শাস্তি

শাস্তি
আমার প্রাক্তন আমাকে অভিশাপ দিয়েছিল। বাসর রাতে আমি আমার বউকে স্পর্শ করতে পারবো না। তাঁর কথা সত্যি হয়েছে। বউ আমাকে স্পর্শ করতে দিবে তো দূরের কথা ঘরেই থাকতে দেয়নি। বাহিরে বের করে দিয়েছে। সে নাকি সিগারেট খাবে,কারো সামনে সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস তাঁর নেই। খাওয়া শেষ হলে নিচে এসে শুয়ে পড়তে বলেছে। বাধ্য হয়েই বাহিরে চলে আসলাম।
বউ ঘরে বসে দিব্যি সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে আর আমি বাহিরে বসে মশার কামড় খেয়ে যাচ্ছি। এই দুঃখ ভারাক্রান্ত রাতে কেনো জানি তানিয়ার কথা খুব মনে পড়ছে আজ। তানিয়াকে দেখেছিলাম কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে। সূর্য যখন ডুবি ডুবি অবস্থা তখন কদম ফুল হাতে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রমণীকে আমি দেখেছিলাম। যাকে দেখেই প্রেম নামক কুসংস্কারটা আমার মনের মধ্যে নাড়া দিয়ে উঠেছিল। অনেক ভালোবাসতো মেয়েটা আমাকে। দুই বছর তাঁর সাথে সম্পর্ক ছিলো। হঠাৎ করেই একদিন এসে বলল আমাকে নাকি তাঁর ভালো লাগেনা। তাই সে সম্পর্ক রাখতে চায়না। আমিও বেশি কিছু না বলে দুচোখ ভরা জ্বল নিয়ে চলে এসেছিলাম। পরে আর পিছু ফিরে চাইনি।
ঘরে ঢুকেই দেখি বউ ঘুমিয়ে পড়েছে। বউ হয়তো ভূলেই গিয়েছে আজকে তাঁর বাসর রাত। এই রাতে স্বামী, স্ত্রী খুব গভীরে চলে যায়। কিন্তু আমার পোড়া কপাল আমি আমার বউকে ছুঁয়েও দেখতে পারলাম না। বিছানা না করেই ফ্লোরে শুয়ে পড়ি। সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি বউ আমার দিকে খুব ভয়ংকর বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি লুঙ্গী ঠিক করে উঠে বসলাম। “আমি চা খাবো।” এই ভোর সকালে চা বানিয়ে বউকে খাওয়াতে হবে। সেই বউ যে বাসর রাতে স্বামীকে মশার কামড় খাইয়েছে,স্পর্শ করতে দেয়নি। নিচে ঘুমাতে বাধ্য করেছে। আমার অনেক ছোট থেকেই খুব ইচ্ছে ছিলো আমি বউ পাগল হবো। বউকে রান্না করে দিবো,কাপড় কেচে দিবো। সবকিছুই করে দিবো। তাই দেরি না করে দুই কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসলাম।
ভেবেছিলাম চা খাবো আর দুজনে গল্প করবো। কিন্তু সেটা আর হলোনা। তাঁর জন্য তাঁর স্বামী যে এতো কষ্ট করে চা বানিয়ে নিয়ে এসেছে এদিকে তাঁর কোনো খেয়াল নেই। সে খুব মনোযোগ দিয়ে চায়ের কাপে ঠোট লাগাচ্ছে আর কি যেনো ভাবছে। আমি রাগ করে অফিসে চলে যাই। অফিসে যাওয়ার পরই সবাই জিগ্যেস করলো,বিড়াল কেমন মারলাম। সবারই এক কথা। একজন বুড়ো চাচাও বলল বিড়াল কেমন মারলা বাবাজি। বাধ্য হয়ে বিরক্তি নিয়ে হাসিমুখে উত্তর দিলাম। বিড়ালটা খুব শক্তিশালী। একদিনে মারা সম্ভবনা, সময় লাগবে। তবে খুব তাড়াতাড়িই যেনো মেরে ফেলতে পারি। সেজন্য দোয়া করবেন। রাতে যখন বাসায় আসলাম বউ দেখি প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়ে শুয়ে আছে। কতো স্বপ্ন দেখেছি বউ শাড়ি পড়ে ঘুমাবে। আমি তাঁর শাড়ির আঁচলের নিচে মুখ লুকিয়ে ঘুমাবো। আর মেয়ে কিনা এমন পোশাক পড়ছে যা দেখলে আর রোমান্টিক হওয়ার ইচ্ছে থাকেনা। আজকেও নিচে ঘুমাতে হলো।
এভাবে প্রায় সাতদিন পর বউকে স্পর্শ করতে পারি। ওই রাতেই আমরা খুব গভীরে চলে যাই। আস্তে আস্তে আমরা খুব ভালোবাসায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। একসময় অনুভব করলাম আমার বউটা আমাকে খুব বেশি ভালোবাসে। প্রতিদিন দুপুরে আমাকে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিতো আমি বাসায় আসবো কিনা,খেয়েছি কিনা। রাতেও আমার জন্য খুব ভালোবাসা নিয়ে বসে থাকতো। আমি তখন ভালোবাসার অভাব বোধ করতাম না। একদিন দুপুরে বউ ফোন দিয়ে জিগ্যেস করলো আমি কি বাসায় খাবো নাকি অফিসেই লাঞ্চ করবো। অফিসে কাজ থাকার কারণে না বলে দেই। কিন্তু তাঁর কিছুক্ষণ পর জানতে পারি কাজ নেই। দুই ঘন্টা আমি ফ্রী। তাই ভাবলাম বাসায় গিয়ে লাঞ্চ করি। ভাবলাম বউকে সারপ্রাইজ দিবো। তাই ফোন না করেই বাসায় চলে যাই। গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতরে যাবো। কিন্তু অবাক হলাম যখন আমার বউকে একটা সিনএনজিতে উঠতে দেখলাম। আমি আর বাসায় গেলাম না,দেরি না করে আমি তাকে অনুসরণ করতে থাকলাম।
প্রায় ত্রিশ মিনিট তাকে ফলো করার পর সে সিনএনজি থেকে নেমে পড়লো। আমিও নেমে পড়লাম। তার পাঁচ মিনিট পর একটা কালো মাইক্রো এসে তাঁর সামনে থামলো। তারপর আমি যা দেখলাম সেটা নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারলাম না। মাইক্রোর ভিতর থেকে দুইটা সুদর্শন হাত আমার বউকে জড়িয়ে ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো। আমি শুধু অবাক চোখে মাইক্রোটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মাইক্রো টা তখন আমার থেকে খুব দূরে চলে গিয়েছে।
আজ আর অফিসে গেলাম না। বাসায় গিয়ে নিজেই রান্না করে খেয়ে নিবো। তাই বাজার থেকে কিছু সবজি কিনলাম। সাথে একটা ধারালো চাকুও নিলাম। কারণ সবজি কাটার চাকুটা খুব পরানো হয়ে গেছে। ধার একেবারে নেই বললেই চলে। সন্ধ্যার দিকে আমার বউ ফিরে যখন আমাকে দেখলো তখন তাঁর চোখে মুখে ভয় লক্ষ্য করলাম। হয়তো সে আমাকে এখন বাসায় দেখতে পাবে কখনো ভাবেনি। তুমি নয়টার আগে কখনো বাসায় আসোনা। আজ এতো আগেই? কেনো? তুমি কি আমাকে আগে অাশা করোনি? না ওরকম কিছুনা। আমি ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি।
গোসল করে নিও একবারে। বাহিরে ডিনার করবো আজকে। আমি সবজি কাটছিলাম এমন সময় আমার বউ আমাকে বলল।তুমি না বললে,আজকে বাহিরে খাবো আমরা।তাহলে সবজি কাটছো কেনো? চাকুটা নতুন কিনেছি। দেখছি কিরকম। ধার আছে নাকি।তা কেমন দেখলে? খুব ধারালো,মনে হচ্ছে মানুষ খুন করা যাবে। রুমের ভিতরে একটা ছায়ার মতো কোনো কিছু অনুভব করলাম। কিন্তু দরজাতো ভিতর থেকে লক করা। তাহলে ছায়াটা কার? বাহির থেকে তো কেউ ভিতরে প্রবেশ করতেই পারবেনা। ছায়াটা আমার বউয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমিও এগিয়ে যাই। তারপর আমার কিছু মনে নেই। নিজেকে একটা পরিত্যক্ত রাস্তায় আবিষ্কার করি। আমার মাথা দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হয়েছে। আমি শুধু বুঝতে পারছি আমি বেঁচে আছি এখনো।
অতঃপর আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় একমাস পর আমি সুস্থ্য হয়ে উঠি। এই একমাসে আমি আমার স্ত্রীর কথা জানতে চেয়েছি কিন্তু কেউ আমাকে কিছু বলেনি। যেদিন সুস্থ্য হলাম সেদিনই একজন পুলিশ আমার সাথে দেখা করতে আসল। আমরা আপনাকে আর আপনার স্ত্রীকে একটা অব্যবহৃত রাস্তায় পেয়েছি। আপনি কোনোমতে বেঁচে গেলেও আপনার স্ত্রী আগেই মারা গিয়েছিল। আপনার স্ত্রী কে খুব নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে তাঁর হাত,পায়ের নখগুলো তুলে ফেলা হয়েছে। স্তন দুটো কেটে ফেলা হয়েছে। চোখ দুটো তুলে ফেলা হয়েছে। আর এসবই করা হয়েছে জীবিত থাকা অবস্থায়।এরকম একটা খুন করা হয়েছিল ছয় মাস আগে। তানিয়া নামের একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গিয়েছিল কোনো পরিত্যক্ত জায়গায়।
আপনার স্ত্রীর সাথে তানিয়া নামের মেয়েটার খুনের অনেক মিল আছে। আমাদের বিশ্বাস দুজনের খুনি একজনই হবে। খুনি অবশ্যই সাইকো। না হলে এতো নির্মমভাবে কাউকে হত্যা করতে পারতো না। আপনি সাবধানে থাকবেন। আর হ্যাঁ কোনো প্রয়োজন হলে অবশ্যই আমাদের কে জানাবেন। আমি মাথা নাড়ি। অবশ্যই, অবশ্যই আমি যেকনো মূল্যে আমার স্ত্রীর খুনির শাস্তি চাই। হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়ে খুশি মনে বাসায় যাচ্ছি। আর ওই নীল আকাশটার দিকে মুগ্ধতা নিয়ে বার বার তাকাচ্ছি আর হাসছি।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত