রমিজ মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে আজও একটা গাড়ি এসে থামলো।পাজেরো না টয়োটা, নাকি অডি রমিজ মিয়া জানে না।জানতেও চায় না।দেখতে ভাল্লাগে এতেই রমিজ মিয়া খুশি।গাড়িটা মাঝে মাঝেই রমিজ মিয়ার এই দোকানের সামনে এসে দাড়ায়।রমিজ মিয়া তাকায়।আস্তে করে গেইট খুলে তেইশ চব্বিশ বছর বয়সি একটা মেয়ে এসে সাহেদ ভাইয়ের খোজ করে।পেলে ধরে নিয়ে যায়,নইলে মন খারাপ করে একাই চলে যায়। অনু আজও রমিজ মিয়ার দোকানের সামনে গিয়ে দাড়ায়।এই দোকানটা অনুর বেশ পরিচিত।সাহেদকে আর কোথাও না পাওয়া গেলে এখানে ঠিকই পাওয়া যায়।অনু রমিজ মিয়ার সামনে দাড়াতেই লোকটা মুচকি হেসে বলে,
-আপামনি, সাহেদ ভাইজান তো আইজ আসে নাই। সাহেদের না আসাটা অনুর খুব একটা ভাল লাগলো না।অনু একটু চুপ থেকে রমিজ মিয়ার দিকে ঝুকে বললো,
-সাহেদ কি সত্যিই আসেনি? রমিজ মিয়া মুখে যথেষ্ট হাসি ভাব রেখে একটু অস্বস্তি ভাবেই বললো,
-জ্বে না আপা। রমিজ মিয়ার কথায় অনু এবার মুচকি হেসে রমিজ মিয়ার দিকে একটা কার্ড এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
-এটা আপনার ভাইজানকে দেবেন।
-কি এটা?
-আমার বিয়ের কার্ড।পহেলা জুলাই।রোজ বুধবার।আপনার ভাইজানকে অবশ্যই আসতে বলবেন। আর হ্যা,আমি চলে যাওয়ার পর আপনার ভাইজানকে দোকানের পেছন থেকে সামনে নিয়ে আসবেন। অনু আর দাড়ায় না।গাড়িতে চেপে বসতে বসতে দোকানের দিকে আরও একবার তাকায়।সাহেদকে একবার দেখতে পেলে মন্দ হতো না।অনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে।চোখদুটো ভিজে ওঠে।এ ছেলেটা কি আমাকে কখন ই বুঝবে না,কখনই না!
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সাহেদ রমিজ মিয়াকে নরম গলায় ডেকে ওঠে,
-চলে গেছে? মুচকি হেসে রমিজ মিয়া বলে,
-জ্বে ভাইজান।
রমিজ মিয়ার দোকানের পেছনে এই বেঞ্চটা সাহেদের বেশ ভাল লাগে।প্রকৃতির ঠান্ডা বাতাসে বসে তিন চার কাপ চা অনায়াসের শেষ করে ফেলা যায়।যেটা অনুর একদমই পছন্দ না।চা খাবে এক কাপ।সেটাও সীমিত আকারে।এক কাপে যে শান্তি পাওয়া যায় দশ কাপেও সেই একই শান্তি পাওয়া যায়।নাকি প্রতিকাপে চায়ের শ্বাদ ভিন্ন ভিন্ন হয়,অনু বুঝতে পারেনা।অনুর এই না বোঝার মাঝেও সাহেদ চায়ে চুমুক দেয়।সাহেদের এতেই শান্তি।এত শান্তিতেও সাহেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে।অনু ঠিকই তাকে দেখেছে।সামনে আসলে লজ্জা পেয়ে যাব, এটা ভেবেই মেয়েটা আসেনি।
চায়ের বিল দিয়ে সাহেদ আর দাড়ায় না।এসময় এখানে বসে থাকার কোন মানেই হয় না।ঘড়িতে এগারোটা বেজে ত্রিশ মিনিট।আজ আবার একটা ইন্টার্ভিউ আছে।দ্রুত যেতে হবে।দ্রুত।সাহেদ পা বাড়াতেই রমিজ মিয়া ডেকে ওঠে।ভাইজান। কিছু বলবে? আপায় একটা কার্ড দিয়া গেছে। কিসের কার্ড? আপার বিয়ার।পহেলা জুলাই।রোজ বুধবার।আপনাকে যেতে বলেছে। ও আচ্ছা।
-কার্ডটা নিবেন না?
সাহেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে।গরমে ঘেমে জবজব অবস্থা।সাহেদ পকেট থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললো, রেখে দাও। আজকাল সবকিছুতেই ভেজাল।সামান্য ঘাম মুছতেই টিস্যুটা ছিড়ে একাকার।প্রত্যেকটা টিস্যুতেই আবার বেশ সুবাস থাকে।কিন্তু আমি এই টিস্যুটাতে কোন সুবাস পাচ্ছি না।এটাতে স্পষ্টই অনুর শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ লেগে আছে প্রত্যেকের শরীরের একটা আলাদা ঘ্রান থাকে।অতি কাছের লোক ছাড়া এই ঘ্রান কেও পায় না।এই টিস্যুর প্যাকেটটা যেদিন অনু আমাকে দিল সেদিন ছিল শুক্রবার। আমি চায়ের কাপে চুমুক দিতেই অনুদের গাড়িটা আমার পাশে এসে থেমে গেলো।আজকের মত সেদিন পালানোর সময়টা যে পাইনি।অনু আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
-ফোন ধরো নি কেন?
অনুর কথায় আমি এমন ভাব করলাম যেন ফোনের ব্যাপারে আমি কিছু জানিই না।ফোনের শন্দ আমি শুনতেই পাইনি।অনু আমার চুপ থাকা দেখে আবারও বললো,
-সকালে খেয়েছো?
-হ্যা,অবশ্যই খেয়েছি।খাওয়া বরং একটু বেশিই হয়ে গেছে।দেখছো না আজ চা ও কম খাচ্ছি।
আমার কথায় অনু কিছু বললো না।চুপ করেই রইলো।মিথ্যে বলার সময় মানুষের গলা ধরে আসে,কথা আটকে আসে।কিন্তু আমার সেরকম কিছুই হলো না।মিথ্যেটা খুব স্বাভাবিক ভাবে বলতে পারাটা যেন আমার কাছে খুব একটা কঠিন কিছু নয়।অনু আমার দিকে এবার শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
-গাড়িতে ওঠো?
-গাড়িতে!কেন?
-উঠতে বলেছি।
-জানই তো গাড়িতে আমার বমি হয়।
-সমস্যা নেই।এই রিক্সা…
রিক্সাগুলা দিনদিন বেশ চাপা হয়ে যাচ্ছে।আগে যেখান দিয়ে দুটো রিক্সা যেতে পারতো এখন মনে হচ্ছে সেখান দিয়ে অনায়াসেই তিনটা রিক্সা চলে যাবে।এই চলে যাওয়ার মাঝেই অনু আমার দিকে না তাকিয়েই বেশ শান্ত গলায় বললো,
-চোখের ভাষা বুঝতে পারো?
-মাঝে মাঝে পারি।
-দেখোতো আমার চোখদুটো এখন কি বলছে? আমি অনুর চোখের দিকে না তাকিয়েই বললাম,
-সাহেদ সাহেব আপনি ধরা পড়ে গেছেন।গুছিয়ে মিথ্যে বললেও চোখের ভাষাটা তো পাল্টাতে পারেননি।
-মিথ্যে না বললেও পারতে।চোখের ভাষা কারা বুঝতে পারে জানো?
-না,জানিনা।
-ভালবাসলেই চোখের ভাষা বোঝা যায় না।এর জন্যে বোঝার চেষ্টা করতে হয়।যে চেষ্টা করে সেই বুঝতে পারে।
-আমরা কোথায় যাচ্ছি?
-রেস্টুরেন্টে।খাওয়া হয়নি, আজ তোমার সাথে খাব।ঘেমে যাচ্ছ।
কথাটি বলেই অনু আমার দিকে এক প্যাকেট টিস্যু এগিয়ে দিল।আমি অনুর দিকে আর তাকালাম না।ও যে চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টায় সফল এইটা আমি স্পষ্টভাবেই বুঝতে পারলাম।আজকাল মিথ্যেও বলতে চেষ্টা করছে।এই যে মাত্র বললো, খাওয়া হয়নি।এটা ঘোর মিথ্যে।ও না খেয়ে বাসা থেকে বের হয় না।বাইরের খাবারে সমস্যা।আমাকে লজ্জায় না ফেলতেই ও মিথ্যেটা বলেছে।আমার চোখ দেখে ও বুঝতে পেরেছে।খাওয়া হয়নি এখনও।মেয়েটা মাঝে মাঝেই এসব বুঝতে পারে।আজও হয়তো আমাকে দেখতে অবশ্যই বুঝতে পারতো।তাইতো অনুর সামনে দাড়াইনি।দাড়ালে আজও ধরে নিয়ে যেত।বসাতো কোন এক রেস্টুরেন্টে। যেটা আমার মোটেই ভাল লাগে না।তবে লুকিয়েও লাভ হয়নি।মেয়েটা বুঝতে পেরেছে আমি এখানেই আছি।শুধু দেখা করতে চাচ্ছি না।চাচ্ছি না। সাহেদ আর ভাবতে পারে না।এই গরমে হেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হুট করেই পাল্টে ফেলে।রিক্সা নিতে হবে।এই রিক্সা।
রেহানা বেগম আজ বেশ ব্যাস্ত।দাড়ানোর সময় নেই।বিয়ে বাড়িতে অবশ্য ব্যাস্ততা একটু থাকেই।তবে রেহানা বেগম আজ অধিক ব্যাস্ত।তার একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা।কোন কিছুতেই তিনি কমতি রাখতে চান না। বরযাত্রী তৈরি।বের হতে চেয়েও কেন যেন বের হচ্ছে না।রেহানা বেগম এখনও অনুমতি দেননি।বিয়ের দিন তিনি মেজাজ খারাপ করতে চান না।তবুও আজ তার রাগ হচ্ছে।সাহেদ ছেলেটা এখনও আসেনি।সবকিছুতেই দেড়ি রেহানা বেগমের একদমই সহ্য হয় না।ছেলেটাকে একবার ফোন করা যেতে পারে। ফোন করলে আবার বিয়েতে না যাওয়ার জন্যে কি ছুতো দেয় কে জানে।অবশ্য রেহানা বেগম এসবের ধার ধারে না।সে আসতে বলেছে,যাই হোক আসতেই হবে।সাহেদকে যখন বিয়ের কথা জানাই ছেলেটা আমাকে নরম গলায় বলে,
-খালা,আমার তো পেট খারাপ।তুমিই বলো অসুস্থ শরীর নিয়ে যাওয়াটা কি ঠিক হবে। রেহানা বেগম ভাগ্নের কথায় কি বলবে ভেবে পায় না।ছেলেটাকে সে যতটা বুদ্ধিমান ভেবেছিল আজ ঠিক ততটাই গাধা মনে হচ্ছে।রেহানা বেগম বেশ রাগি গলায় বললেন,
-বিয়ে আরও সাতদিন পর।তোর আজ পেট খারাপ।সাতদিন পর তো আর না।যেটা বলেছি সেটাই করবি।ঠিক সময়ে চলে আসবি।রাখছি আমি।
খালার কথায় সাহেদ আর কিছু বলতে পারে না।কিছু বলতেও চায় না।এসময় আত্বীয়স্বজন এড়িয়ে চলাই ভাল।নইলে সেই একই নিয়মে সবাই জ্ঞান দিতে থাকবে।চাকরী বাকরি কিছু করবে নাকি এরকম ভবাগুন্ড হয়েই কাটিয়ে দেবে।তাদের আরও কঠিন কঠিন তিক্ত কথা সাহেদ মনে করতে চায় না।যে খালা সাহেদকে এখন পর্যন্ত ও চালিয়ে নিচ্ছে তার কথা সাহেদ ফেলতে পারে না।ফেলতে পারবে না। সাহেদ গাড়ি থেকে নামতে নামতে আরও একবার বাড়িটার দিকে তাকালো।তিন তলা বাড়িটা যেন ফুলে একদম ছেয়ে গেছে।ঢেকে গেছে দেয়ালের বাহারি রঙ।সাহেদ একটু এগিয়ে যেতেই অষ্টাদশী এক মেয়ে সাহেদকে আটকে দেয়।মুচকি হেসে বলে,
-এই যে মিস্টার ভেতরে যাওয়া যাবে না।সাহেদ একটু চুপ থেকে বলে,
-তাহলে কি চলে যাব?
-উহু,অপেক্ষা করুন।বর গেইটের টাকা দিলেই ঢুকতে পারবেন।
মেয়েটার কথায় সাহেদ আর কিছু বলে না।ততক্ষনে নিয়ন সাহেদের পাশে এসে দাড়িয়েছে।সাহেদ চুপ থাকলেও নিয়ন চুপ থাকতে পারে না।আস্তে করে বলে,
-আচ্ছা ভাইয়া,তোমার কি মনে হয় এরা তোমাকে ভেতরে ঢুকতে দেবে? নিয়নের কথায় সাহেদ শান্ত চোখেই তাকায়।মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,
-আমি ভেতরে গেলেই কিন্তু বিয়েটা হয়ে যাচ্ছে না।এর জন্যে বর দরকার।আপনি বরং টাকা না দিলে বরকে আটকে রাখেন।বেধেও রাখতে পারেন।ওই যে আম গাছটা আছে না,ওটার সাথে শক্ত করে বাধলেও কোন সমস্যা নেই।এভাবে আমাকে আটকে রেখে তো কিছু পাওয়া যাবে না। সাহেদের কথায় মেয়েটা কেমন যেন চনমনে থেকে ভাবুক হয়ে উঠলো।হয়তো কথায় কাজ হয়েছে।হলেই ভাল। সাহেদ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বসতে নিয়নের দিকে আরও একবার তাকায়।ছেলেটা এর মাঝেই গেইটে লাগানো গোলাপ তুলে ফেলেছে।আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আমার দিকে আসতে আসতে বললো,
-ভাইয়া এটা তোমার জন্যে। সাহেদ বললো,
-এটা দিয়ে আমি কি করবো?তুই বরং বরকে নিয়ে দে।তার বউ কে দিতে পারবে।
-কেন?তুমিও তো ভাবিকে দিতে পারো।
নিয়নের কথায় সাহেদ কিছু বলে না।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিয়নের দিকে তাকায়।গোলাপটা নিতে নিতে বলে, আজ পহেলা জুলাই।তোর ভাবির বিয়ে। সাহেদের কথায় ক্লাস ফাইভে পড়া পিচ্চিটা কি বুঝলো বোঝা গেলো না।তবে ওর হাসিমাখা মুখ মলিন হয়ে গেলো।গেইটেই দিক থেকে বেশ শোরগোল শোনা যাচ্ছে।একপক্ষ অধিক টাকা নেওয়ার প্লান করছে আর অন্যপক্ষ টাকা বাচানোর।এত প্লানের মাঝেও একপক্ষ হেরে যাবে।তাদের অধিক টাকা দিয়েই ভেতরে ঢুকতে হবে।বলা যায়,হার দিয়ে শুরু।সামনের দিনগুলাতে শুধু হেরে যেতেই হবে।এই হেরে যাওয়ার মাঝে নিয়ন আবারও প্রশ্ন করে, ভাইয়া তোমার কি মনে হয় এই বিয়েটা হবে?
-অবশ্যই হবে।যে বিয়েতে এত টাকা খরচ করা হয় সে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
-তারমানে তুমি বলছো, খরচ করেছে বলেই বিয়েটা হবে।না করলে হতো না। নিয়নের কথায় সাহেদ মুচকি হাসে।ছেলেটা এই বয়সেও বেশ ভারি ভারি প্রশ্ন করে ফেলে।সাহেদ একটু চুপ থেকে বলে,
-কোথাও দেখেছিস বিয়ে বাড়ি থেকে কনে পালিয়ে যায়?যায় না।যারা পালায় তারা বিয়ের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে না।সেসব বাড়িতে এত আয়োজন ও হয় না।ছেলেপক্ষ দেখতে আসে।পছন্দ হয়।তার পরের দিনই মেয়ে পালিয়ে যায়।বিয়ের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা তাদের সাহসে কুলোয় না।
-তাহলে ভাবিকে নিয়ে তুমি পালাও নি কেন? সাহেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-পালানোর জন্যে যে সাহসটা লাগে সেটা আমার নেই।হয়তো তোর ভাবিরও ছিল না।সেও পালাতে চায়নি।তাছাড়া বেকার ছেলেদের সাথে কেও পালায় না।কথাটা পুরোটা না,আংশিক সত্য। নিয়নের সাহেদের দিকে আরও একটু চেপে বসতে বসতে বলে,
-আংশিক সত্য কেন?
নিয়নের প্রশ্নের উত্তর আর দেওয়া যায় না।গেইটে মেয়েপক্ষ জয়ী হয়ে আনন্দ মিছিলে বরকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে।খাবার টেবিলে খাবার পরিবেশন শুরু হয়ে গেছে।এসময় দেড়ি করা একদম ই উচিত নয়। ভেবেছিলাম তুমি কার্ডটা খুলে দেখবে না।কিন্তু দেখেছো মনে হচ্ছে। সাহেদ রোস্টে আর হাত বাড়ায় না।সামনের দিকে তাকায়।লাল খয়েরী মিক্সড শাড়িতে একটা রূপবতী কন্যা দাড়িয়ে আছে।অবশ্য সাহেদের এতে কোন মাথা ব্যাথা নেই।বিয়ে বাড়িতে সবাইকেই সুন্দর লাগে।এখানে বিয়েটা কার হচ্ছে সেটা বের করাই মুশকিল হয়ে পড়ে।কিন্তু সাহেদের সামনে যে মেয়েটা দাড়িয়ে আছে তাকে বিয়ে বাড়ি ছাড়াও সুন্দর লাগে।সাহেদ অনুর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারে না।গলা আটকে আসে।কাপা গলায় বলে,
-আমি কার্ডটা খুলিনি।সেটা রমিজ মিয়ার কাছেই রয়ে গেছে।
-তাহলে এখানে কিভাবে?জানলে কিভাবে আজ বিয়েটা এখানে হচ্ছে? অনুর কথায় সাহেদ উঠে দাড়ায়।আশেপাশের লোকজন আড়চোখে তাকানো শুরু করেছে প্রায়।এরা কখন কি ভেবে ফেলে বলাও মুশকিল।তাছাড়া বিয়ের দিন কনে যদি নিজে এসে কোন অপরিচিত ছেলের সাথে কথা বলে সেটা মোটেই কারও কাছে ভাল দেখাবে না।হাটতে হাটতে সাহেদ গেইটের সামনে এসে দাড়ায়।আস্তে করে বলে,
-এ বাড়িটার থেকে তোমাদের বাড়িটাই কিন্তু সুন্দর ছিল।বিয়েটা সেখানে হলেও মন্দ হতো না।
-সেটা অবশ্য মন্দ বলোনি।তবে আজকাল দেখি বেশ রাত জাগো।রাত জেগে এর ওর বাসার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকো। এটা কি ঠিক?
-না,ভুল।আজ থেকে আর থাকবো না।
-বললে না তো, এখানে আসলে কিভাবে?
-বর আমার খালাতো ভাই হয়।আমি আসতে চাইনি।খালা জোর করে পাঠিয়েছেন। সাহেদের কথায় অনু মুখ লুকিয়ে হাসে।কেমন সহজ স্বীকারোক্তি।অনু সাহেদের দিকে একটু ঝুকে এসে বলে,
-বিয়েটা আমার না,আমার ফুফাতো বোন বাবলীর।তোমাকে যতটা বোকা ভেবেছিলাম তুমি তার থেকেও অধিক বোকা সাহেদ।অধিক বোকা। সাহেদ অনুর কথায় কিছু বলতে পারে না।ওর গলা আরও ভারী হয়ে আসে।ভারী গলায় বলে,
-কিন্তু রমিজ মিয়া যে বললো অনু মুচকি হাসে।মুচকি হেসে বলে,
-আমি যেটা বলেছি সেও সেটাই বলেছে।কি ভেবেছেন সাহেদ সাহেব,এত সহজেই আপনাকে ছেড়ে দেবো।উহু,মোটেই না।আপনার চাকরীটা হোক,এর চেয়েও ধুমধাম করে আমাদের বিয়ে হবে।যাও এবার খাওয়া শেষ করো।আমি দেখি এদিকটা। অনু আর দাড়ায় না।ভেতরের দিকে যায়।সাহেদ আস্তে করেই ডেকে ওঠে,
-অনু।
-কিছু বলবে।
-আমার চাকরীটা হয়ে গেছে।
সাহেদের কথায় অনু কিছু বলতে পারে না।চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।এতদিনের চাপা কষ্ট যেন আজ একটা দীর্ঘশ্বাসেই বেরিয়ে যায়।দু দিকের দুজনের মুখেই হাসি।আবার চোখ ভিজে একাকার।এ যেন এক হাসি কান্নার অনুষ্ঠান।হাসি কান্নার মিলনমেলা।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক