কর্মফল

কর্মফল
প্রেমের বিয়ে পরিবারের অপছন্দ হওয়ায় বিনা কারনে চার বছরের সুন্দর একটা সম্পর্ক ভেঙে প্রেমিকাকে ছ্যাঁকা দিয়ে আমি কণে দেখতে চললাম ঘটকের সাথে!’বাবা-মা আর ছোট মামার সাথে কণে দেখতে এসে লজ্জ্বায় লাল হয়ে এক কোনে বসে আছি আমি। কথা চলছে হবু বিয়ায়-বিয়ানদের মধ্যে। এমন সময় নাস্তার প্লেট হাতে এক পরীর আগমন!’ সিনেমায় দেখা সুন্দরী নায়িকাদের মতোই যেনো তার রূপ!’ তথাকথিত সমাজ যাকে রূপবতী বলে এ কন্যা যেনো তার চেয়েও রূপবতী!’ আড় চোখে বারবার আমি কণের মুখপানে তাকানোর চেষ্টা করছি!’ আমাকে সবাই তার সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করছে, কিন্তু আমি কিছুতেই কথা বলতে পারছিনা! আমার গলার স্বর যেনো চেপে ধরেছে কেও!’
মা আর ছোট মামা মেয়ের সাথে কথা বলছেন। ঠিক কথা বলছেন না বলে প্রশ্ন বা জেরা করছেন বললেও ভুল হবেনা। তাদের কথোপকথন থেকেই আমি জানতে পারলাম- মেয়ের নাম ইভা, বয়স উনিশ কুড়ির মাঝামাঝি, বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। অতিরিক্ত গুনের মধ্যে ভালো রান্না আর চমৎকার তার গানের গলা!’ গান পাগল বাবা আমার তাই গলে যেনো সেখানেই মোম হয়ে গেলেন!’ খুব দ্রুত ঘটতে থাকলো কাহিনী!’ পাকাপাকি হয়ে গেলো বিয়ের দিন তারিখ পর্যন্ত!’ দেনমোহর ধার্য্য হলো পনেরো লক্ষ টাকা!’ যৌতুক- একটা বাইক, আইফোন, আর রুম সাজানোর প্রয়োজনিয় সব আসবাবপত্র। যদিও যৌতুকের কোনো দাবি আমার নেই, কিন্তু উপহার স্বরূপ এতো কিছু নিজ থেকেই যদি দিতে চান তাহলে কি আর না করতে পারি??’
রাত গভীর হয়ে আসলেও বাসর ঘরে প্রবেশ করতে প্রচন্ড ভয় করতে লাগলো!’ দুলাভাইয়েরা এক সময় জোর করেই ঢুকিয়ে দিলো রূমে!’ বন্ধুরাও জোর করে কি সব খাইয়ে দিয়েছে’ তাতে গরমের মধ্যে শরির আরো গরম হয়ে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, অস্থিরতা কাটছেনা কিছুতেই। মন চাচ্ছে ঠান্ডা জলে স্নান করি একবার, কিন্তু এমন সময় স্নান করলে কে কি ভাববে ভেবে তাও করতে পারছিনা!, নিজেকে প্রস্তুত করে বউ এর পাশে বসলাম। আমতা আমতা করে কথা বলতে বলতে সাহস সঞ্চয় করে একসময় তার ঘোমটাটা সরিয়ে থুতনিতে হাত রেখে মুখপানে চাইলাম!’ হঠাৎ মনে হলো স্বজোরে কেও শক্ত কিছু একটা দিয়ে আঘাত করলো আমার মাথায়!’ আমি জ্ঞান হারালাম!’ বিয়ের পরদিনই অফিসের জরুরী একটা কাজের অজুহাতে বাড়ি ছাড়লাম!’ কর্মে যোগদান না করে দিনরাত শুয়ে বসে সময় কাটাতে লাগলাম!’ ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই জীবন কাটিয়ে দেওয়ার নেষা পেয়ে বসলো আমায়। সবার সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করে একাকি রইলাম!’
কুড়ি বছরের কণে দেখিয়ে আমার চেয়েও পাঁচ বছরের বড় অসুন্দর ডিভোর্সী মেয়েকে গছিয়ে দিয়েছেন আমার শশুর আব্বা!’ এ যেনো মেনে নেওয়া যায়না কিছুতেই। তাই তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আবারো গার্লফ্রেন্ডকে পটানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। কাজও হলো বেশ তাড়াতাড়িই!’ স্বপ্ন দেখতে থাকলাম আবারো বিয়ে করার!’..
মাস খানেক যেতে না যেতেই খবর পেলাম- আমাকে না পেয়ে বাবাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ!’ অপরাধ নারী নির্যাতন!, আমার মতো কেওই মেনে নিতে পারেনি নতুন বউকে। এমন সাজানো নাটক মেনে নেওয়ারও নয়!’ তাইতো আমি পালিয়ে আসলেও থেমে থাকেননি আমার পরিবারের লোকজন!’ শুরু করেছেন অশান্তি! উঠতে বসতে নতুন বউকে খোঁটা দেওয়া থেকে শুরু করে শরিরে আঘাত করা পর্যন্ত বাদ রাখেননি কিছুই। পরিনামে খেতে হয়েছে মামলা, নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা!’
বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করে বাবাকে মুক্ত করলাম। কোর্টে চালান করলো আমায়!’কাঠগড়াই দাঁড়িয়ে বাদি পক্ষ- শালা, শশুর আর বউকে দেখে ক্রোধ চরমে উঠলো!’ ইচ্ছা করছিলো খুন করে ফেলি তাদের। কিন্তু পনেরো লক্ষ টাকা দেনমোহর পরিশোধ করার ক্ষমতা আমার এই মুহূর্তে নাই। তাই বাধ্য হয়ে বউ এর কথা মতো লিখিত দিয়ে বউগত স্বামীর মতো অসুন্দরী বউকে নিয়েই বাড়ির পথে রওনা দিলাম!’ বউ এর হাত ধরে হাঁটছি!’ সামনে এসে দাঁড়ালো আমার প্রাক্তন প্রেমিকা সম্পা!’ যাকে ছ্যাঁকা দিয়ে বিয়ে করতে গিয়েই ফেঁসে গেছি আজ!’ যেমন তেমন ফাঁসা না’ এ যেনো একদম মাইনকা চিপায় ফাঁইস্যা গেছি!” জানতে পারলাম প্রাক্তন আমার বউ এর-ই মামাতো বোন!’ সেই খেলেছে আমার সাথে এমন সাপলুডু খেলা!’প্রাক্তনকে পাশ কাটিয়ে পা বাড়াতেই আবারো পথ আগলে দাঁড়ালো সে!’ বললো- কেমনডা লাগছেগো জানু?’ বউ আমার হাতটা আরো শক্ত করে ধরে মিটিমিটি হাঁসলো!’ আমি নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম সেখানেই!
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত