” রুমি,আমার অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে।একটু উঠে আমার ওয়ালেট আর ফোনটা দাও তো!” আড়মোড়া ভেঙে রুমি বললো,,
” এখনি চলে যাচ্ছো? বুয়া নাস্তা রেডি করেছে?”
” হু,,তুমি শুধু উঠে আমার ওয়ালেট টা দাও!”
” শফিক,আজ না গেলে হয় না?”
” শরীর খারাপ করছে তোমার? কোথাও কষ্ট হচ্ছে? দেখছো কি বোকা আমি,ওয়ালেটটা কিন্তু আমি নিজে চাইলেই নিতে পারি।শুধু শুধু তোমাকে বিরক্ত করছি” মুচকি হেসে রুমি বললো,,
” আজকে ছুটি নিয়ে নাও না!”
” আমি বুঝতে পারি রুমি, তোমার এই অবস্থায় একা থাকতে খুব কষ্ট হয়।কিন্তু কিছুদিন পরেই তোমাকে হসপিটালে এডমিট,সিজার,নতুন বেবীকে নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকবো! তখনও অনেক ছুটির প্রয়োজন,এখন একটু সহ্য করে নাও লক্ষিটি”
” আচ্ছা সাবধানেও যেও কেমন? আর লাঞ্চ আওয়ারে কল দিও”
” আচ্ছা দিবো।আর ত্বাসীন জাগলে ওকে বলিও,, “তোমাকে যেনো ডিস্টার্ব না করে”
মুচকি হেসে শফিক’কে বিদায় জানালো রুমি। অফিসের ব্যস্ততা ভীষণ,এমনকি দুপুরেও খাওয়া হয়নি।বাসায় কল দেওয়ার কথাও মনে নেই শফিকের।ইদানিং,রুমি প্রায়ই ক্লান্ত থাকে,বেশ চিন্তা হয় মেয়েটা’কে নিয়ে।দুপুর তিনটায় একটু কাজটা গুছিয়ে নিয়ে রুমিকে কল করে শফিক।
রিং হতে হতে কেটে যায়,এ সময়ে ঘুমাতে পারে ভেবে শফিকও আর কল দেইনি। বিকাল পাঁচটা,,বাসায় ফিরে কলিং বেল বাজাতে থাকে শফিক।কিন্তু কারো কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে বুয়া সকালেই সব কাজ শেষ করে চলে যায়।বাসায় লোক বলতে শুধু রুমি আর ত্বাসীন।ত্বাসীনের বয়স তিনবছর। বেশ কিছুক্ষণ কলিং বেল বাজিয়েও যখন সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না,তখন শফিকের কিছুটা চিন্তা হলো।তাই সে বাসার পেছন দিক দিয়ে বেডরুমের জানালার কাছে গিয়ে পর্দা সরিয়ে দেখলো,,বেডের একপাশে ত্বাসীন পুতুল হাতে খেলা করছে আর অন্যপ্রান্তে রুমি শুয়ে আছে।সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা রুমি,কিন্তু সে উপুর হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।দৃশ্যটা দেখেই মাথাটা ঘুরে উঠলো শফিকের! না জানি কোন ঝড় অপেক্ষা করছে তার জন্য!
আশেপাশের প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে ঘরের দরজা ভাঙা হলো।ততক্ষনে রুমির হৃদস্পন্দন থেমে গেছে।তবে শফিক মানতে নারাজ,,ওর ধারনা রুমি দুর্বলতার জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।হাসপাতালে নিয়ে যেতেই কর্তব্যরত চিকিৎসক রুমিকে মৃত ঘোষনা করেন।মৃত্যুর কারন ব্রেইন স্টক!রুমির সাথে সাথে এক নিষ্পাপ নবজাতকও পৃথিবীর আলো দেখার আগে মায়ের সাথে পরপারে পাড়ি জমায়।শফিকের আজ কান্নার কোনো শব্দ নেই,সে নিরব।সে কেবল চিন্তা করলো,,কতখানি একাকিত্ব নিয়ে তার প্রিয়তমা পৃথিবী থেকে চলে গেলো। সৃষ্টিকর্তা যদি দ্বিতীয় সুযোগ দিতেন তাহলে সে কখনই রুমিকে একা থাকতে দিতে না। ত্বাসীনের বয়স এখন আট বছর।বাবা শফিক ও নতুন মায়ের সাথে থাকে সে।তার একটা ছোট্ট ভাইও আছে! কে জানে,ত্বাসীন কি আজও তার মা’কে মিস করে কিনা!
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক