এই পাশাপাশি চলাটাই কেমন অসহ্যকর লাগছে পৃথার। অথচ সে কিছু বলতেও পারছে না!! ছেলেটা বড্ড অদ্ভুত। সেই কবে একবার সামনে এসে ওকে propose করেছিলো। পৃথা বোকা বনে গিয়েছিলো। হা হয়ে কেবল শুনেছে, আর ভেবেছে ছেলেটার কি সাহস বেশি না চোখ খারাপ? ভার্সিটির ফার্স্ট সেমিস্টার এ পড়া একটা ছেলে propose করছে আর একটা সেমিস্টার বাকি আছে এমন মেয়ে কে!!! শায়নের কাছে এটা কোন ব্যাপার না, সে পৃথাকে প্রথম দেখেই প্রেমে পরেছে। পৃথা যখন করিডরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির পানি হাতে নিয়ে খেলে, ওর কেবল-ই ইচ্ছে করে ওর পাশে দাঁড়িয়ে সেই খেলায় ও বাঁধা দিক,আর পৃথা ওর দিকে সেই পানি ছুরে ওকে ভিজিয়ে দিক।
যখন বাতাসে পৃথার চুল উড়ে এসে মুখে আছড়ে পরে, আর পৃথা সেগুলো সামলাতে বেঁধে ফেলে। ইচ্ছে করে চুলগুলো খুলে দিতে। শায়নের খুব বলতে ইচ্ছে, নীল টিপ এ তোমাকে খুব সুন্দর লাগে পৃথা। কিন্তু বলতে পারে না। পৃথা ওকে দেখলেই বিরক্ত হয়। তাই ও কেবল দূর থেকেই পৃথাকে দেখে। কিন্তু আজ আর দূরে থাকতে পারেনি, যখন দেখল দুজন ছেলে পৃথার রাস্তা আটকেছে ও সাথে সাথে ছুটে এলো। ওকে দেখেই ছেলে দুটো পালিয়েছে। তারপর থেকেই পাশাপাশি হাঁটছে দুজন। শায়ন ও পৃথা। পাশাপাশি এবং নীরব। পৃথা জানে শায়নকে ও আসতে নিষেধ করলেও পিছু পিছু আসবেই। বহুদিন ওর মনে হয়েছে,কেও ওর পিছু নিয়েছে। কখনও শায়নকে দেখেছে, কখনওবা শায়নকে খুজেই পায়নি হাজার মানুষের ভীরে। তবুও শায়ন নীরবে ওকে বাড়ি অব্দি পৌঁছে দিয়েছে। আজও হয়তো নীরবে পিছেই থাকতো,যদি না ছেলে দুটো ওকে আটকাত।
শায়ন এর সাথে আজ পৃথার তৃতীয়বার কথা হচ্ছে। প্রথম হয়েছিল,যেদিন শায়ন ওকে propose করে। এর প্রায় দেড়মাস পর শায়ন ওর সামনে আসে, ততদিনে পৃথা শায়নের ঘটনাটা ভুলেও গিয়েছিলো। সেদিন শায়ন এর জন্মদিন ছিল। সে একান্ত কিছু সময় চেয়েছিল পৃথার কাছে,ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবে। পৃথার সেদিন খুব রাগ হয়েছিল। প্রথমদিন কিছু না বললেও। সেদিন কিছু বলতে বাকি রাখেনি। ক্যাম্পাসের অনেকেই দেখেছে সে দৃশ্য এরপর এরপর শায়ন আর পৃথার সামনে আসেনি,কেবল দূর থেকে দেখেছে। শায়ন জানে,একদিন পৃথা ওকে ভালবাসবে। শুধু এটা জানে না,সে দিনটা কবে আসবে? কে জানে হয়তো আজ পৃথা বুঝতে পারবে,শায়ন ওকে কতটা ভালোবাসে। সে আশাই ও নীরবে পাশে হেঁটে যাচ্ছে,কিন্তু এতটা পথ পারি দিয়েও দুজনের কোন কথা হল না। অবশেষে ওরা পৃথার বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গেলো। শায়ন এর বেশি আগাতে চাইলো না।
আমার আর তোমার পাশে যাওয়া ঠিক হবে না। ভয় পেয় না, আমি তোমার পিছে আছি। এসো আমার বাড়ি। না, থাক। কেন? এসো, চা খেয়ে যাও। বিয়ের পর একবারে ভাত খেতে আসবো। তুমি একটা পাগল। কি সব যে তোমার মাথায় আসে! ভার্সিটিতে নতুন এসেছ তো দুদিন পর যখন তোমার age এর কাউকে পাবে,আমার কথা মনেও থাকবে না। ভালবাসা কি বয়স দেখে হয়? আমি তোমাকে ভালবেসেছি,তোমাক েই ভালবাসবো একদিন তুমিও বাসবে। over confidence হয়ে গেলো না? না, আমি তো জানি আমি তোমাকে অনেকককক ভালোবাসি। শুধু এটা জানিনা,কিভাবে বললে বুঝবে? এক কাজ কর সুন্দর করে বল। যেভাবে propose করলে refuse করা যায়না। সত্যি? তাহলে তোমার প্রিয় white rose দিয়ে করি? আমার পছন্দের হলে, red rose দিয়ে করতাম। তুমি কিভাবে জানলে white rose আমার পছন্দ!!!
আমি তোমার সব পছন্দ জানি, তুমি দুই মিনিট দাঁড়াও। আমি white rose আনছি। শায়ন কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। সত্যি দুই মিনিটের মধ্যে ফিরেও এলো, হাতে সাদা গোলাপ। রাস্তার ওপার থেকে দেখাল, এটা পছন্দ হয় কি না? নইলে পাল্টে আনবে। পৃথা হাত বাড়িয়ে ডাকল, বোঝাল… ও যদি এখনই না আসে পৃথা চলে যাবে। শায়ন ঘাবড়ে গেলো। ভাবল, সত্যি হয়তো পৃথা চলে যাবে। তাই তাড়াতাড়ি আসতে লাগলো। আর তখনই একটা বাস এসে ধাক্কা দিল শায়ন কে। রক্তের বন্যা বয়ে গেলো রাস্তায়। সবার সাথে পৃথাও ছুটে গেলো। শায়ন এর হাতের গোলাপটি আর সাদা নেই, তা এখন রক্তলাল সে তাই দিয়ে পৃথাকে কেবল এটুকুই বলতে পারল,
“আর জালাচ্ছি না তোমায়”
হয়তো আরকিছু বলতে চেয়েছিল শায়ন। হয়তো শেষ সময় চেয়েছিল কেবল পৃথা একা ওর পাশে থাকুক। কিন্তু ওর ঠোঁটদুটো কেবল একটু কাঁপল। কথা বোঝা গেলো না। শায়ন এর মাথা টা পৃথার কোলে,হাতটা পৃথার হাত ধরা। পৃথিবী থেকে চলে গেলো শায়ন।সেই সাথে পৃথার জীবন থেকেও। আর পৃথা? লাল গোলাপটা চিরকাল ওর সাথেই ছিল। সারাজীবনে আর কাওকে সাথী করতে পারেনি পৃথা। বাকি জীবন সেই গোলাপকে সাথী করেই কাটিয়েছে। কতরাতে ঘুম ভেঙ্গে মনে হয়েছে দূর আকাশের তারা হয়ে,শায়ন ওকে ডাকছে। সবাই জানে, পৃথা বিয়ে করেনি। কেন করেনি তা আজও কারো জানা হয়নি…