এক সপ্তাহের ভালবাসা

এক সপ্তাহের ভালবাসা

নুর ইসলাম ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্র।মেধাবি ও স্মার্ট তবে চেহারা সেরকম একটা ভাল নয়।কিন্তু মেয়ে পটাতে অনেক বর ওস্তাদ।লাইফে জামা-কাপর বদলানোর মত মেয়ে

পাল্টানো তার কাছে কোন ব্যাপার নয়।তার একটি কমন ডায়লগ অনেক ফেমাস “একটি মেয়ের সাথে আর কতদিন থাকা যায়”। সেবারও একটা মেয়ে মেঘা নাম তার।

কতই না ভালবাসা ছিল তাদের মধ্য কিন্তু এক নিমিষেই সেটা গায়েব হয়ে গেল।নুর ইসলাম সাধারনত সকল মেয়েদের কাছেই ভদ্র।দুর থেকে তাকে দেখলে মনে হবে

যেন ভাজা মাছ টা উল্টায় খেতে যানে না।কিন্তু কাছে গেলে বোঝা যায়।মেয়ে পটানোর কিছু ডায়লগ রপ্ত করে মেয়েদের কে মায়াজালে আবদ্ধ করে।পরে ভাল না

লাগলে যেকোন একটা অজুহাত দেখিয়ে ব্রেকাপ।মেঘার সাথে ব্রেকাপ এই বলে হয়েছে যে সে মোবাইল উঠাতে দেরি করে।অর্থাত অন্য বয়ফ্রেন্ডে রয়েছে। এতে মেঘা

অনেক ভেংগে পরে।তবে পরে নিজেকে সামাল দেয়।এভাবে বেশ চলছিল নুর ইসলামের জীবন।আবার তার লাইফে আবার একটি মেয়ের আগমন ঘটে নাম ফারিহা।

ফারিয়া মেয়েটা আবার অন্যরকম ধরনের।নুর ইসলামের সাথে যেচে কথা বলতে আসে।ব্যাস তাকে আর পায় কে।চিন্তা করল নতুন তরকারি নিজে এসেছে থালার কাছে।সেও তাল মিলাতে লাগল
.
.
এদিকে সুমনা নামের এক মেয়ে বিশাল ঝামেলার সৃষ্টি করে।কাউকে কিচ্ছু না বলে আত্যহত্যার পথ বেছে নেয় সে।এক বছর আগে নুর ইসলামের প্রেমে পরেছিল।

ভালই চলছিল তাদের প্রেম। সুমনা একদিকে নুর ইসলামকে সত্যকারের ভালবাসতো অন্যদিকে নুর ইসলাম শুধু বাজিতে জিতার কারনে সুমনাকে প্রেম জ্বালে ফেলায়।

যেহেতু সুমনা কলেজে শুধুমাত্র পড়াশুনার কাজে এসেছিল। তাই সে কারো প্রেমে পড়ার কথা চিন্তা করতেই পারত না।কলেজের সবাই বলতে গেলে সুমনাকে পাবার

জন্য অনেক কিছু করেছে।আর সুমনা যেহেতু ধার্মিক বেশি তাই সে বেশি কোন ছেলের সাথে কথা বলে না।নুর ইসলামের ফ্রেন্ডস এ বিষয় নিয়ে আলচনা করার সময়

তার অনেক বিরক্ত লাগছিল।যেহেতু তার কাছে মেয়ে পটানো বাম হাতের খেলা তাই তার বিরক্ত হয়াটাই স্বাভাবিক।সে বিরক্ত স্বরে বলে উঠল

–চুপ কর সবাই মেয়ে পটানো এক পুরুষের কাজ তোরা কি করে তা পারবি
–ও তাই যখন তুই করে দেখা।আর এটা অন্য মেয়েদের মত নয় যে মিষ্টি খাওয়ালেই খেয়ে নিবে।তাছারা অনেক পরহেজগার
–তোরা আমার যোগ্যতার উপর সন্দেহ করছিস
–যাই বল তুই কিন্তু পারবি না
–আচ্ছা তাহলে দেখ মাত্র ১ সপ্তাহ।সুমনা আমার আগে পিছে ক্যামনে ঘুরে
–আরে যা যা।তুই পারলে আমরা সবাই মিলে তোকে ২০০০০ টাকা দিব
–২০০০০ টাকা কি তোদের বাপ দিবে
–পারলে দিব।যদি সাহস থাকে বল।আর না পারলে আলাদা ব্যাপার
–আচ্ছা টাকা রেডি রাখ আমি করছি
এত টাকার কথা শুনে উঠে পরে লাগে সুমনার পেছনে।সুন্দর হলেও কি হবে এ মেয়ে পটানো অসম্ভব এটা প্রথম দিনেই বুঝতে পারে সে।সুমনা তাকে তার ধারে কাছেও

ঘেষতে দেয় না প্রেমে পড়া তো দূরে কথা।দ্বিতীয় দিন সে ইচ্ছা করে পাখার সব নাট খুলে দেয়।আর সুমনার উপর সেই পাখা পরতেই সে সুমনাকে বাচায় ও ইচ্ছা করে

হাতের উপর পাখাকে পরতে দেয়।এমন ভাব করে যে সে তার উপর কোন ইন্ট্রেস্ট নেই শুধু মানবতার কারনে বাচিয়েছে।এই ট্রিক্স অনেক পুরান বটে কিন্তু সুমনার ভাব

স্বভাব যেহেতু পুরান তাই সে হয়ত পটে যাবে।তার প্লান কাজ করেছে,সুমনা হাল্কা দুর্বল হয়েছে নুর ইসলামের উপর।সুমনা তার সাথে কথা বল্লেও অপ্রয়জনীয় কথা খুব

অল্প বলে।তাও যে সে তাকে কথা বলাতে পারছে এই বটে।একদিন তো ইচ্ছা করে সুমনার সামনে তার মা কে বন্ধুর সাহাজ্যো ট্রাকের সামনে ধাক্কা দিয়ে বাচিয়ে

ফ্যামিলিতে হিরো হয়ে যায়।তারপর প্রতিনিয়ত যাওয়া আসা আর কিছু ট্রিক্স ব্যাবহার করে ৬ দিনের মাথায় ইমোসনাল ডায়লগ দেয়।নুর ইসলামের আশা বেশি ছিল না

কিন্তু সুমনা তাও তাকে নিরাশা না করে ভালবাসা গ্রহন করে।তারপর তারা সবসমই বাইরে ঘুরতে যায়।একে অন্যকে ছাড়া থাকতে পারে না। বলা হয় এই টাইপের

মেয়েরা একবার যাকে ভালবাসে তাকে আজীবনের জন্যই ভালবাসে। শর্ত পুরন করায় নুর ইসলাম ২০০০০ টাকার জয়ী হয়। এখন আর তো সুমনার দরকার নেই তাই তার সাথে ইতি ঘটায়
এদিকে সুমনা বাসায় খাওয়া দাওয়ায় প্রচুর অবহেলা দিতে থাকে।তার মধ্যো এতটা খারাপ লাগা কাজ করে যে সে সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাস লাগিয়ে নেয়।নুর

ইসলামের অবহেলায় প্রতিদিন মরার চেয়ে একদিনেই মরা ভাল।মরার সময় সে একটি কাগজে শুধু নুর ইসলামের নাম লিখে দেয় আর অন্য কিছু লেখে না।
.
.
এর জন্যই তাকে পুলিশের ঝামেলায় পরতে হয়েছিল কিন্তু শুধু নাম লেখা থাকায় সে বেচে যায়। এদিকে ফারিয়ার কাছ থেকে অনেক কিছু জানা গেল।ফারিয়া মুলত

গ্রামে থাকে।পড়ালেখার তাগিদে খুলনায় আসা।তার মা-বাবা-দুইভাই আর এক বোনের পরিবার।পরিবারের সবচেয়ে আদরের মেয়ে ফারিয়া।চালু টাইপের মেয়ে।

পরিবারের সবাইকে সারাদিন মাতিয়ে তোলে।ও যখন না থাকে পরিবারের লোকেরা অনেক মনে করে।ওকে ছারা মনে হয় পরিবার অপুর্ন।কলেজে যাই হোক না কেন

সে তার বাবার কাছে শেয়ার করে।তার বাবাকেই একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড হিসাবে মানে।এদিকে নুর ইসলাম বরারবর এম এম এস,ফোন খোঁজখবর নিতে লাগল যেমন টা

সব মেয়েদের সাথে আগেই করে এসেছে।ফারিয়াও কম যায় না সেও সমানে ম্যাসেজ চ্যাট করে চলেছে। দ্বিতীয় দিনের মাথাই নুর ইসলাম ফারিয়াকে। প্রোপজ করল।

সবসময়ের মত এবারও তোর প্রোপজের স্টাইল অন্যগুলার চেয়ে আলাদা ছিল। সে এসব মামলায় কোন মেয়ের গুষ্টি খোজ খবর নিয়ে পুরষ্কার প্রাপ্ত বিজ্ঞানিদের মতন

রাত জেগে রিসার্চ করে তারপর প্রোপজ করে। ফারিয়াও আবেগ প্রবন হয়ে রাজি হয়ে যায়।আবার এক নতুন ভালবাসা কাজ করে নুর ইসলামের মধ্যো।নুর ইসলাম

এখন অনেক খুশি।ফারিয়ে দেখতে অনেক সুন্দর তাই সে সব ফ্রেন্ড দের সাথে গল্প করে বেরায় ফারিয়ার ব্যাপারে।তারা নরমাল কাপলস দের মত ই ডেট করত।কিন্তু

আসতে আসতে নুর ইসালামের আর ভাল লাগছিল না।মেয়েটাকে নয় তার নিজের মধ্যো এক অন্যরকম অনুভুতি সৃষ্টি হতে লাগল।মেয়েটার অসুখ হলে সে সহ্য করতে

পারত না,ওর যেকোন ক্ষতিতে নুর ইসলাম ভেংগে পরত। ফারিয়ার সব হুকুম তামিল করা শুরু করে দিয়েছে সে। নিজের পাগলামি দেখে সে অবাক হয়ে ওঠে যে সে কি

করছে।হটাত তার মনে হল যে সে ফারিয়াকে ভালবাসতে শুরু করেছে।তার পাগলামো তার প্রতিটি কথাই নুর ইসলামকে পাগল করে দিচ্ছিল। সেও তাই চিন্তা করল

ফারিয়াকে জীবন সংগি করা।আর নুর ইসলাম কোন পাপ কাজ করবে না।ভালবাসা ছরাবে এখন সে সবার মাঝে।
.
.
আজকে তাদের ভালবাসার ৬ষ্ট দিন কাল ১ সপ্তাহ পুর্ন হতে চলেছে।তাই সে ফারিয়াকে খবর দেয়ার জন্য ফোন দিলেও ফোন ধরে না।অবাক হয়ে যায়,প্রায় ৬০ বারের

মাথায় বাসায় গিয়ে জানতে পারে যে সে বাইরে এক ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে গেছে।নির্দিষ্ট যায়গায় গিয়ে যা দেখল তাতে নুর ইসলামের মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পরল।

সে দেখল ফারিয়া অন্য এক ছেলের সাথে গল্প করছে,কিস করছে।রাগে দুঃখে সে ফারিয়ার কাছে জানতে চাইল এর উত্তর
–এসব কি হচ্ছে
–দেখতে যখন পেরেছ তখন জিজ্ঞাসা করে লাভ কি
–তাহলে আমাদের ভালবাসা
–আমাদের ভালবাস।আরে তোমার চেহারা দেখেছ কখনও আয়নায়।তোমার সাথে প্রেম করব আমি। আমার বি এফ কে দেখ।তুমি তার বাড়ির চাকর হবার ও যোগ্য না।আর দেখা কর না যদি লজ্জা থাকে
–কিন্তু আমি তো তোমাকে আমি আমার জীবনের থেকে বেশি ভালবাসি
–তাহলে কোনায় গিয়ে মর
ফারিয়ার কথা শুনে নুর ইসলাম ফারিয়াকে থাবা মারে। এদিকে ফারিয়ার বয়ফ্রেন্ড নুর ইসলামকে প্রচুর মারা শুরু করে।নুর ইসলামের শক্তির কাছে হার মেনে মার খেয়ে

বাসায় আসে।চিন্তা করতে থাকে তার সাথে এমন কেন হল।ফারিয়ার কথা মন থেকে  উঠাতে কিছুতেই পারছে না।তার সাথে কাটানো দিন তার মিষ্টি হাসি নুর ইসলামকে

তিল তিল করে খাচ্ছে। দুনিয়ায় সব তার কাছে মিথ্যা লাগছে।সে যখন অন্য মেয়েদের মনে আঘাত দিন তখন তাদের কি হত এই চিন্তা করে খারাপ লাগছে।ডিপেশনে

ভুগছিল সে।রাত তখন ১২ টা অর্থাৎ তাদের ভালবাসার ১ সপ্তাহ। সে ছুরির সামনে ভাবসে পুরান দিনের কথা।হটাত তার মনে হল শরীরে কোন অংগে কোন জিনিস

কামরে দিয়েছে।হাতে প্রচন্ড ব্যাথা করছে সব অন্ধকার হয়ে আসছে।না ওটা পোকার আঘাত নয় বরং ছুরির আঘাত।হ্যা নুর ইসলাম আত্যহত্যার পথ বেছে oনেয়।

এদিকে ফারিয়া খবরটা শুনে অনেক খুশি হয়। সে কবরস্থানের সামনে গিয়ে উচ্চস্বরে বলতে থাকে সুমনা বোন আমার।আমি তোমার প্রেমিক নুর ইসলামকে তোমার

কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।তোমার ইচ্ছামত তাকে শাস্তি দিও।এই বলে অঝোরে কাদতে থাকে

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত