ঘরের নরপশু

ঘরের নরপশু
-বাবা, মাহিন চাচ্চু আমার হিসু করার জায়গাতে খুব ব্যথা দেয় আর চাচ্চু যেটা দিয়ে হিসু করে ওটা আমাকে ধরতে বলে। চাচ্চু এত্তো পঁচা কেন বাবা? বসে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলাম এমন সময় আমার পাঁচ বছরের মেয়ে সামিয়া কোন ভূমিকা ছাড়াই উপরের কথাগুলো বললো। আমি ল্যাপটপ থেকে মুখ ফিরিয়ে অবাক নয়নে আমার বাচ্চা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। ও এসব কী বলছে? এতোটুকু বাচ্চার মুখেতো কখনো মিথ্যা আসার প্রশ্নই ওঠেনা। নিজের মেয়ের মুখে ছোট ভাইয়ের ব্যপারে এরকম অশ্লীল কর্মকান্ডের কথা শুনে আমার শরীরটা মুহূর্তেই ঘামে ভিজে চুপ চুপ করছে। আমি নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে সামিয়াকে কাছে টেনে নিয়ে বললাম,
-আচ্ছা মামনী এগুলো তোমার আম্মুকে বলবা না। তোমার চাচ্চুকে আমি খুব করে মেরে দিবো ঠিক আছে?
আমার মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে বললো,
-আচ্ছা বাবা।
-আর শোনো তোমার চাচ্চুর কাছে আর কখনো যাবে না ঠিক আছে?
-আচ্ছা।
এই বলে মেয়েটি দৌড়ে পাশের ফ্ল্যাটের মেয়েটির সাথে খেলতে চলে গেল। আমি এখনো নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিনা। ছিহ. মাহিন শেষ পর্যন্ত নিজের এতোটুকু ভাতিজির সাথে? এসব কথা যদি আমার স্ত্রী তামান্না জানতে পারে তবে খবরটি গ্রামের বাবা মায়ের কাছে পৌছে দিতে একটুও সময় নিবেনা। আজ রাতে যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন আমার স্ত্রী বললো,
-শোনো তোমাকে একটি কথা বলতাম কিছু মনে করবেনাতো?
-না বলো।
-আসলে মাহিনের কাজগুলো আমার কাছে কেমন যেনো ভালো লাগছে না।
-কেনো কী হয়েছে?
-আসলে কীভাবে যে বলি তুমি বিশ্বাস করবে কীনা জানিনা।
-এতো তালবাহানা না করে বলে ফেলো।
-আসলে বিকালে যখন শুকানো কাপর ছাদ থেকে আনতে যাই তখন মাহিনকে দেখি আমার সেলোয়ার আর ব্রা নাকে নিয়ে গন্ধ শুঁকছে।
তামান্নার কথা শুনে আমি শোয়া থেকে বসে পরলাম। একদিকে তামান্না অন্যদিকে সামিয়া। আমি কী করবো কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা। দুদিন পর হঠাৎই পাশের বাসার মেয়েটি নিখোজ হয়, মেয়েটি সামিয়ার সমবয়সী ছিল। হঠাৎ এভাবে মেয়েটির নিখোজ হওয়ায় আশেপাশের মানুষ সবাই অবাক হয় কেননা মেয়েটি বাহিরে কখনো বের হতোনা। সর্বোচ্চ আমাদের বাসায় এসে সামিয়ার সাথে খেলাধুলা করতো। আমার সামিয়ার মতোই মেয়েটিও ওর বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তাই তাদের কষ্টটা চোখে পরার মতো। এলাকার মানুষের ধারণা কল্লা কাটারা ধরে নিয়ে গেছে। পুলিশ অনেক খোজাখুজি করার পরেও কোন সূত্র পেলো না। আমার স্ত্রী তামান্না এহেন ঘটনায় সামিয়াকে একদম আগলে রাখছে। এমনকি ওয়াশরুমে গেলেও সাথে করে নিয়ে যায়। এদিকে মাহিনের ঘটনা আমি প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম। আরো দুদিন পার হয়ে গেলো মেয়েটির কোন খোজ পাওয়া গেলনা। মাহিন আজ হঠাৎই বলে, ভাইয়া এখানে আর ভালো লাগছে না। কাল বাড়িতে চলে যাবো। আচ্ছা ঠিক আছে।
এতোদিন মাহিন কখনো বাড়িতে যাওয়ার নাম তুলেনি কিন্তু আজ কেন বললো? আমি চিন্তা করলাম থাক চলে গেলেই ভালো ও থাকলে আমার আরো সমস্যা। বিকালে বারান্দায় বসে আছি সামিয়াকে কোলে নিয়ে এমন সময় সামিয়া বললো, বাবা মাহিন চাচ্চু নাহ রুমিকে কল্লাকাটাদের কাছে দিয়ে এসেছে। সামিয়ার কথায় আমি হন্তদন্ত হয়ে প্রশ্ন করলাম, তুমি কীভাবে দেখলে আম্মু? ঐদিন মাহিন চাচ্চু রুমিকে চকলেট দিয়ে কোথায় যেনো নিয়ে যায়, চাচ্চু আমাকে চকলেট দেয়নি। আমার এতোটুকু চালাক মেয়ের প্রতিটি কথা যেনো তীরের মতো আমার কানে এসে বিঁধছে। আমার কাছে এই বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে গেলো যে মাহিন কেন বাড়িতে যেতে চায়? তবুও সন্দেহের বসে এসব করা ঠিক হবেনা। তাই সুযোগ বুঝে মাহিনের অনুপস্থিতিতে ওর রুমে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করতে লাগলাম যে কিছু পাওয়া যায় কীনা?
হঠাৎ বিছানাটা উল্টাতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। একি এতো কনডমের প্যাকেট এগুলো দিয়ে ও কী করে? কনডম প্যাকেটের পাশেই চোখ পরতে একটি ছোট কানের দুল দেখলাম। হ্যাঁ কানের দুলটি আর কারো নয় বরং পাশের ফ্ল্যাটের রুমি মেয়েটির। আমার এক মুহূর্ত বুঝতে বাকী রইল না যে রুমির নিখোজ হওয়ার ব্যাপারে একমাত্র আমার ছোট ভাই মাহিনই দায়ী। আমি নিজের রুমে গিয়ে সরাসরি পুলিশ স্টেশনে কল দিলাম। এরমধ্যেই মাহিন বাসায় চলে আসলো ওর ভাবভঙ্গী দেখে মনে হচ্ছে এক নিষ্পাপ বাচ্চা। আমার এখন ওর দিকে তাকাতেই খুব ঘৃণা হচ্ছে আর কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে এই ছোট ভাইকে আমি কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি? কিছুক্ষনের মধ্যেই পুলিশ বাসায় এসে পরলো এবং প্রশ্ন করলো,
-আপনি কী শিওর রুমির নিখোজে আপনার ভাইয়ের হাত রয়েছে? আমি চিৎকার দিয়ে বললাম,
-হ্যাঁ এই দেখুন রুমির দুল। এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আর ও আমার মেয়ের সাথেও অশ্লীলতা করতে চেয়েছিল। এর থেকে আর কী প্রমাণ চান? আমার স্ত্রী ও আশেপাশের মানুষ সবাই হতবিহ্বল হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মাহিন বললো,
-ভাই বিশ্বাস করো আমি কিছুই জানিনা। পুলিশ নিজ বড় ভাইয়ের সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মাহিনের কোন কথা না শুনে থানায় নিয়ে গেল। পুলিশ যাওয়ার পর আমার স্ত্রী তামান্না কান্না করতে করতে বকাঝকা দিয়ে বললো,
-এই সামান্য প্রমাণে তুমি ওকে বিপদে ফেলে দিলা? এখন বাবা মা যদি জানে তবে কী জবাব দিবে? এসব বলেই রাগ করে রুমে চলে গেল। হঠাৎ বিকালে পুলিশ আমাকে ফোন দিয়ে বললো,
-মি. মারুফ। আপনি রুমির বাবা মা কে নিয়ে জমির মিয়ার পুরাতন বিল্ডিংএর পিছনে চলে আসুন।
পুলিশ যেহেতু আমাকে উল্টো কল দিয়েছে তাই বুকটা কীরকম যেনো ধুক করে উঠলো। আমি আর একমুহূর্ত দেরী না করে রুমির বাবা মা কে নিয়ে সেখানে চলে গেলাম। সেখানে যেয়েই এ্যাম্বুল্যান্স আর কয়েকজন পুলিশ দেখতে পেলাম। রুমির মায়ের বুঝতে বাকী রইল না যে তার আদরের রুমি হয়তো আর নেই। তিনি আর সামনে এগোতে পারলেন না ওখানে বসেই কেঁদে দিলেন। আমি আর রুমির বাবা কিছুটা সামনে এগোতেই দেখতে পাই একটা স্ট্রেচে করে রুমির লাশটি এ্যাম্বুল্যান্সে উঠাচ্ছে। লাশে কিছুটা পঁচন ধরেছে। রুমির বাবাও আর এই দৃশ্য সহ্য করতে পারলেন না, হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। আজ তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো আমার কোনে ভাষা নেই। আমার চোখের কোণেও জল চলে আসলো এতোটুকু নিষ্পাপ মেয়ের এরকম অবস্থা দেখে। কিছুক্ষন পর ওসি সাহেব আমার নিকট এসে বললেন,
-আপনার ভাই প্রথম চালানেই সবকিছু স্বীকার করে ফেলেছে। আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবোনা কারণ আপনি আপন সম্পর্কের কথা চিন্তা না করে অপরাধকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ভেবেছিলাম কেসটি বন্ধ করে দিবো কন্তু আপনার কারণে কেসটি সমাপ্তির মুখ দেখলো। আপনার ভাই প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাকে বিচারের আওতায় আনা যাচ্ছে না তাই আপাতত পুলিশি হেফাজতে থাকবে।
আমি মনে মনে বলছি এসব নরপশুদের পারলে এখনি ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে দিন। আর যেসব আত্মীয়স্বজনরা এসব নরপশুদের বাঁচাতে চায় পারলে তাদেরকেও একই দড়িতে ঝুলান। কারণ অপরাধ যে করে আর যে প্রশ্রয় দেয় উভয়ই সমান দোষী। আমার মতো এরকম দৃষ্টান্ত যদি দেশের সব মানুষ রাখতে পারতো তাহলে ঘরে ঘরে আর কোন বাচ্চা শিশু কিংবা নারীকে ধর্ষণ করার আগে সেসব নরপশুরা একবার হলেও ভাবতো।
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত