-এভাবে ধোঁয়া উড়িয়ে কী সুখ পান?জানেন না ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
হঠাৎ এমন কথা শুনে ডান পাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।অবাক না হয়ে কোন উপায় নেই।কেননা এই যান্ত্রিক শহরের নিশ্চুপ ফুটপাতে যদি কোন অপরিচিতা পাশে বসে হঠাৎ এমন প্রশ্ন করে,তবে অবাক হওয়া ছাড়া আর কিইবা করার থাকে….
-ও হ্যালো আমার কথা কি শুনতে পেরেছেন?
-কে আপনি?
-যাক কথা বলতে পারেন তবে…
-আজবতো! কে আপনি? আর আমার পাশে বসেছেন কেন?
-এমন ভাবে কথা বলছেন কেন? আপনার পাশে বসে মনে হয় মহা অন্যায় করে ফেলেছি?
-অবশ্যই অন্যায় করেছেন। অপরিচিত কারও পাশে অনুমতি ছাড়া বসাটা একদমই যৌক্তিক নয়।
-আমার কিন্তু তা মনে হয় না। আর আপনাকে প্রায় দেখি এখানে একাকী বসে থাকেন। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট এবং চোখ দুটো ছুটে চলা গাড়িগুলোর দিকে। দেখে মনে হয় আনমনে কিছু একটা ভাবেন।
-তো কি হয়েছে?এমন হলেই বুঝি অপরিচিত একটা ছেলের পাশে এসে বসতে হবে?
-না আসলে আপনাকে দেখে কৌতুহলের জন্ম হয়েছেতো তাই এসে কথা বলতে ইচ্ছে করল।
-কাজটা ঠিক করেন নি। আমিতো খারাপও হতে পারি?
-নাহ আপনি মোটেও খারাপ নন। আপনাকে আমি গত ৬ মাস থেকেই চিনি।
-মানে?
-না আসলে চিনি বলতে আপনাকে দেখছি..
-ওহ। তা কি দেখছেন?
-এই এখানে বসে থাকেন সন্ধ্যার পর আর হাতে এই অসহ্য বস্তুটা থাকে।সে যাই হোক আমি প্রিয়ন্তী।মেডিকেল ইন্টার্নি করছি। রাস্তার ওপাশে যে বাসাটা দেখছেন তার তিন তলায় থাকি।আপনার নামটা বলা যাবে?
-আমি অবাক।
-বুঝলাম আপনি অবাক হয়েছেন। এবার নামটা বলবেন প্লীজ?
-হা হা হা। আমার নামই অবাক। অবাক রায়হান শিশির।
-ও আচ্ছা। তা কি করেন আপনি?
-ঐ আপনার সমস্যা কি?নাকি কোন ধান্দা আছে?গায়ে পড়ে এসে এতো কথা বলার কারণ কী? যানতো এখান থেকে?
-আমি যাব কেন?রাস্তাটাতো আর আপনার একার নয়? আমার বাসার সামনে আমি থাকব এখানে…
-ওকে থাকেন আপনি।আমি গেলাম।
অনেকটা রাগ করেই চলে এসেছিলাম সেদিন।এরপর বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। আর ওদিকটায় যাওয়া হয়নি।কিন্তু আজ চাকুরীর একটা ভাইবা দিয়ে আসার সময় মেয়েটার সাথে দেখা হয়েছিল।অবশ্য দেখা হওয়া বললে ভুলই হবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। অনেকটা রাগ নিয়েই বলল-
-ঐ আপনি আর আসেন না কেন?
-আমার কি আসার কথা ছিল?
-কেন কথা না থাকলে কি আসা যাবে না?
-না আসা যাবে না।
-ওহ।আপনার ফেইসবুক আইডিটা দেওয়া যাবে?
-নাহ দেওয়া যাবে না।
-সরি আমি মনে হয় আপনাকে বিরক্ত করছি..
-জি।বোঝার জন্য ধন্যবাদ।
-ভাল থাকবেন।(মুখটা মলিন করে চলে যাচ্ছিল।চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করছিল)
দেখে কেন জানি মায়া হল কারও উপর অনেকদিন পর।তাই আইডিটা দিয়ে আসলাম।
রাতে ডাটা কানেকশন দিতেই মেসেঞ্জারের নোটিফিকেশন দেখে বেশ অবাক হলাম।মেসেজ রিকুয়েস্টে কারও কনভারশনে ১২৮টি মেসেজ।
আইডি নামটাও বেশ অদ্ভুত (কুহেলিকার শত্রু) ।
মেসেজগুলো পড়ে বুঝলাম এটা প্রিয়ন্তীর আইডি।রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করতেই মেসেজ দিল..
-ধন্যবাদ
-স্বাগতম।
তারপর কেটেগেছে প্রায় ২ বছর। ধন্যবাদ ও স্বাগতমের কথাগুলো রূপ নিয়েছে হাজারও কথাতে।নিয়মিত কথা হয়, দেখা হয় সপ্তাহে প্রায় সবদিন। আপনি ডাকটা এখন হয়ে গেছে তুই।পুরাই পাগলী একটা । হাজারও উদ্ভট আবদার আমার কাছে। আমাদের দেখে যে কেউ বলবে আমরা রিলেশনে আছি। আমিও বুঝতাম মেয়েটা আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু আজ হঠাৎ ওর প্রপোজ করাটা আমাকে নিশ্চিত করে দিল প্রিয়ন্তী আমাকে ভালবাসে। কিন্তু আমি ওকে ফিরিয়ে দিয়েছি।এসব ভালবাসায় আমি বিশ্বাসী নই।কারণ আমি একজন নীরব ঘাতক,একজন দক্ষ প্রতারক।দূর এখন আবার কে ফোন দিল?প্রিয়ন্তী দিয়েছে,দেখি কী বলে আবার..
-তুই কি আমার সাথে একটু দেখা করবি এখন?
-নাহ। আর কখনোই তা সম্ভব না।
-প্লীজ শেষবার। আর কখনোই কিছু বলব না।
-ওকে। কোথায় আসব বল?
-প্রথম যেদিন তোর সাথে কথা হয়েছিল সেখানে।
-ওকে আমি আসছি।কিন্তু মনে রাখবি এটাই শেষ।
-হুমম।
প্রায় দশ মিনিট হল দুজনে নিশ্চুপ বসে আছি।নীরবতা ভেঙে প্রিয়ন্তীই বলল…
-কেন এমন করলি? কি নেই আমার?
-দেখ আসলে বিষয়টা এমন না। আমি ভালবাসায় বিশ্বাসী না।আমি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারি না। অতীতেও পারিনি এবং ভবিষ্যতেও পারব না।
-কিন্তু কেন বলবি প্লীজ?
-না বললে হয় না?
-বলতেই হবে। আজকেইতো শেষ।
-ওকে শোন তবে খুব সংক্ষেপে বলি—
আমি তখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়তাম। সেই সময় একটা মেয়ের সাথে আমার রিলেশন হয়। মেয়টার নাম ছিল অবনী।অবনীর সাথে আমার সম্পর্কটা প্রায় দু বছর ছিল।খুব ভালই যাচ্ছিল দিনগুলি।আমর সবটুকু উজাড় করে ভালবাসতাম,অন্ধের মতো বিশ্বাসও করতাম তাকে।কিন্তু হঠাৎ করেই অবনী কেমন বদলে যেতে লাগল।ঘন্টার পর ঘন্টা ওর ফোন ওয়েটিং পেতাম।জানতে চাইলে বলত ভাবির সাথে কথা বলি।আমার সাথে দেখাও করতে চাইত না।কিন্তু অন্যের বাইকে ঠিক ঘুরে বেড়াতো নিয়ম করে।আমি ছবি চাইলে বলত ছবি উঠাইতে ভাল লাগে না। আমি আস্তে আস্তে বিষয়টা নিয়ে গবেষণা শুরু করি। একটা সময় ওর কল লিস্ট নিয়ে জানতে পারি ওয়েটিং পাওয়া নাম্বারটা ভাবির সাথে নয় বরং তার এক্স বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে।সেই ছেলে সহ আরও কয়েকটা আইডি আমি আমার করে নেই অসৎ ভাবেই।সেখানেও দেখি অবনী তার বিভিন্ন স্টাইলের ছবি তাদের দিয়েছে।তারপর আমি তার সাথে দেখা করে সোজা বলি তোমার সাথে আমার রিলেশন রাখা সম্ভব না। সেদিন তার চোখে কষ্ট নয় বরং অনেক খুশির ছুটোছুটি দেখেছিলাম।
হ্যা আমি সেদিন তাকে ক্ষমা করতে পারিনি। তাকে দেওয়া কথা, প্রতিশ্রুতি কোনটায় রাখতে পারিনি।আমি নিজের স্বার্থের জন্য তার সাথে প্রতারণা করেছি।যদিও সে নিজেকে নির্দোষ দাবী করেছিল।কিন্তু আমি কেন বিশ্বাস করব?আমিতো প্রতারক,আমার কাজই প্রতারণা করা।আমি সেদিনও কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি,আজও তোকে নতুন করে আর কথা দিতে পারব না। ভাল থাকিস….
চলে আসার সময় পিছন থেকে কেউ কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলছিল ”আমি এই প্রতারককেই ভালবাসি আমার থেকে বেশি।প্লীজ আমায় ফিরিয়ে দিস না। বাঁচব না আমি তোকে ছাড়া।”
কিন্তু আমার কাছে এসবের কোন মূল্য নেই।কারণ আমি প্রতারক!আমার কাছে ভালবাসা,অশ্রুজল বড়ই হাস্যকর.
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক