গত তিন মাস হলো বিয়ের কাবিন হয়েছে। এখনো বউকে ভাল করে দেখিই নি। আকর্ষণ না থাকলে যা হয়। আকর্ষণ কমে যাবারও একটা কারণ আছে। তা হলো, একদিন কল করলাম। হবু বউটাও রিসিভ করলো। কিছু না বলেই আবার কেটে দিলো। প্রশ্ন করলাম আবার কল দিয়ে…
-কেটে দিলে কেন?
-একটা কল আসছিল।
-কার কল?
-এক ফ্রেন্ডের কল।
-অহ আচ্ছা, আমার থেকে কি তোমার ফ্রেন্ড বড় হইলো?
-হুম, আপনার থেকে ফ্রেন্ডই বড়।
আমি আবেগে কান্না করে দিলাম প্রায়। ভিষণ মন খারাপ করে থাকলাম। পরে চিন্তা করলাম, মধ্যবিত্তদের মন খারাপ বেশিক্ষণ থাকতে নাই। কিন্তু কি করবো। তিন বার কবুল বললেই আমার বউ। সেই বউ যদি মুখের উপর এমন কথা বলে। তাহলে বেঁচে থাকার চেয়ে মরাই ভাল। সেই চিন্তা করে, মরে যাবার আগে সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার হবু বউয়ের মুখ খানা একবার দেখেই মরে যাব। সেই সুবাদে তাকে ভিডিও কল দেবার মনস্থির করলাম। যেই অনলাইনে দেখলাম। সেই কল দেয়া শুরু করে দিলাম। ও মা!!! সাথে সাথে রিজেক্ট করে দিল। আমি হতভম্ব। কয়েকবার ভিডিও কল দেবার পর যখন বিরক্তির চরম পর্যায় পৌঁছে সিদ্ধান্ত নিলাম এখন আর কল দিব না। তখনই হবু বউ অডিও কল দিল। কল রিসিভ করতেই,
-হ্যালো, ভিডিও কল কেন দিছেন?
-তোমাকে একবার দেখতে।
-এত দেখতে হবে কেন? বিয়ের পরেই দেখতে পারবেন। মন প্রাণ ভরে।
-আসলে তোমাকে শেষ বার দেখে মরে যেতে চাচ্ছিলাম।
-ওহ্ এই কথা? তো আমার তো ভিডিও কলে কথা বলার একদমই অভ্যাস নাই।
-আমাকে দিয়ে অভ্যাস করো।
-আসলে সত্যি কথা বলতে আমার কথা বলতে ভাল লাগে না।
-কি সব বলছো তুমি? কয়েকদিন পর আমি তোমার স্বামী হচ্ছি। আর বলছো, তোমার ভাল লাগে না? তুমি তো কথাই বলতে চাও না। এটাই সত্যি।
-হুম, যা মনে করেন।
আমি সব কথা শুনলাম। আর মনে মনে ভাবলাব, এ তো দেখছি জাহান্নামের এক অংশ। আমি খুব কষ্টে ফোন রেখে দিয়ে দুই দিনের কোমায় চলে গেলাম। কোমা হতে ওঠে দেখি আমার চারপাশ ঘিরে আমার হবু শশুর বাড়ির লোকজন। আমি আৎকে উঠলাম। কারণ আমি ৬ টা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে মারা গেছি। মরার পর যখন দেখলাম, আমার শশুর বাড়ির লোকজন আমার পাশে। তখন একমনে আল্লাহকে ডাকা শুরু করলাম। হে আল্লাহ, আমি কি এমন তোমার পাকা ধানে মই দিলাম। আমাকে জাহান্নামেই রেখে দিলা? একটু পর ঘোর ফিরে আসলো। আসলে আমি বেঁচে আছি। সেদিন হসপিটাল থেকে রিলিজ পেলাম। আমার বাবা কানের কাছে এসে ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ার কারণ জিগায়। আমি বললাম, শুনো বাবা, পুরুষ মানুষ দুইটা কারণে মরতে চায়। একটা টাকা আরেকটা নারী। তুই কোনডা বাবা?
-এখনো বুঝো নাই? তোমার তো টাকা পয়সার অভাব নাই।
-হুম, বুঝলাম। কিন্তু মেয়েরা বিয়ের আগে এক রকম থাকে আর বিয়ের পর এক রকম থাকে। মানে বিয়ের পর ভাল হয়ে যায়।
-না বাবা, এটা অন্য কেইজ।
-আমি কোন কেইজ টেইজ বুঝতে চাই না। তোর বিয়ে আগামী সপ্তাহেই দিতে চাই।
-আমি বিয়ে করবো না বাবা!
-ধুর, হারামজাদা! এমন কথা বলে নাহ।
বাবার আকুতিতে আর ঠিক থাকতে পারলাম না। অবশেষে বিয়ের জন্য রাজি হলাম। আসলো সেই স্বপ্নের বাসর। অনেক বন্ধুকে ইনভাইট করলাম। সব কিছু করতে করতে রাত প্রায় ২ টা বেজে গেল। আমার আত্মা ধুরু ধুরু কাঁপতেছিল। সাথে তেমন কিছু না নিলেও বেনসন এন্ড হ্যাজেজের একটা প্যাকেট নিলাম। কারণ আমার অনেক দিনের স্বপ্ন, আমি আর আমার স্ত্রী মিলে বাসর ঘরে বসে গল্প করবো আর সিগারেট টানবো। আমার রূপবতী বউ খাটের মাঝ খানে বসে আছে। মি সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরতে থাকি। এমন সময় বউ বলে উঠলো…
-এ্যাই এতো ঘুরঘুর করছো কেন? কাছে এসে ঘুমটা সরিয়ে দেখ ২ মিনিট। তারপর বাহিরে যাও। আমি ড্রেস চ্যাঞ্জ করবো। আমি বউয়ের কথা শুনে হতবাক। কি আর করার। বউ দেখছি দজ্জাল। ড্রেস চ্যাঞ্জ করার পর রুমে আসতেই দেখি, বউ আমার অন্য কারো সাথে কথা বলছে। জিজ্ঞাস করতেই বলল…এ আমার ফ্রেন্ড। এখন নিজের চুল নিজে টেনে ছিড়ছি। আগেই বলেছিলাম, আমি বিয়ে করবো না বাবা। এবারও সাহস করে বললাম, তোমার হাজব্যান্ড বড় নাকি ফ্রেন্ড বড়?
-ফ্রেন্ড বড়।
সত্যি এবার আমার ফ্যানের সাথে ঝুলতে ইচ্ছা করছে। বিয়ের কিছুদিন পর বউয়ের সাথে অমায়িক ব্যবহার করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করালাম তার ফ্রেন্ডকে আমাদের বাসায় দাওয়াত করে আনতে। বউ আমার মহা খুশি। আমি মনে মনে চিন্তা করি আর হাসি, তোর কপালে শনি আছে রে বউ। আর তোর বন্ধুর কথা বাদই দিলাম। তার কপালে তো শনির বলয়ের উপর রাহু ভর করে আছে। আজকে সেই দিন। আমার বউ অধির আগ্রহ নিয়ে তার বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছে। সাথে আমিও। ঠিক সেই সময় একজন মধ্যবয়সী মহিলা একটা বাচ্চাসহ প্রবেশ করলো আমাদের বাসায়। আমি ভাবলাম, হয়তো তারা ভূল করে ঢুকে পড়েছে। তাই তাদের বিদেয় করে দিতে চাচ্ছি। আমার বউ পিছন থেকে এসে মহিলাটাকে হাউমাউ করে জড়িয়ে ধরলো। আমি যেন কিছু বুঝতে পারছি না। পরে জানতে পারলাম, এই সেই বন্ধু। যার জন্য আমাকে পটল তুলার ধার প্রান্তে যেতে হয়েছে।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক