে?’
অদ্ভুদ সব কথা-বার্তা!! অশ্রুসিক্ত হয়ে আবার মেসেজ দিলাম,
–‘প্লিজ, মালিহা এখন কেমন আছে একটু জেনে জানাবেন প্লিজ!!!!
-‘আচ্ছা, উপরের মেসেজগুলো পড়ে বুঝতে পারলাম আপনাদের রিলেশন ছিল। তো আপনাকে কিছু বলেনি সে?’
–‘না, কিছু বলেনি। আপনাকে বলেছে?’
.
মালিহার সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হল ফেইসবুক। আমার নাম্বারটা সে ব্যস্ত করে রেখেছে। শুনেছি কেউ কাউকে ডিস্টার্ব করলে তখন তার নাম্বারটা বিজি, ডাইভার্ট করে রাখে। আর এখানে মালিহা তো আমাকে ভালবাসে সেই আমার নাম্বারটা বিজি করে রেখেছে। এর মূল কারন হল ওর ফ্যামিলি। ওর ফ্যামিলি এসব পছন্দ করত না। আর বয়সটাও তেমন হয়নি। এসএসসি পাস করেছে মাত্র। তাই ওর যখন সুযোগ হত তখন মেসেজে বলত কল করতে। তখনি ওর সাথে কথা হত। কিন্তু এখনতো প্রচন্ড ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও কল দিতে পারছিনা। সুতরাং মেসেজের উপরেই নির্ভরশীল হয়ে ওর খবরাখবরটা নিতে হচ্ছে।
দু’দিন হয়ে গেল মালিহার সাথে কোন কথা নেই। মেসেজে জানতে পারলাম আজ বিকেলে মালিহা বাসায় এসেছে। বাসার সকলেই নাকি ওকে খুব বকাবকি করেছে। ওর ফ্যামিলি অনেক চাপে রেখেছে তাই হয়তবা আমার সাথে কানেক্ট করার সুযোগ পাচ্ছেনা। আমি ঠিক ওর অপেক্ষায় আছি।
.
রিলেশনের আগেও রেগুলার মালিহার সাথে চ্যাট হত।
ঠিক ১৫ দিন আগে…..
একদিন রাতে ওর সাথে চ্যাট হচ্ছিল। রাত অনেক হয়েছে, এখনও ওর সাথে চ্যাট হচ্ছে। আমি বারবার ওকে ঘুমানোর কথা বলছি। কিন্তু ও মেসেজ দিয়েই চলছে।
—আচ্ছা, আপনি আমাকে কেন ভালবাসেন?(বিপ্লব)
–জানিনা।(মালিহা)
—আমি যদি আপনাকে ভালবাসি তবে আপনি কি করবেন?
–আরো অনেক বেশি ভালোবাসব এবং কাছে পাওয়ার স্বপ্ন দেখব।
—যদি বলি আপনাকে ভালবাসি!
–আপনার কাছে চলে আসবো।।
—সত্যিই চলে আসবেন?
–জানিনা।
.
—আচ্ছা, অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমান!
–ঘুম আসছে না যে…
—কেন ঘুম আসছে না?
–যাকে ভালবাসি তার কথা ভীষণ মনে পড়ছে।
—তো কাকে ভালবাসেন??
–জানিনা।
—অনেক হয়েছে এখন ঘুমান তো!! রাত কয়টা বাজে দেখেছেন? -১:৪৫।
–ঘুম না আসলে কি করব?
—ফেবু থেকে বের হয়ে যান। ঠিক ঘুম চলে আসবে।
–না, যাবো না।
—একটা থাপ্পর দিব স্টুপিড গার্ল! যান ঘুমাতে যান!
–এমন করতেছেন কেন আমার সাথে? আমি তো আর কারো সাথে কথা বলছিনা। আপনি ঘুমান।
—ইসসসসসসস এত কথা বলতে হয় কেন শুনি?
–আচ্ছা, ঠিক আছে যাচ্ছি। তার আগে একটা কথা….
—কি?
–আচ্ছা কিছুনা। বাই…
—কি বলেন?
–I love you….ভূল হলে সরি….বাই। ছিঃ অামি মেয়ে হয়ে….
—এর উত্তর দিতে হবে?
–হুমমমমমম।
—উত্তর দিলে ঘুমাবেন তো?
–হুমমমমম।
—ঠিক তো?
–হুমমমম।
—I LOVE U TOO……
–এই কথাটা বলতে এত কষ্ট হচ্ছে……
—তুমি ঘুমাবে এখন???
–ওকে যাচ্ছি যাচ্ছি।।
.
এই রাত থেকেই শুরু আমাদের মধুর সম্পর্ক। তারপর সেদিন রাতে আর কোন কথা হয়নি। পেত্নীটা ঠিক ঘুমিয়ে পড়েছিল। এতক্ষণ শুধু এটা বলার জন্যই অপেক্ষা করছিল।
পরদিন সকাল সকাল মেসেজ। তারপর থেকে জমিয়ে কথা হত চ্যাটে। মাঝেমধ্যে ফোনে।
মালিহা অনেকটাই লজ্জাবতী। আমার সাথেও কথা বলতে লজ্জাবোধ করত। আমি যদি দুষ্টমি করতাম তাহলে সে ভীষণ লজ্জা পেত। কল কেটে দিত। তারপর আবার কল করত, আমিই দিতাম।
এই ক’দিন বারংবার মেজেঞ্জার চেক করেছি শুধুমাত্র মালিহার মেসেজের আশায়।
.
দীর্ঘ তিনদিন পর আজ মালিহার মেসেজ..
-কেমন আছেন?
মালিহার এই একটা মেসেজ পেয়ে আমি যে কতটা খুশি হয়েছি তা বলা বাহুল্য। খুশিতে আত্মহারা। এই বুঝি আমার অক্সিজেন ফিরে এসেছে। ঠিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছি।
–হুমমমম ভালো। তুমি কি সত্যিই পাগল হয়ে গেছো নাকি?? এমনটা কেন করলে তুমি?
-কি করেছি?
–কি করেছো তুমি জান না? সুইসাইড করতে চেয়েছিলে কেন? এত্তগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খেলে কেন?
-আমি কি জানি এগুলো খেলে এমন হবে? আমার ভালো লাগছিল না তাই খেয়েছি। তারপর এমন হয়ে যাবে আমি কি জানতাম? ভেবেছিলাম বেশ ঘুমাব, কিন্তু এসব হবে সত্যিই জানতাম না।
–মানুষ পাগল হলে এসব করে। কয়টা ট্যাবলেট খেয়েছো?
-ছয়টা!
–ও মাই গড! তুমি কি সত্যিই পাগল?? এতগুলো ট্যাবলেট খেলে এমনতো হবেই। আচ্ছা, কেন এমনটা করলে? আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি?
-না, আপনি কি বলবেন?
–তো এমনটা কেন করলে?
-আমাকে কে কতটুকু ভালবাসে তাই জানতে।
–তাই বলে সুইসাইড করতে যাবে? পাগল হয়ে গেছো? মাথা ঠিক আছে তোমার?
– আচ্ছা বাদ দেন না এসব!
–বাদ দেওয়ার মত কিছু তো করোনি! ভবিষ্যতে যদি এমনটা করো তাহলে তোমার সাথে আর কোন রিলেশন রাখবনা। বলে দিলাম।
-হুমমমম, করবনা। আর কখনো এমন হবেনা।
–মনে থাকে যেন!!
-হুমমমমম, আমি না আপনাকে অনেক ভালোবাসি। সবসময় শুধু আপনার কথা ভাবতে থাকি। আমার কিছু ভাল লাগেনা আপনাকে ছাড়া।
-হুমমমমমম।
.
এখন বলি মোরাল অব দ্যা স্টোরি….
মালিহা আমাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে। দিন দিন দূর্বলতা বেড়েই চলছে। ওর প্রতিটা মূহুর্ত কাটে আমায় নিয়ে ভাবনা। ও ঠিক জেনে গেছে কোনদিনও আমাদের রিলেশনটা বিয়ে পর্যন্ত গড়াবেনা। তবুও অনেক স্বপ্ন দেখে। ওর খুব ইচ্ছে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে আর আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিব। জোর করে বুকটা আঁকড়ে ধরে রাখবে। কিন্তু এটা সত্যিই সম্ভব না। এখানে একটা বিশাল প্রাচীর রয়েছে। প্রাচীরটা ধর্মের বিভেদ। সেটা ভেদ করে প্রবেশ খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। জানিনা এটা কতদূর গড়াবে?

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত