নীলার সাথে নীলের পরিচয়টা কাকতালীয় মানে ফেবুতে। ফেসবুক সোস্যাল মিডিয়া,,,কারও কাছে তার প্রিয় বন্ধুত্বের মাধ্যম আবার কারও কাছে পাবলিক টয়লেট ছাড়া কিছুই না। নীল টুকটাক লেখার মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত বা বলতে পারো মনের কথাগুলোকে কয়েক হাজার শব্দে প্রকাশ করে আত্মতৃপ্তি খোঁজা নিছক একটা মানুষ। কোন এক ট্রপিক্সে নীলের লেখায় নীলার একটা বিরুপ কমেন্ট আসে তার প্রতিক্রিয়ায় নীলের সাথে ঝগড়া হয় নীলার। কমেন্ট বক্স থেকে ঝগড়াটা চলে যায় সরাসরি ইনবক্সে,,,, লোকচক্ষুর আড়ালে। এভাবেই শুরু হয় একটা তিক্ত-বিরক্ত সম্পর্কের। সম্পর্কগুলো এমনই কখন কোথায় কিভাবে আপনার মাথা তারপর ঠিক আপনার মনের মধ্যে চলে আসবে আপনি নিজেও জানতে বা বুঝতে পারবেন না।
নীলার সাথে নীলের সম্পর্কটাও ঠিক এরকমের। নীল নীলাকে তুমি আর নীলা নীলকে আপনি করে কথা বলত। দুজনার মধ্যে ঝগড়াটা প্রায়ই লেগে থাকতো। কোন এক ট্রপিক্স পেলেই হলো আর যাবে কোথায় পচানি শুরু। কেউ কারও চেয়ে কম যায় না। হঠ্যাৎ কিছুদিন নীলার কোন খোঁজ নাই। নীল বারবার লাইনে এসেও নীলাকে খুঁজে পায় না। নীল নীলাকে মিস করতে শুরু করে। আসলেই কি নীল নীলাকে মিস করে নাকি নীল নীলাকে একটু একটু করে ভালবাসতে শুরু করেছে নিজেই জানে না। নীলার কোন খোঁজ না পাওয়ায় নীল চিন্তিত থাকে এভাবেই চলে যায় দিন চারেক। নীলা নামের পার্শ্বে আজ সবুজ বাতিটা জ্বল জ্বল করছে। নীল খুশি হয় খুব,,,,বুকের বামপার্শ্বের মৃদু চিনচিন ব্যথাটা আজ কমছে একটু একটু করে। নীল নীলাকে নক করে,,,,,,,
নীল: নীলা কই ছিলা তুমি???
নীলা: ছিলাম একটু ব্যস্ত তাই আশা হয়নি।
নীল: জানো আমি তোমাকে কতবার খুঁজেছি!
নীলা: হেসে দিয়ে বলেলে ম্যান পাগল নাকি এটা ফেবু-সোশ্যাল মিডিয়া এখানে কেউ কারও জন্য অপেক্ষা করে না বুঝলেন। বাই দা ওয়েয়ে,,,, আপনি কিছু বলতে চান আমাকে?
নীল: না তুমি আমার ফ্রেন্ড জাস্ট একারণেই তোমাকে খোঁজা আর কিছু না।
নীলা: ওহহহ তাই। (হতে পারে এটা ফোনের স্কীন নীলাও নীলকে মিস করে হয়তবা নীলের চেয়ে বেশি)
নীল: আচ্ছা নীলা কি সমস্যা তোমার??? কি লুকাচ্ছ কি হয়েছিল তোমার?
নীলা : পাগল নাকি আমার কি হবে? আমি আগেও যেমনটা ছিলাম এখনও তেমনটা আছি??? নীলা খুব ভাল করেই জানে নীল নীলাকে ভালবেসে ফেলেছে। নীলা পালাতে চায় নীলের মায়ায় পড়তে চায় না সে। ছোট থেকেই দেখে এসেছে মায়া খুব খারাপ জিনিস। নীলার অতীত-বর্তমান নীলাকে মায়ায় পড়তে দেয় না। সামান্য কুশল বিনিময়েই নীলার সাথে নীলের কথোপকথনের পরিসমাপ্তি হয়। নীলার উওরে নীলের ওপর একটা প্রভাব আসে। নীল আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে নীলার কাছ থেকে। নীলাকে সে এভোয়েড করতে থাকে।
নীলা:বিষয়টা মার্ক করে কিন্তু নীলকে কিছু বলে না কারণ নীলা চায় না নীলকে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে। নীলের আইডি ব্লক কিছুদিন। নীলা খুঁজতে থাকে নীলকে। নীলা না বললেও নীলা নীলকে ভালবসে কিনা তা ঠিক জানে না কিন্তন্তু নীলকে অনুভব করে। প্রচন্ড রকমের কেয়ারিংটা মিস করে খুব। হাশি-খুশির দুষ্টমিটা ভুলতে পারে না। নীলাও কান্না করে আবার অভনয়শিল্পীর মত সব সামমলে নিতে জানে সে। আজ নীল আসছে নামের পার্শ্বের সবুজ বাতিটাও আজ জ্বলছে। নীলার চোখে পানি নিয়েই নীলকে বলল,,,, কেমন আছেন নীল?
নীল: এইতো আছি,,,,আমাকে মিস করো তুমি?
নীলা : প্রশ্নই ওঠে না।
নীল: হাসে,,,,, জানে নীলা নীলকে পছন্দ করে কিন্তু প্রকাশ করে না অজানা কোন কারণে।
নীল: নীলাকে প্রপোজ করে বসে।
নীলা: রাজী হয় না বলে আমার অতীত জানেন না আর আমার যাবতীয় সমস্যাগুলোও তো আপনি জানেন না।
দুঃখিত আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
নীল : অনেক বোঝানোর পর নীলা তাকে একটা সময় গ্রহন করে। মজার ব্যপার হলো নীল নীলাকে দেখেনি।
আচ্ছা,,,,,, চেহারা একটা ইস্যু মানলাম কিন্তু আপনার অনু-ভূতি,,,ভাল-লাগা,,,,বিশ্বাস ,,,আবেগ,,,,পরিশেষে ভালবাসার কি কোন মূল্য নেই। সবকিছু কি মানুষের পূর্ণতা পায়। আটা-ময়দা-সূজি মেখে বসে আছি মিঃ-পারফেক্টের আশায় কিন্তু আমি নিজে কি মিস-পারফেক্ট আছি। নীলা তার সম্যসাগুলো নীলকে বলে,,,,,নাছোড়বান্দা নীল তবুও নীলাকে হারাতে চায় না। নীল নীলার সাথে দেখা করতে চায়। নীলা প্রথমে রাজী না হলেও একটা সময় রাজী হয়ে যায়। নীলকে যে নীলাও ভালবেসে ফেলেছে। নীল অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে যাবে নীলার কাছে। নীলার সাথে ফোনে কথা হয় নীলের। নীলা নীলকে ঠিকানা দেয় দেখা করার। নীল নীলাকে বলে অপেক্ষা কোরো আমি আসছি তোমার কাছে,,,,তোমার খোপায় কদমফুল আর একসাথে হাতে হাত রেখে সূর্য ডোবা দেখবো। নীল লাষ্ট ম্যাসেজ দেয়,,,,নীলা অপেক্ষা করো আমি আসবোই তোমার কাছে। বর্ষাকাল আজ নীল নীলার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।
নীলা নীলের অপেক্ষায় বসে বটগাছের নিচে শান বাধানো পুকুরের সামনের ঐ চেয়ারটার একটা কোণায়।সকাল গড়িয়ে দুপুর হয় নীলের কোন খোজ নাই। গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টিতেও নীলা দাঁড়িয়ে থাকে। কোথায় নীল তুমি নীলা তোমার অপেক্ষায়। নীল তুমি শুনতে পাও কি? নীলা নীলের ফোনে ফোন দেয় নীলের ফোন বন্ধ। নীলার বুঝতে বাকি রইল না নীল নীলার সাথে প্রতারণা করেছে। নীলা বাসায় এসে নীলের আই ডি তে ম্যাসেজ দেয় আর নীলের ফোনে কয়েকশ বার ফোন দেয় কিনন্তু কোন উওর নেই। রাগে-ক্ষোভে নীলা নীলকে ব্লক দেয়। নীলার ধারণা হয় সব ছেলেরাই ঠকবাজ। পুরনো ম্যাসেজ চেক করতে করতে নীলার হঠ্যাৎ নীল নামক বেইমানটার কথথা মনে পড়ল। ব্লক খুলে দিয়ে আগে ম্যাসেন্জারে ঢুকে দেখলো পুরনো ম্যাসেজটা আর বলল বেইমানরা এমনই বলে ওদের জন্য আমাদের। অপেক্ষায় থাকতে হবে।
নীলের প্রফাইলে ঢুকেই নীলার মাথা খারাপ হয়ে গেল। নীল আর বেঁচে নেই। নীলার সাথে যেদিন দেখা করার কথা ছিল ঐদিন বাস উল্টে নীল মারা যায় ঘটনাস্থলে। নীল বেইমান ছিল না,,,,নীল স্বপ্ন দেখালে তা পূরণের জন্য নিজের জীবনকে বাজী রেখেছিল শুধু সময়টা নীল আর নীলাকে এক হতে দেয় নি। নীলের মৃত্যু-বার্ষিকিতে আজ ও নীলা খোপায় কদমফুল দিয়ে ঐ বটগাছের নিচে বসে থাকে তার নীলের অপেক্ষায়। ভালবাসায় প্রাপ্তিটা মূখ্য হতে পারে কিন্তু তুমি কি জানো?? ””তোমাকে পাওয়াটা যদি এতই সহজ হতো,,,,তো চোখে ডার্ক-সার্কেল আর বুকে নিকোটিন জমতো না”””