পরকীয়ার বেড়াজাল

পরকীয়ার বেড়াজাল
পাশের ঘরের ভাবী।আজ বিদেশ থেকে ভাই আসবে।ভাবী খুবই এক্সাইটেড ।সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে তোশক,বালিশ কড়া রোদে শুকাতে দিয়েছেন।ঘরদোর পরিস্কার হতে নানা পদের রান্নাবান্না চলছে।ব্যস্ততায় উত্তেজনায় এক ভিন্ন অনুভূতির সময় পার করছেন। সে যে বিয়ে করে বউকে রেখে গিয়েছেন ,আর আজ প্রায় আড়াই বছর পর ভাবীর সাথে ভাইয়ের পুনঃসাক্ষাত হবে। টান টান ,উত্তেজনা ,দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে ভাই এসে পৌঁছালেন ।নানা পদের খাবারের আয়োজন করলেন।খাওয়া-দাওয়া করে প্রায় ঘন্টাখানেক পর ভাই বের হয়ে গেলেন।বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাত,কুশল বিনিময় করবেন।পুনরায় আসতে আসতে রাত প্রায় দশটা ছুইঁছুইঁ।
ভাবী অনেক রকমের পিঠা তৈরি করলেন।কিন্তু ভাই একটা পিঠাও মুখে দিয়ে দেখলেন না।তিনি আছেন নিজের জগতে।হই হই করে এ মহল্লা সেই মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। কিছুদিন পর শুনি ভাইয়ের এক বন্ধুর বিয়ে।ভাই সে বন্ধুর বিয়েতে এটেন্ড করার জন্য অনেক কেনাকাটা করেছেন।গায়ে হলুদেও যাবেন বন্ধুরা সবাই মিলে ।এদিকে ভাবীর মন মেজাজ খুবই খারাপ।জামাই এসেছে মাত্র দু’মাসের ছুটিতে ,এর মধ্যে ভাই সে সময় পার করছে তার বন্ধু সার্কেলে।তার আনন্দের জগতে এখনও স্ত্রীর জায়গা হয় নি।ভেরি দুঃখজনক!ভাবী একা একা চোখের জল ফেলছেন,জামাইকে লজ্জায় বলতেও পারছেন না ,সইতেও পারছেন না।এরপর শুনি ভাইয়েরা বন্ধুরা সবাই মিলে কক্সবাজার যাচ্ছে। তাছাড়া বন্ধুদের নিয়ে প্রত্যহ ছোটখাট ট্যুর তো আছেই।
বস্তুত একটা মেয়ে /ছেলে যখন নতুন জীবন শুরু করে তখনি কিছু বৈশিষ্ট তৈরি হয়।যদি বৈশিষ্টে গরমিল দেখা দেয় ,তাহলে দাম্পত্যজীবনে গরমিল হবেই। প্রথমত মেয়েটাকে বিয়ে করে দুমাসের মাথায় ভাই চলে যায়।মেয়েটা নিজের পরিবার পরিজনকে ছাড়তে পারে তার লাইফপার্টনারের সাপোর্টে,ভালবাসায়।কিন্তু সে সাপোর্টার কে কাছে পাচ্ছেন না কর্মের কারণে।সে যাই হোক। দ্বিতীয়ত এরপরও মেয়েটা নিজের আবেগ অনুভূতিকে নিয়ণ্ত্রণে রেখে দিনযাপন করছেন।আর এ দিনযাপন অতিবাহিত করছেন একটা সুন্দর জীবনের আশায়,ভালবাসার মানুষটার আশায়।।আশা -আকাঙ্খা আছে বলে মানুষ স্বপ্ন দেখে,বেঁচে থাকার প্রেরণা পায়।
ঠিক মেয়েটিও তার জীবনসঙ্গী ,ভালবাসার মানুষটার জন্য লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করছিল।মেয়েটা রঙ্গিন রঙ্গিন অনেক স্বপ্ন দেখেছে।স্বামী আসলে নিজ হাতে পাতে তুলে দিবেন পছন্দের খাবার।দুজন দুজনার হাত ধরে হারিয়ে যাবেন পছন্দের কোন জায়গায়।কোন এক পূর্ণিমা রাতে গল্প করতে করতে কেটে যাবে রাত।তন্দ্রাচ্ছন্ন ঘোরে ব্রেকফাস্ট রেডি করবেন কিন্তু নানা আশার ,ভালবাসার ,সারাজীবনের পাশে থাকার মানুষটা আছে নিজের জগতে।পুরো সময়টুকু পার করছেন নিজের সাধে।মেয়েটা যেন শুধুমাত্র রাত্রিযাপনের জন্য।ওর ও তো ইচ্ছে হয় স্বামীর হাত ধরে একটু গল্প করতে।দুজন দুজনার সুখ দুঃখের হাসি কান্নার ভাগীদার হতে।
কিন্তু সে স্বামী কি তার প্রযোজ্য মূল্যটুকু দিয়েছে?মর্যাদা,সম্মান,সময় যখন মেয়েটা পাবে না তখনি অটোমেটিক্যালি তার মনে অবাঞ্চিত ভাবনা জন্ম নেবে।কারও কারও মনে রাগ,ক্ষোভ, ঘৃণা জন্ম নেয়।কেউ কেউ হতাশার সাগরে ভাসতে থাকে । আর তখনি তার মনের অব্যক্ত ভাব যে আগ্রহ সহকারে শুনবে তাকে ভাল লাগবে বা স্বাচ্ছন্দ্য মনে করবে। যে একটু সময় দেবে তার প্রতি শ্রদ্ধা ,ভালবাসা আপনাআপনি জন্মাবে।যতক্ষণ না আমরা একজনকে একজনে মন ভরে ভালবাসতে না পারবো,গল্পে আড্ডায় ভাল লাগা বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না আসবে ততক্ষণ না আমাদের দাম্পত্য জীবন মধুর হবে না। বিজ্ঞগণ বলে গেছেন দাম্পত্য হল একটা আর্ট।যত সুনিপুণ করে সাজাবে তত সুন্দর হবে,তত শান্তি আসবে। আর এসব কারণে হয়তো কিছু কিছু মেয়ে পরকীয়ার বেড়াজালে আটকা পড়ে।
একজন স্বাভাবিক ,সুস্হ মস্তিস্কের মেয়ে যদি তার কথাগুলো শোনার জন্য বা শোনানোর জন্য স্বামীকে পাশে পায় সে মেয়ে অনৈতিক কর্মে বা যেকোন অবাঞ্চিত পথে সহজে পা বাড়াবে না,এটা নিশ্চিত। আমাদের বেশিরভাগ প্রবাসীদের জীবিকা নির্বাহের জন্য বছরের পর বছর চলে যায় বিদেশে ।পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ হয় না সহজে।অনেকে নববধূ রেখে বছর পার করেন।এ অবস্হায় সাধ্যমত বউয়ের সাথে ফোনালাপ ভীষণ জরুরী।না আসার কারণ,ভবিষ্যত পরিকল্পনা,বর্তমান চিন্তাভাবনা ইত্যাদি নিয়ে শেয়ার করা উত্তম।তাতে দু’জনের মন ফুরফুরে থাকবে,পরিস্কার থাকবে।
বয়সও এক্ষেত্রে প্রযোজ্য।বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের মন,মস্তিস্কও পরিপক্ক হয়। অতএব ,বিশেষ করে প্রথম পর্যায়ে নিজের বউকে সাধ্যমত একটু বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন।ভাবনাগুলো ভাগাভাগি করুন,সুখ দুঃখে,খুঁনসুটিতে পাশে থাকুন।একজনের মনে একজনকে গেঁথে ফেলুন,পূর্ণ করে ফেলুন,আর এমনভাবে করুন যেন ভালবাসার মানুষটা আপনার মনে সর্বত্র বিচরণ করে।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত