কষ্টের চিৎকার

কষ্টের চিৎকার

কাজ শেষে রাতে চিন্তা করতে করতে কখন যে ভোর হলো,।খেয়াল নেই যদি ও তখন আমি বাড়ি থেকে দুরে একটা হোটেলে কাজ করছি,,,

ভোর হতে না হতেই এক ফ্রেন্ড ডাক দিয়ে বললো রোশান ভাই উঠ,,,আজ আমরা ছোট খাট একটা খাবারের আয়োজন করবো,,,পিকনিক করবো!

উঠে ফ্রেশ হয়ে হোটেলের বাইরে আসলাম,,দেখি আমার জন্য ছোট বড় সবাই অপেক্ষা করছে,।আমায় ওরা গুড মর্নিং জানালো,,,একটু হাসলাম,,,

সকাল টা খুব ভালোই লাগছিল,,,এর মাঝে আকাশ বললো,, আজ খাবারের আয়োজন করবো তোমায় থাকতে হবে,,,আমরা সবাই আছি,,,বললাম ওকে,,

আরো ভালো লাগছিল নীরব, মেহেদী,,তিয়াশা ওদের কে দেখে ওরা এই আয়োজনে থাকবে তাই,,,কারন যদি ও ওরা ছোট। কিন্তু তারপর ও ওরা আমার বন্ধুর মত,,

ওরা আমায় খুব সম্মান করে তাই ওদের সাথে অনেক সময় কথা দুষ্টামি হাসি খুশি নিয়ে সময় কাটে,,

আকাশ কে বললাম কত দিতে হবে।, বলল ৫০ টাকা দিলেই হবে,। ১০০টাকার নোট আমার কাছে ওদের কাছে ও ভাংতি নাই,,আমার কাছে ও নাই,,,বললাম বাজার করে ভাংতি করে দিও,,,,

তার পর আকাশ আর তার সাথে আরেক টা ফ্রেন্ড কে নিয়ে বাজারে চলে গেছে।,বাজার করতে,,,

এইদিকে আমি নীরব, মেহেদী,, তিয়াশা কথা বলছি,,,,, ওরা আমায় একটা ঘোড়ার গাড়ি দেখিয়ে বললো ভাইয়া চলো ঐ টায় উঠি,,,

আমি বললাম না অামি উঠবনা তোমরা উঠো,,,ওরা আমায় অনেক জোর করলো,। কিন্তু আমি উঠলাম না ওরা উঠে দুষ্টামি হাসা হাসি করছে,,আমার ভালোই লাগছিলো বাচ্চা মানুষ ওদের হাসি মিষ্টি মিষ্টি কথা গুলো খুব ভালো লাগছে,,,

হঠাৎ আমার চোখটা পড়ল একটা বুড়ো মহিলা উপর,,, ঘোড়ার গাড়ির থেকে একটু দুরে,,, সাথে সাথে আমি একটু চমকিত হয়ে উঠলাম!!

আস্তে আস্তে করে গেলাম মহিলাটার কাছে।, বয়স টা ৬০,,,৬৫ কম হবেনা,। গিয়ে একটু বসলাম মহিলাটা আমায় দেখে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো,,,

চমকিত হয়ে উঠার কারন টা হলো,,,মহিলাটা বোতল টুকাচ্ছে,। আর একটা পোড়া রুটি টেনে টেনে খাচ্ছে মনে হয় রুটিটা বাসি হবে,,খুব কষ্ট হচ্ছিল তার খেতে,তা আমি বুজতে পারছিলাম,,,,

গিয়ে বললাম আচ্ছা আপনি এই বয়সে এই কাজ করছেন কেন,?।এটা তো আপনার জন্য খুব কষ্ট দায়ক,,,আর এই পুড়া রুটি খাচ্ছেন কেন?

কিছুক্ষন মহিলাটা চুপ করে ছিল,,তারপর একটু কষ্ট সুরে বললো আমার কেউ নেই। তাই আমি এই কাজ করি,,,, কথাটা শুনেই আমার মায়া লেগে গেল।

আমি বললাম কেন আপনার ছেলে মেয়ে নেই,।ওনি বললো,ছেলে নেই। দুটো মেয়ে আছে,,,দুটো মেয়েকেই অনেক কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছি,,,তার মাঝে ছোট মেয়েটার অনেক কষ্ট জামাই ভালো না,,,মেয়েটাকে এখন ও খুব কষ্ট দেয়। মার দোর করে।

বোতল টুকালে ও এখন ও বুড়ো মহিলাটা মেয়েদের কথা ভাবে,,,এই হলো মায়ের ভালোবাসা। ছোট মেয়েটার কষ্টের কথা বলেই কেঁদে ফেললো। আমি দেখতে পেলাম গায়ে পড়া পুরোনো কাপরটি দিয়ে মহিলাটি তার চোখ মুছতেছে।

হয়তো এই কষ্টের তথা গুলো কাউকে বলতে পারেনাই,।বা কেউ শুনতে ও চায় নাই যে এই বৃদ্ধ মহিলাটি কত কষ্টে।হয়তো আজ আমার কাছে বলে কষ্টটা চোখ দিয়ে পানি হয়ে ঝড়ে পড়ছে।

আরো বলল আমার মত নাকি। তার বড় মেয়ের ঘরে একটা নাতি আছে,,,সে নাকি ওনাকে দেখতেই পারেনা।বাড়িতে যেতে দেয়না।

কথা গুলো বলছে আর কাদছে,,বললো ওনার স্বামি ও নাকি মেয়ে গুলো ছোট থাকতে মারা গিয়েছে,,অনেক কষ্ট করে ওনার সংসার চলেছে,,,

আর এখন ও সেই কষ্ট ই,, কথা গুলো শুনে আমার চোখেই পানি এসে গেল,,,

আরো কথা বললো,,, নীরর, তিয়াশা, মেহেদি ওরা ও আমার সাথে চুপ করে কষ্টের কথা গুলো শুনছে,,,হয়তো বাচ্চাগুলোর মনে ও ওনার কষ্টের কথা গুলো একটু কষ্টের দাগ টেনেছে। তাই ওরা ও আমার সাথে কষ্টের কথা গুলো মন দিয়ে শুনছে।

আমি বললাম মহিলাটাকে আপনি এই পোড়া রুটি খাচ্ছেন কেন।?বললো সকাল থেকে কিছু খায় নি তাই,,

হায়রে ক্ষুধার জ্বালা কত কষ্টের।তা হয়তো ওদের না দেখলে কেউ বুজবেনা।

আমি ম্যানিব্যাগ বেড় করলাম।কিন্তু টাকা নেই শুধু পাঁচ টাকা আছে,।কিন্ত এটা দিয়ে হবেনা,,,

মেহেদিকে বললাম,, যাও আব্বুর কাছে গিয়ে বলবা ,, আমায় পঞ্চাশ টা টাকা দিতে,,,,

মেহেদি আব্বুকে খুজে পেলনা।ফোন দিলাম আব্বু দুরে,,,

কি করা যায়,,,

গেলাম হোটেলে,,,কাকা আমার তিনটা রুটি একটা ডিম বাজি লাগবে,,,কিন্তু কাকা এখন টাকা নাই,, আব্বু আসলে দিয়ে দেবো,,,কাকা আমায় বললো সমস্যা নাই তোমার যা লাগবে নিও,

আর খাতায় তুমি নিজেই লিখে নিও,,খুব খুশি হলাম কাকার কথা শুনে,,,নতুন মানুষ আমি আমার প্রতি বিশ্বাস দেখে,,,
যদি ও এর আগে আমি এই হোটেল থেকে বাকি কিছুই নেইনি। কিন্তু আজ উপায়হীন হয়ে নিতে হলো।

সাথে সাথে নাস্তাটা নিয়ে মহিলাটার হাতে দিলাম,, খুব খুশি হলো,,,আর কেঁদে কেঁদে আমায় দোয়া করতে লাগলো,,,
আমার মনে হলো পৃথিবীর যে কোন দোয়াকে এই কষ্টের কান্না দোয়াটি হার মানাতে পারবে।

তারপর ও কাঁদছে আমি বলেছিলাম,,কাদবেননা যখন আপনি এদিক আসবেন আমায় ডাকবেন আমি এই হোটেলে কাজ করি,,,

মহিলাটা একটু খুশি হলো,,,এই খুশিটা আমার দেখে মনে হলো। এই খুশিটা যেন এক দুঃখের মহা সমুদ্রের মাঝে একটু সুখের ঢেউ রাশি। যা দুখের সাগরে আটকা পড়ে ছিল।কিন্তু কেউ এই হাসিটা বের করে আনার চেষ্টা করেনি।

তারপর ওনাকে শান্তনা দিয়ে আমি কাজে চলে আসি,,,

এর পর আবার অনেক দিনপর সকালে এই বৃদ্ধ মহিলাটির সাথে রাস্তায় দেখা হলো,,,আমায় দেখেই চিনে ফেললো,,সেই একি অবস্তায় কাদে পুরানো বোতলের বস্তা নিয়ে বসে আছে।

কাছে গেলাম আমায় দেখেই জিঙ্গেস করলো কেমন আছি,।বললাম ভালো,,আমি জিঙ্গেস করেছি নাস্তা করেছেন বললো না,,

পকেট থেকে ২০ টা টাকা বের করে বললাম। ওই যে সামনে হোটেল কিছু খেয়ে নিয়েন।আমার সময় ছিলনা। একটা কাজে যাচ্ছিলাম তাই বেশি কথা বলতে পারিনি।
টাকাটা দিয়েই চলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে চেয়ে আছে। হয়তো এটাই দোয়া।

তারপর আর কোন দিন দেখা হয়নি মহিলাটার সাথে। আমি ও অনেক খুজেছি কিন্তু পাইনি,।জানিনা কোথায় আছে তবে যেখানেই থাকুক আল্লাহ যেন ওনাকে ভালো রাখেন।

(অনেকে বলবে একটা ভালোকাজ করছে তাই ভাব দেখাইয়া পোষ্ট করছে,,,না ভাই আমি ভালো মানুষ না ভালো কাজ ও করিনা,,,

শুধু বুজাতে চেয়েছি আমাদের আশে পাশে এমন অনেক মানুষ আছে ।যারা অনেক অসহায় অনেক কষ্টে আছে। শুধু আমাদের একটু মানবতা ও একটু সাহায্য তাদের মুখে হাসি ফুটাতে পারে,,,,,,

তাই আমাদের সবার উচিত।তাদের মুখে একটু হাসি ফুটানো ও ক্ষুধার সময় তাদের মুখে একটু অন্ন তুলে দেয়া।
পৃথিবীতে কিছুই থাকবেনা থেকে যাবে ভালো কাজ ও ভালো কাজের জন্য দোয়া। যা মৃত্যুর পর ও তোমায় স্মরন করিয়ে দিবে পৃথিবীর মাঝে।)

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত