হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা

হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা

অবনী কে দেখেই বেশ বড় সড় একটা ধাক্কা খেলাম। নীল শাড়ীতে আজ অবনীকে অপরূপ দেখতে লাগছে। হাতে কাঁচের চুড়ি, কপালে লাল টিপ আর খোঁপায় সাদা বেলি ফুলের মালা অসম্ভব সুন্দর এক মায়াবী চেহারা মেয়েটার। অবনীকে দেখলেই  বুকের ভেতরটা কেমন জানি অস্থির হয়ে ওঠে সবকিছু গুলিয়ে যায় আমার ঠিক মতো কোন কথা ই বলতে পারি না।

আমি আনাফ, অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।গ্রামে বিশাল বড় বাড়ি থাকলেও বাবার ব্যবসার জন্য ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকায় থাকতে হয় বাবার সুবিধার্থে। আর এই বাসার নিচ তলাতেই ভাড়া থাকে অবনীরা… সেই সুবিধার্থে এই পাগলিটার সাথে পরিচয়। তিন মাস হলো নতুন বাসায় এসেছি। প্রথম কয়েকদিন অবনী নামে কাউকে দেখিনি। কিন্তু সেদিন যখন আমার ময়না পাখি টা কে নিয়ে ছাদে গেছিলাম, সেখানেই তার প্রথম দর্শন পেয়েছিলাম। খুব চঞ্চল আর দুরন্ত প্রকৃতির। অবনী এবার এস এস সি দিবে, আজ অবনীর স্কুলে ফেয়ারওয়েল তাই এতো সাঁজগোজ করেছে, হঠাৎ করে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবি নাই। এক পলক দেখেই আমি বিমোহিত। বেশ কিছু দিন পর আমার ময়না পাখিটা কে নিয়ে যখন ছাদে হাঁটাহাঁটি করছিলাম হঠাৎ অবনী এসে পেছন থেকে ডাক দিল সাথে সাথে আমার হৃৎপিন্ড কাঁপুনি দিয়ে উঠলো……..

>এই যে মিঃ কি করছেন এখানে ?

-দেখতেই তো পাচ্ছ হাঁটাহাঁটি করছি।

>ভাইয়া পাখিটা কি আপনার ?(মিষ্টি স্বরে)

-যেহেতু পাখিটা আমার হাতে তাহলে তো আমারি।

>ভাইয়া পাখিটা কি কথা বলতে পারে ?

-কেন আপনাকে বলবো কেন?

>এভাবে কথা বলছেন কেন একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে ?

-এমা আপনি বাচ্চা ? আপনি তো খালাম্মা।

>ক্লাস টেন এ পড়া মেয়ে তো বাচ্চাই হয়।আর আমার আব্বু আমাকে পিচ্চি বাবু বলেই ডাকে।

-তাই নাকি খালাম্মা।

>দেখুন আমি আপনার খালাম্মা না।আমি অবনী। এই বলে মন খারাপ করে চলে গেলো।

যেমন নামটা সুন্দর তেমন দেখতেও খুব সুন্দর, চুল গুলো আরো সুন্দর, কালো আর অনেক লম্বা অবনী হাসলে গালে টোল পড়ে, কাঁদলে চোখে মায়া ঝরে লজ্জা পেলে লাল হয়ে যায় চোখের দিক তাকালে মনে হয় ডুবে যাচ্ছি, চুলগুলো  দেখলে মনে হয় যেন হাওয়ায় ঢেউ তুলেছে। চোখে খুব বেশি মায়া নেই তারপরও সে মায়াবতী।

চোখ গুলো কাজল কালো, গায়ের রং ফর্সা আবার কথাও বলে বাচ্চা মেয়েদের মতো। ওর ভয়েস ও একদম বাচ্চাদের মতোই।আর কালো ড্রেস এ একদম মন ছুয়ে গেছিলো। কিন্তু তারপরও বাচ্চা একটা মেয়ে তার উপর শুনলাম সে নাকি বাড়িওয়ালার এক আত্মীয়র মেয়ে। তাই আর ওকে নিয়ে সেভাবে ভাবিনি। সেদিন এর পর থেকে হয়তো পাখিটাকে দেখার জন্যই প্রায় সময় আমাদের বাসায় আসে। কিন্তু ও বুঝে না, ওরে দেখলে আমার হার্টবিট বেড়ে যায়, ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়। তাই বার বার ওকে তাড়িয়ে দেই কিন্তু শোনে না, বার বার আসে আর আমেদের বার বার ঝগড়া হয়। যাওয়ার সময় আবার আঙ্কেল এর ভয় দেখিয়ে চলে যায়।

ইদানিং একটু বেশি আসে বাসায়, আর আমার ভালোবাসাও বাড়তে থাকে, ওর প্রতি দুর্বলতা কাজ করে তবুও কেন জানিনা ওকে বকা দেই, এতো ধমক দেই, ঝগড়া করি তারপরও আসে এসে পাখিটার সাথে কথা বলে।পরদিন সকালে কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলতেই দেখি অবনী, আমি ওরে দেখে সহ্য-ই করতে পারলাম না ইচ্ছামত বকা দিতে শুরু করলাম ,

-এই মেয়ে তুমি আবার আসছো কেন হ্যা? এতো বকা দেই তাও কেন আসো ?

>আন্টির কাছে আসছি আর পাখিটার সাথে কথা বলতে আসছি।

-আর যেন না দেখি তোমায়। আর কখনো এখানে আসবানা।তাহলে কিন্তু আমরা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।তুমি থেকো তোমার আঙ্কেলের বাসায়।

>আচ্ছা আর কখনো আসবো না, বলেই কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো মেয়েটা।

আম্মু এসে বললো মেয়েটা খুব ভালো আর মিষ্টি। বাচ্চা একটা মেয়ে ,সবসময় তুই ওকে বকিস কেন? ও আসে একটু পাখিটার সাথে কথা বলতে তাই বলে তুই ওর সাথে এমন ব্যবহার করবি।কতটা কষ্ট পেয়েছে।

-ধুর বাদ দাও তো। ওর ঢং আমার ভালো লাগে না।এই বলে রুমে চলে এলাম। কেন জানি না হঠাৎ করে খারাপ লাগতেছিল, বুঝতে পারলাম ওকে এভাবে বকা দেয়া ঠিক হয় নি… ঠিক করলাম পরে যখন আসবে সরি বলে দিব কিন্তু না অবনী আর আমাদের বাসায় আসে না এভাবে প্রায় পনেরো-বিশ টা দিন কেটে গেলো কিন্তু অবনীর কোনো দেখা নেই, ও এখন আর আমাদের বাসায় আসে না, ছাদেও যায় না সেদিনের পর থেকে আর একদম দেখা নেই। বুকের বাম পাশটা তে খুব কষ্ট হতে লাগলো।নিজের অজান্তেই ওকে মিস করতে শুরু করলাম। আমি বুঝতে পারলাম সেদিনের কথায় সে অভিমান করেছে, অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে ওকে কাঁদিয়ে যেন ওর থেকে বেশি কষ্ট আমি পাচ্ছিলাম। কোনো কাজেই মন দিতে পারছি না, কিছুতেই ভালো লাগছে না, নিজের উপরই এখন রাগ লাগছে। ওর শূন্যতা আমার অস্থিরতা টা কে আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলো। মেয়েটাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে, ইচ্ছা করছে ওকে জড়িয়ে ধরে সরি বলি  আর চিৎকার করে বলে দেই ভালোবাসি তোমাকে, বড্ড ভালোবাসি ভালোবাসি।

কিন্তু না কোনভাবেই তার দেখা পেলাম না, অনেক খুঁজেও তার সাথে কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারলাম না, বেশ কিছু দিন পরে জানতে পারলাম অবনীরা বাসা ছেড়ে চলে গেছে তখন নিজেকে বড্ড অপরাধী বলে মনে হল। আমার মনের না বলা কথাগুলোও আর কখনো বলা হয়ে উঠল না একরাশ দুঃখ-কষ্ট নিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো আর আমিও হারিয়ে ফেললাম আমি আমার পাগলি (অবনী) টা কে।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত