সুইসাইড

সুইসাইড

যখন কেউ নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে হেরে যায়। পৃথিবীর কোথাও দাড়ানোর জায়গা থাকে না। পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করে যখন পরাজয়ের শেষ দাড় প্রান্তে এসে দাড়ায়, ঠিক তখনি সে সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যা বা সুইসাইড করার। আমরা সবাই জানি, একদিন আমাদের সবাইকে মরতে হবে, তবুও আমরা স্বার্থের পিছু ছুটে চলেছি অবিরত। স্বার্থ উদ্ধার হলেই আমরা ভুলে যাই সেই মানুষটার কথা যে মানুষটা এক সময় আমার উপকার করে ছিলো ।
.
প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালেও পূর্বকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে, এমন সময় পাশের বাড়ি থেকে অনেকের আত্মচিৎকারে আমার ঘুম ভাঙ্গাল। এই তো বেশিদিন আগের কথা নয়, ঝটপট করে চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হলাম। এই সাতসকালে কার কি এমন হলো যে, পাশের বাড়ি মরা কান্না কানতেছে।
.
কান্নার সঠিক তথ্য জানার জন্য একটু গ্রামের সড়কে দাড়ালাম। আমাদের বাড়িটা সড়কের সাথেই। যে বাড়িতে লোকজন কান্না করতেছে সে বাড়িটা আমাদের বাড়ি হতে দুই বাড়ি পশ্চিমে। যাই হোক, এক লোক মারফত জানতে পারলাম, রহমান আঙ্কেলের মেয়ে রুহি গলায় দড়ি দিয়ে সুইসাইড করছে।
.
কি কারনে করছে, কেনো করছে সে খবর এখনো জানা যায়নি। কারন মেয়েটা এখানে থাকে না। মাধ্যমিক পড়ালেখা গ্রামের স্কুলে করলেও, কলেজে পড়ার জন্য শহরে পা রাখে। হয়তো শহরের উষ্ণ বাতাসে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি, যার ফলস্বরুপ আজ মৃত্যু নামক ভয়াবহ বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হলো মেয়েটাকে ।
.
রুহির সুইসাইড করার খবরটা শুনে অনেকটা খারাপ লাগতে ছিলো। কারন মেয়েটা অন্য আট দশটা মেয়ের মতো আধুনিক বা অহংকারী ছিলো না। খুব সাদাসিধে স্বভাবের মেয়ে ছিলো রুহি। লাশটা নাকি এখনো কলেজের হোস্টেল এ ঝুলছে। পরিবারের কোনো সদস্য এবং পুলিশ না আসা পর্যস্ত লাশ নিচে নামানো নিষেধ।
.
রুহির হোস্টেলের মেয়েদের ভাষ্যমতে, রুহিকে বেশ কয়েক দিন ধরে মন মরা হয়ে চলাফেরা করতে দেখা যেতো। সবাই ভেবে ছিলো হয়তো পারিবারিক কোনো সম্যসায় আছে। কিন্তু হঠ্যাৎ করে রুহি এমন একটা কাজ করবে, সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে বাবা, চাচা ও মামারা লাশ নিয়ে আসতে গেলো।
.
হোস্টেল গিয়ে রুহির লাশ দেখে, তার বাবা একবার নয় দুইবার নয় তিন তিন বার অজ্ঞান হয়ে যায়। অনেক স্বপ্ন ছিলো যে মেয়েটাকে নিয়ে সে মেয়ের লাশ আজ ফ্যানের সাথে ঝুলছে। আজকের পর আর কেউ বাবা বলে ডাকবে না। কারন রুহি ছিলো বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। পরিবার পক্ষ থেকে লোক যাবার কিছু সময় পড়েই পুলিশ লাশের তদন্ত করতে আসে। লাশ নিয়ে পোস্টমর্টেম করতে হবে। পোস্টমর্টেমের লাশ যে একবার দেখেছে সেই ব্যক্তিই জানি পোস্টমর্টেম কি ?
.
পুলিশকে ঘুষ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি, পোস্টমর্টেম শেষ হয় বিকাল ৫ টার দিকে। বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে পুলিশ কত্রিপক্ষ থেকে রুহির লাশ রিলিজ দেওয়া হয় ।সে লাশ গাড়িতে আনতেও কত ভেজাল।রাতের ৮ টার দিকে রুহির লাশ আমাদের গ্রামে পৌছায়।
.
গ্রামের নানা জনের মুখে নানা মন্তব্য, লাশ যখন বাড়িতে নিয়ে আশা হলো তখন সন্তানহারা মায়ের আত্মচিৎকার আপনারা দেখলে বুঝতেন কষ্ট কাকে বলে। পৃথিবীতে বাবা মায়ের চোখের সামনে সন্তানের লাশ দেখতে পাওয়া যে কতটা কষ্টের। আপনারা যেদিন, এমন ঘটনার সম্মুখীন হবেন বা হতে দেখবেন। তখনি কষ্টটা উপলদ্ধি করতে পারবেন। বার বার রুহির মা অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলো।
.
বুক চাপরিয়ে রুমের মধ্যে কান্না করতেছিলো। মায়ের এমন আহাজারি দেখে আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছিলো। বার বার বলতে ইচ্ছে করছিলো, রুহি বোন আমার, কেনো এভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলি। আত্মীয়স্বজনের বুক ফাটা কান্না দেখে হাজার পাষাণ হৃদয়ের চোখেও অশ্রু চলে আসবে।
.
লাশ ধুয়ানোর কাজ শেষে, জানাজার ব্যবস্থা করা হয়। জানাজা করা হয় রাত সাড়ে ৯টার দিকে। লাশ কবরে নেওয়া হয় অতঃপর সবাই যখন লাশের উপরে মাটি দিতে ব্যস্ত ঠিক তখনি পশ্চিম আকাশ থেকে প্রচন্ড ঝুড়ো হাওয়া ও কালো মেঘ আসতে থাকে। হঠ্যাৎ এমন বাতাস ও কালো মেঘ দেখে, অনেকে দ্রুত পায়ে কবর থেকে বের হয়ে যার যার বাড়ির দিকে দৌড়াতে থাকে।
.
রুহির পরিবারের কয়েক জন সহ মসজিদের ইমাম সাহেব কবরের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে আস্তে আস্তে কবর থেকে বের হয়ে আসে। মৃত্যু, কবর দেখে যদি এতই ভয় পাও, তবে তোমরা পাপ কাজ করতে ভয় পাও না কেনো। সবাই যখন কবর থেকে বেড়িয়ে দৌড়ে বাড়ি যাচ্ছিলো, কবরে রাখা ওই লাশ কিন্তু দৌড়ে পালাতে পারেনি। শূন্য খাঁচার দেহ নিয়ে একদিন সবাইকেই কবরে সুয়ে থাকতে হবে।
.
কবর, মৃত্যু দেখে যদি এতই ভয় তবে মসজিদে যখন আজান হয়, তখন জামাতে দাড়িয়ে নামাজ পড়তে আসো না কেনো। সুইসাইড করা সকল ব্যক্তি বিনাহিসেবে জাহান্নামে যাবে, এই কথা হাদিস কুরআনে স্পষ্ট লেখা আছে। রুহির এই সুইসাইডের কারন দুই দিন পরে জানতে পারি আমি। রুহির মৃত্যুর একমাত্র কারন ছিলো, আকাশ নামের একটা ছেলে।
.
আকাশের সাথে রুহির রং নাম্বারে আলাপ হয়, যখন রুহি ক্লাস টেনে পড়ে। তারপর সম্পর্কটা বন্ধুত্ত থেকে প্রেমে রুপ ন্যায়। রুহি শহরের কলেজে ভর্তি হবার পরে মাঝে মাঝেই আকাশ রুহির সাথে দেখা করতো। রুহি ও আকাশের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিলো কিনা, সেটা রুহি ও আকাশই ভালো জানে। রুহি যেদিন মারা যায়, তার আগের দিন আকাশ অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে বউ সাজিয়ে নিয়ে আসে । হয়তো রুহি এই বিয়েকে কেন্দ্র করেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলো।

আকাশকে ‘রহমান’ আঙ্কেল কিছুই করতে পারেনি, কারন আকাশ ছিলো ধনীর দুলাল। রুহির মৃত্যুর খবর শুনে আকাশের বাবা পুলিশকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছিলো, তাই রুহির বাবার মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে চোখের অশ্রু ঝড়িয়ে বিধাতার কাছে বিচার চাওয়া ছাড়া কোনো রাস্তা ছিলো না।
.
পরিশেষে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ভাই বন্ধু আপুদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলে যাই, বাবা মায়ের অবাধ্য হয়ে, রং নাম্বারে ফোন আলাপ করে সম্পর্ক তৈরি করে, সে সম্পর্ক কোনো দিনই আপনার মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। বাবা মা সব সময় আমাদের মঙ্গল কামনা করে। জীবন একটাই, এই জীবন চলে গেলে পৃথিবীর আলো আর কোনো দিন দেখতে পারবেন না। যদি কেউ এখনো কোনো অনৈতিক সম্পর্কে জরিত থাকেন, তবে সেই ভাই / বোনের পায়ে ধরে বলবো, আপনি ইসলামের পথে ফিরে আসুন। তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আল্লাহ আপনার সকল গুনা মাফ করে দিবেন হয়তো।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত