ভাঙা-গড়া

ভাঙা-গড়া

এয়ারপোর্ট থেকে নীলার সাথে ওদের গাড়ী করে বাসায় ফিরছি।আমার মত গরীবের ছেলে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল যার মাধ্যমে সে এই নীলা।ছাত্রকালে মনে

হয় আমার ভাগ্য ভালই ছিল।নতুবা ফুল ও নীলা দুজনেই বড়লোকের মেয়ে হওয়া সত্বেও কি করে আমার মত একটা চাল চুলোহীনের প্রেমে পড়ে!
.
জীবনের প্রথম প্রপোজ করেছিল নীলা। ধনীর দুলালীদের আমি বিশ্বাস করিনা বলেই ওকে এড়িয়ে চলতাম।কিন্তু পড়াশুনার পাশাপাশি ফুলদের বাসার ড্রাইভার ছিলাম

বলে ওর প্রপোজটা প্রথমে এড়িয়ে গেলেও শেষমেষ আর পারিনি।সব সময় চোখের সামনে ঘুরাঘুরি করা ডানাকাটা পরী ছিল ফুল।আমরা দুজন দুজনকে খুব

ভালবাসতাম।
.
নীলা যেদিন প্রথম জানতে পারলো যে,আমার আর ফুলের মধ্যে কিছু একটা চলছে আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম বড়লোকের জেদী মেয়ে।কি না কি

বলে বসে…..কিন্তু নীলা খুব স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিল ব্যাপারটা।যেন কিছুই হয়নি।হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম সেদিন।এরপর আমি আর ফুল চুটিয়ে প্রেম করেছি।কেউ

কিচ্ছুটি টের পায়নি।একসাথে সিনেমা দেখা, লং ড্রাইভে যাওয়া,ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করা,বৃষ্টি বিলাস,জোৎস্না বিলাস কতকিছুই না করেছি একসাথে।মেয়েটা আমাকে

সুযোগ পেলেই পাগলের মত জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরতো।
.
ফুলের উষ্ণ
ঠোঁটের স্পর্শ আমি কোনদিন ভুলতে পারব না।কিন্তু গরীবের ছেলে বলে আমরা নিজেদের ভালবাসা প্রকাশ করতে পারিনি।নীলা প্রকাশ করতে চেয়েছিল কিন্তু সেলিম

আংকেল(ফুলের বাবা) এটা জানতে পারলে খুব কষ্ট পেতেন।উনি আমার বাবার অন্যদাতা,আমার অন্যদাতা।যদি আমার দেয়া কষ্টে উনার হার্টের অ্যাটাকটা আবারো

হয় তাহলে নিজেকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারব না। যেদিন ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল সেদিন কলিজাটা খন্ড খন্ড হয়ে গিয়েছিল।ফুলও অনেক কেঁদেছিল।কিন্তু আমার

কিছুই করার ছিল না।টানা একমাস কিছু মুখে নেই নি ফুলের বিয়ের পর।কাউকে নিজের কষ্টের কথা বলতেও পারিনি।কেবল নীলাই সব জানতো।আমার সকল বিপদের

সময় এই নীলাই পাশে ছিল আমার।দীর্ঘ চার বছর ওর বাবার কোম্পানিতে জবও করেছি।ফুল চলে যাওয়ার পর আমাকে মানষিকভাবে শক্ত করে তুলেছিল ও।একটা

সময় মনে হল কারো দয়ার চাকুরী করার চেয়ে কিছু ক্যাশ জমিয়ে ব্যবসা করাই ভাল। শেষে নীলার সাহায্যে ইতালী গেলাম কিন্তু নীলাকে বললাম যে,ওর সব টাকা

ফেরৎ দিলে ওকে ফেরৎ নিতে হবে।নীলা রাজী হল।
.
বিদেশে থাকাকালীন নীলার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলেছি।ফুলের সাথেও কথা হত মাঝে মাঝে। শাহেদ ভাই ফুলকে মোটেও ভালবাসতো না।মদ অার মেয়ে

মানুষ নিয়েই তার দিন কাটতো।ফুল প্রতিবাদ করলে ওর গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করতো না।
এ কয় বছরে ইতালীতে নিজের বিজন্যাসের ভাল ডেভেলপ করেছি।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশে এসে ফুলকে বিয়ে করবো।কিন্তু তার অাগেই ফুল একটা সড়ক

দুর্ঘটনায়…….।অামার পুরু সন্দেহ শাহেদ কুত্তার বাচ্চাটাই হয়তো খুন করে দিয়েছে ফুলকে।ফুলের লাইফ ইন্সুরেন্সের নমিনি ছিল ও।ফুল শেষবার বলেছিল শাহেদের

নাকি কারো সাথে ডিপ অ্যাফেয়ার চলছে।ওর মৃত্যুর খবরে অাবারো ভেঙে পড়েছিলাম। নীলা অামাকে শান্ত্বনা দেয়ার জন্য সুদূর ইতালী পর্যন্ত এসেছিল তখন।

চার বছর পর দেশে ফিরে না খেয়েই রওনা হলাম ফুলের শ্বশুড়ের বাসার উদ্দেশ্যে।অামার বাবা তার সাড়াজীবন যে বাসার কেয়ারটেকার হিসেবে কাটিয়েছে,অামি যে

বাসায় ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেছি সেই বাসার মালিক সেলিম অাংকেলের মেয়ে ফুল।অনেক বড় ঘরে বিয়ে হয়েছে ওর।ইন্ড্রাস্ট্র

িয়ালিস্ট সেলিম চৌধুরীর ছেলে শাহেদ চৌধুরীর সাথে বিয়ে হয়েছে ওর। শাহেদ ভাইদের বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই শাহেদ ভাইয়ের মা দরজা খোলে দিল।উ

নার কোলে বছর তিনেকের একটা ছেলে।আমার চোখ দুটোতে জল আসি আসি করছিল বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে।অামার ফুলের ছেলে।সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম

-কেমন আছেন অান্টি?
আমি উনার কোল থেকে বাচ্চাটা নিতে নিতে বললাম
-ভাল আছি অান্টি।শাহেদ ভাই কেমন আছে?
-ভালই আছে।
এসো ভেতরে এসো।
.
আমি ফুলের ছেলেটার গালে কপালে অনেকগুলো চুমু দিতে দিতে বললাম
-কি নাম তোমার আব্বু?
-লবি।
বাবুর কথা শুনে শাহেদ ভাইর অাম্মা হাসতে হাসতে বললো
-ওর নাম রবি।
.
নামটা শুনে বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো।ফুল অামার নামের সাথে মিলিয়ে নামটা রেখেছিল।
.
চার বছরের রবি আমার মুখের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।ছেলেটার চোখের পলক পড়ছেনা যেন।ছেলেটার চোখ দুটোতে কি যে মায়া!ঠিক ফুলের মত হয়েছে

দেখতে।ফুলও আমার দিকে এমন মনকাড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো।রবির মাঝে আমি ফুলের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি।ফুলকেতো আর বুকে জড়াতে পারবো না।তাই

ছেলেটাকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম।বুক ফেঁটে কান্না আসছিল।চোখ দুটো পানিতে ঝাপসা হয়ে এসেছে।অনেকদিন পর বুকে একটা প্রশান্তির হাওয়া

বইছে।বাচ্চাটাকে বুকে চেপে মনে হচ্ছে স্বর্গীয় কিছু বুঝি আমার মাঝে ভর করেছে।বাচ্চাটাও কোন সাড়া শব্দ করছে না।পরম স্নেহে আমার আদরের কাছে নিজেকে

বিলিয়ে দিচ্ছে।আমি ফুলের শ্বাশুড়ির কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে রবিকে আমাদের বাসায় নিয়ে এলাম।বাড়ি এনে ওকে নিজ হাতে গোসল করালাম।খাওয়ালাম।তারপর

ওর জন্য যে পুরু একটা লাগেজ ভরা গিফ্ট নিয়ে এসেছি সেগুলো দেখালাম।ওতো সব দেখে খুশিতে আত্নহারা।আধু আধু বুলিতে বললো

-তবকিতু কি আমাল?
-হ্যাঁ বাবা তোমার।তোমার পছন্দ হয়েছে?
-অনেক পদন্ত হয়েতে।
.
রবি এতগুলো গিফ্ট একসাথে পেয়ে খুশিতে আত্নহারা হয়ে গিয়েছে।কোনটা রেখে কোনটা নিবে বুঝতে
বুঝতে পারছিল না।ওর জন্য অনেকগুলো ড্রেস,পারফিউম,খাবার দাবার আর খেলনা নিয়ে এসেছি।ওর অবশ্য খেলনাগুলোর দিকেই ঝুঁক বেশী।ও খেলনার হেলিকাপ্টারটা হাতে ঠেঁলে চালচ্ছিল আর মুখে ভোঁ ভোঁ শব্দ করছিল।আমার সেটা দেখে ভারী হাসি পাচ্ছিল।আমি ওকে শিখিয়ে দিলাম যে সুইচ টিপলেই হেলিকাপ্টারটা এমনিতেই চলে।সেটা দেখে ওর খুশিতে যেন আর ধরেনা।এই টয়টা চালানোর ভেতর দিয়েই রেলগাড়ীটা দেখিয়ে দিয়ে আমাকে বললো
-এতা তালিয়ে দাও।আমাকে তিকিয়ে দাও,কিবাবে তালাব?
আমি তখন দুষ্টমিভরা ভাব নিয়ে বললাম
-আমার গালে একটা পাপ্পি দাও তারপর চালানো শিখাব।
ও সাথে সাথে আমার গলা জড়িয়ে ধরে আলতো করে ওর পিচ্চি মাল্টার কোয়ার মত ঠোঁট দুটো আমার গালে ছুঁইয়ে দিল।আমার তখন খুশিতে চোখে জল চলে এল।
.
রবিকে আমি কোলে বসিয়ে আঙ্গুর খাওয়াচ্ছিলাম মুখে তোলে।হঠাৎই রবি খাওয়া থামিয়ে বললো।
-তুমি তাবানা(খাবানা)?আমি তোমাকে মুকে তোলে দেই?
বলেই রবি আমার মুখে ওর ছোট ছোট হাত দিয়ে একটা আঙ্গুর তোলে দিল।
আমি আঙ্গুরটা মুখে নিয়ে ওকে আরেকবার বুকে জড়িয়ে ধরলাম। রবি আব্বা আম্মার মন আরও আগেই জয় করে নিয়েছে। ও ওর নানুর বাসায় অাসলে অাব্বা প্রায়ই ওকে অাম্মার কাছে নিয়ে যেতেন।প্রবাসে থাকাকালীন আব্বা আম্মা প্রায়ই বলতেন
-জানিস রনি?ফুলের না ফুলের মত
সুন্দর একটা ছেলে হয়েছে।ছেলেটা এত মিষ্টি করে কথা বলে যে দুশমনেরও বুক জুড়িয়ে যায়।ছেলেটাকে কোলে নিলে দুনিয়ার সব কষ্ট যেন মাটি হয়ে যায়!দ্রুত দেশে আয় খোকা।তোকে বিয়ে দিয়ে আমরা দ্রুত নাতি নাতনীর মুখ দেখি।
.
রবি খেলতে খেলতে হঠাৎ মেঝেতে পড়ে গেল।পড়ে গিয়ে ও চারপাশে দেখলো কেউ আছে কিনা।যখন দেখলো কেউ নেই আবার সাথে সাথে উঠে দাড়ালো সে।আমি পাশের রুমে লুঙ্গি পাল্টাতে পাল্টাতে দেখছিলাম সব।যেই আমি বলতে গেলাম যে,ব্যাথা পাইছো আব্বু?
তখনই ও ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিল।আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে কোলে নিয়ে অজস্র চুমুতে ওকে ভরিয়ে দিলাম।
.
বিকেলে ওকে নিয়ে ঘুরতে গেলাম।অামাদের সাথে নীলাও গিয়েছিল।রবিকে কাঁধে চড়িয়ে ঘুরালাম।ওকে দুহাতে ধরে উপড় দিকে উড়িয়ে দিয়ে আমার ধরে ফেলার খেলাটা খেললাম কতক্ষন।ও তখন হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছিল!কি অমায়িক হাসি!ঠিক ওর মায়ের মত!
.
সাড়াদিন রবির সাথে কাটানোর পর রাতে ওকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।মনে হচ্ছিলো আমার মধ্যে যেন স্বর্গ নেমে এসেছে।ফুলকে হারানোর যন্ত্রনা কিছুটা লাঘব হচ্ছিল।ঠিক তখনি দরজায় কেউ কড়া নাড়লো।দরজা খোলে দেখি শাহেদ ভাই।ওকে দেখে অামার মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল।মনে হচ্ছিল শালাকে এখানেই শেষ করে দেই। আমাকে দেখে একটা হাসি দিয়ে বললো

-ভাল আছ রনি?
-জ্বি শাহেদ ভাই,ভাল।আপনি ভাল আছেন?
-কি করে ভাল থাকি বল?অক্সিজেন ছাড়া কি মানুষ
থাকে?আমার অক্সিজেন,কলিজার টুকরা রবিকে ছাড়া আমার ঘুম আসেনা রাতে রনি।ফুল এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় আমাকে এই ধন দিয়ে গেছে।ফুল নেই।আমার বিছানাতো এমনিতেই খালি রনি।রবিকে ছাড়া আমার বিছানাতো ভরে না রনি।
.
অাহা!ফুলের জন্য ওর লোক দেখানো মিথ্যা দরদ দেখে গা জ্বলে যাচ্ছিল অামার।
শাহেদ ভাই যখন ঘুমন্ত রবিকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছিল আমার মনে হচ্ছিল কেউ আমার কলিজা দ্বিতীয়বারের মত টেনে ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে।শাহেদ ভাইকে খুন করে

ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো।ঠিক এভাবেই দশ বছর আগে ফুলকেও আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গিয়েছিল শাহেদ ভাই।তারপর ফুলের যখন বাচ্চা হচ্ছিল না তখন তাকে

ছেড়ে দ্বিতীয় বিয়ে করতে চেয়েছিল।শাহেদ ভাই নিজের অক্ষমতার ভার আমার ফুলের উপর চাপাতে চেয়েছিল। সে খবর শুনে তার বাবা হার্ট অ্যাটাক করেন।আর

তখনি ফুল আমার কাছে একটা বাচ্চা চায়।পাপ ভেবে নিজেকে দূরে সড়িয়ে রেখেছিলাম কিন্তু ফুলের উপর যখন শাহেদ ভাই হাত তুলতে শুরু করলো তখন আর চুপ

করে থাকতে পারিনি।অন্যায়টা আমাকে করতেই হয়েছিল।ফুল কনসিভ করার পর পরই অামি ইতালী চলে যাই।মাস ছয়েক অাগে ফুল মাড়া গেছে। আজ আমার

ছেলের উপর আমার অধিকার নেই।রবি অামার বৈধ সন্তান নয় বলেই হয়তো এই পাপের শাস্তি অামি পাচ্ছি।
.
বিয়ে করার ইচ্ছে না থাকা সত্বেও বাবা মায়ের চাপে আর নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে ওকে বিয়ে করলাম অবশেষে।ওর ইচ্ছেতেই হানিমুনে যাচ্ছি সুইজারল্যান্ড।ক

িন্তু সমস্যা বাঁধলো ফ্লাইটের দিন ভোরে।হঠাৎ করেই নীলাদের গাড়ীটা খারাপ হয়ে গেল।এত ভোরে রেন্ট এ কোন গাড়ী পাওয়া পসিবল ছিল না।আমাদের সবকিছু যখন

পন্ড হতে বসেছে ঠিক তখন নীলা ওদের স্টোররুমে রাখা গাড়ীটা নিয়ে আসলো।বেশ যত্নে রাখা ছিল গাড়িটা।নীলা ড্রাইভার রাখেনা।নিজের গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করে।

অন্য কাউকে ওর গাড়ি ছুঁতে পর্যন্ত দেয় না।আমিতো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।নীলার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম
-আরেকটা গাড়ী থাকা সত্বেও তুমি আমাকে টেনশন করালে কেন?
-আসলে আমার খেয়াল ছিল না বলেই ও আমার নাকের সাথে নাক ঘষলো।
.
সুইজারল্যান্ডে অনেক ঘুরে বেড়িয়েছি দুজন।আজ শহর থেকে দূরে একটা জায়গায় ঘুরতে এসেছি আমরা।জায়গাটা বেশ শুনশান।নব দম্পতির জন্য একেবারে

পারফেক্ট প্রেমের জায়গা।অনেক রাত অব্দি দুজন রয়ে গেলাম সেখানে।নীলা আমার কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে।আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম
-আচ্ছা নীলা,ভালবাসা মানে কি?
-ভালবাসা হচ্ছে কারো প্রতি কারো এমন একটা টান যে টানের কারনে মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর কাজটিও করে ফেলতে পারে।
-ঠিক বলেছ নীলা। ভালবাসার জন্য মানুষ সবচেয়ে ভয়ংকর কাজটিও করতে পারে।
-এতদিন পর ভালবাসার মানেটা বুঝলে তাহলে রনি?
-হুম
বুঝেছি।তবে তুমি আমাকে পাওয়ার জন্য যা যা করেছ তা না দেখলে বুঝতাম না।
.
নীলা খুব খুশি হয় আমার কথা শুনে।আমার আরো কাছে এসে আমার কপালে একটা চুম দেয় নীলা।আমিও ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে একটানে ওর ওর্নাটা টান দিয়ে

গলা থেকে হাতে নিয়ে আসি।ও লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।এই সুযোগটা কাজে লাগালাম আমি।ওর্নাটা ওর গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে শেষ করে দিলাম

ওকে।মৃত্যুর পর ওর চোখ দুটো বড় বড় দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল।যেন ভূত দেখার মত কিছু দেখছে।হুম অবাক হবেনা কেন?অবাক হওয়ারই কথা।ও হয়তো কখনো কল্পনাও

করেনি যে আমি ওকে খুন করতে পারি।
.
শাহেদ ভাইকে আমার ফুলের মৃত্যুতে দায়ী মনে হয়েছিল বলে একবার থানায় গিয়ে সেলিম আংকেলের করা ডায়েরীটা দেখে এসেছিলাম।যে গাড়ীটা ফুলকে ধাক্কা দিয়ে

পালিয়ে গিয়েছিল সেই গাড়ীর নাম্বার আর ফুলের স্টোর রুমে রাখা গাড়ীর নাম্বার মিলে গেছে।গাড়ীর লাইসেন্স একজন ভুঁয়া লোকের নামে ছিল।আমি কেবল নীলাকেই

বলেছিলাম যে,দেশে ফিরে ফুলকে বিয়ে করছি আর ডি এন এ টেস্টের মাধ্যমে প্রমান করছি যে ওর ছেলেটা আমার।তারপর নতুন করে শুরু করব সব।আমাকে

পাওয়ার জন্য নীলা ফুলকেই খুন করে ফেললো।না, ও শুধু ফুলকে খুন করেনি।খুন করেছে আমার স্বপ্ন, আমার ভালবাসা,আমার

সুখ।আমার ছেলেকে করেছে মা ছাড়া।এত হতাশা কাটিয়ে যখনি সুখের মুখ দেখতে যাচ্ছিলাম তখনি নীলা সে রাস্তাটা বন্ধ করে দিল।নীলা অামার জন্য যেটুকু করেছে

তার থেকে বেশী কেড়ে নিয়েছে।ওকেতো আমি এভাবে ছেড়ে দিতে পারিনা।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত