কি রে আজ তোকে খুশী খুশী লাগছে কেনো
দুষ্টামী করেই বললো আবির
আমি কবেই বা তোর মতো মনমরা ছিলাম
অনেকটা হাসিমুখেই উত্তর প্রদান করলো সুমী
সেটাও তো কথা, কলেজে সবাই বলছে তোর নাকি বিয়ে ঠিক হইছে
আবির অনেকটা কৌতুহল নিয়েই বললো
হুম ঠিকই শুনছোস
সুমীর স্বাভাবিক উত্তর
হঠাৎ আবিরের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো এটা কি শুনলো আবির।সে ভাবছে বন্ধুরা হয়তো দুষ্টামী করছে কিন্তু না সত্যিই সুমীর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
এই নে কার্ড, বিয়ের দিন তারাতারি চলে আসবি
একটু মনমরা কন্ঠে আবির বললো
না মানে
দোষ্ত আমার না একটু কাজ আছে গ্রামে যেতে হবে
সুমী অগ্নীচক্ষু দেখিয়ে
না তা বললে চলবেনা,তুই না আসলে আমি বিয়েই করবো না
বলেই হনহন করে চলে গেলো।
কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা আবির,তার ইচ্ছে করছে নিজের গালে নিজেই দুটো থাপ্পর বসিয়ে দিততে।নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারলোনা এ কেমন সাহসী পুরুষ আবির
নিজের মনে মনে ভাবতে লাগলো।
নিজের চোখে এখন নিজের ভালোবাসার মৃত্যু দেখতে হবে আবিরের।
কখনো ভাবতে পারেনি সুমী এভাবে হারিয়ে যাবে।
আজ দুইদিন হলো বাসা থেকে বের হয়নি রুমে সুয়ে কান্না করেই দিন পার করলো।
কাল সুমীর বিয়ে
আব্বু-আম্মু চিন্তায় অস্থীর কিন্তু আবির তাদের কিভাবে বোঝাবে সে তার মনের দুঃখটা,কিভাবে বলবে আব্বু – আম্মু আমি সুমীকে ভালোবাসি তাকে ছাড়া বাচতে অনেক কষ্ট হবে আমার।
কিন্তু আবির তো বাস্তবতার সাথে হেরে বসে আছি।
কাওকেই মুখ ফুটেও বলতে পারেনা।
.
.
আজ সুমীর বিয়ে।
বিয়ে উপলক্ষে পুরো বাড়ি জমকালো ভাবে সাজানো হয়েছে। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব দিয়ে বাড়ি ভরপুর।
পুরো নামটা সুমাইয়া আক্তার সুমি।
আবির তাকে দিয়া বলেই বেশী ডাকে,কেননা নামটা তার তাহার অনেক পছন্দের।
সুমী অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছে। তার মা বাবার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে। লাল বেনারশি শাড়িতে সুমীকে সত্যিই অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
লাল রং টায় সুমীকে বরাবরই সুন্দর মানায়। দূরে দাঁড়িয়ে আবির মুগ্ধ হয়ে সুমীকে দেখছে। আবির কল্পনায় যেমনটা দেখেছিল তার থেকে ও একটু বেশীই সুন্দর
লাগছে আজ। আবির সুমীর ক্লাসমেট এবং অনেক ভাল বন্ধু।
যদিও এই বন্ধুত্বের মাঝে কখন যে মনে মনে সুমীকে ভালোবেসে ফেলেছে তা সে নিজে ও জানে না। কিন্তু কখনো সেই ভাল লাগার কথা সুমীকে বলার মত সাহস পায় নি। যদি সে আবার তাকে ভুল বোঝে তাই। বিয়ের অনুষ্ঠানে আবির আসতে চায় নি। সুমীর অনেক পীরাপীড়িতে আজ আসা।
.
সবাই বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু আবির চুপচাপ এক কোণায় দাঁড়িয়ে সুমীকে দেখছে। এরই মাঝে অন্যান্য বন্ধুরা তাকে কয়েকবার করে ডেকে গিয়েছে কিন্তু সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। কেন জানি আবিরের মনে হচ্ছে যে আর কোন দিন
সে সুমীকে দেখতে পাবে না।সুমী আজকের পরে থেকে অন্য কারো হয়ে যাবে।
আর কখনো হয়ত মন খুলে সুমীর সাথে কথা বলতে পারবে না, অকারণে ঝগড়া করতে পারবে না। হঠাৎ সব কিছু শূণ্য শূণ্য লাগছে। মনে হচ্ছে জীবন থেকে অনেক মূল্যবান কিছু সে হারিয়ে ফেলছে। তার কল্পনার মনের মানুষটা আজ তার থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে তার পাশে এসে সুমী দাঁড়িয়েছে সেটা সে খেয়ালই করে নি।
–এখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছিস ক্যান?
আবির একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
— কিছুনা, এমনি দাঁড়িয়ে আছি। তুই এই খানে ক্যান? একটু পরে তো বর যাত্রী চলে আসবে।
সুমী একটু হেসে বলল,
–হুম আসবে। তোকে অনেক্ষণ থেকে একা একা চুপ চাপ এই খানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এলাম। তোর কি কোন কারণে মন খারাপ?
আবির মুচকি হেসে বলল,
–আরে নাহ।
এমনি দেখতেছিলাম বিয়ের আয়োজন। ভাবতেছিলাম যে কি কি খাব তোর বিয়েতে।
এই মূহর্তে আবিরের ইচ্ছে করছে সুমীর হাত দুটো ধরে বলতে যে তোকে অনেক ভালোবাসি, তুই অন্য কারো হবি এটা মেনে নিতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
তোকে ছাড়া বাকিটা জীবন চলতে পারব কিন্তু সেটা হবে অনেক কষ্টের। এই কথা গুলো বলার মত সাহস আবিরের হয়ত কখনোই হবে না।
“– এই আজ তোর কি হয়েছে,
আবির হেসে বলে
— কই কিছুনা তো,।
–তুই সত্যি একটা মাথা পাগল।
–এই শুন এই বিয়েতে কি তুই সত্যি খুশী?
–আজব খুশী হব না কেনো! ছেলেটাকে আমার ও পছন্দ তাছাড়া মা-বাবা সবাই রাজি।হঠাৎ এ প্রশ্ন করলি যে?
–আরে না এমনি,ভাবলাম বাংলা সিনেমার মত তোর অমতে বিয়ে হচ্ছে কিনা।
হেসে সুমী বলে
–না বন্ধু দিন বদলাইছেনা?এখন তাই হচ্ছে সবাই যা চাচ্ছে।সুমী চলে যায়…….
আবির ভাবে আসলেই তো তাই হচ্ছে যা সুমী চাইছে,তবে কেনো শুধু শুধু আশায় থাকা?ভাল থাক সুমী,সে না হয় একাই ভালবাসা পুষে যাবে।সব প্রেমের শুরু বন্ধুত্বে হয়,কিন্তু সব বন্ধুত্ব প্রেমে বদল হয়না।তাদের সম্পর্কটাও হয়ত সেরকম।
সবার সব ইচ্ছা কি চাইলেই সম্ভব হয়?আচ্ছা আবিরকে।
ভালবেসেও না বাসার অভিনয় করাটা যে কি দুঃসহ তা আজ সুমীর বিয়েতে এসে আবির বুঝতে পারছে।নাহ আর এখানে থাকা যাবেনা বরযাত্রীরা হয়ত এসেই গিয়েছে।
উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটেই যাচ্ছে সে সুমীর বাড়ির কোলাহল ছেড়ে,সুমীকে ছেড়ে অনেক অনেক দূরে।
এতক্ষণে হয়ত বিয়ে পড়ানো শেষ হয়ে গেছে,আজ থেকে তাদের চলার গতিপথ আলাদা।ক্লাস শেষে আর বিরামহীনভাবে হাঁটা হবেনা কোনদিন,ক্যাম্পাসে আর
বসবে না আড্ডার আসর।সব ছেড়ে আজ যেন সুমী অনেক অনেক দূরের মানুষ।
যে জানবেনা কোনদিন কাছে থেকেও কেউ একজন তাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসেছিল