শাস্তি

শাস্তি
“আম্মু!তুমি যখন আজ বাইরে গিয়েছিলে,আব্বু খালামণিকে খুব ব্যথা দিছে।খালামণি খুব কান্না ও করেছে।আব্বু পচা।খালামণি কান্না করার পর ও ব্যথা দিছে।”মিলির কথা শুনে কাঁপতে শুরু করে মীরা।নিয়ান মিহিকে ব্যথা দিয়েছে?কিসের কথা বলছে মিলি?আর মিহি আজ আসবে বলেনি তো।মীরা ব্যাগ ফেলে দৌড়ে উপরতলায় যেতেই দেখে মিহি গুটিশুটি মেরে বিছানায় বসে আছে।নিয়ান বারান্দা থেকে সিগারেট শেষ করে রুমে ঢুকল।মীরার চোখ লাল হয়ে আছে।
–মিহি,কি হয়েছে তোর??
–ক…কিছুনা তো আপু।
–নিয়ান,কি হয়েছে ওর?
–কিছুই তো হয়নি।তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিল।অসুস্থ মেইবি,চেক করো তো।
মীরা মিহির গায়ে হাত দিতেই মিহি কেঁপে উঠল।কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,”আ…আমি ঠ..ঠিক আছে,আপু।আজ আসি।”মীরার হাত ধরে মিহি ওঠার চেষ্টা করে,শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি পায়না।পাবেই বা কিভাবে??একটা সতেরো বছরের মেয়ের সাথে জোর জবরদস্তি শারীরিক সম্পর্ক করলে সে কি পারবে বাধা দিতে??নাকি পারবে এই অত্যাচার সহ্য করতে?মিহিকে আবার বিছানায় বসিয়ে নিয়ানকে সাথে নিয়ে পাশের রুমে যায় মীরা।
–তুমি কি মানুষ??মিহি একটা বাচ্চা মেয়ে?এত চাহিদা তোমার??এতটাই লালসা যে ঐ বাচ্চা মেয়েটা যে তোমায় বড় ভাইয়ের নজরে দেখে তার শরীরটাকেই খুবলে খেতে বিবেকে বাঁধলো না??
–শোন!!তুই এখন পুরোনো হয়ে গেছিস।আর আমি কি এমন করেছি??শালী হয় তো,আদর করেছি একটু।(অশ্লীল ভঙ্গিতে বলে নিয়ান)
–এটা আদর নয়,নোংরামি!!কতটা বেহায়া আর অশ্লীল তুমি আজ বুঝে গেছি।গেট রেডি মি.রেপিস্ট,খুব শীঘ্রই তুমি জেলে থাকবে।তোমার প্রাপ্য শাস্তি তুমি পাবেই।
–ধর্ষণ মামলা করবে ??পারবে করতে??ভেবেছো কখনো তোমার কি হবে??তোমার মেয়ের??
–আমার মেয়ে আমি বুঝবো।নিজের সংসার বাঁচাতে নিজের বোনের সাথে অবিচার আমি মেনে নিব না।
–ওকে!গেট লস্ট। মীরা মিহি আর মিলিকে নিয়ে নিজের মায়ের বাড়ি চলে আসে।মীরার মা মায়মুনা বেগম মীরা কে এভাবে আসতে দেখেই চোখ কপালে তোলেন।দরজায় দাঁড়িয়েই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন।
–কি রে মীরা??ব্যাগপত্তর নিয়ে কেন??
–নিয়ান একজন ধর্ষক মা।ও মীরা কে ধর্ষণ করেছে।ওর মতো একটা নোংরা লোকের সাথে সংসার করা সম্ভব না।ওর নামে আমি কেস করবো।
–এসব করলে কি ওর সম্মান ফিরে আসবে??এসব হাবিজাবি কাজ না করে, যা নিজের সংসারে ফিরে যা।পুরুষ মানুষের একটু আধটু দোষ থাকে,সব মানিয়ে নিতে হয়।
–মা!!!
মায়মুনা বেগমকে দরজায় রেখেই মীরা ভেতরে ঢোকে।মায়মুনা রাগান্বিত দৃষ্টিতে মিহির দিকে তাকান। মিহি ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢুকতেই মায়মুনা বেগমের ফোনে নিয়ানের কল আসে।
–হ্যাঁ, জামাই!!ও তো জেদী মেয়ে!তুমি চিন্তা করো না।আমি বুঝাবো ওকে।
–সেটাই আপনার জন্য ভালো নাহলে এই যে মাসে মাসে বসে বসে খাচ্ছেন,সেটা আর হবেনা।
–তুমি চিন্তা করো না,জামাই।ও খুব শীঘ্রই ফিরে যাবে।
কল কেটে মায়মুনা বেগম মীরার কাছে আসে।মীরা ততক্ষণে উকিল রেডি করে রেখেছে।মায়মুনা বেগম বারবার মীরা কে বোঝালেন কিন্তু মীরা বুঝতে রাজি না।অবশেষে মায়মুনা বেগম ঠিক করে নিলেন মীরার সংসার আর নিজের বিলাসিতা বাঁচাতে তাকে একটা শক্ত পদক্ষেপ উঠাতেই হবে।রান্নাঘরে গেলেন তিনি।দুধ গরম করে গ্লাসে ঢেলে মিহির রুমে এলেন তিনি।
–মিহি!দুধটুকু খেয়ে নে।
–মা,আমার ভালো লাগছেনা।
–চুপচাপ খেয়ে নে।বোনের সংসার খেয়ে এসে এখন ঢঙ দেখো মেয়ের!!
খা কলঙ্কিনী! মায়ের কথা নিতে পারলো না মিহি।দুধটুকু খেয়ে আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিল।চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে,মাথাটা ঝিমঝিম করছে।চোখের পলকেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল মিহি। পরদিন সকালে,
–মিহি!!মিহি,কই তুই??চল,পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে।
মিহিকে ডাকতে ডাকতে মিহির রুমের দিকে আসতেই মীরা দেখল মিহি ঘুমিয়ে।মীরা মিহিকে আলতো করে ডাকলো কিন্তু মিহি উঠলো না।মীরা মিহির গায়ে হাত রাখতেই অনুভব করল মিহির শরীর বরফের মতো ঠাণ্ডা।মিহির নাকের কাছে হাত রাখতেই চরম ধাক্কা খেল মীরা।মিহির নিঃশ্বাস চলছে না।মীরা যেন শোকে পাথর হয়ে গেল।মায়মুনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বললেন,”বোনের সংসারের ধ্বংস চায়নি বলেই মেয়েটা আমাদের ছেড়ে চলে গেল।মীরা,মিহি তো আর নেই।মিলির কথা ভেবে নিয়ানকে মাফ করে দে।”মায়মুনা বেগমের কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মীরা।
নিয়ান ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে।মীরা নিয়ানের জন্য খাবার গরম করছে।সবকিছু স্বাভাবিক,একেবারেই নিস্তব্ধ পরিবেশ।তরকারিতে একটা-দুটো করে সবগুলো ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিল মীরা যেটা মায়মুনা বেগম মিহির দুধে মিশিয়ে ছিল।আসার সময় মায়মুনা বেগমের ঘর থেকেই ওষুধগুলো এনেছে সে।মায়মুনা বেগমের সময়সীমা ও দ্রুত শেষ হবে।চুলা অন করতেই বড়সড় একটা ব্লাস্ট হবে যার ব্যবস্থা মীরা করেই এসেছে।নিয়ানকে খাবার বেড়ে দিয়ে মীরা মিলিকে কোলে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আদর করল।অতঃপর মুচকি হেসে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মিহির অন্তঃআত্মাকে বিদায় জানালো,ধীরে ধীরে কর্পূরের ন্যায় তা অদৃশ্য হতে লাগল।মীরার মনে একটাই প্রশ্ন, “দুই অপরাধীর খুনের শাস্তি বুঝি মৃত্যু?”
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত