পৃথিবীর বিচার

পৃথিবীর বিচার
বাড়িতে আসার পর থেকেই খেয়াল করছি ভাইয়া যখনই একটু ভাবির কাজে সাহায্য করে ঠিক তখনই আব্বু আম্মু ভাইয়াকে আরেকটা কাজ দিয়ে বসে।
~ভাবিকে খুব একটা পছন্দ করে বলে আমার মনে হয় না।কেন জানি ভাবিকে আব্বু আম্মু আড় চোখেই দেখে।বাড়ির সমস্থ কাজ ভাবিই করে।তাও কি কারনে ভাবিকে দেখতে পারে না তা আমার বোধগম্য নয়!
–একদিন ভাবি অসুস্থ থাকার কারনে সারাদিন ভাইয়া ভাবির সাথেই ছিল।যাতে ভাবির কষ্ট টা একটু কম হয়।এ জন্য ভাইয়াকে অনেক কথা শুনতে হয়।খুব আদরের বউ,মানুষের বুঝি এমন বউ নেই।জমিদারের মেয়েকে বউ করে নিয়ে আসছি! দোকান রেখে সারাদিন বউয়ের সাথে কি?ভাইয়া কিছু না বলে দোকান চলে গিয়েছিল।আর ভাবির নিরবে চোখের পানি ফেলানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
~হঠাৎ করে একদিন ভাইয়া আম্মুকে বলল মা তোমার বউমা প্রেগন্যান্ট,ওর কাজে আমাকে একটু সময় দিতে হবে।কিন্তু মা বলল,আমরা তো আছি,আমরাই সময় দিবো।তোকে থাকতে হবে না।
–আজ ভাবির প্রচন্ড পেট ব্যাথা করছে।ভাইয়া এসে আম্মুকে বলল, মা তোমার বউমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
~মা বলল, লাগবে না।বাড়িতেই লোক ঠিক করা হয়েছে।ভাইয়াকে এক রকম ধমক দিয়েই সেদিন দোকানে পাঠানো হয়েছিল।সেদিন বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারলেও ভাবিকে আর বাঁচানো যায়নি।নারি কাটার এক ভুলের কারনে ভাবির সেদিন মৃত্যু হয়েছিল। ভাইয়া আম্মুর উপর সেদিন ই প্রথম রাগ হয়েছিল ও বাচ্চাটাকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল।সেদিনের পর থেকে ভাইয়া আর বাড়িতে আসেনি।
–ভাইয়া চলে যাওয়ার আজ এক বছর হচ্ছে।আমি আর নিলা তখন লাইব্রেরীতে বসে বই পড়ছিলাম।নিলা একটা উপন্যাস পড়ছিল আর আমি আরিফ আজাদের প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ এর ২য় খন্ড বইটা পড়ছিলাম।নাস্তিকদের ইসলাম বিদ্বেষী প্রশ্নগুলোর জবাব এত সুন্দর ভাবে দিয়েছেন যা পড়ে আমি অবাক হচ্ছি। এমন সময় আম্মুর ফোন-
~হ্যালো আম্মু;
–তোর আপু অসুস্থ।তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।তোর আপুর বাসায় যাব।
~আমি আর কথা না বলে নিলাকে রেখে বাসায় চলে আসি।
–আমি আর আম্মু আপুর বাসায় যায়।আমরা যাওয়ার পর দেখি আপু শুয়ে আছে।আপুকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম হটাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।আম্মু আপুকে বলল, জামাই কই?ডাক্তারের কাছে যাইতিস!আপু বলল,তোমার জামায় আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইছিল।কিন্তু শাশুড়ি আম্মা বলল,এমনি শুয়ে থাকলেই ভালো হয়ে যাবে,তুই তোর কাজে যা।শাশুড়ি আম্মার কথা না ফেলতে পেরে তোমার জামায় একদিনের জন্য শহরে গেছে।কাল চলে আসবে।কিন্তু সেই রাতেই আপু মারা যায় স্ট্রোকের কারনে।
~আম্মু সেদিন প্রচুর গালিগালাজ করে দুলাভাইকে।দুলা ভাইয়ের জন্যই নাকি আপুর মৃত্যু হল।
–সেদিন আর আমি চুপ থাকতে পারিনি। প্রচন্ড রাগ হয়ে ছিল আম্মুর উপর। আম্মুকে বললাম,ঠিক একই কারনে আজ থেকে এক বছর আগে ভাবিরও মৃত্যু হয়েছিল।তোমার জন্যই সেদিন ভাইয়া ভাবিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেনি।হয়ত সেদিন ভাবিরও মৃত্যু হত না।তোমরা যারা শাশুড়ি আম্মা,তারা ছেলের বউকে নিজের মেয়ে হিসাবে দেখলে আজকে কাউকেই মরতে হত না।পরিবারে এত অশান্তিও হত না।একটা কথা শুনে রাখ,পৃথিবী খুবই সুক্ষ্ম বিচার করে। পৃথিবী কাউকে ছাড় দেয় না,তুমি যেমন ব্যবহার করবে পৃথিবী তোমাকে তাই একদিন ফেরত দিবে।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত