ভরা দুপুরে তীক্ষ্ণ রোদের মধ্য দিয়ে হেটে চলেছি আমি। চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট। কাউকে সমান তালে বকছি আর তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছি। এমন সময় একটি গাড়ি এসে আমার সামনে এসে দাড়ায়। গাড়িটি দেখে আমার চিনতে বেগ পেতে হলো না। এইটি যে ড. রিয়ানের গাড়ি।কিছু বুঝার আগেই তার মধ্য থেকে ড. রিয়ান বেরিয়ে আসে আর আমায় টেনে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে ধাম করে গাড়ির দরজাটা লাগিয়ে দেয়।
আমি হ্যাবলার মত তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। হুট করেই ড. রিয়ান আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে। ভয়ে আমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে আমার হাতে থাকা ব্যাগটি উঁচু করে ধরি। ড. রিয়ান কিছুক্ষণ আমার দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর আমার সিট বেল্টটা লাগিয়ে দিয়ে সরে আসে। গাড়ি স্টার্ট হতেই আমি চোখ মেলে তাকাই আর দেখি আমি সিট বেল্ট পড়া। এইবার নিজের বোকামির জন্য নিজেই নিজের মাথায় চাপড় মারি। ছি! ছি! কি ভাবছিলাম আমি। লজ্জায় এখন মাথা কাটা যাচ্ছে। ড. রিয়ান তখন তীক্ষ্ণ গলায় বলে উঠে,
— এই বয়সে এত এডাল্ট টাইপ চিন্তাধারা মাথায় আসে কিভাবে? আমি তার এমন কথায় জ্বলে পুড়ে উঠি। তার দিকে
রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলি,
— এই বয়সে মানে কি হ্যাঁ? মেডিক্যালের ফাস্ট ইয়ারে পড়ি আমি। আপনার কি এখনো মনে হয় আমি ছোট?
ড. রিয়ান এইবার শান্ত গলায় বলে,
— না মনে হওয়ার কোন কারণ নেই। একটু আগের ঘটনা নিশ্চয়ই ভুলো নি। আমি এইবার রাগে ফুসতে থাকি। একটু আগের ঘটনা নিয়ে যে তিনি আমায় খোটা দিচ্ছেন তা ভালোই বুঝতে পারছি।
একটু আগে মেডিক্যালে থাকা কালিন খুব খিদে পেয়েছিল। কিন্তু তখন লাঞ্চ টাইমও হয় নি যে খেতে যেতে পারবো। তাই সামনে থাকা পিচ্চিটাকে চকলেট খেতে দেখে লোভ সামলাতে পারি নি। যার জন্য ওর থেকে চকলেটটা কেড়ে খেয়ে ফেলেছি। এর জন্য পিচ্চিটা কেঁদে কেটে পুরো হসপিটালের মানুষকে একত্রিত করে ফেলে। তখন সেখানে আমাদের অতিপ্রিয় আর আমার অপ্রিয় ড. সাদাত খান রিয়ান এসে হাজির হয়। আর সকল ঘটনা শুনে সকলের সামনে আমায় আচ্ছামত ধমক দেয়। যার জন্য আমি রাগে কষ্টে দুঃখে সেখান থেকে ব্যাগটা নিয়ে চলে আসি। রাস্তায় তারই চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছিলাম। আমি এইবার ড. রিয়ানের দিকে দাঁত চেপে বলি,
— যা করেছি বেশ করেছি। সুযোগ পেলে আরও করবো। পারলে নিজের জামাইকে নিয়ে চকলেট কেড়ে খাব। তাতে আপনার কি রিয়ান ভাইয়া? ভাইয়া ডাক শুনতেই ড. রিয়ান গাড়িতে জোরে ব্রেক মারে। আর আমার দিকে রক্তচক্ষু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— আমি তোমার ভাইয়া? একদিকে জামাইকে নিয়ে কত কি করবে বলছো আর অপর দিকে আমায় ভাইয়া বলছো।
আমি এইবার একটা ঢোক গিলে বলি,
— আপনি তো আমার জানের পরানের রিয়ান ভাইয়া। আপনাকে ছাড়া তো আমার চলেই না। আর জামাই তো এখনো আগন্তুক। ও আসলে না হয় পরেরটা পরে দেখা যাবে। ড.রিয়ান আমার দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে,
— নামো!
আমি কথা ঠিক বুঝতে না পেরে তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকি। তার দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি নিক্ষেপ করে বলি,
— মানে? ড. রিয়ান এইবার শান্ত কন্ঠে বলে,
— গাড়ি থেকে নামো।
আমি তখনও স্থির হয়ে বসে আছি। এই কড়া ফাটা রোদে আমায় কেন নামতে বলছে তা বুঝার চেষ্টা করছি। অতঃপর ড. রিয়ানের রক্তচক্ষু দেখে ঝটপট নেমে পড়ি। আমি নেমে পড়তেই তিনি কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। আর আমি শুধু ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। এইবার ঘটনাটা বুঝতে পেরে আমি রাগে ফুসতে ফুসতে বলি,
— এত বড় সাহস আমাকে! রিয়ানাকে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। আজই বাবাকে ফোন করে বলবো তার বন্ধুর ছেলে আস্ত একটা খাটাস। আমার একটুও যত্ন নেয় না। শালা খারুস একটা। সারাদিন রাগ যেন তার নাকের ডগায় এসে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। এখন আমি এই রোদে কিভাবে বাসায় যাই। আমার মত বাচ্চা মেয়েটার উপর এই পোলার একটু মায়া হয় না। বাবা এ তুমি কাকে আমার খেয়াল রাখতে বলবে। ন্যাকা কান্না জুড়েই হাটতে শুরু করি। এছাড়া যে কোন উপায় নেই। বিছানায় মুখ ফুলিয়ে বসে আছি। রেনু আন্টি সুন্দর করে আমায় ভাত মেখে খায়িয়ে দিচ্ছে। আমি আন্টির দিকে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,
— আন্টি রিয়ান ভাই কি আদো তোমারই ছেলে? না মানে আমার না সন্দেহ হয়। তুমি এত ভালো সুইট একজন মানুষ আর সে আগুনের গোলা। আস্ত খারুস একটা। রেনু আন্টি তখন হেসে বলে,
— ছেলেটার রাগ বরাবরই বেশি তুই তো জানিস এই। এইখানে এসেছিস প্রায় ৭-৮ মাস তো হলোই। নিশ্চয়ই বুঝেছিস এর রাগ সাত আসমানে থাকে। আমি তখন মুখ ফুলিয়ে বলি,
— সত্যি করে বলো তো একে কুড়িয়ে আনো নি তো? রেনু আন্টি আমার দিকে আহত চোখে তাকিয়ে বলে,
— সত্যি তো কুড়িয়ে আনি নি তো।
কথা বলার সাথে সাথে দুইজনে হেসে উঠি। রেনু আন্টি আর আমি অনেক ফ্রি। তাই আমাদের মধ্যে এমন মশকারা সম্পর্ক বিদ্যমান। রেনু আন্টি আমায় খায়িয়ে দিয়ে চলে যা। বেশ কিছুক্ষণ পর আমার ফোনে বাবার কল আসে।
আমি ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে মিষ্টি সুরে বাবা বলে উঠে,
— আমার আম্মুটা কেমন আছে? ভালো আছে তো? আমি তখন ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলি,
— আলহামদুলিল্লাহ আব্বু। তুমি ভালো আছো তো? আব্বু মিষ্টি হাসি হেসে বলে,
— আলহামদুলিল্লাহ মা। তা সেখানে সবাই ভালো তো। সবাই তোর ঠিক মত খেয়াল রাখতে তো? আমি মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলি,
— সবাই এখানে ভালো আছে আব্বু। এইখানে সকলেই আমায় খুব ভালবাসে। বিশেষ করে রেনু আন্টি৷ নিজের মেয়ের মতই আদর করে। বুঝতে দেয় না যে আমি তার স্বামীর বন্ধুর মেয়ে। আঙ্কেলও আমার প্রতি বেশ যত্নশীল। আর ওই খারুস থুরি মানে রিয়ান ভাইয়াও ভালোই। ( আস্ত খারুস একটা। সারাদিন আমায় বকে। মনে মনে কথাটি বললেও মুখে আর বলে নি।) আমি আরও বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দেই। তারপর সটান হয়ে শুয়ে পড়ে লম্বা একটা ঘুম দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেই। এর মধ্যে বলি আমি আসলে এইখানে কি করছি।
আমি রিয়ানা ইসলাম। বাবা জাহাজ ব্যবসায়ী আর মা একজন সামাজিক সেবিকা। বাবার কাজের সুবাদে আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি চট্টগ্রামে। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল একজন ডাক্তার হবো। যার জন্য কঠোর পরিশ্রম করার পর গিয়ে চান্স পাই ঢাকা মেডিক্যালে। কিন্তু ঢাকায় আমার কোন আত্মীয় নেই বললেই চলে। তাই বাবা কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় আমার থাকাটা নিয়ে। তখন তার অতি আপন বন্ধুর কথা মনে পড়ে। তার সাথে ভালো যোগাযোগ থাকা সুবাদে বাবা আমার কথা বলাতেই মিনাজ আঙ্কেল নিঃসংকোচে আমায় তার বাসায় থাকার আহবান জানান। তার ছেলেও নাকি ঢাকা মেডিক্যালে কিছুদিন আগেই ডাক্তার হিসাবে নিয়োগ হয়েছে। আমার জন্য নাকি আরও সুবিধা হয়ে যাবে।আর তাই আমিও এসে পড়ি এইখানে। আর এইখানে এসেই রিয়ানের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়।
ঘুমিয়ে আছি এমন সময় মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার কেমন জানি অস্বস্তি হতে শুরু করে হুট করেই আমি লাভ দিয়ে উঠে বসি। পাশে পড়ে থাকা চেয়ারে তাকাতেই ড. রিয়ান দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যাই। শরীরে থাকা ওরনাটা ঠিক মত গায়ে জরিয়ে নেই। তারপর তার দিতে তাকাই। সে অন্যদিকে মুখ করে বসে আছে। শ্যামলা বর্ণ গায়ে সাদা শার্টটা একদম ফুটে আছে। চুলগুলো হাল্কা আগোছালো। বা হাতে একটি ব্ল্যাক চেইনের ঘড়ি। কালো গভীর চোখে আমায় এতক্ষণ দেখছিল সে। আমায় চুপচাপ বসে থাকতে দেখে রিয়ান এইবার আমার দিকে তাকায়। তারপর আমার কাছে এসে আমার সামনে দুইবক্স চকলেট এগিয়ে দেয়। আমি তার দিকে কৌতূহলী চোখে তাকাতেই বলে,
— তোমার জন্যই নিয়ে নাও। আর হ্যাঁ পরের বার খিদে লাগলে বা চকলেট খেতে ইচ্ছে করলে আমাকে বলবে। এনে দিব নে বা খেতে নিয়ে যাব। কিন্তু আজকের মত আর কখনো করবে না। রিয়ানের কথা শুনতেই আমার ঠোঁটের কোন আপনা আপনি প্রসারিত হয়ে যায়। আমি খব করে তার হাত থেকে চকলেট গুলো নিয়ে খেতে শুরু করি। আর মিষ্টি সুরে বলি,
— থেংক ইউউউ!! আর আই প্রমিস আমি আর এমন করবো না। রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটি হাসি হেসে বলে,
— আরেকটা কথা ভুলেও যাতে তোমার মুখে আমি আর ভাইয়া ডাকটা না শুনি। আমাকে সব সময় ড. রিয়ান বলেই ডাকবে। আমি চকলেট খেতে খেতে বলি,
— কিন্তু আপনাকে সবাই তো ড. সাদাত বলে ডাকে। আমি ড. রিয়ান ডাকবো কেন? রিয়ান স্মিত হেসে বলে,
— কারণ এই নামে ডাকার অধিকার শুধু তোমার। তোমারই অংশ বিশেষ আমি। রিয়ানা টু রিয়ান। তার এমন কথায় আমি তার দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। অতঃপর আমি আর কিছু না বলে চকলেট খেতে থাকি। রিয়ান চুপচাপ রুম থেকে চলে যায়। রিয়ান যত যাই করুক না কেন এই বাসায় সব থেকে বেশি কেয়ার তিনি এই আমায় করে। রাতে সকলের খাওয়া শেষে আমি চুপিচুপি রিয়ানের রুমে যাই। এই রুমে সকলের আশা নিষেধ। আমারও তার রুমে যাওয়ার ইচ্ছা নেই কিন্তু আজ তার থেকে কিছু জানার জন্য তার রুমে যাই আমি। রুম খুলতেই দেখি ঘন অন্ধকার চারদিকে। এইবার আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই। আমি কোন মতে বুক ভরা সাহস নিয়ে ভিতরে যাই। রুমের লাইটের সুইচটা খুঁজে লাইটটা জ্বালাই। রুমের কোথাও রিয়ান নেই। আমি এইবার বেরিয়ে যেতে নিব তখনই পিছন থেকে রিয়ান বলে উঠে,
— এইখানে কি করতে এসেছিলে? রিয়ানের গলা কানে আসতেই আমি চুপচাপ তার দিকে ঘুরে তাকাই। সে পকেটে হাত রেখে শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আসার পর শাওয়ার নেওয়ার ফলে তার ভেজাচুলগুলো কপালে এসে ঘাপটি মেরে বসে আছে। গায়ে থাকা কালো গেঞ্জিটি যেন তার উপর একদম ফুটে উঠে। আমি এইবার তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলি,
— আপনি রকিকে কেন মেরেছেন? বেঁচারা এখন এখন হসপিটালে এডমিট। রিয়ান এইবার কাছে এসে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। তারপর আমার একদম কাছে এসে দাড়িয়ে বলে,
— আমি যে মেরেছি তার প্রমাণ কি? আমি অপ্রস্তুত সুরে বলি,
— এইটা যে আপনার কাজ আমি জানি। এই পর্যন্ত আমার সাথে সেই অসভ্য আচরণ করেন তাদের অবস্থা আপনি রকির মতই করেন। রিয়ান এইবার আমার কাছে চলে আসে আমি পিছিয়ে যেতে নিলে কাবার্ডের সাথে লেগে যাই। রিয়ান এক হাত আমার পাশ দিয়ে কাবার্ডের উপর রেখে আমার মুখে ফু দেয়। সাথে সাথে আমি জমে যাই। বুকের ভিতরটা অনাবরত ধুকধুক করতে থাকে। সে স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
— যা করেছি বেশ করেছি। দরকার পড়লে খুনও করবো। আমার রিয়ুপাখির সাথে অসভ্য আচরণ করার সাহস হয় কিভাবে ওদের? তোমার দিকে বাড়ানো সকল হাত আমি কেটে ফেলে দিব। চোখ তুলে তাকালেও উঁবড়ে ফেলবো।
“আমার রিয়ুপাখি” কথাটা কানে আসতেই আমার ভিতর দিয়ে শীতল এক বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। আমি তখন স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলি,
— আপনি যে পাগল তা কি আপনি জানেন? রিয়ান এইবার মুচকি হেসে বলে,
— এইটা পাগলামো নাকি আসক্তি তা তুমি এখন বুঝবে না। হয়তো বুঝো কিন্তু তাও না বুঝার ভান করো।
আমি তখন প্রসংগ পাল্টানোর জন্য বলি,
— তখন আমাকে নামিয়ে দেওয়ার পর ওই রিকশাওয়ালা মামাকে আপনি এই পাঠিয়েছিলেন আপনি তাই না?
রিয়ান তখন শান্ত কন্ঠে বলেন,
— যত যাই হোক নিজের জিনিসকে তো ফেলে দিতে পারি না। সরাসরি না হোক আড়াল থেকেই তাকে সুরক্ষিত রাখার কর্তব্য আমার। আমি তখন কিছু না বলে চুপচাপ বেরিয়ে যেতে নিলে রিয়ান বলে উঠে,
— ২য় নাম্বার কাবার্ডে তোমার জন্য একটা গিফট আছে। যাওয়ার আগে নিয়ে যেয়েও।
এই বলে রিয়ান বিছানায় একটি বই নিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমি তখন তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পিছে ঘুরে কাবার্ডটা খুলি। খুলে পাশে তাকাতেই আমার হার্টবিট গুলো দ্রুত গতিতে চলা শুরু করে। কাবার্ডের দরজার ভিতরের দিকে আমার একটি ছবি লাগানো। এই ছবিটি এইখানে আসার পরই তুলা। আমি সেই ছবির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আপনা আপনি ঠোঁটে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে।আমি কিছু না বলে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে আসতে নিলে রিয়ান শক্ত গলায় বলে,
— আর যাতে তোমায় আমার রুমে না দেখি। কথাটা যেন মনে থাকে। আমি তখন মুখ ঘুরিয়ে ভেংচি কেটে বলি,
— আস্ত খারুস একটা।
এই বলে দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে আসি। রুমের দরজা লাগিয়ে দ্রুত ব্যাগটার ভিতর থেকে একটা বক্স বের করি। তার উপর একটা চিরকুট। আমি চিরকুটটা হাতে নিয়ে বক্সটা আগে খুলি। তাকে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি। তার মধ্যে সোনালি রঙের পাড়। অসম্ভব সুন্দর সেই শাড়িটি। সাথে আছে এক মুঠো লাল রেশমি চুড়ি, একটি নাকের ফুল, এক জোড়া ঝুমকো, আর একটি পায়েল। সব দেখেই ঠোঁটের কোনে একটা দীর্ঘ স্থায়ী হাসি ফুটে উঠে। আমি চিরকুটটা খুলে পড়তে শুরু করি, ” দিন শেষে রাত শেষে আছো শুধুই তুমি প্রিয়তমা। মনের গহীনে আসক্তি হয়ে আছো শুধুই তুমি প্রিয়তমা। নিজেকে কি রাঙ্গাবে আমার আসক্তিময় ভালবাসা দিয়ে? আমি এইবার লজ্জায় বালিশে মুখ গুঁজি। লজ্জায় গাল দুটো একদম লাল হয়ে আসছে। আমি চিরকুটটা সামনে নিয়ে বলতে থাকি,
— আপনার আসক্তিময় ভালবাসায় নিজেকে রাঙ্গাবো ঠিকই কিন্তু এখন না। আপনার হাতে এত সহজে ধরা দিব না আমি। আপনাকে ভলাবাসার দহনে পুড়াবো। ভীষণ পুড়াবো। তারপর আপনাকে শান্ত করতে নিজেই ধরা দিব আপনার কাছে। নিজেকে রাঙ্গাবো আপনার আসক্তিময় ভালবাসার চাদরে। এই বলে আবার মুখ গুঁজে ফেলি বালিশের কোনে। রিয়ান হাতে গিটার নিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে থেকে আনমনে বলে,
— আমার ভালবাসাটা একটু ভিন্ন তা আমি জানি। একে কখনোই মুখের ভাষাতে বুঝানো যাবে না। তাও হাল্কা চেষ্টা করছি।
প্রথম দেখাতে তোমার এই দুটো চোখের মায়ার জালে যে ফেঁসে যাব বুঝি নি। তুমি যে আমার বদঅভ্যাসে পরিনত হবে তাও বুঝি নি। তোমার চোখ দুটোতে যে আমি আসক্ত হয়ে যাব কে জানতো? তোমার ভালবাসায় যে আসক্ত হয়ে যাব তা কল্পনাও করি নি। এখন এই আসক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাই তোমায় ও এই আসক্তিতে জড়িয়ে নিচ্ছি। তোমার কাছে আমার ভালবাসা অমৃতও আবার বিষাক্তও। কেন না এমনটাই যে আমার আসক্তিময় ভালবাসা। এইবলে গিটারে সুর তুলে, ” হামে তুমসে পেয়ার কিতনা ইয়ে হাম নেহি জানতে মাগার জি ভি নেহি সাকতে তুমহারে বিনা হামে তুমসে পেয়ার কিতনা “
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক