বাবাকে কেউ আংকেল বলে ডাকে?? আজ আম্মু আমাকে খুব বকা দিয়েছে বাবাকে আংকেল বলে ডেকেছি তাই! কিন্তু আমি তো আম্মুকে বলতে পারছি না তোমার স্বামী আমাকে বলেছে আমি যেন তাকে আর কখনও বাবা বলে না ডাকি! এখন থেকে অংকেল বলতে বলেছে।
গত ১২ বছর ধরে যাকে বাবা বলে জানি কিছুদিন আগে জানতে পারলাম সে নাকি আমার আপন বাবা না। আমার মায়ের দ্বিতীয় স্বামী আমার সৎ বাবা হয়। আমি তো তাকে ছোটবেলা থেকে বাবা বলে জেনে এসেছি তাই কথাটা শোনার পরে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। বাবা কেমন করে তাকিয়ে থাকত মনে হয় এখনি ওনার চোখ দুটো বের হয়ে যাবে। প্রথম প্রথম আমি বুঝতাম না উনি এভাবে তাকিয়ে থাকে কেন..! গত এক মাস ধরে বাবা আমাকে প্রতিদিন ব্যথা দেয়। মা যখন বাসায় থাকে না তখন বাবা তার রুমে আমাকে ডাকে আমি না গেলে উনি নিজেই আমার রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। ভয়ে আমি কাঁপতে থাকি ঘামে আমার জানা কাপড় ভিজে যায়। আমাকে দেখে ওই খারাপ মানুষটা কুৎসিতভাবে দাঁত বের করে হাসতে থাকে আর বলে…
–হুজুরের কাছ থেকে যাইনা আসছি … হাস মুরগি, গরু ছাগল পাইলা বড় করার পর তার দুধ ডিম খাওয়া হালাল কিনা। হুজুরে কইছে ১০০% হালাল আমি র্নিরদ্বিধায় খাইতে পারমু।
তোরেও ছোটকাল থেকে টাকা খরচ করে নিজের হাতে পাইলা লাইলা বড় করছি। কষ্ট করছি আমি আর ফল খাইবো অন্য জনে..? তোরে ভোগ করাও হালাল আমার কোন পাপ হবেনা। মাস খানেক আগে, দিনটি ছিল শনিবার। বাবার অফিস বন্ধ। মা দিপ্তকে নিয়ে স্কুলে চলে যায়। দিপ্ত আমার ছোট ভাই। বাসায় শুধু আমি আর বাবা ছিলাম। মা বাসা থেকে বের হবার পরে বাবা আমাকে তার রুমে ডাকে। আমি রুমে যাবার পর বলে দিশা এদিকে আয় আমার মাথাটা খুব যন্ত্রণা করছে একটু টিপেদে। আমি মাথার পাশে বসে মাথা ম্যাসেজ করতে থাকি। হঠাৎ করেই আমার বুকের উপরে স্পর্শ করে আমি কোন কিছু না বোঝার আগে বাবা আমার গায়ের থেকে ওড়নাটা টান দিয়ে খুলে ফেলে ।
আমাকে জাপটে ধরে সমস্ত শরীরে হাত বুলাতে থাকে। আমি বাবাকে সরি আমার সৎ বাবাকে ছড়ানোর অনেক চেস্টা করি কিন্তু ওনার শক্তির সাথে পেরে উঠিনি। কান্না করে কত বলেছি বাবা এগুলো কি করছো তুমি, বাবা আমাকে ছেড়ে দাও আমি না তোমার সন্তান। পা ধরে কত কেঁদেছি কিন্তু ওই জানোয়ারটার মন গলাতে পারিনি। নিজেকে বাঁচতে পারিনি জানোয়ারটার হাত থেকে। আমার গলায় ছুরি ধরে ভয় দেখিয়ে বলেছিলো আমি যেনো কাউকে কিছু না বলি। কাউকে কোন কিছু বললে মাকে আর আমাকে খুন করে ফেলবে। মাকে যদি সত্যি মেরে ফেলে সেই ভয়ে আমি কাউকে কিছু বলতে পারিনি। ওই দিনের পর থেকে পশুটার লালসার শিকার হতে হয়। প্রতিদিন আমাকে জোর করে ধর্ষন করে। দিপ্তর স্কুল সকাল ৭.৩০। মা দিপ্তকে নিয়ে সকাল ৭ বাসা থেকে বের হয়ে যায়। মা যাবার পরেই পশুটা আমার উপর হায়নার মত ঝাপিয়ে পড়ে।
আমি ঠিক মত স্কুলে যেতে পারিনা শরীরে প্রচন্ড পেইন থাকে। প্রেগন্যান্সি রোধ করার জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ মেডিসিন ইনকাম ওয়ান খাওয়ায়। মাঝে মাঝে পেইন কিলার খাইয়ে অত্যাচার করতে থাকে। আর না আজ মাকে সব বলে দেবো। পশুটা আমাকে ডাকছে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছি। মা বাসায় আসার পর এতদিন যা কিছু ঘটেছে মাকে সব কিছু বলে দিয়েছি। আমি মাকে জড়িয়ে ধরে আছি মা নিস্তব্ধ হয়ে আছে মুখে কোন ভাষা নেই। সারাজীবন অন্যায় সহ্য করতে করতে মা মনে হয় প্রতিবাদের ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে। ঐ লোকাটার সাথে মা খুব স্বাভাবিক আচরন করছে একটা ও টু শব্দ করেনি। মা এমন ভাব করতেছে যেন এ বাড়িতে কিছুই ঘটেনি। খুব কষ্ট হচ্ছে মায়ের কান্ড দেখে। মা রাতে এসে বলে গেছে ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখতে সকালে নানা এসে আমাকে নিয়ে যাবে। মায়ের উপরে খুব রাগ হচ্ছে। নানা এসেছে আমাকে নিয়ে যাবার জন্য। যাবার সময় মায়ের সাথে একটাও কথা বলিনি। মাও আমার সাথে কোন কথা বলিনি শুধু শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে ছিল। আসার সময় মা হাতের মধ্যে একটা চিঠি গুজে দিয়েছে। পড়বো মায়ের চিঠি।
এত কিছু হবার পরে কেন মা ওই লোকটার সংসারে পড়ে আছে। মা আমার থেকে ওই লোকটাকে বেশি ভালোবাসে। আমার কেউ নাই এখন থেকে আমি এতিম। এক সপ্তাহ হলো নানার বাড়ি এসেছি। মা প্রতিদিনি নানার কাছে ফোন দিয়ে আমার খোঁজ খবর নিয়েছে। মাকে খুব মনে পড়ছে সব রাগ অভিমান ভেঙে মায়ের লেখা চিঠিটা পড়া শুরু করলাম। আমার কলিজা, খুব রাগ হচ্ছে মায়ের উপর, রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। ইচ্ছে করলেই মানুষ সব কিছু করতে পারে না। আমি যখন ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেই তখন আমার বয়স ছিলো মাত্র ষোলো বছর। খুবি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছি। টাকার লোভে পড়ে ভাইরা আমার থেকে তিনগুন বয়সে বড় লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। বাবা বাঁধা দিয়েছিলো কিন্তু কোন কাজ হয়নি কারণ বাবা ঠিকমত সংসার চালাতে পারত না ভাইদের উপরে নির্ভরশীল ছিলো । আমার বান্ধুবিরা সবাই যখন বই, খাতা, কলেজ নিয়ে ব্যস্ত আমি তখন হাড়ি, পাতিল, সংসার নিয়ে ব্যস্ত। খুব ইচ্ছা ছিলো লেখাপড়া করার কিন্তু তা আর হয়নি। বিয়ের দুই মাস পরে তুই আমার পেটে আসো আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।
তোর জন্মের চার মাসের মাথায় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তোর বাবা আমাকে তালাক দেয়। আমি নাকি তার কোন চাহিদা পুরোন করতে পারি না। হয়ে গেলাম বাপ ভাইয়ের সংসারের বোঝা। ভাইরা বোঝা সরানোর জন্য উঠেপড়ে লাগলো। কোন খোঁজ খবর ছাড়ায়ি আবারো আমার বিয়ে ঠিক করলো তখন তোর বয়স এক বছর পাঁচ মাস। আমার কোন মতামতের প্রয়োজন মনে করলো না। বিয়ের কিছুদিন পর বুঝতে পারি দিপ্তর বাবা একটা চরিত্রহীন ওনার জন্য বাসাতে কোন কাজের লোক রাখতে পারিনা। এক দুই মাসের মধ্যে কাজের মেয়েরা কাজ ছেড়ে দিয়ে বাসা থেকে চলে যেত। আমাকে বিয়ে করার আগেও ওই লোকাটা আরো দুইটা বিয়ে করে ছিলো কিন্তু কোন বউ ওনার সাথে সংসার করেনি। আমি জানি আমি যদি বাবার বাড়ি চলে যাই আমার ভাইরা জোড় করে দিয়ে যাবে। তাই নিজের সম্মান রক্ষা করার জন্য নিরুপায় হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে এতকাল সংসার করে আসছি। কিন্তু, চরিত্রহীন লোকটা এত্ত নিচে নামবে আমি কল্পনাও করিনি। ভেবেছি সৎ হোক আর যাই হোক বাবাতো।কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম পর কখন ও আপান হয় না। উনি কখন ও তোকে মেয়ের চোখে দেখেন নি।
একজন মা চাইলেই অনেক কিছু করতে পারে না। পারে না কোন হুটহাট সিদ্ধান্ত নিতে। আমি চাইলে দিপ্তর বাবাকে ডিভোর্স দিতে পারতাম কিন্তু তারপর কোথায় যাবো তোদের নিয়ে? আমার যে যাবার কোন জায়গা নেই। অল্প পড়ালেখা জানি শিক্ষাগত যোগ্যতা নাই যে চাকরি করব। গরিব বাবা-মায়ের সন্তান অঢেল সম্পতি নেই যে বাবা-মা আমাদের ভার বহন করতে পারবে তারা দিনা আনে দিন খায় আমি প্রতিমাসে টাকা পাঠাতাম। বাবার সংসার চালাতাম । আর ভাইরা কখন এতগুলো মানুষের খরচ বহন করবে না খুব বেশি হলে দুবেলা খাইয়ে বাসা থেকে বের করে দেবে। তোদের নিয়ে আমার রাস্তায় নামতে হবে বস্তিতেও থাকার জায়গা হবে না,আমাদের মাথা গোজার কোন জায়গা নাই । এক হায়নার কাছ থেকে বাঁচাতে গিয়ে হাজার হায়নার কাছ থেকে কিভাবে রক্ষা করবো। ওরা শকুনের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে। আমি খুব ভিতু মানুষ কোনদিন প্রতিবাদ করতে পারিনি যে যখন যা বলেছে তাই মেনে নিয়েছি। প্রতিবাদ না করতে করতে প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। মারে আমাকে মাফ করে দিস আমি তোর অযোগ্য মা। না হলে কেউ জেনেও নিজের মেয়ের ধর্ষণকারির সাথে সংসার করে…? কি করব বল..?? আমি যে নিরুপায়।
এই জঘন্য ঘটনা কাউকে কখনও বলবিনা তাহলে সবাই তোর অসহত্যের সুযোগ নেবে । এই পৃথিবীর মানুষগুলা খুব খারাপ। আমি তোর নানার কাছে প্রতিমাসে তোর সমস্ত খরচ পাঠিয়ে দেবো। তোকে অনেক বড় হতে হবে মাথা উচু করে দাঁড়াতে হবে। আমি যা পারিনি তোকে তা পেরে দেখাতে হবে। কখনো কোন অন্যায় মেনে নিবি না। যেখানে অন্যায় দেখবি প্রতিবাদ করবি। আজ হোক কাল হোক যে যেমন অন্যায় করবে তার শাস্তি তাকে পেতেই হবে। আল্লাহ এর বিচার করবেই। আমার বিচার আল্লাহর কাছে তুলে রাখলাম। ওই পাপি লোকের বিচার আল্লাহ করবে। আমার মতো হাজারো মা আছে যারা সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে এই রকম অন্যায় মেনে নিয়েছে। বুকের ভিতরে বয়ে বেরাতে হয় নিরব কান্না।
এই কলঙ্কিত ঘটনা তুই যেমন ভুলতে পারবি না তেমনি আমিও ভুলে যেতে পারব না। মা মেয়ের নিরব কান্না হয়ে থাকবে সারাজীবন । ইতি তোর অসহায় মা। মায়ের চিঠি পড়ে কান্না থামারে পারছি না। মাগো তোমার বুকে এত কষ্ট কখন বুঝতে পারিনি। তুমি সারাটা জীবন হাসি মুখে কষ্ট করে গেছো। আমাকে মাফ করে দাও আমি বুঝতে পারিনি তোমার কষ্টগুলো। মাগো তুমি দেখো আমি পড়ালেখা করে অনেক বড় হব। তোমাকে আর কোন কষ্ট পেতে দেবো না। তোমার মেয়ে আর কোন অন্যায় কখন সহ্য করবো না এখন প্রতিবাদ করবে। ১৫ বছর পর আজ আমি প্রতিষ্ঠিত। এ্যাডভোকেট হয়েছি কয়েক মাস হল। পাশ করার পরে টানা দু’বছর প্রাকটিস করেছি।তাই আর পিছুফিরে তাকাতে হয়নি আমায়!
আমি এ্যাডভোকেট হবার কিছুদিন পরেই মা ওই পাপি লোকটাকে ছেড়ে চলে আসে আমার কাছে। মা এখন আর থেমে নেই সে প্রতিষ্ঠিত। আমার কাছে আসার পরে নতুন করে লেখাপড়া শুরু করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বি এ তে পড়ছে সাথে পাশাপাশি একটা বুটিক হাউজ দিয়েছে। মায়ের বুটিক হাউজে ছয় জন অসহায় মেয়ে কাজ করে। ওদের কে সাবলম্বি করার চেষ্ঠা করছে।আল্লাহর উপর ভরসা করে কঠোর শ্রম আর চেষ্ঠা করলে সব কিছু করা সম্ভব হয়। শুনেছি ওই লোকাটা তিন বছর আগে স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়। কিছুদিন আগে করোনা হয়ে বিনাচিকিৎসায় রাস্তায় বসে মারা গিয়েছে। মৃত্যুর সময় এক ফোঁটা পানি ও পাইনি। দিপ্ত অনেক চেষ্ঠা করেছিল চিকিৎসা করানোর জন্য কিন্তু কোন হাসপাতালে ভর্তি করেনি। পাপ নাকি বাপকে ও ছাড়ে না।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক